![অর্থ বিলে আসছে সংশোধনী](uploads/2024/06/27/parliament-1719462358.jpg)
পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টদের জোরালো দাবি সত্ত্বেও আগামী অর্থবছরে পুঁজিবাজারে ছাড় দেওয়া হচ্ছে না। বহাল থাকছে ক্যাপিটাল গেইনের ওপর নতুন করে আরোপিত কর। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুবিধা বাতিলে সুপারিশ করলেও তা আমলে আনলেন না অর্থমন্ত্রী। তবে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়িতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রত্যাহার করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসলেন।
এ বিষেয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অর্থমন্ত্রী আবু হাসান মাহমুদ আলী সারসংক্ষেপ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠিয়েছেন। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অর্থ বিল চূড়ান্তকালে কোনো ঘোষণা না দিলে এ পদক্ষেপ বহাল থাকবে।
অন্যদিকে এ পদক্ষেপ প্রত্যাহার করা হলে জানানো হবে।
আরও কিছু সংশোধনী নিয়ে আগামী শনিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের অর্থ বিল পাস করার কথা আছে।
গত ৬ জুন বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপনকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করা হলে এর ওপর আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ, মূসক ১৫ শতাংশ, আরডি ৩ শতাংশ, আগাম কর ৫ শতাংশ এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৪০০ থেকে ৫০০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ আছে। এ অবস্থায় সংসদ সদস্যদের শুল্ক কর অব্যাহতির সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসার ক্ষেত্রে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনের অংশ হিসেবে কর অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমিয়ে আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে অন্যান্য সব শুল্ক কর অব্যাহতি সুবিধা বহাল রাখা যেতে পারে।’
প্রস্তাবিত বাজেটে শুল্ক আরোপের পর একাধিক সংসদ সদস্য এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে এরই মধ্যে জাতীয় সংসদে বক্তব্য দিয়েছেন। সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এনবিআরের এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তির কাছে বার্তাও পাঠিয়েছেন।
এরশাদ সরকারের আমল (১৯৮৮ সালের ২৪ মে এসআরও জারি করে) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। গত কয়েক অর্থবছর থেকেই এনবিআর সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা বাতিলের প্রস্তাব দিয়ে এলেও শেষ পর্যন্ত সংসদ সদস্যদের আপত্তির কারণে জাতীয় বাজেটে তা আর অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয় না।
এ বিষয়ে এনবিআর সাবেক সদস্য আমিনুল করিম খবরের কাগজকে বলেন, এরশাদ সরকারের সময়ে সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুবিধা দেওয়া হয়। এতে সরকারের এক মেয়াদে সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করায় গড়ে ২৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়। সে হিসাবে এ পর্যন্ত এনবিআর গড়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব কম পেয়েছে।
এক-এগারো-পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ সুবিধা স্থগিত করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পুনর্বহাল করে আবারও এসআরও জারি করে বলা হয়, সংসদ সদস্য হিসেবে ন্যূনতম দুই বছর মেয়াদ হলেই শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ পাওয়া যাবে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের গাড়িকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে গণ্য করে এর ওপর সিসি ভেদে সর্বোচ্চ ৫০০ শতাংশ পর্যন্ত সম্পূরক শুল্ক আরোপ আছে। অন্যান্য শুল্ক ও করসহ এটি কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রায় ৮০০ শতাংশ পর্যন্ত হয়, যা সাধারণ গাড়ি ব্যবহারকারীদের পরিশোধ করতে হয়। অথচ সংসদ সদস্যদের দীর্ঘদিন ধরে এসব গাড়ি আমদানিতে কোনো ধরনের শুল্ক কর দিতে হচ্ছে না।
অর্থ মন্ত্রণালয় এবং এনবিআর সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত বাজেটে কর অবকাশ সুবিধা কমানোর পাশাপাশি কিছু শর্ত সাপেক্ষে অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাই-টেক পার্কের বিনিয়োগকারীদের মূলধনি যন্ত্রপাতি আমদানিতে আগের রাজস্ব আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থ বিল চূড়ান্তকালে এসব পদক্ষেপ বাতিল করে আগের মতো শুল্কমুক্ত সুবিধা বহাল রাখা হতে পারে। কাঁচামালের ওপর শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রাখা হবে না। প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাত পণ্যের ওপর ক্ষেত্র বিশেষে শুল্ক কর ভ্যাট আরোপ করা হয়ছে। অর্থ বিলে এ হার আরও বাড়ানো হতে পারে।
প্রস্তাবিত অর্থ বিলে মাঠপর্যায়ের রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। প্রস্তাবে ছিল বকেয়া রাজস্ব আদায়ে স্থানীয় রাজস্ব দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার একবারের নোটিশেই হিসাব জব্দ করা যাবে।
এ সিদ্ধান্ত বাতিল করে কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানোর জন্য ব্যবসায়ীরা খোদ প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আবেদন করেছেন। তারা অভিযোগ করে বলেছেন, এনবিআর কর্মকর্তাদের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বাড়বে। ব্যবসায়ীদের সুপারিশ বিবেচনা করে চূড়ান্ত অর্থ বিলে রাজস্ব কর্মকর্তাদের ক্ষমতা কমানো হয়েছে। হিসাব জব্দের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই এনবিআরের প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি নেওয়ার বিধান যোগ করা হয়েছে। চূড়ান্ত অর্থ বিলে তৃতীয় লিঙ্গ এবং প্রতিবন্ধীদের নিয়োগদানকারী প্রতিষ্ঠানের কর সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।