![শেরপুরে হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক](uploads/2024/04/25/1714021175.Sherpur.jpg)
শেরপুরের শ্রীবরদী। হঠাৎ করেই এ উপজেলায় মাদকের অবাধ বেচাকেনা বেড়েছে। সন্ধ্যা হলেই পৌর শহরের বিভিন্ন রাস্তাঘাট, অলিগলিগুলোতে মাদকসেবীদের আনাগোনা বেড়ে যায়। এতে উপজেলা শহরটিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। মাদকের টাকার জন্য পথচারীদের আটকে ছিনতাইয়ের ঘটনায় সুশীলসমাজ উদ্বেগ প্রকাশ করছে। বিষয়টি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কথা উঠলেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
স্থানীয়রা বলছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। প্রয়োজন হলে মাদকসেবীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান বাড়াতে হবে। যদিও অভিযান অব্যাহত আছে জানিয়ে পুলিশ বলছে, মাদক সংশ্লিষ্ট কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, শ্রীবরদী উপজেলাটি ভারতের মেঘালয় রাজ্যঘেঁষা। ফলে চোরাকারবারিরা সহজেই চোরাই পথে ভারতীয় মদ, ফেনসিডিল, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য এ উপজেলায় নিয়ে আসেন। মূলত সীমান্তবর্তী খাড়ামোড়া, বালিজুড়ি, রাঙ্গাজান, হাড়িয়াকোনা, শয়তান বাজার, চান্দাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে মাদক আনা হয়। পরে তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খামারিয়াপাড়া, মথুরাদী, ব্র্যাক রোড, মুন্সিপাড়া, ফতেহপুর, পৌর বাজারের বিভিন্ন অলিগলি ও সীমান্তবর্তী কর্ণঝোড়া, বালিজুরিসহ বিভিন্ন এলাকায় সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবীদের আনাগোনা বাড়ে। পুলিশের কার্যকর ভূমিকা না থাকার কারণে এ অঞ্চলে দিন দিন মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। মাদকের টাকা সংগ্রহ করতে অনেক সময় চুরির ঘটনা ঘটছে। আবার মাঝে মধ্যেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে মাদকসেবীদের ধরলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন মূল হোতারা। অভিযানের পর কয়েকদিন নীরব থাকলেও পরে আবারও তারা সরব হন।
মাদক কারবারিদের নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় একাধিকবার আলোচনা হলেও কোনো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা হচ্ছে না। স্থানীয়দের দাবি, মাদক থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করতে এখনই মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রীবরদী উপজেলা শহরের এক বাসিন্দা বলেন, ‘আমার ছোট ভাই নেশায় আসক্ত। নেশার টাকা না পেলে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে ফেলে। একটি পরিবারকে মাদক কীভাবে ধ্বংস করে তা আমার থেকে ভালো আর কেউ জানেন না।’
পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কমিশনার সাহেব আলী বলেন, ‘মাদকসেবীরা অনেক প্রভাবশালী। তারা আটকের পর আদালত থেকে বেরিয়ে ফের মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। আমরা বলব, পুলিশ যেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।’
পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কমিশনার ও প্যানেল মেয়র আশরাফুল আলম বুদু বলেন, ‘পুলিশের তৎপরতা না থাকায় মাদকসেবীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বেড়েছে চুরি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ। সম্প্রতি মাদকের টাকা সংগ্রহ করার জন্য এক পথচারীর পথ রোধ করে টাকা কেড়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমার মনে হয় মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালালে মাদকসেবীদের সংখ্যা কিছুটা কমে আসবে। পাশাপাশি যদি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে তাদের জেল-জরিমানা করা যায় তাহলে অভিযান আরও ফলপ্রসূ হবে।’
শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল আকন্দ বলেন, ‘পৌরসভাসহ উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় মাদক কারবারিদের দৌরাত্ম্য চোখে পড়ে। আইনশৃঙ্খলা মিটিংয়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ভূমিকা চোখে পড়ছে না।’
শ্রীবরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাইয়ুম খান সিদ্দিকী বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে মাদকসেবীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মাদক নির্মূলে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক সংশ্লিষ্ট কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ সুপারের নির্দেশে আমরা এরই মধ্যে কয়েকটি অভিযান চালিয়েছি, সফলও হয়েছি। অভিযানে কয়েকজন মাদক কারবারিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমরা মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছি।’
শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া নাজনীন বলেন, এর আগেও মাদক কারবারিদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে সাজা দেওয়া হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনের সংসদ সদস্য এ ডি এম শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সীমান্তবর্তী অঞ্চল হওয়ায় এখানে চোরাচালান ও মাদক কারবারের আধিক্য রয়েছে। সংসদ সদস্য হিসেবে এগুলোর বিরুদ্ধে আমি জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছি। আশা করছি, সবার সহযোগিতায় মাদক নির্মূলে আমরা কঠোর ভূমিকা রাখতে পারব।’