![দ্রুতই ৫ দফা বাস্তবায়নের দাবি হেফাজতে ইসলামের](uploads/2024/02/13/1707816030.Hefajot.jpg)
জাতীয় শিক্ষা কারিকুলামে ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক সব বিষয় বাতিলসহ ৫ দফা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ফেনী সমিতি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষে এসব দাবি জানান মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে সাজিদুর রহমানের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জুনাইদ আল হাবিব।
দাবিগুলো হলো- পঞ্চগড়ে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের সালনা জলসা বন্ধ এবং তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে; অবিলম্বে মাওলানা মামুনুল হকসহ কারাবন্দি আলেমদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে; ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত হেফাজতের নেতা-কর্মীদের নামে দায়ের সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে; হেফাজতের ১৩ দফা বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির সুরক্ষা আইন ২০২৩ (খসড়া) প্রণয়ন করা যাবে না।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘ইসলাম সাংঘর্ষিক কোনো আইন বা পাঠ্যপুস্তক আমরা মানি না, মানব না।’
লিখিত বক্তব্য মহাসচিব সাজিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ইসলামফোবিয়া আক্রান্ত এক শ্রেণির ধর্মবিরোধী গোষ্ঠী এ দেশের মুসলিম প্রজন্মের মন ও মানস থেকে ইসলাম ধ্যান ধারণা চিরতরে মুছে দিতে নীলনকশার বাস্তবায়নে উঠে পড়ে লেগেছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে পাঠ্যপুস্তককে। পাঠ্যপুস্তক থেকে ইসলামঘনিষ্ঠ বিষয়বস্তু বাদ দিয়ে সুপরিকল্পিতভাবে ইসলামবিরোধী অনুপ্রবেশ ঘটিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২৪ এর আওতায় জাতীয় শিক্ষা কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড থেকে নতুন করে প্রণীত যে পাঠ্যসূচি প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত বিভিন্ন শ্রেণির বিতরণ করা পাঠ্যপুস্তকগুলো পর্যালোচনা করে নিম্মোক্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে যে, অবিলম্বে শিক্ষা কারিকুলামের বির্তকিত সব বিষয় সংশোধন করে আলেম সমাজের সঙ্গে সমন্বয় করে নতুন করে সংকলিত পাঠ্যপুস্তক পুনরায় বিতরণ করতে হবে। আর না হয় দেশের অনাগত প্রজন্মের মন মানসিকতা থেকে ইসলামকে চিরতরে মুছে দেওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘‘ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষা আইন ২০২৩ (খসড়া)’ আমাদের নজরে এসেছে। বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, আইনটি অচিরেই পাস হওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। হেফাজতে ইসলাম সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে যে, এ আইনটিকে যদিও হিজড়া সম্প্রদায়ের অধিকার সুরক্ষা আইন মনে করা হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে এটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসলে হিজড়া ও ট্রান্সজেন্ডার এক নয়।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, ‘পঞ্চগড়ের আহমদনগর এলাকায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন আগামী ২৩-২৫ ফেব্রুয়ারি ৩ দিনব্যাপী সালানা জলসার আয়োজন করতে যাচ্ছে। এই জলসার মাধ্যমে তারা ইসলামের নামে কুফুরি মতবাদ প্রচার করে আসছে। তাদের সঙ্গে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। অবিলম্বে তাদের এ জলসা বন্ধ না করা হলে যেকোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে এর সম্পূর্ণ দায়ভার প্রশাসন ও আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনকে নিতে হবে।’
এতে বলা হয়, ‘‘এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে দেশের শীর্ষস্থানীয় অনেক আলেমকে ‘বিনা অপরাধে’ কারাগারে বন্দী করে রাখা হয়েছে। সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেমদের ন্যূনতম সম্মান দেখানো হচ্ছে না। তারা যতটুকু আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার রাখেন সে ক্ষেত্রেও বৈষম্য করা হচ্ছে। দেশের শান্তিপ্রিয় আলেম সমাজের সাংবিধানিক অধিকার ও মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আদালত থেকে জামিন হওয়ার পরও আলেমদের কারাগারে বন্দি রাখার উদ্দেশ্যে উচ্চ আদালতের মাধ্যমে জামিন স্থগিত করা হচ্ছে অথবা নতুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।’’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ‘যেসব আলেম ইতোমধ্যে কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন, মাসের বেশির ভাগ দিন হাজিরার জন্য তাদের এক আদালত থেকে অন্য আদালতে ঘুরপাক খেতে হচ্ছে। তাই মাওলানা মামুনুল হক ও মাওলানা মাহমুদুল হাসান গুনবীসহ যেসব আলেম-উলামা কারাগারে বন্দি অবস্থায় এখনো মানবেতর জীবনযাপন করছেন, তাদের অবিলম্বে বিনা শর্তে মুক্তি দিতে এবং সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে সরকারের প্রতি আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাজিদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা কারিকুলাম আমার নিজেরা ঠিক করব। অন্যদেশের ঠিক করা কারিকুলাম চলবে না। হেফাজতের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে ইসলামি কারিকুলাম প্রস্তাবনা আকারে তুলে দেওয়া হবে। মাওলানা মামুনুল হক, মাওলানা ফখরুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান গুনবী এই তিনজন কারাগারে বন্দি আছেন। তদের মুক্তির জন্য আইন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- হেফাজতের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি মহিউদ্দিন রাব্বানী, সহসভাপতি মুফতি আহমদ আলী কাসেমী, আবদুল কাইয়ুম সুবহানী, মাওলানা মাহফুজুল হক, যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদী, যুগ্ম মহাসচিব হারুন ইজাহার, যুগ্ম মহাসচিব মীর ইদ্রিস, মুজিবুর রহমান হামিদী, সহকারী মহাসচিব আতাউল্লাহ আমিন, অর্থ সম্পাদক মুনির হোসাইন, সহ-অর্থ সম্পাদক কামাল উদ্দিনসহ শীর্ষ নেতারা।
শফিক/সালমান/অমিয়/