![সংকটের চক্রে ঘূর্ণায়মান দিশাহীন বাজেট: বাম জোট](uploads/2024/06/08/bam dalkk-1717862323.jpg)
অতীতের অর্থনৈতিক সংকটের কারণ চিহ্নিত করে সেসব দূর করার কোনো দিকনির্দেশনা নেই উল্লেখ করে বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেছেন, সংকটের চক্রে ঘূর্ণায়মান ‘দিশাহীন’ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট প্রত্যাখ্যান করে দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে বাম গণতান্ত্রিক জোট (৮ জুন) শনিবার বিকেলে দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল করেছে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাকেজুজ্জামান রতন, বাসদ (মার্কসবাদী) সমন্বয়ক মাসুদ রানা ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক পার্টির নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আলী।
বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘সরকারের দুর্নীতি, অপচয় ও লুণ্ঠনমূলক নীতির দায় জনগণের ওপর চাপিয়ে কর ও ভ্যাট বৃদ্ধির বাজেট জনজীবনে দুর্ভোগ আরও বহুগুণ বাড়াবে।’ বাম জোট অন্য নেতারা বলেন, ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি বাজেটে দেশি-বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভর করা হয়েছে। তাই বাজেটে ঋণের সুদ পরিশোধের জন্যই ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট বাজেটের ৭ ভাগের ১ ভাগ বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাম নেতারা জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, তিন মাসেই ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণের হার ছিল ৯ শতাংশ। অর্থনীতিবিদদের মতে, খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাস্তবে সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ কোটি টাকার বেশি। বাম জোট নেতাদের অভিযোগ, দেশে একদিকে ঋণ খেলাপি বাড়ছে, অন্যদিকে সরকার বাজেটে দেশের ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাধাগ্রস্ত হবে।
বাম জোটের নেতারা বলেন, টাকার অবমূল্যায়ন, মূল্যস্ফীতি ও জিডিপি বিবেচনায় নিলে বাজেটে শিক্ষা-স্বাস্থ্য-কৃষি এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতেও বরাদ্দ বাস্তবে বাড়েনি, বরং কমেছে। টাকার অঙ্কে সামাজিক সুরক্ষা খাতে ১০ হাজার কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলেও বাস্তবে তা পেনশনভোগী, উপবৃত্তি ও মুক্তিযোদ্ধা ভাতায় চলে যাবে। উপরন্তু কৃষি খাতে ভর্তুকিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ৮ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। মুঠোফোনে ১০০ টাকার টকটাইম পেতে এখন গ্রাহককে দিতে হবে ১৩৯ টাকা। মেট্রোরেলেও ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে, যা জনজীবনে ‘ভোগান্তি বাড়াবে’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাম জোট নেতারা অভিযোগ করেন, ‘বাজেটে শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিশ্চয়তার জন্য রেশনিংয়ের জন্য কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি। বাজেটে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্নীতি রোধে কোনো কার্যকর দিকনির্দেশনা নেই। যেখানে আজিজ, বেনজীর, আনারকাণ্ডে সরকারের দুর্নীতির ভয়াবহতা ফুটে উঠেছে, সেখানে এবারেও কালোটাকা সাদা করার সুযোগ রেখে দুর্নীতিকে আরও উৎসাহিত করার ব্যবস্থা হচ্ছে।
সমাবেশে অন্য নেতারা এবারের বাজেটকে গতানুগতিক ও ঋণনির্ভর ঘাটতি বাজেট প্রত্যাখ্যান করে গরিব ও মেহনতি মানুষের পক্ষে গণমুখী বাজেট প্রণয়নের আহ্বান জানিয়েছেন।
জয়ন্ত/এমএ/