দুই সপ্তাহ আগে ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু ভারতে পেঁয়াজের ওপর রপ্তানি শুল্ক ৪০ শতাংশ আরোপ থাকায় পণ্যটি আমদানিতে অনাগ্রহ আমদানিকারকদের। ফলে স্থলভাগ দিয়ে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা অলস সময় পার করছেন। এদিকে খাতুনগঞ্জে সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে দফায় দফায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, দেশে বর্তমানে ২৫টি স্থলবন্দর রয়েছে। এসব স্থলবন্দর দিয়ে অন্তত ২০০ আমদানিকারক পেঁয়াজ আমদানি করে থাকেন। কিন্তু ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ বহাল রেখেছে। ভারতের শুল্ক, বাংলাদেশে বর্ডার খরচ, পরিবহন খরচ এসব যোগ করলে প্রতিকেজি পেঁয়াজ আমদানিতে ৬০ টাকার ওপরে খরচ পড়বে। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ হয়ে এসব পেঁয়াজের দাম খুচরা পর্যায়ে গিয়ে ৮০ টাকার ওপরে ঠেকবে। তাই পেঁয়াজ আমদানিতে অনাগ্রহ। ৪ জুনের পর শুল্ক হারের বিষয়ে কোনো একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এর ওপর নির্ভর করবে পেঁয়াজ আমদানি সম্ভব হবে কি না।
আমদানিকারকরা হিসাব করে জানিয়েছেন, ভারতে বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি ১৭ রুপি। বর্ডারে আনতে গাড়িভাড়া খরচ পড়ে আরও ৬ রুপি। এর সঙ্গে ৪০ শতাংশ ভারতের শুল্ক ১৯ রুপি যোগ করলে বর্ডার পর্যন্ত প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পড়ে ৪২ রুপি। যা বাংলা টাকায় প্রায় ৬০ টাকা (এক রুপি সমান ১ টাকা ৪২ পয়সা হিসাবে)। তার সঙ্গে বাংলাদেশে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা গাড়ি ভাড়া যোগ করলে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ পৌঁছতে খরচ হয় ৬৫ টাকা।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক মোহাম্মদ মোবারক খবরের কাগজকে বলেন, সব স্থলবন্দর দিয়ে অন্তত ২০০ আমদানিকারক ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে থাকেন। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ বহাল রেখেছে। তাই আমরা অধিকাংশ আমদানিকারক পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছি। ভারতে এখন নির্বাচন চলছে। আশা করছি আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে শুল্কের বিষয়ে প্রতিবেশী দেশটি থেকে একটা সিদ্ধান্ত আসবে। সামনে কোরবানির ঈদ। ভারত যদি শুল্ক কমায়, তবে ব্যবসায়ী থেকে ভোক্তা সবাই উপকৃত হবেন।
আরেক আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। কিন্তু ৪০ শতাংশ শুল্ক বহাল রেখেছে। এই খরচে পেঁয়াজ আনলে সেটা আমাদের ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে। আমরাও বিপাকে পড়ব। তাই আমরা অধিকাংশ ব্যবসায়ী আপাতত পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছি। তবে কেউ কেউ সীমিত পরিমাণে ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আনছেন।
অভ্যন্তরীণ বাজারে পেঁয়াজের সংকট ও দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ভারত। এরপর থেকে বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ ছিল। চলতি বছরের ৪ মে পেঁয়াজ রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত। দেশটি পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর থেকেই আমদানিকারকরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য আইপি নেওয়া এলসি খোলাসহ সব প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
কিন্তু ভারতে পেঁয়াজের ওপর রপ্তানি শুল্ক ৪০ ভাগ আরোপ থাকায় পেঁয়াজ আমদানিতে বেশি খরচ পড়ছে। রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার বা কমালে পেঁয়াজ আমদানি বাড়বে, তখন দেশীয় বাজারে দাম কমে আসবে বলে জানিয়েছেন আমদানি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে বাড়তে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। দুই সপ্তাহ আগেও খাতুনগঞ্জে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৬০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে দেশি পেঁয়াজ আকারভেদে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় এবং ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে আকারভেদে ৬৫ থেকে ৭২ টাকায়।
খাতুনগঞ্জে হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইদ্রিস খবরের কাগজকে বলেন, ভারত পেঁয়াজ রপ্তানিতে ৪০ শতাংশ শুল্ক বহাল রাখায় অধিকাংশ আমদানিকারক পণ্যটি আনছেন না। ফলে আমরা দেশি পেঁয়াজের ওপর নির্ভর করছি। ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে অল্প পরিমাণে পেঁয়াজ ভারত থেকে আসছে। আমদানি খরচ বেশি থাকায় খাতুনগঞ্জে ভারতীয় পেঁয়াজের দামটা চড়া। অপরদিকে কৃষকরা দেশি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই এর প্রভাব আমাদের এখানেও পড়ছে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, আমরা দেখেছি, ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে- এমন খবর এলেই ব্যবসায়ীরা পণ্যটির দাম কমিয়ে দিচ্ছেন। কয়েকদিন পর আবার দাম বাড়িয়ে দেন। এভাবে পেঁয়াজের বাজার দর ওঠানামা করায় ক্রেতারা ভোগান্তিতে পড়ছেন। ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি না হলেও আমাদের দেশে পণ্যটির ভালো ফলন হয়েছে। আমরা বলব, ব্যবসায়ীরা সব সময় দাম বাড়ানোর অজুহাত খুঁজতে থাকেন। কোরবানি ঈদের সময় ঘনিয়ে আসছে। তাই নানা অজুহাতে এখন থেকেই দাম বাড়ানো হচ্ছে। প্রশাসন, ভোক্তা অধিকারসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর উচিত হবে এখন থেকেই কঠোরভাবে বাজার তদারকি করা। অসাধু ব্যবসায়ীদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা।