আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতির দিকে। তবে তার প্রভাব পড়েনি চট্টগ্রামের বৃহত্তর ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে। উল্টো সেখানে প্রতি মণে (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) ৮০ টাকা দাম বেড়েছে। এক মাস আগে খাতুনগঞ্জে প্রতি মণ গমের দাম ছিল ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ গম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩৮০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম কমতির দিকে রয়েছে। তবে এক ডলারের মূল্য ১১৭ টাকা নির্ধারণ করায় দেশে গমের দাম বেড়েছে।
খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ডলার রেটের কারণে গম আনতে গিয়ে খরচ বেশি পড়ছে। তাই পাইকারি থেকে খুচরা সব জায়গায় এর প্রভাব পড়েছে। তবে বেচাবিক্রি কম। তাই সামনে গমের দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে বাজারদর স্থিতিশীল রাখতে গম আমদানি অব্যাহত রেখেছে সরকার। চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে গত ৩ এপ্রিল রাশিয়া থেকে সাড়ে ৫২ হাজার টন, ৯ এপ্রিল লাটভিয়া থেকে ৫০ হাজার ৭১০ টন এবং ৯ মে রাশিয়া থেকে সাড়ে ৫৩ হাজার টন গম নিয়ে জাহাজ আসে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে প্রতি টন গমে বুকিং রেট ছিল ৪২২ ডলার। ওই বছরের ডিসেম্বরে প্রতি টন গমে বুকিং রেট ছিল ৩৮৬ ডলার। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি টন গম বিক্রি হয় ৩৪৫ ডলারে। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রতি টন গমে বুকিং রেট পড়ে ৩৯৪ ডলার। এরপর ২০২৩ সালের মার্চে প্রতি টন বিক্রি হয় ৩৬৯ ডলারে। ওই বছরের এপ্রিলে প্রতি টন গমে বুকিং রেট ছিল ৩৭৮ ডলারে। এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রতি টন গম কিনতে আমদানিকারকের খরচ পড়ে ২৮৩ ডলার। ফেব্রুয়ারিতে কমে ২৭৮ ডলার, মার্চে ২৭৪ ডলার এবং এপ্রিল মাসে প্রতি টন গমে বুকিং রেট পড়ে ২৭২ ডলার। অর্থাৎ বিশ্ববাজারের চিত্রে গমের দাম কমতির দিকে।
তবে খাতুনগঞ্জের ভোগ্যপণ্যের আমদানিকারক এবং বিএসএম গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আবুল বশর বলেন, খাতুনগঞ্জে গমের বেচাকেনা তেমন নেই। তাই আমরা প্রতি মণ গম ১ হাজার ৩৩০ থেকে ১ হাজার ৩৫০ টাকায় বিক্রি করছি।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘বর্তমানে পেঁয়াজের কেজি শত টাকা ছুঁয়েছে। ডিমের দামও আকাশছোঁয়া। গমের তৈরি বিভিন্ন পণ্য আমরা প্রতিনিয়ত খাচ্ছি। তাই সব সময় গমের চাহিদা থাকে।
আর এ চাহিদাকে পুঁজি করে সব সময় কোনো না কোনো ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে। আমরা সব সময় বলে আসছি, আমদানিকারক থেকে শুরু করে পাইকার, সবার ক্রয়-বিক্রয় রশিদ যাচাই করতে হবে। খুচরা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তা হলে ভোক্তারা এর সুফল পাবে।’
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক ফয়েজ উল্যাহ খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমরা বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করছি। ডিমের দাম কেন বেড়েছে তা যাচাই করতে আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা পাহাড়তলি বাজারে অভিযান পরিচালনা করেছি। এভাবে আমরা সাধ্যমতো বিভিন্ন বাজার মনিটরিং করছি। জনস্বার্থে তা অব্যাহত থাকবে।’
প্রসঙ্গত, দেশে দৈনিক খাদ্যতালিকায় ভাতের পরই সবচেয়ে বেশি গম দিয়ে বিভিন্ন খাবার তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে ১২ লাখ ৬ হাজার টন গম উৎপাদন হয়। বাকি চাহিদা মেটাতে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত থেকে গম আমদানি করা হয়।