ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণহত্যা

প্রকাশ: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০১:৪৬ পিএম
আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৪, ০২:০৬ পিএম
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও গণহত্যা
হারুন হাবীব

‘জেনোসাইড’ শব্দটি বাংলায় ‘গণহত্যা’ হিসেবে প্রচলিত হয়েছে, যদিও বাংলা প্রতিশব্দটি ‘জেনোসাইড’-এর সবটা প্রকাশ করে না। বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠী বা ধর্ম, বর্ণ ও বিশ্বাসের মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত পন্থায় পরিচালিত ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, আক্রমণ ও পীড়ন- যা সেই জনগোষ্ঠীকে আংশিক অথবা সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করার লক্ষ্যে পরিচালিত হয়, সেটিই ‘জেনোসাইড’। এই শব্দটি প্রথম প্রচলন করেন পোলিশ আইনজীবী রাফায়েল লেমকিন। জাতিসংঘের ১৯৪৮ সালের ‘জেনোসাইড কনভেনশনে’ এই সংজ্ঞা স্বীকৃত হয়েছে। সে কারণে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের হাতে যে নির্বিচার হত্যাযজ্ঞ ঘটে, তা সব অর্থেই ‘জেনোসাইড’। 

বাংলাদেশের মাটিতে যে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়, তা ছিল বিংশ শতাব্দীর অন্যতম নৃশংস এবং বড় গণহত্যা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের ২৫ তারিখ থেকে আট মাস দুই সপ্তাহ তিন দিনের এই গণহত্যার স্বরূপ ছিল ভয়ংকর। পরিকল্পিত পন্থায় বাঙালিকে খুন করা হয়েছে, গণহারে নারীদের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে; ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়াসহ অপহরণ, গুম ও বর্বর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে এসব বর্বরতায় সহযোগী ছিল বাঙালি ও অবাঙালি সদস্য সমন্বয়ে গঠিত রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং শান্তি কমিটির সদস্যরা। 

১৯৭১ সালে দুই পরাশক্তির পরস্পরবিরোধী অবস্থান ও বিদ্যমান স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের গণহত্যার বিশ্ব স্বীকৃতি যতটা হওয়া সঙ্গত ছিল, তা হয়নি। নির্বিচার মানুষ খুন ও পাশবিকতার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। কিন্তু ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের রিপোর্ট ও বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংস্থার গবেষণা ও পর্যবেক্ষণে এর ব্যাপকতা স্ববিস্তারে গ্রন্থিত আছে। সেদিনকার জাতিসংঘের মহাসচিব ইউ থান্ট ৩ জুন ১৯৭১ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির কাছে লেখা এক চিঠিতে ঘটনার ভয়াবহতা প্রকাশ করেন নিম্নোক্ত মন্তব্যে; একই সঙ্গে বিশ্ব সংস্থার অসহায়ত্বও প্রকাশ করেন তিনি: The happenings in East Pakistan constitute one of the most tragic episodes in human history. Of course, it is for future historians to gather facts and make their own evaluations, but it has been a very terrible blot on a page of human history. 

বাঙালি জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় বাহিনীর প্রথম অভিযানটি পরিচালিত হয় ২৫ মার্চ রাতে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে তারা কেবল নির্বাচনে বিজয়ী দল আওয়ামী লীগকেই উৎখাতের পথ বেছে নেয়নি, একই সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর বাঙালি সদস্য, পুলিশ, ইপিআর এবং ছাত্রজনতাকে নিধন করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে সক্ষম হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। শুরু হয় হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে বাঙালি জনতার প্রতিরোধ যুদ্ধ। এদিকে নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীর ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সর্বাত্মক সামরিক অভিযানের ফলে জীবন বাঁচাতে লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়। ফলে ভারতের মাটিতে প্রায় ১ কোটি মানুষের দেশান্তরী হওয়ার মর্মন্তুদ অধ্যায়ের সূচনা ঘটে। 

ঢাকা নগরীতে ২৫ মার্চের সামরিক অভিযানটি ছিল সুপরিকল্পিত। এর প্রথম দৃষ্টান্ত পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ব্যাপক হারে পূর্ব অংশে সেনা ও সমরাস্ত্র আনায়ন। দ্বিতীয়ত, লোক দেখানো আলোচনা চালিয়ে সময় ক্ষেপণ করা। তৃতীয়ত, চূড়ান্ত আঘাত হানার প্রস্তুতি হিসেবে ঢাকা থেকে প্রতিটি বিদেশি সাংবাদিককে বহিষ্কার করা এবং স্থানীয় প্রচার মাধ্যমের ওপর কঠোর সেন্সরশিপ আরোপ করা । তবে এর পরও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুজন বিদেশি সাংবাদিক লুকিয়ে থাকেন। তাদেরই একজন সাইমন ড্রিং। তিনি ৩১ মার্চ লন্ডনের ‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’ পত্রিকায় ২৫ ও ২৬ মার্চের ঢাকার গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শী বিবরণ প্রকাশ করেন। 

‘ডেইলি টেলিগ্রাফ’-এর দীর্ঘ প্রতিবেদনের শুরুটি বাংলায় এ রকম: ২৫ মার্চ মধ্যরাতের পর ঢাকা মহানগরী মুহুর্মুহু তোপধ্বনিতে প্রকম্পিত হতে থাকে। সর্বত্র বোমা-বারুদের তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। টিক্কা খান বর্বর সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে নির্মমভাবে গণবিদ্রোহ দমনে সচেষ্ট হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ হেড কোয়ার্টার, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের প্রধান কার্যালয় পিলখানা সেনা-অভিযানে বিধ্বস্ত হয়। নিরস্ত্র মানুষের ওপর সেনাবাহিনী নির্বিচারে ভারী আরআর গান, স্বয়ংক্রিয় রাইফেল ব্যবহার করে। ইকবাল হলকে (সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) সেনাবাহিনী প্রধান আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে। সেখানে প্রথম আঘাতেই ২০০ ছাত্র নিহত হয়। একদিকে হলগুলোর দিকে উপর্যুপরি শেল নিক্ষেপ করা হতে থাকে অন্যদিকে চলতে থাকে মেশিনগানের গুলি। দুই দিন পর্যন্ত পোড়া ঘরগুলোর জানালা-দরজায় মৃতদেহ ঝুলে থাকতে দেখা যায়। পথেঘাটে মৃতদেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে। জগন্নাথ হলেও বর্বরোচিত আক্রমণ চালানো হয়। কয়েক শ ছাত্র, যারা প্রায় সবাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী, নিহত-আহত হন। সৈন্যরা মৃতদেহগুলোকে গর্ত খুঁড়ে গণকবর দেয়। এরপর ট্যাংক চালিয়ে মাটি সমান করে। রিপোর্টের শেষ অংশ এ রকম: ‘আল্লাহ ও পাকিস্তানের ঐক্যের নামে’ ঢাকা আজ এক বিধ্বস্ত, সন্ত্রস্ত নগরী। 

‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’-এর ভাষ্য মতে, পাকিস্তান বাহিনীর হাতে ১ লাখ মানুষ নিহত হয় এই প্রথম সামরিক অভিযানে। ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ ১ এপ্রিল ঢাকায় ৩৫ হাজার মানুষ নিহত হওয়ার খবর ছাপে। নয় মাসব্যাপী বর্বরতায় পাকিস্তান বাহিনী ও তাদের দোসররা তিন লক্ষাধিক নারীকে ধর্ষণ করে। আন্তর্জাতিক গবেষক সুজান ব্রাউমিলার তার গ্রন্থ Against Our will: Men Womaen And Rape-এ লিখেছেন: ‘200,000, 300,000 or possibly 400,000 women were raped. Eighty percent of the raped women were Moslems, reflecting the population of Bangladesh, but Hindu and Christian women were not exempt ... The Pakistanis, in their failed attempt of Islamization in Bangladesh, adopted this particular cruel and anti human approach of cleansing the followers of particular faith.

পাকিস্তানি সৈন্যদের নির্বিচার গণহত্যার ব্যাপকভিত্তিক প্রথম বর্ণনা দেন পাকিস্তানি সাংবাদিক অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লন্ডনের ‘সানডে টাইমস’ পত্রিকায় ১৩ জুন ১৯৭১। মানবতাবাদী এই সাংবাদিকের রিপোর্ট বিশ্ববিবেক নাড়িয়ে দেয়। রিপোর্টটি পড়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী আবেকআপ্লুত হন। পত্রিকার সম্পাদক হেরাল্ড ইভান্সের ভাষ্য মতে: the article had shocked her so deeply it had set her ‘on a campaign of personal diplomacy in the European capitals and Moscow to prepare the ground for India’s armed intervention’. 

মার্কিন সিনেটর অ্যাডওয়ার্ড কেনেডি আগস্ট মাসে ভারতের শরণার্থী শিবিরগুলো পরিদর্শন করেন । তিনি পাকিস্তানি সৈন্যদের বিরুদ্ধে সরাসরি গণহত্যা চালাবার অভিযোগ করেন। ‘গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস’-এ বাংলাদেশের হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ংকর গণহত্যার অন্যতম বলে উল্লেখ করা হয়। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘নিরাপত্তাবিষয়ক আর্কাইভ’ তাদের অবমুক্তকৃত দলিল প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশের নারকীয় হত্যাজ্ঞকে selective genocide হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। 

ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন কনসাল জেনারেল আর্চার কে. ব্লাড, পাকিস্তান বাহিনীর ব্যাপক গণহত্যার বর্ণনা দিয়ে ওয়াশিংটনে কূটনৈতিক বার্তা পাঠান। হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও গবেষক R.J. Rummel লেখেন: These ‘willing executioners’ were fueled by an abiding anti-Bengali racism, especially against the Hindu minority. ‘Bengalis were often compared with monkeys and chicken …. And the soldiers were free to kill at will. 

১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জেনারেল নিয়াজিসহ ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা অফিসারকে বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে এবং তাদের বিচার করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু ১৯৭৪ সালের ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পর ৯৩ হাজার পাকিস্তানি যুদ্ধবন্দিসহ এসব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী দেশে ফিরে যায়। এর প্রধান কারণ যুদ্ধের ফলে ৪ লাখ বাঙালি পাকিস্তানে আটকে পড়ে এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে তাদের বিচার করার ঘোষণা দেন। পাকিস্তান সরকার এ সময় ২০০ জন বাঙালিকে বিচারের লক্ষ্যে কারারুদ্ধ করে। 

বিগত পাঁচ দশকে পাকিস্তান বাংলাদেশের মাটিতে তার সেনাবাহিনীর হত্যাযজ্ঞের কথা স্বীকার করেনি। ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে পাকিস্তান ‘deeply regretted any crimes that may have been committed’ কথাগুলো উল্লেখ করে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭১-এর ঘটনার জন্য ‘regret’ বা ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেন। ২০০২ সালে পারভেজ মোশাররফ ঢাকায় এসে ১৯৭১-এর ‘বাড়াবাড়ি’ বা ‘excesses’-এর জন্য ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেন। একমাত্র ২০১৫ সালে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার চলাকালে নওয়াজ শরিফের সরকার আগের অবস্থান থেকে সরে আসে এবং ইতিহাস পুরোপুরি অস্বীকার করে! অথচ ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীকে ছাড়িয়ে নিতে পাকিস্তানের সরকার যে বিবৃতিটি প্রচার করে-তা এ ছিল রকম: ‘… Pakistan expresses its readiness to constitute a judicial tribunal of such character and composition as will inspire international confidence to try the persons charged with offenses.’

কিন্তু সে কাজটি পাকিস্তান আজ অবধি করেনি। শুধু তাই নয়, তারা নতুন করে গণহত্যা অস্বীকারের অপপ্রচারে নেমেছে। বাংলাদেশের মাটিতে তাদের পরাজয়ের কারণ নির্ণয় করতে পাকিস্তান সরকার ১৯৭২ সালে বিচারপতি হামুদুর রহমান কমিশন গঠন করে। কমিশনের রিপোর্টটি ২৮ বছর ধরে চেপে রাখা হয়। ২০০০ সালে গণমাধ্যমে তা প্রকাশ পেলে দেখা যায়, কমিশনে সাক্ষী দিতে গিয়ে সিনিয়র পাকিস্তানি সেনাকর্মকর্তারা প্রায় সবাই ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ ও নারী নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছে। 

একজন পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তার জবানবন্দি এ রকম: ‘…we were told to kill the Hindus and Kafirs (non-believer in God). One day in June, we cordoned a village and were ordered to kill the Kafirs in that area. We found all the village women reciting from the Holy Quran, and the men holding special congregational prayers seeking God’s mercy. But they were unlucky. Our commanding officer ordered us not to waste any time.’


ইত্যাদি বিবেচনা করে হামুদুর রহমান কমিশন সুপারিশ করে: ‘The government of Pakistan should set a high-powered Court of Inquiry to investigate these allegations and to hold trials of those who indulged in these atrocities, brought a bad name to the Pakistan Army and alienated the sympathies of the local population by their acts of wanton cruelty and immorality against our own people.’

কিন্তু এসবের কিছুই করেনি পাকিস্তান। আমরা আরও জানি যে, পাকিস্তানের সিভিল সমাজ গণহত্যা ও নারী নির্যাতনের জন্য বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে বছরের পর বছর। শুধু দেশীয় নয়, আন্তর্জাতিক মহলের মতেও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে ‘তিন মিলিয়ন’ বা ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে। এই সংখ্যার জোড়ালো সমর্থন আছে National Geographic magazine, Encyclopedia Americana and Compton’s Encyclopedia-তে। এসব রিপোর্টের মতে, বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান বাহিনীর নিষ্ঠুরতা ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পোলান্ডে নাজি বাহিনী ও ১৯৩৫ সালের নানজিং বর্বরতার চাইতেও ভয়াবহ। এই গণহত্যা সম্পর্কে অন্যতম প্রধান পাকিস্তানি জেনারেল রাও ফরমান আলী তার ডায়েরিতে লেখেন, ‘paint the green of East Pakistan red’ অর্থাৎ বাংলার সবুজ মাঠকে রক্তবর্ণ করে দাও। 

এই গণহত্যা চলাকালে ১৯৭১ সালেই বিশ্বের মানবতাবাদীরা সোচ্চার হয়। নির্বিচার গণহত্যা বন্ধ এবং বাংলাদেশের সমর্থন জানাতে মার্কিন সংগীতশিল্পী জর্জ হ্যারিসন ও পণ্ডিত রবি শঙ্কর নিউইয়র্কে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর আয়োজন করেন। নতুন দিল্লি, প্যারিস ও লন্ডনে সরব হন মানবতাবিরোধীরা। ভারতের জয়প্রকাশ নারায়ণ বাংলাদেশের সমর্থনে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করেন। ফরাসি দার্শনিক অ্যাঁদরে মালরো বাংলাদেশের পক্ষে ‘আন্তর্জাতিক ব্রিগেড’ গঠনের ঘোষণা দেন। 

গবেষক রবার্ট পাইন তার Massacre, The Tragedy of Bangladesh বইতে ইয়াহিয়া খানের উদ্ধৃতি দেন এভাবে: ‘Kill three million of them and the rest will eat out of our hands’. অর্থাৎ বাঙালিদের তিন লাখকে মেরে ফেল, বাকিরা আমাদের দয়ায় বেঁচে থাকবে। ১৯৮১ সালে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, ‘Among the genocides of human history, the highest number of people killed in lower span of time is in Bangladesh in 1971. An average of 6000 (six thousand) to 12000 (twelve thousand) people were killed every single day...This is the highest daily average in the history of genocide’s.’ 

মাত্র নয় মাসে এবং যে দ্রুততায় বাংলাদেশে মানুষ হত্যা করা হয়েছে- তা বিশ্ব ইতিহাসে নজিরবিহীন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, দৈনিক গড়ে ৬ হাজার মানুষ খুন করা হয়েছে। কম্বোডিয়ার এই হার ছিল ১ হাজার ২০০। একমাত্র খুলনার চুকনগরেই ২০ মে ১৯৭১ এক দিনে ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। শত শত শীর্ষ বাঙালি বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে। 

সেদিনকার ‘পাকিস্তান ইন্টার সার্ভিস পাবলিক রিলেসন্স’ বা আইএসপিআর-এর প্রধান ব্রিগেডিয়ার আব্দুল রেহমান সিদ্দিকী একই সঙ্গে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান ইয়াহিয়া খানের ‘প্রেস অ্যাডভাইজার’। ‘East Pakistan: The Endgame- An Onlooker’s Journal 1969-1971’ নামে তার স্মৃতিকথায় তিনি নির্বিচারে বাঙালি হত্যা ও নারী ধর্ষণের কথা স্বীকার করেন। জেনারেল নিয়াজির একটি নির্লজ্জ মন্তব্যও বইতে উল্লেখ করেন ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিকী : ‘You cannot expect a man to live, fight and die in East Pakistan and go to Jhelum for sex, would you?’ 

অধ্যাপক আর জে রুমেল লিখেছেন: …The Pakistani army and allied paramilitary groups killed about one out of every sixty-one people in Pakistan overall; one out of every twenty-five Bengalis, Hindus, and others in East Pakistan. If the rate of killing for all of Pakistan is annualized over the years the Yahya martial law regime was in power (March 1969 to December 1971), then this one regime was more lethal than that of the Soviet Union, China under the communists, or Japan under the military (even through World War II). (Rummel, Death By Government).

পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ইতিহাস থেকে আজ অবধি শিক্ষাগ্রহণ করেনি, বরং সে দেশের বিবেকবান নাগরিক ও অনেক ইতিহাসবিদের ভাষায় দেশটির পরিচিতি ‘ইতিহাসের ঘাতক’ বলে। কারণ ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে হয় তারা বিকৃত করেছে, নয় আড়াল করেছে। স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে মনগড়া ইতিহাস যোগ করে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসশূন্য করেছে। কাজেই বাংলাদেশের মাটিতে তার সেনাবাহিনীর নিষ্ঠুরতা অস্বীকার করার ব্যাপারটি নতুন কিছু নয়। এতে ঐতিহাসিক সত্যের কিছু যায় আসে না। কারণ সেই বেদনাবিধুর অধ্যায়ের স্মৃতিচারণ করার কোটি মানুষ এখনো আছেন, আছে হাজারো, লাখো স্মৃতিচিহ্ন, আছে হাজারো গণকবর, আছে দেশি-বিদেশি প্রত্যক্ষদর্শী, সমীক্ষা ও গবেষণা- যা যুগ যুগান্তর ধরে সত্যকে তুলে ধরবে। 

ইতিহাসের ভয়ংকর এক হত্যাযজ্ঞের ট্র্যাজেডি ধারণ করা ২৫ মার্চকে ‘গণহত্যা দিবস’ ঘোষণার সর্বসম্মত প্রস্তাব গ্রহণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ একটি ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন করেছে। আমার বিশ্বাস, জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের রক্তরঞ্জিত, বেদনাবিধুর অধ্যায়ের এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি আমাদের জাতীয় দায়বদ্ধতার পূরণ, লাখো শহিদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা, ইতিহাসের প্রতি আনুগত্য এবং গণহত্যা অস্বীকারকারীদের নির্লজ্জ অপপ্রচারের উপযুক্ত জবাব ও প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচিত হবে।

আছে; দায়বদ্ধতা আছে গণহত্যার মতো পাশবিক প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মকে জাগ্রত করার। কাজেই বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে হবে ১৯৫ জন পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে, যারা দেশে ফিরে গেছে। আমার বিশ্বাস, তাদের সেনাবাহিনীর অপকর্ম ঢাকতে পাকিস্তান যে মিথ্যাচার করে চলেছে- তা দেশটির নতুন ঐতিহাসিক পাপ, এতে ঐতিহাসিক সত্যের নড়চড় হওয়ার সুযোগ নেই। 

কেবলমাত্র ‘গণহত্যা দিবস’-এর ঘোষণা বা তার পালনই নয়, এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির দাবিকে বেগবান করতে হবে। বিশ্ব সংস্থাকে আর্মেনিয়া, রুয়ান্ডা, বসনিয়া, কম্বোডিয়ার মতো বাংলাদেশের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই স্বীকৃতি আদায়ে সরকার ও সব মানবতাবাদী মহলকে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ বিশ্ববাসী একাত্তরের নৃশংসতা সম্পর্কে জ্ঞাত।

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও চিন্তক
[email protected]

মানিকনগরে প্রকাশ্যে মাদকের হাট!

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম
মানিকনগরে প্রকাশ্যে মাদকের হাট!
প্রতীকী ছবি। সংগৃহীত

রাজধানীর মানিকনগর এলাকার বিভিন্ন গলিতে চলে মাদকের রমরমা কারবার। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় নেশার দ্রব্য। সেখানে বেশ কিছু জায়গা এখন মাদকের হটস্পট। 

হটস্পটগুলো হচ্ছে পুকুর পাড়, বালুর মাঠ ও মিয়াজান গলি। সম্প্রতি এসব হটস্পটে গিয়ে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বেচাকেনার দৃশ্য চোখে পড়ে।

মাদক বিক্রির স্পটে কথা হয় মাদক বিক্রেতা কালা পাভেজের সঙ্গে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই কিছু লাগবে না কি। যদি লাগে লজ্জা শরম ফেলে কোনটা লাগবে শুধু জানান। গাঁজার এক পোঁটলার দাম ১০০ টাকা, আর ইয়াবার দাম বাড়ছে। আগে এক পিস ইয়াবা ২৫০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন ৩৫০ টাকা করে দেওয়া লাগবে। তবে মাল ভালো।’

এ সময় দেখা যায়, পাভেজের সঙ্গে রয়েছে আরও ১০ থেকে ১৫ জন। তারা সবাই মাদক কারবারি নাসিরের অনুসারী। নাসির পুলিশের চোখে ওই এলাকার বড় মাদক সম্রাট। তিনি মাদক কারবার করে কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি মাদক সেবনকারীদের দিয়ে বিভিন্ন স্পটে মাদক বিক্রি করেন। তার সঙ্গে মিয়াজান গলির কিছু নারীও জড়িত।

মানিকনগর মিয়াজান গলির সামনে কিছু সময় দাঁড়ালে দেখা যায়, সোর্স বাবুল নামের এক ব্যক্তি বাদামের ঝুড়ির মধ্যে গাঁজা বিক্রি করছেন। এ সময় বেশ কয়েকজনকে তা কিনতে দেখা যায়। প্রকাশ্যে বাদামের ডালায় গাঁজা সাজিয়ে এভাবে প্রায় দিন সকাল-সন্ধ্যা মাদকদ্রব্য বিক্রির রমরমা কারবার চলে। দূর থেকে দেখে মনে হবে, এটা একটা সাধারণ হাটের মতোই। 

পুলিশ জানায়, মাদক কারবারিরা নিয়মিত একটি নির্দিষ্ট গলি বা এলাকায় গিয়ে মাদক বিক্রি করে। এসব অপরাধ দমনে পুলিশ নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে। তবে তাতে তেমন কোনো ফল আসছে না। কারণ মাদক কারবারিরা জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজ করে।

সূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে অসংখ্য লোককে গ্রেপ্তার করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের ২৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৬০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গত সোমবার সরেজমিনে মানিকনগর এলাকায় বেলা ৩টা ২৪ মিনিটের দিকে বালুর মাঠে কথা হয় মাদক বিক্রেতা নাসিরের ছোট ভাই পিয়াসের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করি আপনাকে কে বলেছে। মাঝে মাঝে খাই এবং সামান্য বিক্রি করি।’

গাঁজার ক্রেতা দিলুর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সামান্য গাঁজা সেবন করি, তেমন কোনো অপরাধ করি নাই। সব সময় গাঁজা পাওয়া যায় না, মাঝে মাঝে সপ্তাহে এক দিন এখানে গাঁজা বিক্রি হয়। এ জন্য যখন খবর পাই তখন প্রয়োজনমতো কিনে নিয়ে যাই।’

পুলিশে ধরে না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ধরে আবার ছেড়ে দেয়। আমি তো কারবার করি না। ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাই।’
সূত্র জানায়, এই এলাকার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী হলো পিয়াস এবং তার শ্বশুর আরাফাত। এ ছাড়া বিভিন্ন স্পটে মাদক বিক্রি করেন বাবুল, জুয়েল, সোর্স বাবু ও ডিলার পিয়াস।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মুগদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল হোসাইন (ওসি তদন্ত) খবরের কাগজকে বলেন, আপনি যাদের নাম বললেন তাদের নামে ৫ থেকে ১০টির বেশি মামলা রয়েছে। এরা এক একসময় এলাকা পরিবর্তন করে। এদের ধরতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। তা ছাড়া মাদকের সঙ্গে কোনো আপস নেই।’

কারারক্ষীদের মাদক কারবার: লঘুদণ্ডে কমছে না অপরাধ

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:৩৩ পিএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:৫৩ পিএম
কারারক্ষীদের মাদক কারবার: লঘুদণ্ডে কমছে না অপরাধ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

কারাগারে বন্দিদের সঙ্গে সখ্য গড়ে মাদক কারবারে জড়িয়ে পড়ছেন একাধিক কারারক্ষী। মাদকসহ আটক হওয়ার পরও নানা অজুহাত ও মুচলেখায় পার পেয়ে যাচ্ছেন অনেকে। অসাধু একাধিক কর্মকর্তার গাফিলতি, যথাযথ দায়িত্বে অবহেলা এবং ধরা পড়ার পর লঘুদণ্ডের কারণে কারারক্ষীরা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। এ ছাড়া বিভাগীয় মামলার পর তদন্তের নির্দিষ্টসীমা না থাকা এবং তদন্ত চলাকালে উচ্চ মহল দিয়ে সুপারিশ ও অপরাধ প্রমাণ হলে আপিলের বিধান থাকায় কারাগারে মাদকের অপরাধ বাড়ছে। 

কারা সূত্র জানায়, কারারক্ষীরা মাদক কারবারে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ার পরও যে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তা নামমাত্র। জড়িতদের বরখাস্ত, বেতন ও পদোন্নতি না দেওয়া, চাকরিচ্যুত করা বা দূরবর্তী স্থানে বদলি না করে নিজ জেলায় বদলি করা হচ্ছে অনেককে। এ ছাড়া তাদের সংশোধনেরও তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। 

জানা গেছে, ৬ মাস থেকে ১ বছর সময় নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করা হয়ে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে এমন রিপোর্টই দেওয়া হয়। কারাগারের কতিপয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা খেয়ে মিথ্যা রিপোর্ট দিয়ে থাকেন। 
নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে কর্মরত কারারক্ষী মো. সজীব মিয়া এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার হতে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বদলির আদেশপ্রাপ্ত কারারক্ষী মো. মোবারক হোসেনকে কয়েকজন মাদক কারবারিসহ সোনারগাঁ থেকে গত ১৯ মে রাত ১০টার দিকে আটক করে নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশ। 

এ বিষয়ে জেল সুপার ও পুলিশ সুপার আলোচনার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের ডেপুটি জেলার সাইফুল ইসলামকে পাঠিয়ে পুলিশ সুপারের কার্যালয় হতে তাদেরকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়। কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে কারা এলাকা ত্যাগ, শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা এবং মাদক কারবারিদের সঙ্গে আটক হওয়ায় কারা বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থাও নেওয়া হয়।

কারা সূত্র জানায়, নারায়ণগঞ্জ কারা কর্তৃপক্ষ তাদের সুবিধার্থে সজীব ও মোবারকের বদলি করার জন্য কারা উপ-মহাপরিদর্শক বরাবর চিঠি পাঠান। সজীবকে ঢাকা বিভাগীয় দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। পরে বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে অভিযুক্ত কারারক্ষীকে সংশোধনের তেমন কোনো সুযোগ না দিয়ে সম্প্রতি তাকে তার নিজ জেলা নরসিংদীর পার্শ্ববর্তী জেলা কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে বদলি করা হয়।

নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের একাধিক কারারক্ষী জানান, সজীব অনেক বেশি বেপরোয়া ছিলেন। মাদক সেবন, কারাগারে মাদক প্রবেশ করানো, নারীদের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক, সুবিধামতো ডিউটি বদলসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িত।

কারা সূত্র জানায়, একই অভিযোগে ২০২১ সালের শেষ দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের কাজ থেকে সজীবকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়। 

কারা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘কেউ অপরাধ করলে অবশ্যই তার শাস্তি হয়। আমরা প্রথমে বিভাগীয় মামলার ব্যবস্থা করি। এরপর অপরাধীকে সাময়িক বরখাস্ত বা বদলি করা হয়। এ ছাড়া তদন্তের পর অপরাধ প্রমাণিত হলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হয় ও অনেক ক্ষেত্রে চাকরিও চলে যায়। 

তিনি আরও বলেন, কারাগারে প্রবেশের সময় তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়। এ ছাড়া তারা যে ব্যারাকে থাকেন সেখানেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। কারাগারে মাদক প্রবেশ ঠেকাতে কারা কর্তৃপক্ষ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। 

এর আগে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে মাদকসহ গ্রেপ্তার হন কারারক্ষী সোহেল রানা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে একইভাবে গ্রেপ্তার হন প্রধান কারারক্ষী সাইফুল ইসলাম। এদের মতো অনেক কারারক্ষী মাদক কারবারে যুক্ত রয়েছেন। গত ৫ বছরে ২০২ জন কারারক্ষীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে চাকরিচ্যুত হয়েছেন ১২৫ জন ও অর্ধশত কারারক্ষীকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কারারক্ষীকে মাদক মামলায় পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া অন্য আরেকটি ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে ৬ মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গাজীপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত-৩-এর বিচারক মোসাম্মাৎ রেহেনা আক্তার এ রায় দেন। 

জানা গেছে, শুধু গত বছরই মাদকসংশ্লিষ্টতায় বিভাগীয় মামলায় ২৫ জন কারারক্ষীর শাস্তি হয়েছে। এ ছাড়া নজরদারিতে রয়েছেন ৩৫০ জন।

এ বিষয়ে সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক তৌহিদুল হক খবরের কাগজকে বলেন, কারারক্ষীদের মাদক কারবারে জড়িত থাকার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের পর কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। ধরা পরার পর অপরাধের মাত্রা অনুযায়ী তাদের প্রাথমিক অবস্থায় যে শাস্তি দেওয়া হয় তা লোক দেখানো। বিভাগীয় ব্যবস্থায় লঘু শাস্তির কারণে এটি তাদের ওপর তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না। 

এ ছাড়া কতিপয় প্রভাবশলী কর্মকর্তারাও জড়িত থাকার কারণে তারা কারারক্ষীদের বিভিন্নভাবে বাঁচানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। তিনি বলেন, কারারক্ষীদের এই অপরাধ খুবই হালকা করে দেখা হয়। বড় অপরাধে লঘুশাস্তি হলে তাদেরও ইচ্চাশক্তি বেড়ে যায়। একজনের দেখাদেখি আরেকজন অপরাধে জড়ান। কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা। 

এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে তিনি বলেন, কারাগারে সিসি ক্যামেরা থাকলেও মাদকের অপরাধ শতভাগ নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। অসাধু কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় না আনলে কারাগার মাদক মুক্ত করা যাবে না।

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জের জেল সুপার মো. মোকাম্মেল হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, সজীব ও মোবারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্টে তারা অপরাধী প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। 

মাদক মামলা এক-তৃতীয়াংশেরও কম নিষ্পত্তি

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:২২ পিএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:৪৮ পিএম
মাদক মামলা এক-তৃতীয়াংশেরও কম নিষ্পত্তি

চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ঢাকা মহানগরে মোট মামলা হয়েছে ৬৮৬টি। নিষ্পত্তি হয়েছে মাত্র ২২০টি। অর্থাৎ এই সময়ে মামলা দায়েরের তুলনায় নিষ্পত্তি এক-তৃতীয়াংশেরও কম। সর্বশেষ গত ৩১ মে পর্যন্ত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত ও ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত মিলে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১৬ হাজার ১৫টি। আদালতের মাদক প্রসিকিউশন শাখা সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

মামলা নিষ্পত্তির এই চিত্র তুলে ধরে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু গতকাল মঙ্গলবার খবরের কাগজকে বলেন, মামলা নিষ্পত্তির হার এত কম হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে সাক্ষী সংকট। অনেক সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসছেন না। ঠিকানা অনুসারে অনেককে পাওয়া যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, এই সমস্য নিরসনে সবাইকে আরও আন্তরিক হতে হবে। আদালতে একজন সাক্ষী এলে অবশ্যই তার সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হবে, কোনোভাবেই একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য না নিয়ে ফেরত পাঠানো যাবে না। আদালতের নির্দেশ ঠিকমতো তামিল হচ্ছে কি না, যেমন আদালতের সমন ঠিক সময়ে পৌঁছাচ্ছে কি না, আদালতকে তা মনিটরিং করতে হবে। পুলিশ যদি ঠিকানা মতো সাক্ষীকে না পায়, তাহলে তা আদালতকে সময়মতো অবহিত করতে হবে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দেশে প্রথম মামলা হয় ২০০২ সালে। দুই দশক পর ২০২২ সালে মামলাটি নিষ্পত্তি করে রায় দেন আদালত। রায়ে সফিকুল ইসলাম ওরফে জুয়েলকে যাবজ্জীবনসহ মোট ৫ জনকে আদালত বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। ঢাকার পরিবেশ আপিল আদালতের তৎকালীন বিচারক ওই রায় ঘোষণা করেন।

ওই আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর ছিলেন এ এফ এম রেজাউল করিম (হিরণ)। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা প্রশ্নে তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরুন একটি মামলার সাক্ষী হলেন ঘটনাস্থলের কাছে থাকা একজন হকার। কিন্তু তিনি তো ভাসমান। মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলার সময় তাকে হয়তো ওই জায়গায় পাওয়া যায় না। আবার পুলিশের সাক্ষ্যেও মামলা নিষ্পত্তি হতে পারে বলে উচ্চ আদালতে নির্দেশনা আছে। কিন্তু পুলিশের চাকরিতে বদলির ব্যাপার আছে। মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলার সময় হয়তো একজন পুলিশ সদস্য দূরে কোথাও বদলি হয়ে আছেন বা অবসরে আছেন। সেটিও একটি সংকট।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব সংকট কমাতে উচিত স্থানীয়দের সাক্ষী করা। কিন্তু স্থানীয়রা হয়তো ভবিষ্যতে মামলায় হাজিরা দিতে হবে ভেবে আগেই সাক্ষী হওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে চলেন। আবার বদলি স্থান থেকে একজন পুলিশ সদস্য সাক্ষ্য দিতে এলে তাকে নিজ খরচে আসতে হয়। কোনো কোনো পুলিশ সদস্য অবসর জীবনে বয়সজনিত কারণেও সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়টি এড়াতে চান। 

ড্যান্ডিতে ডুবছে পথশিশুরা

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:১২ পিএম
আপডেট: ২৬ জুন ২০২৪, ১২:৪৯ পিএম
ড্যান্ডিতে ডুবছে পথশিশুরা
ছবি: সংগৃহীত

বিকেল হলেই বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের দেখা মেলে গুলিস্তানের মুক্তমঞ্চ এলাকায়। গত সোমবার (২৪ জুন) এখানেই সন্ধ্যা নামার পর জায়গায় জায়গায় গোল হয়ে বসে থাকতে দেখা যায় বেশ কিছু ছিন্নমূল শিশুকে। এদের সবারই বয়স ৮ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। কাছে গেলে দেখা যায়, এদের মধ্যে একজনের হাতে একটি কুঁচকানো পলিথিন ধরা। পলিথিনের ভেতর এক ধরনের হলুদ রঙের আঠালো যৌগ। 

শিশুদের সবাই পালাক্রমে এই পলিথিন নাকের কাছে নিয়ে জোরে টান দিচ্ছে। প্রতিবার টান দেওয়ার পর কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকছে। হাতবদল করে পলিথিন ঘুরছে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘোরার মতো করে। সেই সঙ্গে এই শিশুদের ভেতরের অনুভূতিগুলোও ঘুরছে বিভিন্ন ডাইমেনশনে। পলিথিনের ভেতরের যৌগ সাময়িক সময়ের জন্য এই কোমলমতি শিশুদের মাথার ভেতরের রাসায়নিক যৌগকে ওলট-পালট করে দিচ্ছে। পলিথিনের ভেতরে এই রাসায়নিক যৌগের নাম ‘ড্যান্ডি’। 

২০২২ সালে প্রকাশিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) ও ইউনিসেফের একটি গবেষণায় বলা হয়, দেশে ড্যান্ডিতে আসক্ত ১৫ দশমিক ২ শতাংশ শিশু। এর মধ্যে রাজধানীতেই ড্যান্ডিতে আসক্ত পথশিশুর সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। যদিও ২০২৪ সালে এসে এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি বেড়েছে। এ ছাড়া দেশে ৫৮ শতাংশ পথশিশু ড্যান্ডিসহ অন্যান্য মাদকে আসক্ত। ১৪ শতাংশ শিশু ১০ বছর বয়সের আগেই মাদক সেবন করে। তুলনামূলক সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় পথশিশুদের মধ্যে ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ গাঁজা সেবন করে। 

ড্যান্ডি মূলত এক ধরনের আঠা। ‘ড্যানড্রাইট অ্যাডহেসিভ’ বা ‘ড্যান্ড্রাইট’ নামের আঠাটিকেই মাদকসেবীরা ‘ড্যান্ডি’ বলে চেনে। এই আঠা পলিথিনে ভরে নেশা করে তারা। আঠায় থাকা কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, টলুইন, অ্যাসিটোন ও বেনজিন স্বাভাবিক তাপমাত্রাতেই বাষ্পে পরিণত হয়। এই বাষ্প নিশ্বাসের মাধ্যমে গ্রহণ করলে স্বাভাবিক চিন্তাভাবনা লোপ পায়। তখন এই নেশা গ্রহণকারী এক ঘোরের মধ্যে সময় কাটায়। ড্যান্ডি সেবনে ক্ষুধামান্দ্য তৈরি হয়। সামাজিক বাস্তবতা ভুলে থাকা যায়, যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়া যায়। আর খুব অল্প খরচে এই নেশা কিনতে পাওয়া যায় বলে পথশিশুরা ঝুঁকে পড়ছে এতে।

সোমবার রাত ১০টার পর রাজধানীর ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলের সামনে দেখা যায় পথশিশুদের এ রকম জটলা। এদের মধ্যে একজন ১৪ বছরের রনি। তাকে প্রায়ই ফার্মগেট লেগুনাস্ট্যান্ডে লেগুনার হেল্পারি করতে দেখা যায়। রাতে প্রতিদিন সে হাজিরা দেয় এই ড্যান্ডির আখড়ায়। সারা দিনের উপার্জন ড্যান্ডির পেছনে খরচ করে। রাতে পলিথিনে সুখটান দেয়। তার ফাঁকে জানায়, ড্যান্ডি খেলে ক্ষুধা লাগে না। তাই খায়। কিন্তু তার উপার্জনের টাকায় তো দুই বেলা খাবারের জোগান হয়ে যায়। এ কথা বললে জানায়, ‘আমার ট্যাহা, আমি ড্যান্ডি খামু, ভাত খামু না। কার কী!’ 

তবে ক্ষুধার তাড়নায় ড্যান্ডি সেবনের ব্যাখাকে কেবল নেশা করার অজুহাত বলে মন্তব্য করেছেন পথশিশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘পথশিশু সেবা সংগঠন’-এর কো-অর্ডিনেটর কাউছার আহমেদ। তিনি জানান, ‘এই নেশার কারণ ক্ষুধা নয় বরং এর সহজলভ্যতা। জুতার আঠা বা গামের টিউবের দাম ৩৫ টাকা। একটা কৌটার দাম ১০০ টাকা। এই টাকা চাইলেই বিভিন্ন উপায়ে তারা এক দিনে সংগ্রহ করতে পারে। আবার মুচির দোকান বা হার্ডওয়্যারের দোকান থেকেও ১০ টাকা দিয়ে অল্প পরিমাণে এরা সংগ্রহ করে। ফলে ভাগে ভাগে জোগাড় করে নেশা করতে পারে। ড্যান্ডির নেশা থেকে পথশিশুদের বাঁচাতে হলে এর সহজলভ্যতাকে আগে বন্ধ করতে হবে।’ 

মগবাজার ফ্লাইওভারের নিচে ড্যান্ডি সেবন করতে দেখা যায় আরেক শিশু জহিরকে। ময়লা শরীরে ভর্তি। জহির জানায়, বিভিন্ন জায়গায় বোতল, প্লাস্টিকের টুকরো, ভাঙারি সংগ্রহ ও বিক্রি করে। ক্ষুধা মেটাতে ড্যান্ডিতে আসক্ত হয়ে পড়েছে। আঠাটি মুচির কাছ থেকে কেনে সে। এ ছাড়া বিভিন্ন বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও হার্ডওয়্যারের দোকানে বিক্রি হয় এটি। এই আঠা দিয়ে সাধারণত বিভিন্ন ইলেকট্রিক যন্ত্রপাতি, প্লাস্টিকের ব্যবহার্য জিনিসপত্র, চামড়াসহ বিভিন্ন পণ্য জোড়া দেওয়ার কাজ করা হয়।

কীভাবে এই নেশার ব্যাপারে জানলে প্রশ্ন করা হলে জহির বলে, ‘বন্ধুরা জানায়। ওরা আগে থাইকাই নেশা করত। এক দিন আমারেও সাধল। কইলাম, এডি খাইলে কী অয়? ওরা কইল, এডি নিলে সবকিছু ভালো লাগে। খিদা লাগে না। ঘুমও ভালো অয়। তহন আমারো ইচ্ছা করল টানতে। কয়েক দিন অগো লগে টাইনা এখন এডি ছাড়া পাগল পাগল লাগে।’ 

এ বিষয়ে পথশিশু সেবা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবক বৃষ্টি সরকার খবরের কাগজকে জানান, ড্যান্ডিসহ সব ধরনের নেশাই পথশিশুদের মধ্যে একজনের কাছ থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে অন্যজনের কাছে। পথশিশুরা সাধারণত গাঁজা, ড্যান্ডি ও পেট্রল শুঁকে নেশা করে। নেশার কারণে শিশুদের মানসিক বিকৃতি ঘটে। নেশার অর্থ জোগাড় করতে ছিনতাই, চুরি, পকেটমারি, মাদক কেনাবেচাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ে পথশিশুরা। নেশা সেবনে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। 

২০২২ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘পথশিশুদের জরিপ-২০২২’-এ গবেষণায় উঠে আসে নেশাগ্রস্ত ৫৫ শতাংশ শিশুরাই স্বাস্থ্যের দিক থেকে স্বাভাবিক নেই এবং ৬৪ শতাংশ শিশুর নিজেকে পরিচালনার সক্ষমতা নেই। পথশিশুরা শিক্ষা, পুষ্টিসহ নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

আবার বিভিন্ন এলাকায় পথশিশুদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় আরও এক আশঙ্কাজনক তথ্য। পথশিশুরা জানায়, ড্যান্ডির নেশায় আসক্ত পথশিশুরা তাদের নেশার টাকার জোগান দিতে দলবদ্ধভাবে আক্রমণ চালায় অন্যান্য পথশিশুদের ওপর। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছিন্নমূল শিশু মুন্না জানায়, যেসব শিশু সারা দিন পরিশ্রম করে টাকা উপার্জন করে, তাদের টার্গেট করে দলগত আক্রমণ করে সব ছিনিয়ে নেয় নেশাখোর শিশুরা। মুন্না বলে, এরা নেশা করে সারা দিন, এখানে-সেখানে ঝিমায়। 

এর ফাঁকে সুযোগ খুঁজতে থাকে কার কাছ থেকে টাকা নেওয়া যায়। তারপর সুযোগ বুঝে মারধর করে টাকা নিয়ে যায়। নেশার টাকা পেতে তারা স্টেশনে আসা লোকদের কাছ থেকেও পকেট মারে, মোবাইল চুরি করে। এ ছাড়া এরা মাদকের চোরাচালান, বাজারজাত ও সামগ্রিক বিপণন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। 

রোজ গার্ডেন থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪, ১১:৪৬ এএম
আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪, ১১:৪৬ এএম
রোজ গার্ডেন থেকে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ

আজ ২৩ জুন, আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৪৯ সালের এই দিনে পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে এক ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে জন্ম নেয় দলটি। দীর্ঘ ৭৫ বছর পার করে ৭৬-এ পা দিয়েছে উপমহাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। রোজ গার্ডেন থেকে বর্তমান ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ- এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে গিয়ে যেমন বহু প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে, তেমনি দলটির ঝুলিতে জমা হয়েছে অনেক অর্জন। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় গৌরবের অর্জন হচ্ছে, এই দেশের স্বাধীনতা। এই অর্জনে এককভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামী লীগ।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে আওয়ামী লীগের (পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ) প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে লিখেছেন- ‘কোথাও হল বা জায়গা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত কাজী হুমায়ুন বশীর সাহেবের কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনের বাড়িতে সম্মেলনের কাজ শুরু হয়েছিল।’ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু আরও লেখেন- ‘আমি মনে করেছিলাম, পাকিস্তান হয়ে গেছে। সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের দরকার নাই। একটা অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হবে, যার একটা সুষ্ঠু ম্যানিফেস্টো থাকবে। ভাবলাম, সময় এখনো আসে নাই, তাই যাঁরা বাইরে আছেন তাঁরা চিন্তাভাবনা করেই করেছেন।’

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘আওয়ামী লীগ উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০’-এ লিখেছেন, ‘মুসলিম লীগ সরকারের ভয়ভীতি, ত্রাস ও নির্যাতনকে উপেক্ষা করে সম্মেলনকে (মুসলিম লীগের কর্মীদের সম্মেলন) সহযোগিতা দিতে অনেক ঢাকাবাসী সাহস পাননি। সম্মেলনের জন্য সরকারি কোনো মিলনায়তন জোগাড় করা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে কাজী হুমায়ুন বশীর তাঁর কে এম দাস লেনের বাসভবন রোজ গার্ডেনে সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব দেন। সম্মেলনের প্রস্তুতি চলার সময় ভাসানী (মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী) ১৫০ নম্বর মোগলটুলিতে থাকতেন। ১০ জুনের দিকে সংবাদ পাওয়া গেল, সরকার ভাসানীকে গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করছে। খন্দকার মোশতাক আহমদ তখন কাজী বশীরের সঙ্গে পরামর্শ করে শওকত আলীর সহায়তায় ভাসানীর গায়ে কম্বল পেঁচিয়ে তাকে সেই রাতেই ঘোড়ার গাড়িতে করে রোজ গার্ডেনে পৌঁছে দেন। সম্মেলন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভাসানী কাজী বশীরের রোজ গার্ডেনেই ছিলেন।’

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের (পরে আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠার বর্ণনা দিতে গিয়ে মহিউদ্দিন আহমদ আরও লেখেন, ‘২৩ জুন (১৯৪৯) বেলা তিনটায় রোজ গার্ডেনের দোতলার হলঘরে সম্মেলন শুরু হয়। সেখানে ২৫০ থেকে ৩০০ কর্মী উপস্থিত হন।’ ১৫০ মোগলটুলি সম্পর্কে মহিউদ্দিন আহমদ তার বইয়ে লেখেন, ‘এখানে বঙ্গীয় মুসলিম লীগের একটি শাখা অফিস ছিল। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এই শাখা অফিসকে কেন্দ্র করেই বিরোধী রাজনৈতিক শক্তি সংগঠিত হয়। ঢাকার নবাববাড়িকেন্দ্রিক প্রভাব খর্ব করার ক্ষেত্রে ১৫০ নম্বর মোগলটুলির তরুণদের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।’

‘আওয়ামী লীগ উত্থানপর্ব ১৯৪৮-১৯৭০’ বইয়ে তিনি আরও লেখেন, ‘আতাউর রহমান খান মূল অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন। অনেক আলোচনার পর ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। আওয়ামী লীগ নামটি মওলানা ভাসানীর দেওয়া। ...২৩ তারিখের (২৩ জুন) অধিবেশনের শেষ দিকে মওলানা ভাসানী প্রস্তাব করেন, প্রতিটি জেলা ও প্রতিষ্ঠানের একজন করে প্রতিনিধি নিয়ে সাংগঠনিক কমিটি গঠন করা হোক। এত বড় কমিটি করার ব্যাপারে অনেকেরই আপত্তি ছিল। পরে মওলানা ভাসানীকেই কমিটি করার অনুরোধ জানানো হয়। ভাসানী পরামর্শের জন্য একটি ঘরে ঢোকেন এবং কিছুক্ষণ পর বাইরে এসে ৪০ জন নিয়ে একটি কমিটির প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবটির ব্যাপারে সবাই একমত হন। কমিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী (সভাপতি), আতাউর রহমান খান, সাখাওয়াত হোসেন, আলী আহমেদ খান, আলী আমজাদ খান ও আবদুস সালাম খান (সহসভাপতি), শামসুল হক (সাধারণ সম্পাদক), শেখ মুজিবুর রহমান (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক), খন্দকার মোশতাক আহমদ ও এ কে এম রফিকুল হোসেন (সহসম্পাদক) এবং ইয়ার মোহাম্মদ খান (কোষাধ্যক্ষ)।’

ড. শ্যামলী ঘোষ তার ‘আওয়ামী লীগ ১৯৪৯-১৯৭১’ বইয়ে লিখেছেন, ‘১৯৪৯ সালের গ্রীষ্মের গোড়ার দিকে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের আন্তঃদলীয় দ্বন্দ্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছায়। দলের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের পক্ষপাতী সদস্যরা প্রাদেশিক পরিষদের টাঙ্গাইল আসনের উপনির্বাচনে মুসলিম লীগের দলীয় প্রার্থী খুররম খান পন্নীর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ঢাকার বিশিষ্ট মুসলিম লীগের কর্মী শামসুল হককে মনোনয়ন দান করে। শামসুল হক উল্লেখযোগ্য ভোটের ব্যবধানে পন্নীকে পরাজিত করলে প্রদেশে পরিবর্তনের বিরোধিতাকারীদের নড়বড়ে অবস্থানের মুখোশটি উন্মোচিত হয়ে পড়ে। পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতির পরবর্তী ঘটনাগুলো এরই স্বাভাবিক পরিণতি বৈ আর কিছু নয়। ১৯৪৯ সালের জুন মাসে কতিপয় মুসলিম লীগ এমএলএ কর্মী যারা দলীয় প্রভুদের অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে তারা ঢাকায় দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের আয়োজন করে।’

পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয় ১৯৫৫ সালে। এ প্রসঙ্গে ড. শ্যামলী ঘোষ তার বইয়ে উল্লেখ করেন, “১৯৫৫ সালের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রত্যাহার করা হলে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের জন্য সদস্যপদ লাভের পথ উন্মুক্ত হয়। ১৯৫৩ সালের জুলাই মাসে কাউন্সিল অধিবেশনে সর্বপ্রথম বিষয়টি উত্থাপিত হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ভাসানী কর্তৃক জনমত যাচাই না হওয়া পর্যন্ত প্রশ্নটি অমীমাংসিত থাকে (ছিল)।” পাকিস্তানের শোষণ থেকে মুক্তি অর্থাৎ স্বাধীনতার পর দলটির নাম হয় ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।

এই দীর্ঘ সময় (৭৫ বছর) পাড়ি দিতে আওয়ামী লীগকে কখনো সহ্য করতে হয়েছে শাসকের রক্তচক্ষু, কখনো দলটির নেতা-কর্মীদের ওপর নেমে এসেছে অসহ্য নির্যাতন। এই দলের প্রাণপুরুষ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে বেশির ভাগ সময় কাটাতে হয়েছে কারা প্রকোষ্ঠে। এমনকি একাধিকবার তার প্রাণ সংশয়ের উপক্রম হয়েছে। স্বাধীনতার পর জাতির পিতাকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন, দমন-পীড়ন আর জেল-জুলুম নেমে আসে। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা প্রবাস থেকে দেশে ফেরার পর আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন করেন। শেখ হাসিনার আপসহীন নেতৃত্বে ক্রমে সংগঠিত হতে থাকেন দলটির নেতা-কর্মীরা এবং পঁচাত্তর-পরবর্তী দুঃসময় কাটিয়ে ১৯৯৬ সালে জনগণের রায়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।

কিন্তু তারও আগে এই সংগঠনের প্রাণপুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান তার কাজের মধ্য দিয়ে হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা। তিনি (শেখ মুজিবুর রহমান) ১৯৫২ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর ঢাকার ‘মুকুল’ প্রেক্ষাগৃহে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে বঙ্গবন্ধুকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বঙ্গবন্ধু। প্রতিষ্ঠার পর থেকে রাজনৈতিক সংগ্রাম, যুক্তফ্রন্ট গঠন ও ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বিজয়সহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে পঞ্চাশের দশকেই আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল তথা প্রধান রাজনৈতিক শক্তি। তবে প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী রাজনৈতিক মতভিন্নতার জন্য ১৯৫৭ সালে দল ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) গঠন করেন।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের ওপর বিশেষ গুরুত্বসহ ৪২ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ। শুরুর দিকে দলটির প্রধান দাবিগুলোর মধ্যে ছিল- বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি, এক ব্যক্তির এক ভোট, গণতন্ত্র, সংবিধান প্রণয়ন, সংসদীয় পদ্ধতির সরকার, আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন এবং তৎকালীন পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য দূরীকরণ। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে আওয়ামী মুসলিম লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৬৬ সালেই (ষষ্ঠ কাউন্সিলে) বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। সপ্তম ও অষ্টম কাউন্সিলে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অপরিবর্তিত থাকেন। এভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ এবং গোটা বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন। তার নেতৃত্বে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে মুক্তিকামী মানুষ। এরপর আসে ভয়াল ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে নৃশংসভাবে নিহত হন জাতির পিতা। এরপর শুরু হয় ভাগ্যক্রমে বেঁচে থাকা তার (বঙ্গবন্ধুর) দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দীর্ঘ দুরূহ পথ।

কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। কিন্তু মাত্র পাঁচ বছর দেশ শাসনের পর ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়। পরবর্তী সময় দেশে রাজনৈতিক সংকটের (সেনাসমর্থিত সরকারের ক্ষমতা গ্রহণ) পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পুনরায় সরকার গঠন করে। এরপর ২০১৪, ২০১৮ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে।

সম্মেলন করার জন্য একটি হল ভাড়া পেতে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতারা ১৯৪৯ সালে দ্বারে দ্বারে ঘুরে পেয়েছিলেন রোজ গার্ডেন। এই রোজ গার্ডেনে জন্ম নেওয়া দলটি (আওয়ামী লীগ) এখন উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন একটি রাজনৈতিক দল। দলটি (আওয়ামী লীগ) টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। এখন সম্মেলন করার জন্য কোনো হল খুঁজে বেড়াতে হয় না। ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের সুরম্য ভবন। সেখানে রয়েছে অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। তবে বেশ কিছু সময় ৯১, নবাবপুর রোডেও ছিল আওয়ামী লীগের কার্যালয়। 

১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করা হয়। তখন এখানেই (৯১, নবাবপুর রোড) বসতেন দলের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছুদিন বসে অফিস করেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনের দুই জায়গায় দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের অফিস ছিল। ১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দলের দায়িত্ব নিলে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নতুন ঠিকানা হয় ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ।