ইস্তিগফার অর্থ ক্ষমা প্রার্থনা করা। কেউ যখন ত্রুটি-বিচ্যুতির পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তখন ক্ষমা করে দেওয়ার পাশাপাশি সীমাহীন খুশি হন। আল্লাহ অধিক পরিমাণে ক্ষমাশীল। ক্ষমা করতে তিনি ভালোবাসেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা বলেন, আমি তেমনই, যেমন বান্দা আমার প্রতি ধারণা রাখে। আমি তার সঙ্গে থাকি, যখন সে আমাকে স্মরণ করে। আল্লাহর কসম! নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা তার বান্দার তওবায় তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অপেক্ষা বেশি খুশি হন, যে তার মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া বাহন ফিরে পায়। আর যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। যে আমার দিকে এক হাত পরিমাণ অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে দুই হাত পরিমাণ অগ্রসর হই। আর সে যখন আমার দিকে হেঁটে অগ্রসর হয়, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে অগ্রসর হই।’ (বুখারি, হাদিস: ৭৪০৫)
গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার জন্য সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এরপরও যদি কোনো গুনাহ হয়ে যায়, তবে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া যাবে না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা জুমার, আয়াত: ৫৩)
স্মরণ রাখতে হবে, আল্লাহর এক নাম ‘গাফফার’। কোরআনে আল্লাহ এই গুণবাচক নামটি ব্যবহার করেছেন এ কথা বোঝানোর জন্য যে, গুনাহগারের জন্য তাঁর দরজা উন্মুক্ত। তিনি বারবার ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয় তিনি মহাক্ষমাশীল।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০)
মানুষ যেকোনো ভাষাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে পারে। এজন্য আরবি ভাষা জরুরি নয়। তবে যারা আরবি পারেন, তাদের জন্য কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো পাঠ করা উত্তম। আরবিতে বলতে হলে অবশ্যই উচ্চারণ সঠিক করতে হবে। কোরআন-হাদিসে একাধিক ইস্তিগফার বর্ণিত হয়েছে। তার মধ্যে যেটা সহজ মনে হয়, তা পড়ে নেওয়া যায়। গুনাহ হওয়ার পর অনেকেই শুধু মুখে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ বলে থাকে। অথচ ইস্তিগফার হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। যাতে থাকতে হবে গুনাহের জন্য লজ্জা, অনুতাপ এবং ভবিষ্যতে সেই গুনাহের পুনরাবৃত্তি না করার দৃঢ় শপথ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকালে সাইয়েদুল ইস্তিগফার পাঠ করবে, সে যদি সন্ধ্যা হওয়ার আগে মারা যায়, তবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি সুদৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সন্ধ্যায় সাইয়েদুল ইস্তিগফার পড়ে, সে যদি সকাল হওয়ার আগে মারা যায়, তবে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৩২৩)
মানুষের মধ্যে সবচেয়ে আপন মা-বাবা। সন্তানের পক্ষ থেকে মৃত পিতা-মাতার জন্য ইস্তিগফারের দরুন তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেতে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা (কোনো কোনো) নেক্কার বান্দার মর্যাদা এমন উঁচু করে দেবেন, যাতে সে আশ্চর্য হয়ে বলবে, হে রব! এত বড় মর্যাদা কীভাবে আমার নসিব হলো? তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা চাওয়ার বদৌলতে (তোমার এত এত মর্যাদা লাভ হয়েছে)।’ (মিশকাতুল মাসাবিহ)
মানুষ ইস্তিগফার করলে আল্লাহ খুশি হন। আল্লাহ খুশি হয়ে তার জন্য রহমত ও বরকতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাকে আবশ্যক বানিয়ে নেবে, আল্লাহ তার প্রত্যেক সমস্যা থেকে মুক্তির পথ বের করে দেবেন এবং প্রত্যেক সংকীর্ণ অবস্থা থেকে প্রশস্ততা দান করবেন। তার রিজিকের ব্যবস্থা এমনভাবে করে দেবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।’ (আবু দাউদ)
ইস্তিগফার মুমিনের সফলতার সোপান। তা দুনিয়া ও আখেরাতে তার মর্যাদা উঁচু করার মাধ্যম হয়, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের কারণ হয়। হাদিসে এসেছে, ‘ওই ব্যক্তির জন্য সৌভাগ্য, যে পরকালে তার আমলনামায় অধিক পরিমাণে ক্ষমা প্রার্থনা দেখতে পাবে।’ (ইবনে মাজাহ)
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও দৈনিক শতবার ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। এমনকি নামাজের ভেতরে এবং শেষেও তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। কখনো সিজদায়, কখনো দুই সিজদার মধ্যেও ইস্তিগফার করতেন। নামাজের শেষ বৈঠকে, যেকোনো মজলিসে তিনি ইস্তিগফার করতেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “অবশ্য কখনো কখনো আমার ‘কলব’ পর্দাবৃত হয় (অর্থাৎ মানুষ হিসেবে দুনিয়ার কাজকর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণে আল্লাহর জিকির থেকে অমনোযোগী হয়) এবং আমি আল্লাহর কাছে দৈনিক ১০০ বার ইস্তিগফার করে থাকি।’’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১৫)
লেখক : শিক্ষার্থী, জামিয়া রশিদিয়া এমদাদুল উলুম, গৌরনদী