ঢাকা ২৪ আশ্বিন ১৪৩১, বুধবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৪

মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে যুদ্ধেও ঢুকছে মাদক

প্রকাশ: ০৫ মার্চ ২০২৪, ১০:২৭ এএম
আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৪, ১০:২৮ এএম
মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে যুদ্ধেও ঢুকছে মাদক

মায়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাত গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে। রাখাইন অঞ্চলের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকাগুলো এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। সেসব অঞ্চল দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সে কারণে নাফ নদ পথে সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে তার মধ্যেও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক আসা কমছে না। তাতেই ভাবিয়ে তুলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এত কঠিন পরিস্থিতিতেও কীভাবে মাদক কারবারিরা সক্রিয় রয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যমতে- গত এক মাসে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০টি ইয়াবা এবং দেড় কেজি ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করেছে বিজিবি ও পুলিশ। এসব ঘটনায় আটক করা হয়েছে ১৫ মাদক পাচারকারীকে।

তার মধ্যে গত শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের কাঁটাবুনিয়া এলাকা থেকে ১ লাখ ইয়াবাসহ মো. উসমান নামে (৩৪) একজনকে আটক করে বিজিবি।

বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ইয়াবা, ৬ ফেব্রুয়ারি ৬৪ হাজার ৬০০ ইয়াবা, ৯ ফেব্রুয়ারি ৩ লাখ ইয়াবা ও দেড় কেজি ক্রিস্টাল মেথ, ১২ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ইয়াবা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ৬০ হাজার ইয়াবা, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ সময় ৫ জনকে আটক করা হয়।

টেকনাফ থানার তথ্য মতে, পুলিশ গত ৭ ফেব্রুয়ারি ১৫ হাজার ইয়াবাসহ ১ জন, ২১ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ১৮ হাজার ইয়াবাসহ ২ জন, ২২ ফেব্রুয়ারি ৩০০ ইয়াবাসহ ৫ জন, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ইয়াবাসহ তিনজনকে আটক করেছে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে নানা কৌশলে দীর্ঘদিন ধরেই ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ পাচার হচ্ছে। সংঘাতের কারণে দেশের খুচরা বাজারে ইয়াবার দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। যার কারণে কারবারিরা আবারও সক্রিয়ভাবে মাদক পাচার শুরু করেছে। এ নিয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।

বিজিবির টেকনাফের ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, দুটি প্লাস্টিকের ব্যাগে থাকা ১ লাখ ইয়াবাসহ উসমানকে আটক করে মামলা দিয়ে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরও বেশকিছু মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশ থেকে তেল, চাল, ডালসহ নিত্যপণ্য বিভিন্নভাবে অবৈধ পথে পাচার করার চেষ্টা করছে একটি চক্র। আমরা দুই বিষয়ে কাজ চলমান রেখেছি।

বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারে মায়ানমারের জান্তা সরকারের মদদ রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, মায়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপির পৃষ্ঠপোষকতায় ইয়াবাসহ অন্য মাদক পাচার হচ্ছে।

সীমান্তের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মায়ানমারের জান্তা বাহিনী ও বিজিপির পৃষ্ঠপোষকতায় মাদকের গডফাদাররা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার করত ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ।

‘এখন আরাকান আর্মিও কী সিন্ডিকেট করে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার করছে? তা না হলে সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধ হচ্ছে না কেন?’

ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘এখন মাদকের নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সীমান্তের এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির ভূমিকা পরিষ্কার না। এখন মাদকের চালান প্রবেশ অনেক বেশি চিন্তার।

হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন- সীমান্ত এলাকাগুলোতে নিয়মিত মর্টার শেল, গুলির শব্দ ভেসে আসে থেমে থেমে। কিন্তু এরই মাঝে মাদক কারবারিরা কীভাবে ইয়াবা নিয়ে আসছে তা বোঝা বড় দায়। পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবি সদস্যরা নিয়মিতই মাদক উদ্ধার করছেন। তাতে বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধও থামাতে পারেনি মাদক কারবারিদের। 

যদিও টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি বলছেন, মাদক পাচার প্রতিরোধে পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড সবাই সতর্ক রয়েছে। 

কক্সবাজার র‍্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন- সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতিতেও যদি কেউ মাদক বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে তাহলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। সবকিছুই নজরদারিতে রয়েছে। 

‘চল যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগান নিয়ে ২০১৮ সালের ৪ মে মাদকবিরোধী ওই অভিযান শুরু হয়েছিল। এতে শুধু কক্সবাজারে ২৯৯ জন নিহত হন। আত্মসমর্পণের সুযোগ পান ১২৩ জন ‘মাদক কারবারি’। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছাড়াও অভিযানে যুক্ত ছিল পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

চিকিৎসার সামর্থ্য নেই বাবার মা ক্যানসারের রোগী

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৩৯ এএম
চিকিৎসার সামর্থ্য নেই বাবার মা ক্যানসারের রোগী
মো. আল আমীন

রাজধানীর শহিদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চতুর্থ তলায় পুরুষ ওয়ার্ডের ৫৪ নম্বর বেডে শুয়ে আছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় আহত শিক্ষার্থী মো. আল আমীন (২৩)। তার বাম হাতে ব্যান্ডেজ, সেই হাতে চলছে স্যালাইন। শরীরে তার ৮০টির মতো ছররা গুলি। পাশেই ছেলের মাথায় হাত রেখে ভবিষ্যৎ চিন্তামগ্ন তার বাবা। 

আল আমীনের গ্রামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায়। তার বাবা শহিদুল ইসলাম (৫৫) পেশায় দিনমজুর। ছেলের অবস্থা নিয়ে অভিব্যক্তি জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাবা হিসেবে প্রথমে কিছুটা আক্ষেপ থাকলেও এখন আর সেটা নেই। কারণ সে দেশের জন্য ঝুঁকি নিয়েছিল। আর সে তো একা না। তার মতো আরও অনেক ছেলেমেয়েই আন্দোলনে গিয়ে আহত হয়েছে। মারাও গেছে অনেকে। আমার ছেলে বেঁচে আছে, এটাই বড় সান্ত্বনা। আমি চাই দেশটা ভালোভাবে চলুক। চাই সুস্থ হয়ে ছেলেটা পড়ালেখা করে নিজের পায়ে দাঁড়াক। আমি দরিদ্র, শ্রমিক মানুষ। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। দুই ছেলে আর ঘরে আমার স্ত্রী ক্যানসারের রোগী। সামর্থ্য নেই। তার পরও চেষ্টা করব। 

চিকিৎসার ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, ‘এই হাসপাতালে আনার পর থেকে সবকিছু বিনামূল্যেই হচ্ছে। তবে হাসপাতাল ছাড়ার পরের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তা হচ্ছে। সুস্থ হয়ে ছেলেটা যেন পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে সরকারের কাছে সেই সহযোগিতা চাই।

আল আমীনের মাথার পাশেই ছিল একটি বই। তার পাশে গিয়ে জিজ্ঞেস করি তুমি এখনো পড়াশোনা করতে পারছ? আল আমীন বলেন, সারা শরীরে ব্যথা। তার পরও যখন একটু ভালো লাগে তখন বেডে শুয়েই আমি পড়ার চেষ্টা করি। কারণ চলতি মাসের ২০ তারিখে আমার টেস্ট পরীক্ষা (আলিম) শুরু হওয়ার কথা। পরীক্ষা আমি দিতে চাই। কিন্তু এই অবস্থায় পরীক্ষা দিতে পারব কি না, বুঝতে পারছি না। আমি মাদ্রাসা অধ্যক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছি। কিন্তু তিনি জানান টেস্ট পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া আমি চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব না। তখন স্যার আমাকে সুস্থ হয়ে পরের বছর পরীক্ষা দেওয়ার পরামর্শ দিলেন। স্যারের কথা শুনে কষ্ট লাগল। কারণ অভাবের কারণে এমনিতেই আমার কয়েক বছর পড়াশোনা বন্ধ দিল। আমি আর বছর লস করতে চাই না। সরকার এ ব্যাপারে সহযোগিতা করলে যেকোনোভাবে আমি টেস্ট ও আলিম পরীক্ষায় অংশ নিতে চাই। 

আল আমীন বরিশালের হিজলা উপজেলার আলীগঞ্জ ইসলামীয়া আলীম মাদ্রাসা থেকে দাখিল (২০২৫) পরীক্ষার্থী। দারিদ্র্যের কারণে বাবার একার আয়ে সংসার চলে না। তাই পরিবারের অভাব মেটাতে ঢাকায় এসে ডেকোরেশনের কাজ শুরু করলে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় আল আমীনের। পরে বোনের বড় বোনের বাসায় (বাড্ডার ভাটারা এলাকায়) থেকে কাজ করার পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। চলতি অক্টোবরের ২০ তারিখে তার টেস্ট পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা।

আন্দোলনে কবে যোগ দিয়েছিলে? জবাবে আল আমীন বলেন, দেশের জন্য সরকারি নির্দেশে পুলিশের নির্যাতনে যখন আমার ভাইদের মরতে দেখেছি তখন আমি আর বসে না থেকে আন্দোলনে যোগ দিই। জীবনের ঝুঁকি, পরিবার কোনো কিছুই চিন্তা করিনি। জুলাই মাসের শেষদিকে স্থানীয় কয়েকজন বন্ধু ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আমি যোগ দিই। গত ৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে আমরা যমুনা ফিউচার পার্কের ব্রিজের নিচে একত্রিত হয়ে মিছিলে যোগ দিই। কিছুক্ষণ পর বিপরীত দিক থেকে আসা সশস্ত্র পুলিশ সদস্যরা আমাদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। সেসময় পাশে থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা আমাদের আন্দোলন না করার অনুরোধ জানালে বিক্ষোভ বন্ধ রেখে সেখানেই অবস্থান নিই। কিছুক্ষণ পর সেনাবাহিনী চলে গেলে বিক্ষোভ শুরু করি। সেসময় দুই গাড়ি পুলিশ এসে আমাদের ওপর টিয়ারশেল, ককটেল ছুড়ে মারে। সেসময় টিয়ারশেলের ধোঁয়ায় চারদিক প্রায় অন্ধকার হয়ে যায়।

একপর্যায়ে ১০-১২ জন পুলিশ ফায়ার করতে করতে আমাদের দিকে এগিয়ে এলে আমার পিঠ, বাম হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছররা গুলি লাগে। আমার শরীর রক্তে ভেসে যায়। সেই অবস্থায় পুলিশ আমাকে ধরে ভাটারা থানায় নিয়ে আটকে রাখে। তখন আমি অজ্ঞান ছিলাম। ২০ মিনিট পর জ্ঞান ফিরলে দেখি থানার গেট খোলা রেখেই তারা আবার অভিযানে গেছে। আশপাশে কাউকে না দেখে আমি থানা থেকে বের হয়ে রাস্তায় পড়ে যাই। সেসময় আন্দোলনরত কিছু শিক্ষার্থী আমাকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ওপর ককটেল, টিয়ারশেল ছোড়ে। 

একপর্যায়ে ছাত্ররা পুলিশকে ধাওয়া করে আমাকে নতুন বাজারের মাদানী হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে পুলিশের ভয়ে তারা আমাকে ট্রিটমেন্ট না দিলে ফরাজী আজমল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাব্যয় খুব বেশি হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসার পর সেদিনই রাত ১০টায় আমাকে শিক্ষার্থীরা বাসায় রেখে আসে। আমার বাবা-মা কেউ জানত না আমি আন্দোলনে আছি। বাসায় নেওয়ার পর তারা জানতে পারেন। পরে ৭ আগস্ট সকালে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে ভর্তি হতে না পেরে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা শেষে আবার বাসায় চলে যাই। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাই।

তারা জানায়, আমার শরীরে বিধে থাকা প্রতিটি বুলেট বের করতে এক হাজার টাকা করে লাগবে। শরীরে আছে ৮০টির মতো বুলেট। পরিবারের সেই সামর্থ্য নেই। তাই বাসায়ই ছিলাম। কারণ সরকারি খরচে চিকিৎসার সুবিধার কথা আমি জানতাম না। পরে ২০ আগস্ট শিক্ষার্থীদের সহায়তায় আমি সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ভর্তি হই। এ পর্যন্ত চিকিৎসকরা শরীর থেকে ১৭টি বুলেট অপসারণ করেছেন। বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে অপসারণ করতে দীর্ঘদিন লাগবে। এখানে আসার পর খরচ করতে হচ্ছে না। ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সব খরচ হাসপাতাল থেকে দেওয়া হচ্ছে।

ফ্ল্যাট কিনে বিপাকে কেবিন ক্রুসহ ১০ পরিবার

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:০৮ এএম
আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:১৭ এএম
ফ্ল্যাট কিনে বিপাকে কেবিন ক্রুসহ ১০ পরিবার
উত্তরার ঈশা খাঁ অ্যাভিনিউয়ের ৬ নং সেক্টরের নাহার ভবন। ছবি: খবরের কাগজ

রাজধানীর উত্তরার ঈশা খাঁ অ্যাভিনিউয়ের ৬নং সেক্টরের নাহার ভবনের ৬ তলায় একটি ফ্ল্যাট কিনে বিপাকে পড়েছেন বাংলাদেশ বিমানের কেবিন ক্রু সেলিনা নাসরিন সুইটিসহ ১০ জন। বেশ কয়েক বছর ধরেই ফ্ল্যাটটি দখলের চেষ্টা করছেন এই প্লটের মালিক রিয়াদ আহম্মেদ চৌধুরী। ইতোমধ্যে এই ভবনের ৮ তলায় কেরানীগঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান শাহিনের ৮ তলার ফ্ল্যাটটিও দখলে নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া রিয়াদ এই ভবনে থাকা হেলাল ও সালেকিন নামে আরও দুই ব্যক্তিরও ফ্ল্যাট দখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। 

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) কেবিন ক্রু সুইটি খবরের কাগজকে অভিযোগ করে বলেন, ‘১২ বছর ধরে তিনি এই ফ্ল্যাটে থাকছেন। তারা স্বামী মো. সোহেব হার্টের রোগী। সম্প্রতি তার অস্ত্রোপচার হয়েছে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর অফিসের কাজে তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। এই সুযোগে রিয়াদ সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে অভিযোগ দেন এবং তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানের সময় বাসায় তার ১৫ ও ১০ বছরের দুটি শিশুসন্তান ছিল।’ 

সুইটি আরও বলেন, ‘আমার স্বামী অসুস্থ। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানোর অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার স্বামী কোনো রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত নন। ফ্ল্যাট কেনার কারণে আমি ভিকটিম হয়েছি। এ ছাড়া এখন রিয়াদ হুমকি দিচ্ছেন আমি যদি ফ্ল্যাট ছেড়ে না দিই তবে আমি ও আমার সন্তানদের হত্যা করা হবে।’ 

সুইটি জানান, হত্যার হুমকির বিষয়টি তিনি ইতোমধ্যে উত্তরা সেনাক্যাম্পে ও উত্তরা পশ্চিম থানার ওসিকে জানিয়েছেন। সুইটি তার পরিবারের নিরাপত্তা চেয়ে একটি জিডিও করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। 

তিনি জানান, পুলিশ ও সেনা ক্যাম্পের ক্যাপ্টেন সাজ্জাদ আমার পরিবারকে নিরাপত্তা দেবেন বলে জানিয়েছেন। 

রিয়াদের বিষয়ে সুইটি আরও জানান রিয়াদ, তার মা, বোন ও এক ভাই প্লটের মালিক। তার বাবা আব্দুল ফজল চৌধুরী এই প্লটটি সরকারিভাবে লিজ পেয়েছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর ওয়ারিশ সূত্রে তারা জমির মালিকানা পান এবং পরে দি আর্কিটেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডকে জমিটি ভবন নির্মাণের জন্য দেওয়া হয়। 

তিনি বলেন, ‘ডেভেলপার কোম্পানির কাছ থেকে ২০১১ সালে প্রথমে আমার স্বামী ফ্ল্যাটটি কিনতে চুক্তিবদ্ধ হন। পরে ২০১৪ সালে আমরা ফ্ল্যাটটি বুঝে পেয়ে এখানে বসবাস শুরু করি। এখানে গত ১২ বছর ধরে আমরা বসবাস করছি। এরপর থেকে শুনতে থাকি এই ভবনে আমারটাসহ অন্য ফ্ল্যাটগুলোতেও মালিকানা সংক্রান্ত ঝামেলা রয়েছে। ডেভেলপারের কাছ থেকে ফ্ল্যাট কিনলেও প্লটের একাংশের মালিক রিয়াদ দাবি করেন, তিনি কোনো জায়গা ডেভেলপার কোম্পাটিকে দেননি। তিনি নিজেও এই ভবনের ৮ তলার বাসিন্দা। এখন এই ফ্ল্যাটটি দখল করার জন্য আমাদের হেনস্তা করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ফ্ল্যাটের জন্য ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা তিনি ওই ডেভেলপার কোম্পানিকে পরিশোধ করেছেন বলেও জানান।’ 

এই ফ্ল্যাটের ৭ তলায় থাকেন কেরানীগঞ্জের সাবেক চেয়ারম্যান শাহিন। 

তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘সরকার পতনের পর রিয়াদ তার ফ্ল্যাটটি দখল করে নিয়েছেন।’ 

দ্বিতীয় তলায় একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা সালেকিন খবরের কাগজকে জানান, ফ্ল্যাট কিনে তিনিও বিপাকে পড়েছেন। তারাও কাগজপত্র এখনো বুঝে পাননি। এ নিয়ে ডেভেলপার কোম্পানির মালিক সাইফের সঙ্গে তাদের কয়েক দফা মিটিং হয়েছে। কোম্পানির মালিক জানিয়েছেন, প্লটের এক অংশের মালিক রিয়াদ মামলা করেছেন বলে জটিলতা হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, ‘রিয়াদ ইতোমধ্যে ৭ তলায় শাহিনের ফ্ল্যাট দখল করে নিয়েছেন। এ ছাড়া ৬ তলায় থাকা সুইটির পরিবারকে হয়রানি করছেন। আমার ও সুইটির ফ্ল্যাটটিও দখলে নিতে চাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে ডেভেলপার কোম্পানির মালিক মো. সাইফ খবরের কাগজকে বলেন, ‘রিয়াদ ও তার পরিবার এই ভবনেই থাকেন। ২০১০ সালে এই জমিটি ভবন নির্মাণ করার জন্য রিয়াদসহ তার মা, বোন ও ভাইয়ের কাছ থেকে নেওয়া হয়। তার পরিবারের অন্যরা ঝামেলা না করলেও তিনি নিজেই বিভিন্ন মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করছেন ও ফ্ল্যাটের ক্রেতাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দিতে জটিলতা সৃষ্টি করছেন। তবে আমরা চেষ্টা করছি যারা ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা যেন প্রতারণার শিকার না হন।’ 

তিনি বলেন, ‘এই জমির অন্য মালিকরা কোনো সমস্যা করছেন না। রিয়াদ বিভিন্ন সময়ে টাকা দাবি করে ফ্ল্যাটের ক্রেতা ও আমাকে হয়রানি করছেন। সম্প্রতি ৬ তলায় সোহেবকে তিনি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি এই বিষয়টি সমাধানের জন্য কয়েক দফা মিটিং করেছি। সমাধান না হলে আইনি ব্যবস্থা নেব।’ 

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রিয়াদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে সুইটি প্রাণনাশের যে অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা। আমার সমস্যা ডেভেলপার কোম্পানির সঙ্গে, যারা ফ্ল্যাট কিনেছেন তাদের সঙ্গে নয়।’ 

তিনি বলেন, ‘যারা ফ্ল্যাট কিনেছেন তারা ভুল করেছেন। তারা একটি কাগজও দেখাতে পারবেন না। বায়নার কাগজ ছাড়া তাদের কিছু নেই। তাদের উচিত ছিল খোঁজ-খবর নিয়ে সঠিক নিয়ম অনুযায়ী কেনা। ডেভেলপার কোম্পানি তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। এর দায় আমি নেব না।’ 

মামলা সূত্রে জানা যায়, উত্তরার ৬ নং সেক্টরের ৬ কাঠার ওই প্লটটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ পান অবসরে যাওয়া যুগ্ম সচিব দেওয়ান আবুল ফজল চৌধুরী। আবুল ফজলের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী নুরুর নাহার, কন্যা রুমানা চৌধুরী, দুই পুত্র নিজাম চৌধুরী ও রিয়াদ আহম্মেদ চৌধুরী ওয়ারিশ অনুযায়ী মালিকানা পান। পরবর্তীতে ২০১০ সালে দি আর্কিটেক্ট অ্যান্ড ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার্স লিটেডেট নামের ডেভেলপার কোম্পানিকে ১০ তলা ভবন নির্মাণের জন্য জমিটি দেওয়া হয়। এই ভবন নির্মাণের জন্য অন্য তিন ওয়ারিশের সম্মতি থাকলেও রিয়াদ জটিলতা তৈরি করেন ও কোর্টে একটি মামলাও করেন। তবে মামলার তোয়াক্কা না করে জোরপূর্বক এই জমিতে তিন বছর সময় নিয়ে ভবন নির্মাণ করেন ডেভেলপার কোম্পানি। পরে মামলার বিষয়টি গোপন করেই ফ্ল্যাট বিক্রি করে অনেকের কাছে। এখন ফ্ল্যাটের চুক্তিপত্রের মেয়াদ ও টাকা পরিশোধ শেষ হলেও কাউকে এই কোম্পানি ফ্ল্যাটের কাগজপত্র বুঝিয়ে দিতে পারছেন না। ফলে তৈরি হয়েছে জটিলতা, বিপাকে পড়েছেন এই ভবনে ফ্ল্যাট কেনা ১০টি পরিবার।

শিমুলের দুর্নীতির প্রমাণ দেশে-বিদেশে

প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৫০ এএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ১১:২৯ পিএম
শিমুলের দুর্নীতির প্রমাণ দেশে-বিদেশে
কানাডার টরেন্টোতে (বাঁয়ে) ও নাটোরে সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের আলিশান বাড়ি। ইনসাটে শফিকুল ইসলাম শিমুল

বাবা ঠিকাদার হওয়ায় ছোটবেলা থেকেই বিলাসী জীবনযাপন ছিল নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের। বাড়ি নাটোর শহরে হওয়ায় ছাত্রজীবনেই জেলা ছাত্রলীগে ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক পদ দিয়ে শুরু হয় নেতৃত্ব। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হন তিনি। ২০০৮ সালে তিনি নাটোর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন। ২০১৪ সালে নির্বাচিত হন নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের এমপি। ২০১৮ ও ২০২৪ সালেও এমপি হন শিমুল। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদেও আসীন হন তিনি। এতে তার শক্তি ও ক্ষমতা দ্বিগুণ বেড়ে যায়। 

নাটোরের রাজনৈতিক-সচেতন মহলের দাবি, একসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ট্রেনে উঠে নাটোর রেলস্টেশনে নেমে রাজনৈতিক সমাবেশ করতে চাইলে সাবেক ভূমি উপমন্ত্রী অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু তা প্রতিরোধ করেন। ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা নাটোরে আওয়ামী লীগের শক্ত নেতৃত্ব চান, যাতে দুলু নাটোরে টিকতে না পারেন।

এমপি শিমুল শেখ হাসিনার ওই মনোভাব জানতেন। তাই তিনি দুলুমুক্ত নাটোর ঘোষণা করেন এবং তা বাস্তবায়নও করেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগ পর্যন্ত শিমুল নাটোর বিএনপি-জামায়াতমুক্ত রাখতে পুলিশি ও রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহারে বিন্দুমাত্র পিছপা হননি। ওই একটি কারণেই শেখ হাসিনা বারবার শিমুলকে সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দিয়েছেন।

তবে শেখ হাসিনার মাধ্যমে বারবার এমপি মনোনয়ন পেলেও জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবার, স্বজন ও পছন্দের মানুষদের বসানো, জেলার আর্থিকভাবে লাভবান প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব বলয়ের মানুষকে বসানো, নিজ পছন্দের মানুষদের নেতৃত্বে দল ও সহযোগী সংগঠনের কমিটি গঠন ইত্যাদি কারণে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং অন্য এমপিসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের একাংশের প্রতিপক্ষে পরিণত হন শিমুল।

এরই ধারাবাহিকতায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ হারাতে হয় শিমুলকে। 

স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ ও শিমুলের কাছের মানুষদের দাবি, দীর্ঘ ১৬ বছর জনপ্রতিনিধি থাকার সুবাদে অবৈধভাবে বিপুল সম্পদ অর্জন করেছেন। নাটোরে এক রাজকীয় বাড়ি, কানাডায় বাড়ি, জমি, প্লটসহ কোটি কোটি টাকার ব্যাংক-ব্যালান্স রয়েছে শিমুলের। পাশাপাশি তার পরিবার, স্বজন ও পছন্দের কিছু মানুষও দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা কামিয়েছেন। তবে শিমুল ও তার স্বজনরা এসব দাবি অস্বীকার করেছেন। 

তথ্যমতে, ২০০৮ সালে উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে জমা দেওয়া হলফনামায় ঠিকাদারি করে বছরে ২ লাখ টাকা আয় দেখিয়েছিলেন শফিকুল। তখন সব মিলিয়ে তার সম্পদের পরিমাণ ছিল সাড়ে ১৪ লাখ টাকার মতো। স্ত্রীর সম্পদ ছিল সাড়ে ৪ লাখ টাকার কিছু বেশি। ওই সময় তাদের কোনো গাড়ি ছিল না। নিজ নামে কোনো বাড়িও ছিল না।

২০১৩ সালের হলফনামায় শিমুল নিজের নামে ১১ লাখ ও স্ত্রীর নামে ৫১ লাখ টাকার হিসাব দেখান। ২০১৮ সালে দুজনের নামে মোট সম্পদ দেখান ৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

২০১৮-১৯ সালে তিনি ২ কোটি ১৪ লাখ টাকা আয় দেখালেও পরের বছর ওই আয় দেখানো হয় ১৬ লাখ টাকা। দ্বিতীয়বার সংসদ সদস্য হওয়ার পর পরই শহরের কান্দিভিটুয়া পিটিআই রোডে ‘জান্নাতি প্যালেস’ নামে বিশাল বাড়ি করেন। ২৮ শতক জমির ওপর নির্মিত বাড়িটি দেখতে রাজপ্রাসাদের মতো, যা নির্মাণে ৩ কোটি টাকা খরচের দাবি করেন স্থানীয়রা। ২০২০-২১ অর্থবছরে তার সম্পদ বেড়ে হয় ৪ কোটি ২২ লাখ টাকারও বেশি।

জানা যায়, কানাডার ব্যাংকে শিমুলের দুটি অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ২০২০ সালের ১৬ জানুয়ারি কানাডার ব্যাংকের অ্যাকাউন্টগুলোতে টাকার পরিমাণ ছিল ৬১ কোটি ৬২ লাখ টাকা।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি টরন্টোতে পাঁচ বেড, পাঁচ বাথরুম ও তিনটি পার্কিংসহ ওই বাড়িটি কেনেন প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকায়।

২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুসারে তার বার্ষিক আয় প্রায় ৫৩ লাখ ৩ হাজার ১০৯ টাকা। তার মোট সম্পদের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৫ লাখ ৩১ হাজার টাকা। অর্থাৎ দেড় দশকে তার সম্পদ বেড়েছে ৩৪ গুণের বেশি। একই সময় স্ত্রীর সম্পদ ১৬৩ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। আগে তার স্ত্রীর কোনো আয় ছিল না। তবে এখন আয় বছরে ২৮ লাখ ২৮ হাজার ৩৬০ টাকা।

জেলা আওয়ামী লীগের একাংশের দাবি, নাটোর ও কানাডায় স্ত্রী জান্নাতির নামে বাড়ি ছাড়াও দেশ-বিদেশের ব্যাংকে রয়েছে কোটি কোটি টাকা। আয়কর রিটার্নে জান্নাতিকে গৃহবধূ উল্লেখ করলেও ব্যবসা থেকে তার আয় বেড়েছে- এমন দাবি করতেন শিমুল। তবে কী ব্যবসা তা প্রকাশ করেননি।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে পুড়িয়ে দেওয়া হয় শিমুলের নাটোরের বাড়ি। সঙ্গে তিনটি পাজেরো গাড়ি। ওই দিনই আত্মগোপনে যান শিমুল, তার পরিবারের সদস্যরা, স্বজন ও আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী নেতারা।

ওই দিন সকালেও ‘নাটোরের রাজপথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমাতে ব্যস্ত ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল। ওই দিন বিকেলেই তিনি আত্মগোপনে যান। এরপর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা শহরের কান্দিভিটুয়া মহল্লায় ‘জান্নাতি প্যালেস’ নামে তার প্রাসাদোপম বাড়িতে হামলা চালান। ভাঙচুর, লুটপাট আর অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িটি দেখতে এখন প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সেখানে আসেন। ওই সময় আগুন দেওয়া হয় শিমুলের বাড়ির পাশে তার ভাই সাগরের বাড়িও। 

এদিকে দুদক সূত্রে জানা যায়, অর্থ পাচারের মাধ্যমে কানাডায় বাড়ি-গাড়িসহ বিপুল সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২ সেপ্টেম্বর শিমুলের দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।

জানা যায়, দুদকের কমিশন সভায় সাবেক এই এমপির দুর্নীতির বিষয়ে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শফিকুল ইসলাম শিমুলের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার, প্রকল্পে অনিয়মসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্য আমলে নিয়ে কমিশন তার দুর্নীতি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

শিমুলের নামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করে বিদেশে অর্থ পাচার করে কানাডায় বাড়ি কেনার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে বলে দুদকসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। 

আরও জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা জান্নাতির ব্যাংক হিসাব জব্দ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ। 

দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্যমতে, কানাডার টরন্টোর নিকটবর্তী স্কারবরো শহরে তার নামে একটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। 

স্থানীয়রা জানান, শিমুল সংসদ সদস্য হওয়ার পরই নাটোরে জান্নাতি প্যালেস নির্মাণ করেন। এ ছাড়া স্থানীয় ভেদরার বিলে তিনি ১৬ বিঘা জমি কিনেছেন। নাটোরের নীচাবাজার এলাকায়ও রয়েছে প্লট।

গত নির্বাচনের আগে নাটোরের কয়েকজন নেতা দলীয়প্রধানের কাছে শিমুলের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে বলা হয়, ঢাকার আদাবর রিং রোডে স্ত্রী, শাশুড়ি ও ভগ্নিপতির নামে পাঁচটি ফ্ল্যাট কিনেছেন তিনি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, মালেয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে নামে-বেনামে তার সম্পদ রয়েছে।

শিমুলের অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন মহলে আলোচনায় আছে। গত বছর এ ব্যাপারে শিমুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, সবই ‘অপপ্রচার’। যা কিছু দেখা যাচ্ছে, তা তার বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ ও ঠিকাদারি ব্যবসা থেকে করা। তিনি আরও দাবি করেছিলেন, তার স্ত্রী ব্যবসা করেন। কী ব্যবসা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব তো বলা যাবে না। ট্যাক্স ফাইলে সব বলা আছে।’ তিনি ওই সময়ে আরও দাবি করেন, তার পরিবার কানাডায় থাকে। পরিবারের খরচের প্রয়োজনীয় টাকা তিনি বৈধভাবেই পাঠান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের দাবি, অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন শফিকুল ইসলাম শিমুল। নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে তিনি পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলার মাধ্যমে হয়রানি করেছেন। নিজ দলের প্রতিপক্ষ গ্রুপের নেতা-কর্মীরাও তার নির্যাতন থেকে বাদ যাননি। দলের সিনিয়র ও ত্যাগী নেতা-কর্মীদের কোণঠাসা করে দলীয় পদে বসিয়েছেন নিকটাত্মীয় ও বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকে।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শফিকুল ইসলামের আয়ের মূল উৎস ছিল বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কমিশন গ্রহণ, ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ-বাণিজ্য, পরিবহনে চাঁদাবাজি, সরকারি প্রণোদনা ও টিআর-কাবিখার লোপাট করা অর্থ।

জেলা আওয়ামী লীগের এক পদবঞ্চিত সাবেক নেতার দাবি, ২০১৫ সালে সংসদ সদস্য হওয়ার আগ পর্যন্ত শফিকুলের পরিবারের কেউ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন না। ওই বছর তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন। তখনই তিনি তার স্ত্রী শামীমা সুলতানাকে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, বড় ভাই শরিফুল ইসলামকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, বড় ভাবি সীমা পারভিনকে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, ভাই সিরাজুল ইসলামকে পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, আরেক ভাই সাজেদুল আলমকে জেলা যুবলীগের সদস্য, ভাইয়ের স্ত্রী সিনথিয়া ইসলামকে জেলা যুব মহিলা লীগের সহসভাপতি, বোন নাছিমা রহমানকে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ভগ্নিপতি সাজেদুর রহমান ওরফে বুড়া চৌধুরীকে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য, বোন নাজলী রহমানকে জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি, দুলাভাই আমিরুল ইসলাম জাহানকে জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ, ভাগনে নাফিউল ইসলামকে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক, বোনের দেবর খন্দকার ওমর শরীফ চৌহানকে জেলা আওয়ামী লীগের সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক পদে বসান।

তার অভিযোগ, জেলা বিএনপি ও জামায়াতের অনেকে শিমুলের হাত ধরে আওয়ামী লীগে পুনর্বাসিত হন।

জেলার এক ঠিকাদার জানান, শফিকুল তার ভগ্নিপতি মীর আমিরুল ইসলাম ওরফে জাহানের মাধ্যমে ঠিকাদারি খাত নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমপির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপে আমিরুল ইসলাম ও তার দুই ভাই ২০১৪ সালের পর থেকে প্রায় ৩৮০ কোটি টাকার ঠিকাদারি কাজ পেয়েছেন।

জেলা মৎস্যজীবী লীগের এক নেতার দাবি, শিমুলের ভগ্নিপতি সাজেদুর রহমান ওরফে বুড়া চৌধুরী আগে থেকেই সরকারি জলাশয় ইজারা নিয়ে মাছ চাষের ব্যবসা করতেন। শ্যালক সংসদ সদস্য হওয়ার পর বেশির ভাগ সরকারি জলাশয় তার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

জেলা পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা দাবি করেন, শিমুলের ছোট ভাই সাজেদুল ইসলাম ২০১৬ সালে অনেকটা জোর করেই পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হন। তার মাধ্যমে পরিবহন খাত থেকে বিপুল চাঁদা উঠত, যার বড় অংশ পেতেন শিমুলও।

 

এবার শিল্পকলায় হচ্ছে না দুদকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০১ পিএম
এবার শিল্পকলায় হচ্ছে না দুদকের দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আয়োজিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠান এ বছর শিল্পকলা একাডেমিতে হচ্ছে না। দিবসটি উপলক্ষে প্রতিবছর ৯ ডিসেম্বর ‘দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধ’ বিষয়ে এক আলোচনা সভা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় শিল্পকলার জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু দুদককে এবার সেই ভেন্যু পরিবর্তন করতে হচ্ছে। কারণ শিল্পকলার নবনিযুক্ত মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ মিলনায়তন বরাদ্দের বিষয়টি সরাসরি নাকচ করেছেন। 

বিষয়টি জানতে সোমবার (৭ অক্টোবর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোবাইল ফোনে কয়েকবার সৈয়দ জামিল আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে সন্ধ্যা ৭টা ২১ মিনিটে তার ব্যক্তিগত সহকারী সোহেল আলম মোবাইলে ফোন দিয়ে যোগাযোগের কারণ জানতে চান। 

শিল্পকলার মিলনায়তন ব্যবহারে দুদককে ‘না’ করে দেওয়ার বিষয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হলে সোহেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল (রবিবার) দুদকের ডিজি পর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা শিল্পকলার ডিজি স্যারের কাছে এসেছিলেন। স্যার (ডিজি) তাদের বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মিলনায়তন বরাদ্দ দেওয়া যাবে না।’ এর বাইরে কিছু জানতে চাইলে আগামীকাল (মঙ্গলবার) অফিসে গিয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন সোহেল আলম। 

এদিকে শিল্পকলা একাডেমির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিল্পকলার ডিজি সেখানকার মিলনায়তন ব্যবহারে দুদক কর্মকর্তাদের অনুরোধ সরাসরি নাকচ করেছেন। দুদকের এ ধরনের অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতিসহ রাষ্ট্রের শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা অংশগ্রহণ করেন। এসব শোনার পরও শিল্পকলার ডিজি বলেছেন, আল্লাহর ফেরেশতা নেমে এলেও মিলনায়তন ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হবে না। অন্যদিকে দুদকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তন না পাওয়ায় দুদকের শীর্ষ কর্মকর্তারা রবিবারেই মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মিলনায়তন ও ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মিলনায়তনসহ সেগুনবাগিচার আশপাশের কয়েকটি মিলনায়তন পরিদর্শন করে এসেছেন। প্রতিবছর শিল্পকলার মিলনায়তন ব্যবহারের মূল কারণ হচ্ছে সেখানে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ জনের আয়োজন করা যায় এবং সেটি দুদক প্রধান কার্যালয়সংলঘ্ন ছিল।

আবুল কালাম আজাদ আমলারা মন্ত্রীদের কথা শুনতেন না

প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৩৭ পিএম
আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০২:১১ পিএম
আমলারা মন্ত্রীদের কথা শুনতেন না
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক অনেক মন্ত্রী-আমলা গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তারের পর রিমান্ডে এনেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বেশ কিছু কথা জানিয়েছেন।

সাবেক আমলা আবুল কালাম আজাদ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের দায়িত্ব পালন শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৫ আসনে নৌকা প্রতীকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নিজ এলাকায় ভুরিভোজের আয়োজন করে নির্বাচন বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসে তার বিরুদ্ধে। 

পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন, সরকারের কোনো মন্ত্রী বা এমপি অথবা কোনো উপদেষ্টার দলীয় প্ল্যাটফর্মে আলোচনা করার সুযোগ ছিল না। দলীয় প্ল্যাটফর্মে কেউ খোলাখুলি মতামত দিলে তাকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করা হতো। এ জন্য কেউ মুখ খুলতেন না। শেখ হাসিনা দল ও সরকার পরিচালনায় যে সিদ্ধান্ত নিতেন, সেটাই সবাই অনুসরণ করতেন। 

তিনি জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর আমলারা বেপরোয়া হয়ে পড়েছিলেন। তারা কোনো মন্ত্রীর কথা শুনতেন না। এমপিদের পাত্তা দিতেন না। একাধিক মন্ত্রী ও এমপি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনেক সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি। এতে দিন দিন সচিবরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। আবুল কালাম আজাদের মামলার তদন্তের কাজে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা এ কথা জানিয়েছেন। 

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক মুখ্য সচিব ও সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদকে গত শনিবার ধানমন্ডি থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে পল্টনে যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে আদালতে হাজির করেন পল্টন থানার এসআই তন্ময় কুমার বিশ্বাস। তিনি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আবুল কালাম আজাদ এখন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে আছেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। 

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক জানান, ‘আবুল কালাম আজাদকে রিমান্ডে আনা হয়েছে।’

মামলার তদন্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত এক কর্মকর্তা জানান, আবুল কালাম আজাদ জিজ্ঞাসাবাদে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। কিছু প্রশ্নের উত্তর দেননি। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেননি সেগুলো জানার চেষ্টা করছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দাবি করেছেন, ১৪ সালের পর মাঠপর্যায়ে পুলিশের তদবির বেড়ে যায়। তার কাছেও কয়েকজন কর্মকর্তা ডিএমপিসহ আরও কয়েকটি জেলায় বদলির সুপারিশের জন্য এসেছিলেন। পরে ওই সব কর্মকর্তার সুপারিশের জন্য তিনি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। 

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, পুলিশ তদবিরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাসের কাছে আসত। তিনি কয়েকজনের বদলির জন্য সুপারিশ করলেও ধনঞ্জয়ের জন্য তা হয়নি বলে দাবি করেন। গতকাল সচিবালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ৫ আগস্টের পর ধনঞ্জয় আর সচিবালয়ে আসেন না। 

তার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে আবুল কালাম আজাদ তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন, পল্টন থানার যে হত্যা মামলায় তাকে জড়ানো হয়েছে তার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নন।

সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলনের বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, কোটা আন্দোলনের বিষয়ে তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইতিবাচক ছিলেন। বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান হোক বলে তিনি চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্মে তিনি তার মতামত বলতে পারেননি। ৫ আগস্টের পর তিনি নিশ্চুপ হয়ে যান। তবে তিনি তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দাবি করেছেন যে অন্যদের মতো তার দেশ ছাড়ার কোনো উদ্যোগ ছিল না।