ঢাকা ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

করখেলাপিদের মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ

প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০২৩, ১১:১১ এএম
আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:২৬ পিএম
করখেলাপিদের মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ

আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কর ও ঋণ পরিশোধের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব ব্যক্তি দুর্নীতিসংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। সম্পদ বাড়া-কমার হিসাবও নেওয়া হচ্ছে।

দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা প্রার্থী চূড়ান্ত করার সময় এসব তথ্য খতিয়ে দেখবেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে দলীয় বিভিন্ন সভায় আগামী নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সততার বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। যারা নিয়মিত কর পরিশোধ করেছেন ও ঋণের কিস্তি দিয়ে যাচ্ছেন এবং কোনো ধরনের দুর্নীতির মামলায় জড়িত নন বা অভিযোগ থাকলেও মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর দোষী বলে প্রমাণিত হননি এমন সব ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রার্থীর ভাবমূর্তি, গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা দেখা হবে। প্রতিবারই এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা দলের মনোনয়ন দিয়ে থাকি।’

এবার নানা টানাপোড়েন ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার পর প্রার্থীকে নিয়ে যাতে কোনো ধরনের সমালোচনা না হয়, এ জন্য দলটি আগেভাগেই এ উদ্যোগ নিয়েছে। 

অতীতে দেখা গেছে, অনেক রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার পর তাদের মনোনীত অনেক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে ঋণখেলাপি হওয়ায়। অনেকবারই এমন ঘটনা ঘটেছে। এসব নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। এতে ওই সব রাজনৈতিক দল সমালোচনার মুখে পড়েছে।

রাজস্ব আইন অনুসারে, কোনো প্রার্থীর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র এবং কর পরিশোধের সনদপত্র না থাকলে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জাতীয় নির্বাচনে অবৈধ বলে গণ্য করতে পারবে। অর্থাৎ কোনো করখেলাপি ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করার এখতিয়ার আছে নির্বাচন কমিশনের।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এরই মধ্যে এনবিআরের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভিন্ন কর সার্কেলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আয়করসংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তির বকেয়া থাকলে তার সঙ্গে কর সার্কেলের সংশ্লিষ্টরা যাতে যোগাযোগ করে পরিশোধ করার অনুরোধ করেন, সে কথাও বলা হয়েছে।

এনবিআরের নির্দেশে বলা হয়েছে, বর্তমান সংসদ সদস্যদের অনেকে আবারও প্রার্থী হবেন। অনেক আসনে প্রার্থী হিসেবে নতুন ব্যক্তিরা আসবেন। তাই বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমান গুরুত্ব দিয়ে তাদের রাজস্ব পরিশোধবিষয়ক তথ্য খতিয়ে দেখতে হবে। এ কাজ করতে সংশ্লিষ্ট কর সার্কেলের কর্মকর্তাদের নিয়ে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, এমন ব্যক্তিদের তিন বছরের রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের রিটার্নে আয়-ব্যয়ের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নটি তথ্য-প্রমাণসহ করসংক্রান্ত তথ্য এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলে (সিআইসি) পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাজস্ব আইনানুসারে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে করখেলাপি ব্যক্তির সব তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।

একইভাবে ওই সব ব্যক্তির ব্যবসাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণসংক্রান্ত তথ্য নেওয়া হবে। সব তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়ার পর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে। 

এ ব্যাপারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি করেন বা তাড়াহুড়া করে রিটার্ন জমা দেন। এতে অনেক সময় প্রকৃত তথ্য-প্রমাণ সংযুক্ত করা সম্ভব হয় না। এনবিআর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আসন্ন নির্বাচনের আগে কর পরিশোধের বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হলে তারা সঠিক হিসাবে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এতে এনবিআরের আদায় বাড়বে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও করখেলাপি হবেন না। এটি ভালো উদ্যোগ।’

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর খবরের কাগজকে বলেন, ‘দলীয়প্রধান যদি কর ও ঋণ পরিশোধের এবং দুর্নীতির বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তার দলের প্রার্থীদের চূড়ান্ত করেন, তবে তা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। তবে এটি খুব কঠিন কাজ। সরকারপ্রধান চাইলেও অনেক সময় সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিথ্যা তথ্য সংগ্রহ করতে উৎসাহিত করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেনও হতে পারে।’

প্রত্যয় স্কিম ‘ষড়যন্ত্রমূলক’

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:২৫ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:৩৪ পিএম
প্রত্যয় স্কিম ‘ষড়যন্ত্রমূলক’

চার কারণে সর্বজনীন পেনশনে প্রত্যয় স্কিমের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তিকে ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ হিসেবে দেখছেন শিক্ষক নেতারা। আলোচনা ছাড়া বড় পরিবর্তন, বর্তমানে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে একই নিয়মে পেনশন প্রাপ্য হলেও সেখান থেকে বের করে প্রত্যয় স্কিমে যুক্তকরণ, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা স্কিম এবং বিশ্ববিদ্যালয় অশান্ত হলে সরকারবিরোধীদের জন্য সুযোগ তৈরির শঙ্কা থাকায় এমনটা মনে করছেন তারা। 

প্রত্যয় স্কিমে অন্তর্ভুক্তি বাতিলসহ তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার সর্বাত্মক কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। বাকি দুই দাবি হলো- শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন এবং প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি।

সোমবার (১ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দলমত নির্বিশেষে এ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় উচ্চশিক্ষায় সেশনজটসহ নানা সংকট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তাই অল্প সময়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার পক্ষে মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। কোনো আলোচনা হয়নি। আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা আশাবাদী, শিক্ষকরা আগে কখনো এতটা ঐক্যবদ্ধ ছিল না। 

তিনি বলেন, আমরা স্টেকহোল্ডার। কমিটিতে আমাদের কাউকে রাখা হয়নি। আলোচনা ছাড়াই ঠিক করে দেবে, এটা কেন মানতে হবে? ২০১৫ সালেও তারা একই কাজ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর সামনে কমিটমেন্ট করেছিল শিক্ষকদেরকে সুপারগ্রেড দেবে। কিন্তু সেটা কোথায়? এখন আমরা প্রধানমন্ত্রী না বলা পর্যন্ত কোনো কিছু বিশ্বাস করব না। এ জন্য তাদেরকে বিশ্বাস করব না। আমাদেরকে আলাদা করে দিয়ে অপমান করা হয়েছে। এটা একটা ষড়যন্ত্র। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে অফিশিয়ালি কোনো পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে আন-অফিশিয়ালি বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে শিক্ষকরা যে প্রত্যয় স্কিমকে বৈষম্যমূলক বলছেন, সেটি বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। 

আন্দোলনকারী শিক্ষকরা বলছেন, প্রত্যয় স্কিমে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি ষড়যন্ত্রমূলক। ২০১৫ সালের পে-স্কেল করার সময় শিক্ষকদের গ্রেড অবনমন করা হয়। এবারও সরকারি কর্মকর্তাদের বাইরে রেখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ‘সেবক’ নামের আরেকটি স্কিম আনা হবে। সেই রূপরেখা এখনো ঠিক হয়নি। যেখানে একই সঙ্গে আগে সবাই পেনশন পেত, নতুন নিয়মে সবাইকে একসঙ্গে না রেখে আলাদা করে সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘পেনশন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলোচনা করা দরকার ছিল। সেটা না করে চাপিয়ে দেওয়াকে আমরা উচ্চশিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছি। প্রত্যয় স্কিম বাস্তবায়ন হলে মেধাবীরা শিক্ষকতায় আসবে না। শিক্ষার মান কমে যাবে। চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সদস্য ড. এজেএম শফিউল আলম ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, সবাই একই পেনশনের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। তাহলে কেন আমাদের আলাদা করা হলো? আবার আলাদা ‘সেবক স্কিম’ হবে? এটি কীভাবে সর্বজনীন হবে? পেনশন যাদের ছিল না, তাদের দরকার ছিল। কিন্তু যাদের আছে, তাদের জন্য কেন নতুন নিয়ম করতে হবে? 

সরকারের দায়িত্বশীল পলিটিক্যাল অংশ থেকে কথা বলা উচিত উল্লেখ করে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ড. আবদুর রহিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে, এটা বিশ্বস্বীকৃত। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে। উন্নত রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য বহন করবে। জীবনমানের উন্নতি হবে যেহেতু, তাহলে সুযোগ-সুবিধা কেন কমে যাবে? এভাবে সুযোগ-সুবিধা কমানো কিসের বার্তা দেয়? 

বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনায় অল্প সময়ের মধ্যে সমাধান করার জন্য মত দিয়েছেন শিক্ষাবিদরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. আবুল কাসেম ফজলুল হক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির যুক্তিসঙ্গত সমাধান করা উচিত।’

স্থবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেলে সেবা বিঘ্ন
ঢাবি প্রতিনিধি জানান, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে স্থবির হয়ে পড়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি)। শিক্ষকদের কর্মবিরতিতে শ্রেণিকক্ষে ঝুলছে তালা, অন্যদিকে একই দাবিতে শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসহযোগিতায় প্রশাসনিক ভবন, মেডিকেল সেন্টারে সেবা না পেয়ে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে অনেককেই। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী পহেলা জুলাই থেকে নবীন শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সেটি সম্ভব হয়নি। এদিকে এই কর্মবিরতি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করা নয় বরং শিক্ষার্থীদের মুক্তির জন্যই এই কর্মবিরতি বলে দাবি করেন ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। একই সময়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র-টিএসসিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আলোচনা সভা চললেও সেখানে অংশ নেননি শিক্ষক সমিতির নেতারা।
একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরাও সকাল থেকে অফিসে যাননি। ফলে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। কথা হয় প্রশাসনিক ভবনে বৃত্তির চেক নিতে এসে সেবা না পেয়ে ফিরে যাওয়া ২০১৭-১৮ সেশনের এক শিক্ষার্থী গোলাম কিবরিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখন না কি কর্মবিরতি চলছে, তাই তারা কোনো সার্ভিস দেবেন না। কর্মবিরতি শেষ হলে তারা সেবা প্রদান করবেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কর্মবিরতির কারণে সেবা পাননি শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন খোকা। তিনি বলেন, ‘রবিবারে গিয়ে ডাক্তার পাইনি। আজকে সকালে আবার গিয়েছি, তবে ডাক্তার বললেন কর্মবিরতিতে সেবা দেবেন না। এটা খারাপ লাগার বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও মেডিকেল সেবা বন্ধ ছিল না। কোনো বর্বর জাতিও এভাবে হাসপাতাল সেবা বন্ধ করবে না।’ মেহেদী হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘প্রচণ্ড জ্বর, তারপরও ওষুধ দিল না। ফিরে আসতে হয়েছে।’

সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে ঢাবির শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে জরুরি সেবা দেওয়ার জন্য মাত্র দুইজন রয়েছেন। সাধারণত অন্য সময়ে তিন-চারজন থাকেন। সহকারী মেডিকেল অফিসার হালিমা সাদিয়া বলেন, ‘কর্মবিরতির কারণে সেবা দিচ্ছেন না তারা। যখন কর্মবিরতি শেষ হবে তখন সেবা পাওয়া যাবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক মো. মোতালেব বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হওয়ার কারণে আমরা নিয়মিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ করিনি। তবে জরুরি সব সেবা চালু রয়েছে। শুধুমাত্র দাপ্তরিক ক্ষেত্রে কর্মবিরতি দেওয়া হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে।’

সর্বাত্মক কর্মবিরতি শিক্ষার্থী জিম্মি করে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, ‘এই আন্দোলন শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে নয়, বরং তাদের মুক্তির জন্যই আন্দোলন। জিম্মি আমাদেরই করা হয়েছে। যখন আমার সন্তানতুল্য শিক্ষার্থী পহেলা জুলাইয়ের পর আলাদা পেনশন সুবিধা পাবে, এটি তো বৈষম্য। যেখানে পেনশন সুরক্ষা হওয়ার কথা, সেখানে প্রত্যয় স্কিম চালু হলে দিন শেষে আমরা যারা প্রবীণ শিক্ষক আছি অবসর শেষে তাদের বেঁচে থাকার জন্য একটি ভবিষ্য তহবিল থাকছে, সেখানে আমার শিক্ষার্থীদের জন্য সেটি হবে শূন্য।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই আন্দোলন আমার জন্য না, এই আন্দোলন আমার সন্তানের জন্য, যারা আমার ছাত্র-ছাত্রী। যারা ভবিষ্যতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী হয়ে আসবে এবং শিক্ষক হবে, তাদের জন্যই আন্দোলন।’ 

>আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হওয়া উচিত: এ কে আজাদ চৌধুরী
>ন্যায়সংগত ও যুক্তিগ্রাহ্য সিদ্ধান্ত প্রয়োজন: আবুল কাসেম ফজলুল হক
>আলোচনায় বসলেই সব ঠিক হয়ে যেত: নজরুল ইসলাম খান
>আগে পরে সবাই এর আওতায় আসবেন: মাহবুব আহমেদ

অবৈধ সম্পদে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে এগিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা স্ত্রী, দুদকে মামলা

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:২১ পিএম
অবৈধ সম্পদে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে এগিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা স্ত্রী, দুদকে মামলা

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদের স্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সহকারী পরিচালক বদরুন নাহার। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে অবৈধ সম্পদে এগিয়ে আছেন তার স্ত্রী এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা বদরুন নাহার।

দুজনের বিরুদ্ধে অন্তত ৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কবির আহমেদের ১ কোটি টাকার সম্পদ আর স্ত্রী বদরুন নাহারের ৭ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। 

এসব অবৈধ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে দুজনের বিরুদ্ধেই সোমবার (১ জুলাই) পৃথক দুটি মামলা করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম। 

একটি মামলায় ১ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ৭২৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে কবির আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অপর মামলায় তার স্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (গবেষণা ও পরিসংখ্যান উইং) সাবেক সহকারী পরিচালক বদরুন নাহারের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে আছাদুজ্জামানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে আছাদুজ্জামানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ
আছাদুজ্জামান মিয়া

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই)।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিয়মিত বৈঠক নির্ধারিত আছে। 

এ বৈঠকে আলোচ্যসূচির অন্যান্য বিষয় ছাড়াও আছাদুজ্জামানের দুর্নীতির অনুসন্ধান প্রশ্নে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে।

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও দুদকে আসা অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইতোমধ্যে কমিশনে মতামত দাখিল করেছে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি। এতে অনুসন্ধান করার অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে, অনুসন্ধান শুরু হবে। এর আগে গত সপ্তাহে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেছিলেন, ‘আছাদুজ্জামান বিষয়ে আসা অবৈধ সম্পদের অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। অনুসন্ধান করা হবে কি না, সেটা কমিশনের পরবর্তী বৈঠকের পর জানা যাবে।’ 

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার আছিয়া খাতুন কানাডায় থাকায় এবং সফরের মেয়াদ বাড়ায় গত মঙ্গলবার কমিশনের নির্ধারিত বৈঠক হয়নি। তিনি ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন। ফলে আজকের নির্ধারিত বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকবেন। 

অস্বাভাবিক অর্থ-সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে কিছুদিন ধরেই ব্যাপক আলোচনায় আছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এখন বিপুল সম্পদ অর্জন নিয়ে আলোচনায় এলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয় ঈদুল আজহার আগের দিন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট, ছেলের নামে একটি বাড়ি এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১-এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠা জমির ওপর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের মালিকানায় ছয়তলা একটি বাড়ি রয়েছে। রাজধানীর ইস্কাটনেও আফরোজার নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ধানমন্ডিতে। এর বাইরে সিদ্ধেশ্বরীতে আছাদুজ্জামানের মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাঁদখোলা মৌজায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সর্বমোট ১০৬ শতক জমি কেনা হয় আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে।

এ ছাড়া ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় আফরোজার নামে ২৮ শতক জমি কেনা হয়। একই বছর একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমি কেনা হয় তার নামে। পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে। এ ছাড়া আছাদুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর আফতাবনগরে ২১ কাঠা জমি রয়েছে। নিকুঞ্জ ১-এ আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলের নামেও একটি বাড়ি রয়েছে।

এই প্রতিবেদন নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা শুরু হওয়ায় দুদকের পদক্ষেপের ওপর এখন নির্ভর করছে অনেককিছু। 

পুনর্গঠন হতে পারে মন্ত্রিসভা

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:১২ পিএম
পুনর্গঠন হতে পারে মন্ত্রিসভা

চলতি মাসেই মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ১১ জুলাই বর্তমান মন্ত্রিসভার ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারের এই মন্ত্রিসভার ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগে অথবা পরে পুনর্গঠনের এই সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো খবরের কাগজকে জানিয়েছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ছয় মাসের ‘পারফরম্যান্স’ মূল্যায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই সময়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা কে কেমন করলেন, তার রিপোর্ট এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।

তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সুশাসনকে জোর দিয়ে এবার মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা ধারণা করছেন। আর এ ক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতাই হবে পদোন্নতি কিংবা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির মূল ভিত্তি।

মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, দুর্নীতির বিষয়ে সাম্প্রতিক কালে গণমাধ্যমে যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে সরকার সম্পর্কে জনমনে একধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে অনেকের ধারণা। তাই সরকারের ভেতরে-বাইরে ইতিবাচক ভাবমূর্তি বাড়ানোর একধরনের তাগিদ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ব্যক্তির দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার চেয়ে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা অনেক বেশি জরুরি। ফলে জনগণের কাছে নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে, এমন কাউকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রক্ষার দায়িত্ব নেবেন না।

সূত্র জানিয়েছে, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা মিটিয়ে ফেলতে এই মুহূর্তে সুশাসনকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ দেশগুলো (যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা) বিদ্যমান নির্বাচনিব্যবস্থার সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি নিয়ে বরাবরই অভিযোগ করে আসছে। তাই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারসহ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সরকার শুরু করেছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। যে অভিযানে ধরাশায়ী হয়েছেন সাবেক আইজিপিসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সাবেক সেনাপ্রধানের স্বজনরা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে দৃঢ় অবস্থানের প্রসঙ্গটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর রপ্তানি বাজারে যে চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলো মোকাবিলার জন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময় তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব থেকে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং করোনা মহামারি-উত্তর অর্থনীতি পুনর্গঠনে সততার সঙ্গে কাজ করতে বলেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার এক সদস্য। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ জনবল তৈরি এবং তাদের বিদেশে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন। এ সময় তিনি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

গণভবনের সূত্রগুলো দাবি করছে, একে তো অর্থনৈতিক সংকট, তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্রদের রয়েছে অসহযোগিতা, সব মিলিয়ে সরকার বেশ কঠিন সময় পার করছে। তাই এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ হতে পারে মন্ত্রিসভায় দক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনে এ দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেবেন। বিষয়গুলো নিয়ে তিনি ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। তবে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ কে বা কারা আসতে পারেন, সে বিষয়টি কাউকেই বলেননি। সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের বিষয়ে আভাস মিলেছে। 

এ বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন হয় ১১ জানুয়ারি। এরপর প্রথম দফায় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হয় ১ মার্চ। ওই দিন সাত প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন। ফলে মন্ত্রিসভার আকার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ জন (প্রধানমন্ত্রীসহ)। সব ঠিক থাকলে এ মাসেই দ্বিতীয় দফায় সম্প্রসারণের পাশাপাশি মন্ত্রিসভায় রদবদলও হতে পারে। 

জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে ১৪ দলের শরিকদের ভাগ্য খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ঠাঁই পেতে পারেন মন্ত্রিসভায়। যেসব মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী নেই, নতুন মন্ত্রীদের এসব জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এর বাইরে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছয় মাসের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়ে দপ্তর পরিবর্তন করা হতে পারে একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর। ছয় মাসের ‘এক্সপেরিমেন্ট’ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভাকে ঢেলে সাজাবেন- এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই তার ঘনিষ্ঠজনদের। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী দেশের ভেতর এবং বাইরের সংকট মোকাবিলায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

ডেপুটি স্পিকারপুত্র আসিফের দেশত্যাগ!

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:০৯ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:১৪ এএম
ডেপুটি স্পিকারপুত্র আসিফের দেশত্যাগ!
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকুর ছেলে এস এম আসিফ শামস সপরিবারে গত রবিবার (৩০ জুন) বিদেশে চলে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে একটি পারিবারিক সূত্র জানায়, শামস আরও কয়েক দিন আগেই স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।

১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭১ টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ২০২২ সালের মে মাসে ওই পরোয়ানা জারি করা হয়। দুই বছরের বেশি সময় পর এই পরোয়ানা কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে খবরে আসিফ দেশত্যাগ করেন। তিনি পাবনা জেলার বেড়া পৌরসভার মেয়র।

ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভিশন টেল কোম্পানির চেয়ারম্যান আসিফ শামসের নামে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এতে উল্লেখ করা হয়, ভিওআইপির লাইসেন্স ফি বাবদ তিনি বিটিআরসিকে ১৫ কোটি টাকা অগ্রিম এবং প্রতিবছরে ৭ কোটি টাকা হিসেবে তিন বছরে ২১ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট ৩৬ কোটি টাকা দিয়েছেন। তবে ২০১৪ সালে সার্বিকভাবে ভিশন টেল-এর কাছে আরও পাওনা থেকে যায় ১৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আট বছর পরে ২০২২ সালে তা হয় ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭১ টাকা।

সোমবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর। এ সপ্তাহেই পুলিশ এই পরোয়ানা কার্যকর করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। আগাম এই তথ্য জানতে পেরে আসিফ দেশ ছাড়েন।

দুই বছরেও পরোয়ানা কার্যকর না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাশিদুল ইসলাম সোমবার বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘এটি অনেক আগের পরোয়ানা। উনি তো বেড়া পৌরসভার মেয়র। আমি জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এখানে আছি। তবে এই পরোয়ানা কার্যকর করার বিষয়ে সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্যে পরোয়ানা কার্যকর হবে।’ 

ঠিক কবে নাগাদ পরোয়ানা কার্যকর হবে জানতে চাইলে রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না।’

এই পরোয়ানা তামিল করার জন্য ২০২২ সালের ২৩ মে পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারিস্তা করিম নথিতে স্বাক্ষর করেন। এতে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অফিসার ইনচার্জ বেড়া থানাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’ লিখে তিনি স্বাক্ষর করেন।

ফারিস্তা করিম এখন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাবনা ডিসি অফিসের জেনারেল সার্টিফিকেট কোর্ট এই পরোয়ানা জারি করে। জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার হিসেবে আমি এতে স্বাক্ষর করি। রাজস্ব পরিশোধের জন্য এসব ক্ষেত্রে চিঠি দেওয়া হয়। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও সাড়া না পেলে সাধারণত পরোয়ানা জারি করা হয়। ওনার ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল, আমার তা মনে নেই।’

এতদিনেও পরোয়ানা তামিল না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে তিনি বলেন, ‘এটা তো বেশ আগের পরোয়ানা। কেন তামিল হয়নি তা তো ওনারা (পুলিশ প্রশাসন) বলবেন। আমি সম্প্রতি বদলি হয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়াতে আছি।’

এদিকে ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম আসিফ শামসের রাজস্ব ফাঁকি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল বিষয়ে জানতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কমিশনার মুশফিক মান্নান চৌধুরীর সঙ্গে পর পর দুই দিন (রবি, সোমবার) যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসিতে সম্প্রতি আলাপ-আলোচনা হয়েছে।’ তবে দ্বিতীয় দিন তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ের ফাইলটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

পরোয়ানাপত্রে শামসের পরিচয় উল্লেখ করা হয়, ‘এস এম আসিফ শামস, চেয়ারম্যান, ভিশন টেল লিমিটেড’। এতে তার ঢাকার ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা উভয়ই উল্লেখ করা হয়। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল এস এম আসিফ শামসের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। তবে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।