![রাজস্ব আয় : লক্ষ্যমাত্রায় লাগবে ৮৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকা](uploads/2024/06/28/Untitled-1719563354.jpg)
মে মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২ হাজার ৯৭২ টাকা কোটি টাকা বেশি আদায় করলেও চলতি অর্থবছরের মোট রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা থেকে এখনো অনেক পিছিয়ে। চলতি (২০২৩-২৪) অর্থবছরের সংশোধিত ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে এনবিআরকে আরও ৮৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকা আদায় করতে হবে।
অর্থনীতির বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, অর্থবছরের শেষ (জুন) মাসের হিসাব ছাড়াই বড় অঙ্কের ঘাটতি দেখা দিল। শেষ মাসে কত আর আদায় হবে! এত টাকা জুন মাসের শেষ পর্যন্ত আদায় করা এনবিআরের পক্ষে সম্ভব হবে না। এর ফলে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
চলতি অর্থবছরের শুরুতে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এ লক্ষ্যমাত্রা থেকে চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে পিছিয়ে আছে ১ লাখ ৫ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। শুরু থেকেই লক্ষ্য অর্জনে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিলে অর্থবছরের মাঝামাঝি কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে।
এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের গত ১১ মাস (জুলাই-এপ্রিল) পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ লাখ ২৪ হাজার ৩৭৮ কোটি ২০ লাখ টাকার শুল্ক-কর-ভ্যাট আদায় হয়েছে। এই সময় সংস্থাটির রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৩ লাখ ২৫ হাজার ৭৪০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। মে মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ২৯ কোটি টাকা। এই এক মাসে আদায় হয়েছে ৩৫ হাজার ১ কোটি টাকা। এই এক মাসে বেশি আদায় হয়েছে ২ হাজার ৯৭২ টাকা।
এনবিআরসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের জন্য আমদানি ও রপ্তানি পর্যায়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। গত ১১ মাসে এ খাতের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৫৫ কোটি টাকা। এ সময়ে আদায় হয় ৯১ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। এ ক্ষেত্রে ৮ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা কম আদায় হয়েছে।
ভ্যাটে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৫১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। মে মাস পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। আদায় হয় ১ লাখ ২৭ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা। এ সময়ে ঘাটতি ৪ হাজার ৯৯২ টাকা।
আয়করে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। গত মে মাস পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯২ হাজার ৬২৮ টাকা। এ সময় পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা। বেশি আদায় হয়েছে ১২ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা।
লক্ষ্যমাত্রা পূরণ থেকে অনেক পিছিয়ে থাকলেও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪.৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে। এর মধ্যে আয়কর আদায়ে সর্বোচ্চ ১৮.০৯ শতাংশ, ভ্যাটে ১৬.৩৫ শতাংশ ও আমদানি পর্যায়ে ৯.৪৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছে বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের যে সংশোধিত লক্ষ্য দেওয়া হয়েছিল, তার চেয়ে ২৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা কম আদায় হয়। যা মূল লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৬ হাজার ২৬৩ কোটি টাকা কম ছিল।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) দেওয়া ঋণের শর্ত হিসেবে এবার বাড়তি রাজস্ব আদায়ের শর্তও পূরণ করতে হবে সংস্থাটিকে। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, রাজস্ব খাতে সংস্কারের পাশাপাশি প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ০.৫ শতাংশ হারে বেশি রাজস্ব আদায় করতে হবে। চলতি অর্থবছরে এনবিআরকে ৩ লাখ ৯৩ হাজার ২০০ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছিল আইএমএফ। অর্থ বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হলেও এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণই অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অতিরিক্ত ২৪ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আদায় করতে হতো। এর মধ্যে আয়কর খাতে ৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা, ভ্যাট থেকে ৩ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা ও ১১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা কাস্টমস খাতে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ডলারসংকটের কারণে এনবিআর রাজস্ব আদায়ে পিছিয়ে পড়েছে। এতে আইএমএফের কাছ থেকে চাপ বাড়লেও অর্থবছরের আর এক মাসের হিসাব যোগ করা হলেও এবারের মোট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা সম্ভব হবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়।