![বদনজর থেকে বাঁচার উপায়](uploads/2023/11/12/1699754528.badnajar-ok.jpg)
বদনজরের প্রভাব সত্য। আমাদের সমাজে অনেকে এমন আছেন যাদের নজর লাগে এবং এর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়। বদনজর মূলত মানুষের হিংসাত্মক কুদৃষ্টির কুফল। আল্লাহর স্মরণ ছাড়া গাফেল অবস্থায় কোনো জিনিসের প্রতি তীক্ষ্ণ ও কুদৃষ্টির ফলে মানুষের ক্ষতি হয় এবং অন্যান্য বস্তুতে এর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়- একেই বদনজর বলা হয়।
যাকে বদনজর করা হয় তার ওপর এর বিষাক্ত তির নিক্ষিপ্ত হয়। এটি কখনো কার্যকর হয়, আবার কখনো হয় না। যার প্রতি বদনজর করা হয়, সে যদি প্রতিরক্ষাহীন অবস্থায় থাকে তখন ওই কুদৃষ্টি ক্রিয়াশীল হয়। আর প্রতিরক্ষা অবস্থায় তার কাছে পৌঁছাতে না পারলে এর কোনো প্রভাব পড়ে না।
পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াত এবং অসংখ্য হাদিসে এর সত্যতার বিশদ বিবরণ এসেছে। মানুষের চোখ (কুদৃষ্টি) লাগা এবং এর ফলে মানুষ অথবা জন্তু-জানোয়ারের কষ্ট কিংবা ক্ষতি হওয়া সত্য। এটা মূর্খতাসুলভ কুসংস্কার নয়। এ কারণেই ইয়াকুব (আ.) তার পুত্রদের আত্মরক্ষার চিন্তা করে কুদৃষ্টি এবং হিংসার আশঙ্কাবশত ছেলেদের একই দরজা দিয়ে শহরে প্রবেশ করতে নিষেধ করেছেন। (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৬৭-৬৮)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বদনজরের প্রভাব সত্য।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৩২৯, মুসলিম : ৫৫১৩)
উবাইদ ইবনে রিফাআ আজ-জুরাকি (রা.) থেকে বর্ণিত, আসমা বিনতে উমায়স (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! জাফরের সন্তানদের খুব বেশি নজর লাগে। আমি কি তাদের ঝাড়ফুঁক করাতে পারি? তিনি বললেন, হ্যাঁ, কোনো জিনিস যদি তকদিরকে অতিক্রম করার মতো হতো, তবে বদনজর অবশ্যই তা অতিক্রম করতে পারত।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০৫৯)
হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও, কেননা বদনজর সত্য ও বাস্তব।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৫০৮)
দোয়া
প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস তিনবার করে পড়া। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৭৫) আরও একটি দোয়া হলো, বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লা হিল্লাজি লা-ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইউন, ফিলআরদি ওয়ালা-ফিসসামায়ি, ওয়া হুওয়াস সামিউল আলিম।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৩৫)
সকাল-সন্ধ্যা এগুলো কয়েকবার পড়ে শরীরে ফুঁ দিলে বা হাত মুছে দিলে আল্লাহর রহমতে বদনজর থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
বাচ্চাদের সুরক্ষার জন্য কর্তব্য হচ্ছে, মাঝেমধ্যেই দোয়া পড়ে তাদের গায়ে ফুঁ দেওয়া, যেমনটা রাসুল (সা.) হাসান ও হুসাইনের বেলায় করেছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) এই দোয়া পড়ে হাসান-হুসাইন (রা.)-কে ফুঁ দিয়ে দিতেন—বাংলা উচ্চারণ: আউজি বিকালিমা-তিল্লাহিত্ তা-ম্মাহ। মিন কুল্লি শাইতানিন-ওয়া হাম্মাহ। ওয়ামিন কুল্লি আইনিন লাম্মাহ।’ (বুখারি, হাদিস: ৩১৯১)
লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া, যাত্রাবাড়ী