![আন্দোলনমুখী বিএনপি, কর্মসূচি দিচ্ছে অন্যরাও](uploads/2024/06/29/bnp-1719634803.jpg)
আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে আবারও মাঠে নামছে বিএনপি। এবার দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে রাজপথে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলছে দলের হাইকমান্ড। এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শনিবার (২৯ জুন) সমাবেশ করবে বিএনপি। এ ছাড়া ঢাকার বাইরে আরও দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে নতুন কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা।
এদিকে দেশে চলমান নানা ইস্যু সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করছেন সরকারবিরোধীরা। এরই মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, গণ অধিকার পরিষদও বিক্ষোভসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের কথা জানিয়েছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেবে বলে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘তিন দিনের কর্মসূচি দেওয়া আছে। আবার প্রোগ্রাম দেওয়া হবে। সময় বুঝে ভিন্ন ভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে। আন্দোলনের মধ্যেও ওঠানামা থাকে। অতীতে কী হয়েছে সেটা বিষয় নয়। আমরা আমাদের লক্ষ্যে কাজ করে যাব। আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য বলেন, ‘এর আগে আমাদের আন্দোলনে অন্য দফাগুলোর মধ্যে বেগম জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার বিষয়টি ছিল। কিন্তু এটা আমাদের সর্বাধিক গুরুত্বের বিষয়। কারণ তিনি একজন ন্যাশনালিস্ট। দেশের প্রশ্নে কখনো আপোস করেননি। বর্তমান নানা বাস্তবতায় দেশের প্রয়োজনেই তাকে দরকার। তার মুক্তির মধ্য দিয়েই দেশের মুক্তি ঘটবে বলে আমরা মনে করি। তাই দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন জোরদার হওয়া জরুরি। ধীরে ধীরে আন্দোলন বেগবান হবে।’
দলীয় সূত্রমতে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে-পরে সারা দেশে মামলার জালে বন্দি ছিলেন বিএনপির বেশির ভাগ নেতা-কর্মী। খোদ মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে কারাগারে যেতে হয়েছে। এ ছাড়া একটি বড় অংশ ছিল আত্মগোপনে। দেশের বাইরেও অবস্থান করতে হচ্ছে অনেককে। এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচনের পর গত ছয় মাসে রাজপথে হাতে গোনা দু-একটি কর্মসূচি পালন করলেও সেটা ছিল দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল ধরে রাখার জন্য। এরপর বিগত আন্দোলনের সময় দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভূমিকা মূল্যায়নের কাজে হাত দেন নীতিনির্ধারকরা। বিচার-বিশ্লেষণ শেষে কমিটির ব্যর্থতাসহ মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় একাধিক কমিটি ভেঙে দেয় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। পাশাপাশি শুরু হয় দল পুনর্গঠন। এরই মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, যা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে হাইকমান্ড। সব নেতা-কর্মীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে উদ্বেগ। সবকিছু পর্যালোচনা করে গত সোমবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় সবার আগে বেগম জিয়ার মুক্তির বিষয়ে জোর দেবে দল। এ লক্ষ্যে কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে, যা সংবাদ সম্মেলনে করে জানান দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর যৌথ সভা শেষে তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিএনপির এ দফায় ঘোষিত আন্দোলন কর্মসূচির আওতায় প্রথম সমাবেশ। এটি সফল করতে একাধিক প্রস্তুতি সভা ও যৌথ সভায় অংশ নিয়েছেন দলের বিভিন্ন অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এবার যেহেতু দুই মহানগর কমিটি বিলুপ্ত- সে ক্ষেত্রে ঢাকা মহানগরে বিএনপির অন্যতম কাণ্ডারি ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে সমন্বয়ক করা হয়েছে। বিলুপ্ত ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কমিটির নেতাদের নিয়ে প্রস্তুতি সভা করেছেন।
অতীতের ব্যর্থতা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে এবারের আন্দোলনে মাঠে শক্ত ভূমিকা রাখার কথা বলছে বিএনপির আন্দোলনের ‘ভ্যানগার্ড’ হিসেবে পরিচিত ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, ‘দেশের মালিকানা দেশের মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। আর এটা আমাদের মমতাময়ী মা বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির মধ্য দিয়েই সম্ভব হবে।’
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর ও দেশটির সঙ্গে কয়েকটি ‘অসম চুক্তি ও সমঝোতা’র প্রতিবাদে তিন দিনের কর্মসূচি দিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার বাদ জুমা ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে দলটি। এ ছাড়া চলমান পরিস্থিতিতে জাতীয় সংলাপ করবে ৩ জুলাই এবং ৫ জুলাই সব জেলা ও মহানগরে বিক্ষোভ-সমাবেশ এবং মিছিল করা হবে। দলটির নেতারা বলছেন, দেশ, ইসলাম ও মানবতা ধ্বংসের সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে বর্তমান সরকার। দেশ নিয়ে সব মানুষ শঙ্কিত। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব মাওলানা ইউনুছ আহমাদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘সামনে আরও কর্মসূচি আসবে। জাতীয় সংলাপ থেকে যেসব পরামর্শ ও মতামত আসবে সেখান থেকে নতুন কিছু বের হয়ে আসবে। সবাইকে নিয়ে আন্দোলন করার জন্য আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে।’ সবার মানসিকতা এক হলে এবার ভালো ফলাফল আসবে বলে আমার বিশ্বাস।
ভারতের সঙ্গে সরকারের করা চুক্তি, দুর্নীতির নানা ঘটনায় দেশব্যাপী নানা প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় মানুষকে আরও সংগঠিত করতে চায় সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ। এরই মধ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনার পর ৫ জুলাই রাজধানীতে বিক্ষোভ-মিছিল করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। মঞ্চের অন্যতম নেতা জোনায়েদ সাকি খবরের কাগজকে বলেন, ‘আরও গুছিয়ে মাঠে নামছি আমরা। যদিও আন্দোলন অব্যাহত আছে। আমাদের বিজয়ী হতেই হবে। এর বিকল্প নেই।’
একইভাবে ক্ষমতাসীনদের ‘দেশবিরোধী’ নানা কর্মকাণ্ড ও সরকারসংশ্লিষ্টদের দুর্নীতি নিয়ে বরাবরই সরব গণ অধিকার পরিষদ। আরও জোরালোভাবে রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে দলটি। শক্তি বাড়াতে দলটির দুই অংশের একসঙ্গে কাজ করার কথাও শোনা যাচ্ছে।
আর নতুনভাবে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার চিন্তা করছে জামায়াতে ইসলামী। আগামী রবি বা সোমবার দলটির শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে আলোচনা সাপেক্ষে কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের এক নেতা বলেন, ‘ডামি সরকার নানা সংকটে আছে। এই সরকারের দেশবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জনগণ ঐক্যবদ্ধ। আমরাও শিগগিরই কর্মসূচি ঘোষণা করব।’