![মায়ানমার সীমান্ত দিয়ে যুদ্ধেও ঢুকছে মাদক](uploads/2024/03/05/1709612938.drug.jpg)
মায়ানমারের সামরিক জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাত গৃহযুদ্ধে রূপ নিয়েছে। রাখাইন অঞ্চলের বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকাগুলো এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত। সেসব অঞ্চল দখলে নিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী। সে কারণে নাফ নদ পথে সীমান্ত বাণিজ্য প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে তার মধ্যেও ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক আসা কমছে না। তাতেই ভাবিয়ে তুলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। এত কঠিন পরিস্থিতিতেও কীভাবে মাদক কারবারিরা সক্রিয় রয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান একাধিক কর্মকর্তা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্যমতে- গত এক মাসে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৭ লাখ ৬৪ হাজার ৯০০টি ইয়াবা এবং দেড় কেজি ক্রিস্টাল মেথ উদ্ধার করেছে বিজিবি ও পুলিশ। এসব ঘটনায় আটক করা হয়েছে ১৫ মাদক পাচারকারীকে।
তার মধ্যে গত শুক্রবার সকালে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের কাঁটাবুনিয়া এলাকা থেকে ১ লাখ ইয়াবাসহ মো. উসমান নামে (৩৪) একজনকে আটক করে বিজিবি।
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, গত ১ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ইয়াবা, ৬ ফেব্রুয়ারি ৬৪ হাজার ৬০০ ইয়াবা, ৯ ফেব্রুয়ারি ৩ লাখ ইয়াবা ও দেড় কেজি ক্রিস্টাল মেথ, ১২ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ইয়াবা, ১৪ ফেব্রুয়ারি ৬০ হাজার ইয়াবা, ১৭ ফেব্রুয়ারি ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ সময় ৫ জনকে আটক করা হয়।
টেকনাফ থানার তথ্য মতে, পুলিশ গত ৭ ফেব্রুয়ারি ১৫ হাজার ইয়াবাসহ ১ জন, ২১ ফেব্রুয়ারি ১ লাখ ১৮ হাজার ইয়াবাসহ ২ জন, ২২ ফেব্রুয়ারি ৩০০ ইয়াবাসহ ৫ জন, ২৮ ফেব্রুয়ারি ১ হাজার ইয়াবাসহ তিনজনকে আটক করেছে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে নানা কৌশলে দীর্ঘদিন ধরেই ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ পাচার হচ্ছে। সংঘাতের কারণে দেশের খুচরা বাজারে ইয়াবার দাম বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। যার কারণে কারবারিরা আবারও সক্রিয়ভাবে মাদক পাচার শুরু করেছে। এ নিয়ে দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বারবার উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে।
বিজিবির টেকনাফের ২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, দুটি প্লাস্টিকের ব্যাগে থাকা ১ লাখ ইয়াবাসহ উসমানকে আটক করে মামলা দিয়ে টেকনাফ থানায় সোপর্দ করা হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরও বেশকিছু মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া দেশ থেকে তেল, চাল, ডালসহ নিত্যপণ্য বিভিন্নভাবে অবৈধ পথে পাচার করার চেষ্টা করছে একটি চক্র। আমরা দুই বিষয়ে কাজ চলমান রেখেছি।
বাংলাদেশে ইয়াবা পাচারে মায়ানমারের জান্তা সরকারের মদদ রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, মায়ানমারের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিপির পৃষ্ঠপোষকতায় ইয়াবাসহ অন্য মাদক পাচার হচ্ছে।
সীমান্তের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেন, মায়ানমারের জান্তা বাহিনী ও বিজিপির পৃষ্ঠপোষকতায় মাদকের গডফাদাররা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার করত ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ।
‘এখন আরাকান আর্মিও কী সিন্ডিকেট করে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে মাদক পাচার করছে? তা না হলে সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার বন্ধ হচ্ছে না কেন?’
ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, ‘এখন মাদকের নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। সীমান্তের এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে আরাকান আর্মির ভূমিকা পরিষ্কার না। এখন মাদকের চালান প্রবেশ অনেক বেশি চিন্তার।
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন- সীমান্ত এলাকাগুলোতে নিয়মিত মর্টার শেল, গুলির শব্দ ভেসে আসে থেমে থেমে। কিন্তু এরই মাঝে মাদক কারবারিরা কীভাবে ইয়াবা নিয়ে আসছে তা বোঝা বড় দায়। পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি সদস্যরা নিয়মিতই মাদক উদ্ধার করছেন। তাতে বোঝা যাচ্ছে যুদ্ধও থামাতে পারেনি মাদক কারবারিদের।
যদিও টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গণি বলছেন, মাদক পাচার প্রতিরোধে পুলিশ, বিজিবি, কোস্ট গার্ড সবাই সতর্ক রয়েছে।
কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন বলেন- সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতিতেও যদি কেউ মাদক বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করে তাহলে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। আমাদের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। সবকিছুই নজরদারিতে রয়েছে।
‘চল যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগান নিয়ে ২০১৮ সালের ৪ মে মাদকবিরোধী ওই অভিযান শুরু হয়েছিল। এতে শুধু কক্সবাজারে ২৯৯ জন নিহত হন। আত্মসমর্পণের সুযোগ পান ১২৩ জন ‘মাদক কারবারি’। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ছাড়াও অভিযানে যুক্ত ছিল পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।