পরিবেশ-প্রতিবেশ, জীববৈচিত্র্য, জনস্বাস্থ্য ও কৃষি অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি। উষ্ণায়ন নিয়ে দিন দিন পৃথিবীজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে তাবৎ বিশ্বনেতা এক ছাদের নিচে বসে গলদঘর্ম হচ্ছেন অসহনীয় উষ্ণতার কবল থেকে পৃথিবীকে রক্ষার জন্য কৌশল খুঁজে বের করতে।
২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণ ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে আটকে রাখার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। জাতিসংঘের বৈশ্বিক উষ্ণতাবিষয়ক আন্তঃসরকার প্যানেলের (আইপিসিসি) গবেষণায় দেখা যায়, ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির চূড়ান্ত সীমা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। যেটা কি না প্রাক-শিল্পযুগের মাত্রার থেকেও বেশি। এতে করে আবহাওয়া পরিস্থিতি অস্বাভাবিক রূপ নেবে। দাবানল, বন্যার পাশাপাশি লাখ লাখ মানুষের খাদ্য সংকটের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেবে। দেখা দিতে পারে চরম দুর্ভিক্ষ। বাংলাদেশের জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা প্রতিবারই বিশ্বসভায় গিয়ে দেশের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। নানান পরামর্শ দেন। তবে দেশে পরিবেশ দূষণ, বায়ুদূষণ, নাব্য পরিস্থিতির ব্যবস্থাপনায় তেমন কোনো উন্নতি ঘটছে না। বরং দিনকে দিন দূষণের মাত্রায় রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। নগরায়ণের নামে উজাড় হচ্ছে সবুজ বৃক্ষরাজি। দখল-ভরাটে সংকুচিত হচ্ছে জলাধার। শিল্পায়নের নামে সর্বনাশ হচ্ছে ফসলি জমি, নদনদীর পানির। শহর-নগরে পলিথিন-প্লাস্টিকে ভরে থাকে নালা-নর্দমা; বন্ধ হয়ে যায় পানিপ্রবাহ, সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আজ সোমবার উদযাপন হচ্ছে আন্তর্জাতিক ধরিত্রী দিবস। এবারে দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘প্ল্যানেট বনাম প্লাস্টিক’। এই প্রতিপাদ্যের মাধ্যমে প্লাস্টিক ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে সব প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ ও প্লাস্টিকের দূষণ রোধে জাতিসংঘের একটি শক্তিশালী চুক্তির উদ্যোগের বিষয়টিকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে প্রথম সারির একটি দেশ। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ সরাসরি খুব বেশি দায়ী নয়। বরং উন্নত বিশ্ব অনেক বেশি দায়ী। অন্য দেশগুলো অনেক বেশি মাত্রায় কার্বণ নিঃসরণ করে। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে বৈশ্বিকভাবে। প্রতিবছর আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে এ-সংক্রান্ত ক্ষতিপূরণ নিয়ে দর-কষাকষি চলে। বাংলাদেশও সেখানে অংশ নেয়।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- নদীভাঙন, ঝড়, বন্যা বেশি হয়। উত্তরে খরা, দক্ষিণে লবণাক্ততা আরেক বড় সমস্যা।
ড. আইনুন নিশাত আরও বলেন, ‘উষ্ণতা বৃদ্ধি যেমন আমাদের বড় সমস্যা তেমনি খরাও আরও বড় সংকট। রোদ থেকে বাঁচতে হয়তো ঘর থেকে বের না হলেও চলবে কিংবা ছাতা ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু বৃষ্টি না হলে তো আরও কঠিন ব্যাপার। এর সবটাই কিন্তু মানুষের হাতে নেই। এর পেছনে একেক দেশে একেক ধরনের কারণ রয়েছে। প্রকৃতির ওপর মানুষের অবিচার বন্ধ করতে হবে। মানুষকে জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সামর্থ্য অর্জন করতে হবে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, দেশে আগের চেয়ে অনেক বেশি মাত্রায় রোগব্যাধি বেড়ে গেছে। নানান রোগের জটিলতা বেড়েছে। এর অনেকগুলোর সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব জড়িত। বিশেষ করে মশা, পোকামাকড়, পানি ও বায়ুবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। যার মাধ্যমে ডেঙ্গু, কলেরা, ডায়রিয়া, জন্ডিস, শ্বাসের সমস্যা বেশি বেড়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, ১৯৭১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা প্রতি দশকে ০.১৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রতি দশকে বেড়েছে ০.২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের পূর্বাঞ্চলে সর্বাধিক পরিবর্তন দেখা যায়। বেশি উষ্ণতা থাকে গ্রীষ্ম এবং শরতের মাসগুলোতে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য-উপাত্ত ও পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ঘূর্ণিঝড়ের মতো জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপদের ঝুঁকিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে দেশে ৯ কোটির বেশি মানুষ বা মোট জনসংখ্যার ৫৬ শতাংশের বেশি মানুষ প্রতি বছর বন্যার ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এ ছাড়া সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ০ দশমিক ৫ মিটার বৃদ্ধির আশঙ্কাও রয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে মারাত্মক ঝড়বৃষ্টি এবং উপকূলীয় বন্যা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হয়। যাতে গড় বার্ষিক আর্থিক ক্ষতি ১ বিলিয়নের বেশি হয়। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত পারে।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কয়েক বছর আগে করা এক গবেষণায় বাংলাদেশের বিষয়ে বলা হয়, নগরাঞ্চলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি শুধু বাংলাদেশের সমস্যা নয়, এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষ নগরে বসবাস করবে। বাংলাদেশে এর বড় প্রভাব পড়বে নগরায়ণের প্রবল বিস্তারের মাধ্যমে।
কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আশরাফ দেওয়ান বলছেন, তাপমাত্রা এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী পাঁচ বছরেই বাংলাদেশের শহরগুলো বসবাসের জন্য অযোগ্য হয়ে যাবে।
তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, মানুষ ঘর ঠান্ডা রাখার জন্য প্রচুর পরিমাণে এয়ার কন্ডিশনার বা এসি ও পানি ব্যবহার করবে। ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল ও ভয়াবহ রূপ নেবে পরিবেশের দিক থেকে।
গবেষকরা ধারণা করছেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০ বছর পর বড় বড় শহরগুলোর তাপমাত্রা গ্রামাঞ্চলের তুলনায় পাঁচ থেকে ছয় ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকাতে এখনই স্থানীয় উদ্ভাবন কাজে লাগাতে হবে। কয়েক দশক আগে ঢাকা শহরের জন্য যে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল তাতে আজকের দিনের এত অধিক সংখ্যক জনসংখ্যার কথা বিবেচনা করা হয়নি। এর ফলে ঢাকায় অপরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন হচ্ছে।
কৃষিতথ্য সার্ভিসের গবেষক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার জানান, কৃষি অর্থনীতি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে কৃষিতথ্য সার্ভিসের সূত্রমতে, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার বর্গকিলোমিটার ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ১ হাজার ৪০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা আকস্মিক বন্যার কবলে পড়ে প্রতি বছর। বন্যা ফসল ছাড়াও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে। জোয়ারজনিত বন্যা উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি করে। জমিতে লবণাক্ত পানির জলাদ্ধতার সৃষ্টি করে, যা ফসল চাষের জন্য অনুপযোগী। সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, নীলফামারী ইত্যাদি জেলা আকস্মিক বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফসল কাটার আগেই প্রতি বছর হাজার হাজার একর জমির পাকা বোরো ধান আকস্মিক বন্যায় আক্রান্ত হয়। ফলে চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাংলাদেশ পানিসম্পদে সমৃদ্ধ হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, বন্যা ও জলাবদ্ধতার প্রকোপ ক্রমাগত বাড়ছে। বাংলাদেশের গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২৩০০ মিমি এবং অঞ্চল ভেদে তা ১২০০ মিমি (দক্ষিণ-পশ্চিম) থেকে ৫০০০ মিমি (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) পর্যন্ত হয়ে থাকে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়ছে এবং ২০৩০ সালে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১০-১৫ শতাংশ এবং ২০৭৫ সালে প্রায় ২৭ শতাংশ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ড. মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, কোনো এলাকায় বৃষ্টিপাতের তুলনায় বাষ্পীকরণের মাত্রা বেশি হলে সেখানে খরা দেখা দেয়। এপ্রিল থেকে মধ্য নভেম্বরের মধ্যে পর পর ১৫ দিন বৃষ্টি না হলে খরার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। প্রতি বছর ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত হয়। গাছের বৃদ্ধি পর্যায়ে গড় বৃষ্টিপাতের অভাবে মাটিতে পানিশূন্যতা সৃষ্টি হয়, যা গাছের ক্ষতি করে। দেশে বিভিন্ন মাত্রার খরায় আক্রান্ত ৮৩ লাখ হেক্টর চাষযোগ্য জমির শতকরা ৬০ ভাগ জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়। এ ছাড়াও খরা আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল ও তেল ফসল, আলু, শীতকালীন সবজি এবং আখ চাষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মার্চ-এপ্রিলের খরা চাষের জন্য জমি প্রস্তুতিতে অসুবিধার সৃষ্টি করে। ফলে বোনা আমন, আউশ এবং পাট চাষ যথাসময়ে করা যায় না।
কৃষিবিজ্ঞানীরা জানান, মে-জুন মাসের খরা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকা বোনা আমন, আউশ ও বোরো ধান, পাট, ডাল ও তেল ফসল, আলু, শীতকালীলন সবজি এবং আখ চাষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। মার্চ-এপ্রিলের খরা চাষের জন্য জমি প্রস্তুতিতে অসুবিধার সৃষ্টি করে। ফলে বোনা আমন, আউশ এবং পাট চাষ যথাসময়ে করা যায় না। মে-জুন মাসের খরা মাঠে বোনা আমন, আউশ এবং পাট ফসলের ক্ষতি করে। আগস্ট মাসের অপরিমিত বৃষ্টি রোপা আমন চাষকে বাধাগ্রস্ত করে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসের কম বৃষ্টিপাত বোনা ও রোপা আমন ধানের উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং ডাল ও আলু ফসলের চাষকে দেরি করিয়ে দেয়। কাঁঠাল, লিচু, কলা ইত্যাদি ফলের গাছ অতিরিক্ত খরায় মারা যায়। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নদী-নালার নাব্য হ্রাস এবং গাছের প্রস্বেদনের হার বেড়ে যাওয়ায় সুপেয় পানির অভাব দেখা দিচ্ছে।
জলবায়ু নিয়ে কাজ করা কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে উফশী ধানের ফলন কমে যাবে এবং গমে রোগের আক্রমণ বাড়বে। বাংলাদেশে বর্তমানের চেয়ে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে গম চাষ সম্ভব হবে না। ধান গাছের কচি থেকে ফুল ফোটার সময় তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি হলে এবং অতি নিম্ন তাপে (২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে) শীষে ধানের সংখ্যা কমে যেতে পারে। ফুল ফোটা বা পরাগায়ণের সময় যদি অতিউষ্ণ তাপ থাকে তাহলে চিটার সংখ্যা থোড় অবস্থার চেয়ে বেশি হবে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ার কারণে ধান গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, ধান গাছ হলুদ বর্ণ ধারণ করে, ধানের চারা দুর্বল হয় এবং ফসলের জীবনকাল বেড়ে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পোকামাকড়ের বংশবৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিভিন্ন উদ্ভিদে রোগের আক্রমণ বেড়ে যাচ্ছে। দানা শস্যসহ বিভিন্ন ফসলে মিলিবাগ, এফিড (শোষক পোকা) ও ব্যাকটেরিয়া (জীবাণু গঠিত রোগ) ও ছত্রাকজনিত রোগের আক্রমণ বেশি বেশি দেখা যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অতিরিক্ত তাপ এবং আর্দ্রতা গাছের ছত্রাক রোগ বাড়ানোয় সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং একইভাবে পোকামাকড় ও বিভিন্ন রোগের বাহক পোকার সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়। বোরো মৌসুমে যদি রাতে ঠান্ডা ও কুয়াশা পড়ে, ধানের পাতায় পানি জমে থাকে এবং দিনে গরম পড়ে অর্থাৎ তাপমাত্রা বেড়ে যায় তবে ব্লাইট রোগের আক্রমণ বেড়ে যায়। অধিক আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার কারণে শীত ব্লাইট রোগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
কৃষিতে উষ্ণতা বৃদ্ধি, উষ্ণ ও শৈত্যপ্রবাহের ক্ষতিকর প্রভাব: আশঙ্কা করা হয় ২০৩০ সাল নাগাদ গড় তাপমাত্রা ১.০ ডিগ্রি, ২০৫০ সালে ১.৪ ডিগ্রি এবং ২১০০ সালে ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যেতে পারে। সাম্প্রতিককালে উষ্ণ ও শৈত্যপ্রবাহের মাত্রা বেড়েছে। বাংলাদেশে ক্রমান্বয়ে শীতকালের ব্যাপ্তি ও শীতের তীব্রতা দুই-ই কমে আসছে।
কৃষিতে লোনা পানির অনুপ্রবেশ ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব: লোনা পানির অনুপ্রবেশ বাংলাদেশের একটি মারাত্মক সমস্যা। ১৯৭৩ সালে ১৫ লাখ হেক্টর জমি মৃদু লবণাক্ততায় আক্রান্ত হয়, যা ১৯৯৭ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ হেক্টরে। বর্তমানে এর পরিমাণ প্রায় ৩০ লাখ হেক্টর। উজান থেকে পানিপ্রবাহ বাধা ও কম বৃষ্টিপাতের কারণে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত জমির পরিমাণ বাড়ছে, যা ভবিষ্যতে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং পরিমিত বৃষ্টিপাতের অভাবে আরও বেশি সমস্যার সৃষ্টি করবে। বাংলাদেশের মোট উপকূলীয় এলাকা প্রায় ২৫ লাখ হেক্টর, যার মধ্যে বর্তমানে প্রায় ১০.৫০ লাখ হেক্টর জমি বিভিন্ন মাত্রার লবণাক্ততায় আক্রান্ত।
বাংলাদেশে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জরিপে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার নদীতীর ভেঙে গেছে এবং আরও ৫০০ কিমি. ভাঙনের সম্মুখীন। স্যাটেলাইট চিত্র থেকে দেখা যায়, ১৯৮২ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ৩০০ হেক্টর নদী তীরের ভাঙনের বিপরীতে মাত্র ১ হাজার ৯০০ হেক্টর নতুন ভূমি গঠন হয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তন অব্যাহত থাকলে ভাঙা-গড়ার এ বৈষম্য আরও প্রকট হবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত পড়ুন...
শুধু জরিমানা নয়, সাজাও দিতে হবে
বিশ্বব্যাপীই উষ্ণতা আরও তীব্র হবে
জনসংখ্যার চাপ প্রকৃতি কীভাবে ধারণ করবে