![যশোরে প্রার্থীরা মাঠ দাপালেও ভোটারদের আগ্রহ কম](uploads/2024/05/14/Jessore-Election-1715658459.jpg)
ষষ্ঠ উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট গ্রহণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ ধাপে যশোরের দুটি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। আর দ্বিতীয় ধাপে আগামী ২১ মে ও তৃতীয় ধাপে ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে আরও ছয়টি উপজেলায়। কিন্তু ভোট নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই বললেই চলে। তার প্রমাণ পাওয়া গেছে অনুষ্ঠিত দুই উপজেলার ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে। প্রার্থী ও তার কর্মীরা ভোটের দিন বাড়ি বাড়ি গিয়েও ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে পারেননি। ওই দুই উপজেলায় ৩০ ভাগ ভোটও পড়েনি।
তবে পিছিয়ে নেই প্রার্থীরা। উপজেলাগুলো পোস্টারে ছেয়ে গেছে। প্রতীক বরাদ্দের পর চলছে সুর ও ছন্দে মাইকে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে কর্মীরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। দিচ্ছেন লিফলেট, চাচ্ছেন ভোট। প্রার্থীরা কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসছেন প্রচারে। প্রায় প্রতিদিন সকাল, বিকেলে ও সন্ধ্যায় ইউনিয়ন অথবা পৌরসভার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বৈঠক করছেন। আবার কোথাও কোথাও প্রার্থীরা নির্বাচনি পথসভা করছেন। ভোটারদের আস্থা অর্জনে দিচ্ছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি মেলাচ্ছেন রাজনৈতিক নানা সমীকরণ।
সব মিলিয়ে যশোরের ছয় উপজেলায় অর্ধশতাধিক প্রার্থী মাঠ দাপিয়ে বেড়ালেও ভোটারদের মধ্যে তেমন আগ্রহ নেই। তারা বলছেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় পরিচয় ও নৌকা প্রতীক না থাকলেও মূলত আওয়ামী লীগের গ্রুপ ও উপ-গ্রুপের নেতারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। বড় দল বিএনপি সরাসরি এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি। যশোরে দলীয় সিদ্ধান্ত কেউ অমান্যও করেনি। আবার এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরিক দলগুলো কোনো প্রার্থী দেয়নি। ফলে নির্বাচনে একদলের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। এসব কারণে সাধারণ মানুষের আগ্রহ নেই বলে জানান তারা।
কেশবপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দেখা গেছে, এখানে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২০ হাজার ৯৫৪ জন। এর মধ্যে ভোট পড়েছে মাত্র ৬২ হাজার ৮১টি। শতকরা মাত্র ২৮ দশমিক ১০ ভাগ। ভোটাররা উপস্থিত না হওয়ায় তিনজন চেয়ারম্যানসহ ছয় প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন। অন্য তিনজন ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী। তিনটি পদে মোট ১৪ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন।
একই অবস্থা অন্য ছয় উপজেলাতেও হবে বলে জানান যশোর সদর উপজেলার ভোটার বামনেতা জিল্লুর রহমান ভিটু। তিনি বলেন, ‘‘ঘরের মধ্যে ভোট হচ্ছে। তাও আবার ওই দলের অনুসারীদের মধ্যে ত্যাগী আদর্শবান নেতা-কর্মীরা বিমুখ হয়ে আছেন। আর সাধারণ মানুষ দ্রব্যমূলের লাগাম ছাড়া ঘোড়ার কারণে জীবনই চালাতে পারছেন না। ভোট নিয়ে তাদের ভাবার সময় কোথায়? ‘নিজেরা করির’ মধ্যে লড়াই হয় না। মহাজোটের শরিক দলের প্রার্থীরাও অংশ নিলে ভোটার উপস্থিতি হয়তো একটু বাড়ত।’’
ঝিকরগাছা উপজেলার কায়েমকোলা গ্রামের চা দোকানি রবিউল ইসলাম বলেন, ‘দোকান না খুললে সংসার চলে না। ভোটের ব্যাপারে আমার কোনো আগ্রহ নেই। প্রার্থীরা আসেন-যান। আর তাদের সঙ্গে থাকেন দলের সুবিধাভোগীরা। আমাদের ভোট দিয়েই বা কি, আর না দিয়েই বা কি। আমার সংসার আমাকেই চালাতে হবে।’
বাঘারপাড়া উপজেলার নারকেলবাড়িয়া গ্রামের ভোটার দীপংকর বিশ্বাস বলেন, ‘যিনি জনপ্রতিনিধি হন তিনিসহ তার কিছু সাগরেত লাভবান হন। সাধারণ মানুষ ও সমাজের উন্নয়ন কতটুকু হয়? তাহলে ভোট দিয়ে লাভ কি, আপনিই বলেন। কাজ বাদ দিয়ে ভোট দেওয়ার কোনো আগ্রহ নেই।’
এদিকে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা বিএনপি ভোট বর্জনের জন্য দলীয় নেতা-কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে দফায় দফায় সভা করছে। এরই মধ্যে মণিরামপুর এবং কেশবপুরে সাধারণ মানুষের মাঝে ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে বিলি করা হয়েছিল হ্যান্ডবিল। জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও সাধারণ মানুষ ভোটের ময়দানে যাবেন না। পাশাপাশি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে যশোরের যেসকল নেতা-কর্মী কোনো প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন বয়কটের বিষয়ে দল যে সিদ্ধান্ত দিয়েছে আমরা মাঠ পর্যায়ে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কাজ করছি। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে বিএনপি এই নির্বাচনে কোনো প্রার্থী দেয়নি, এমনকি দলের নেতা-কর্মীরাও নির্বাচনের মাঠে নেই। এক দলের প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচন হচ্ছে। জনগণ এসব নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এই নির্বাচনে কোনো আমেজ নেই, নেই কোনো উৎসব।’