আজ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। অনেক পণ্যের দাম বাড়তে পারে। তবে গতকাল বুধবার পর্যন্ত বাজারে তার প্রভাব পড়েনি। ঈদ আসতে ১৪ দিন বাকি থাকলেও গত সপ্তাহের মতো পেঁয়াজের দাম বাড়ছেই। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকায় উঠেছে। ডিমের দামও বেড়ে হয়েছে ১৫৫-১৬০ টাকা ডজন।
পেঁপের দাম কমলেও অন্য সবজির দাম চড়া। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসায় আদা, রসুনের দামও কমছে না। ঈদ আসন্ন বলে চাহিদা কমে গেছে মুরগির। দাম কেজিতে ২০-৩০ টাকা কমেছে। চিনির দামও কমতির দিকে। গতকাল বুধবার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমনই চিত্র পাওয়া গেছে।
সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা
পেঁয়াজ নিয়ে ভোক্তাদের দুর্ভোগ কমছে না। ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও সেই ঘোষণার কোনো প্রভাব দেখা যায় না বাজারে। বরং দেশে প্রচুর পেঁয়াজ উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও মোকামের ব্যাপারীরা ইচ্ছামতো দাম আদায় করছেন। সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকা কেজি বিক্রি করছেন খুচরা বিক্রেতারা।
দামের ব্যাপারে টাউনহল বাজারের শফিকুল খবরের কাগজকে বলেন, গোড়াতেই বেশি দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে গেছে। এ জন্য আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। গত সপ্তাহে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি করলেও কয়েক দিন থেকে ৮৫-৯০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। কোরবানির ঈদ এগিয়ে আসায় মসলার মধ্যে আদা, রসুন, জিরাসহ অন্যান্য মসলার দামও কমছে না।
পেঁয়াজের দাম বাড়লেও আগের মতোই রসুন ২৩০-২৪০ টাকা কেজি। দেশি রসুন ২০০-২২০ টাকা। ঈদে আদার চাহিদা বেড়ে যায়। তারপরও আগের মতো ভারতের কেরালার আদার কেজি ২৯০-৩০০ টাকা। মায়ানমারের আদা ২৮০ টাকা ও চায়না আদা ২২০-২৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে বিভিন্ন বাজারে।
কারওয়ান বাজারের ইউসুফ স্টোরের ইউসুফ বলেন, এলাচির দাম দুই সপ্তাহ আগেই বেড়ে গেছে। এখন আর বাড়েনি, তা ২৪০০ থেকে ৩৪০০ টাকা কেজি। লবঙ্গ ১৭০০-১৮০০ টাকা কেজি, জিরার দামও আগের মতো ৭৫০-৮০০ টাকা কেজি। পেঁয়াজের মতোই আলুর দাম লাগামহীন হয়ে যাচ্ছে। দেশে পর্যাপ্ত উৎপাদন হলেও বেড়েই চলেছে দাম। টাউনহল বাজারের রফিক বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহের ৫০-৫৫ টাকার আলু বর্তমানে ৫৫-৬০ কেজি। গোল লাল আলুর দাম আরও বেশি ৬০-৭০ টাকা কেজি।
কমের ধারায় মুরগি
সপ্তাহের ব্যবধানে পোলট্রি মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা কমে ১৯০-২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। পোল্ট্রির সঙ্গে সোনালির দামও কেজিতে ৩০-৪০ টাকা কমেছে। টাউনহল বাজারের পোলট্রি হাউসের বেল্লাল বলেন, সামনে ঈদ। চাহিদা কমে গেছে। এ জন্য গত সপ্তাহের ৩৪০-৩৫০ টাকার সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকায় নেমেছে। দেশি মুরগিও কম দামে ৬৫০ টাকা কেজিতে নেমেছে। অন্যান্য বিক্রেতাও বলেন, মুরগির সরবরাহ বাড়লেও চাহিদা কম। এ জন্য হঠাৎই দাম কমে গেছে।
তবে ডিমের দাম বিভিন্ন বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়েছে। ১৪০-১৪৫ টাকার ডিম ইদানীং ১৫৫-১৬০ টাকা ডজন বিক্রি করা হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতেও বেশি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে।
স্থিতিশীল চালের দাম
সারা দেশে অনেক এলাকায় বোরো ধান উঠে গেছে। এর প্রভাবে ঢাকাতে চালের দাম কমেছে। আগের সপ্তাহের মতো মিনিকেট ৬৮-৭০ টাকা, আটাশ ৫৩-৫৫ টাকা ও মোটা চাল ৫২ টাকা কেজি। কারওয়ান বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতা আনোয়ারসহ অন্য বিক্রেতারা জানান, ধান উঠতে থাকায় কমতে শুরু করেছে চালের দাম। তবে আরও কমত। কিন্তু করপোরেটরা ধান মজুত করে রাখায় তেমন আর কমবে না চালের দাম।
বাজেটে অনেক জিনিসের দাম বেড়ে যায়। সামনেই কোরবানির ঈদ। বিভিন্ন বাজারে নতুন করে বাড়েনি মসলার দাম। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যা বাড়ার ছিল, ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে গেছে। জিরার কেজি ৭০০-৯০০ টাকা, এলাচি ৩২০০-৪২০০ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটার ১৬৭ টাকা ও পাঁচ লিটার ৭৯০-৮১০ টাকা, ২ কেজি আটা ১১০-১৩০ টাকা কেজি, বেসন ১২০, খোলা চিনি ১৩০, প্যাকেট চিনি ১৩৫ টাকা।
গরুর মাংসের দাম কমে ৭৫০ টাকা, খাসির মাংসও ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বলে বিক্রেতারা জানান। মাংস বিক্রেতারা আরও জানান, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে চাহিদা এখন কম। এ জন্য দামও কম।
গত সপ্তাহের মতোই রুই ও কাতল ৩৫০-৫৫০ টাকা কেজি, চিংড়ি ৬০০-৮০০ টাকা। তবে নদীর চিংড়ি ১২০০-১৬০০ টাকা। পাবদা ৫০০-৭০০, পাঙাশ ২০০, তেলাপিয়া ২০০-২৫০, শিং ও মাগুর ৪০০-৬০০ টাকা কেজি। বিক্রেতারা বলছেন, নদীর পানি কমে যাওয়ায় খাল-বিলের মাছের দাম বেড়ে গেছে। ইলিশ মাছের দামও বাড়তি। এক কেজির ইলিশ ১৫০০-১৮০০ টাকা বলে খুচরা বিক্রেতারা জানান। তবে ছোট সাইজের ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি বলে বিক্রেতারা জানান।
সবজির দাম চড়া
গত সপ্তাহের মতোই পেঁপের কেজি ৪০-৬০ টাকা, টমেটোর কেজি ৫০-৭০ টাকা। তবে অন্য সবজির দাম একটু চড়া বলে বিক্রেতারা জানান। তারা বলেন, করলা ৫০-৬০, ঢেঁড়স ৫০, মিষ্টিকুমড়া ৩০-৪০, শসা ৪০-৬০, ঝিঙে ও ধুন্দুল ৫০-৬০, সজনে ডাঁটা ৮০-১২০, পটল ৫০-৫০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা। কাঁচা মরিচের কেজি ২৪০-২৬০ টাকা কেজি।