![করখেলাপিদের মনোনয়ন দেবে না আওয়ামী লীগ](uploads/2023/11/18/1700284364.Awami-league.jpg)
আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কর ও ঋণ পরিশোধের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব ব্যক্তি দুর্নীতিসংক্রান্ত মামলায় অভিযুক্ত কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। সম্পদ বাড়া-কমার হিসাবও নেওয়া হচ্ছে।
দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা প্রার্থী চূড়ান্ত করার সময় এসব তথ্য খতিয়ে দেখবেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। এরই মধ্যে দলীয় বিভিন্ন সভায় আগামী নির্বাচনে প্রার্থী চূড়ান্তকরণের ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সততার বিষয় গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। যারা নিয়মিত কর পরিশোধ করেছেন ও ঋণের কিস্তি দিয়ে যাচ্ছেন এবং কোনো ধরনের দুর্নীতির মামলায় জড়িত নন বা অভিযোগ থাকলেও মামলা নিষ্পত্তি হওয়ার পর দোষী বলে প্রমাণিত হননি এমন সব ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান কাজী জাফরউল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রার্থীর ভাবমূর্তি, গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা দেখা হবে। প্রতিবারই এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে আমরা দলের মনোনয়ন দিয়ে থাকি।’
এবার নানা টানাপোড়েন ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার পর প্রার্থীকে নিয়ে যাতে কোনো ধরনের সমালোচনা না হয়, এ জন্য দলটি আগেভাগেই এ উদ্যোগ নিয়েছে।
অতীতে দেখা গেছে, অনেক রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার পর তাদের মনোনীত অনেক প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে ঋণখেলাপি হওয়ায়। অনেকবারই এমন ঘটনা ঘটেছে। এসব নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক সংবাদও প্রকাশ হয়েছে। এতে ওই সব রাজনৈতিক দল সমালোচনার মুখে পড়েছে।
রাজস্ব আইন অনুসারে, কোনো প্রার্থীর রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র এবং কর পরিশোধের সনদপত্র না থাকলে নির্বাচন কমিশন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জাতীয় নির্বাচনে অবৈধ বলে গণ্য করতে পারবে। অর্থাৎ কোনো করখেলাপি ব্যক্তি নির্বাচনে প্রার্থী হলে তার প্রার্থিতা বাতিল করার এখতিয়ার আছে নির্বাচন কমিশনের।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্র জানায়, এরই মধ্যে এনবিআরের প্রধান কার্যালয় থেকে বিভিন্ন কর সার্কেলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আয়করসংক্রান্ত তথ্য খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনো ব্যক্তির বকেয়া থাকলে তার সঙ্গে কর সার্কেলের সংশ্লিষ্টরা যাতে যোগাযোগ করে পরিশোধ করার অনুরোধ করেন, সে কথাও বলা হয়েছে।
এনবিআরের নির্দেশে বলা হয়েছে, বর্তমান সংসদ সদস্যদের অনেকে আবারও প্রার্থী হবেন। অনেক আসনে প্রার্থী হিসেবে নতুন ব্যক্তিরা আসবেন। তাই বর্তমান সংসদ সদস্য এবং সম্ভাব্য প্রার্থীদের সমান গুরুত্ব দিয়ে তাদের রাজস্ব পরিশোধবিষয়ক তথ্য খতিয়ে দেখতে হবে। এ কাজ করতে সংশ্লিষ্ট কর সার্কেলের কর্মকর্তাদের নিয়ে টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করতে বলা হয়েছে। আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, এমন ব্যক্তিদের তিন বছরের রিটার্নের তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের রিটার্নে আয়-ব্যয়ের তথ্যে গরমিল পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নটি তথ্য-প্রমাণসহ করসংক্রান্ত তথ্য এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা শাখা সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলে (সিআইসি) পাঠাতে হবে। এ ক্ষেত্রে আয়-ব্যয়ের তথ্য গোপনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে রাজস্ব আইনানুসারে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠিয়ে করখেলাপি ব্যক্তির সব তথ্য জানিয়ে দেওয়া হবে।
একইভাবে ওই সব ব্যক্তির ব্যবসাসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ভ্যাট নিরীক্ষা গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঋণসংক্রান্ত তথ্য নেওয়া হবে। সব তথ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেওয়ার পর দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো হবে।
এ ব্যাপারে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেকে রিটার্ন জমা দিতে দেরি করেন বা তাড়াহুড়া করে রিটার্ন জমা দেন। এতে অনেক সময় প্রকৃত তথ্য-প্রমাণ সংযুক্ত করা সম্ভব হয় না। এনবিআর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের আসন্ন নির্বাচনের আগে কর পরিশোধের বিষয়টি মনে করিয়ে দেওয়া হলে তারা সঠিক হিসাবে রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এতে এনবিআরের আদায় বাড়বে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাও করখেলাপি হবেন না। এটি ভালো উদ্যোগ।’
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর খবরের কাগজকে বলেন, ‘দলীয়প্রধান যদি কর ও ঋণ পরিশোধের এবং দুর্নীতির বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দিয়ে তার দলের প্রার্থীদের চূড়ান্ত করেন, তবে তা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। তবে এটি খুব কঠিন কাজ। সরকারপ্রধান চাইলেও অনেক সময় সম্ভাব্য প্রার্থীরা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে মিথ্যা তথ্য সংগ্রহ করতে উৎসাহিত করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে অনৈতিক লেনদেনও হতে পারে।’