ঢাকা ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪

সিয়াম কলকাতায় ১৪ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম
আপডেট: ০৯ জুন ২০২৪, ১২:৫৬ পিএম
সিয়াম কলকাতায় ১৪ দিনের রিমান্ডে
সিয়াম হোসেন ও আনোয়ারুল আজীম আনার

ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা সিয়াম হোসেনকে পুলিশি রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে তাকে বারাসতের আদালতে পেশ করা হলে ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।

সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মন্দাক্রান্তা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সিআইডি সিটের তরফে তদন্তের জন্য ১৪ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন। 

আদালতে সিআইডি জানায়, গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া এমপি আনারের দেহ কোথায় ফেলা হয়েছে, খুনে ব্যবহার করা অস্ত্রশস্ত্র কোথায় লোপাট করা হয়েছে সেসব জানার চেষ্টা করা হবে সিয়ামের কাছে। সে কারণেই সিয়ামকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে রাখা প্রয়োজন। সিয়ামের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪, ২০১, ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় মামলা করা হয়েছে। 

সিয়ামকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণপ্রান্ত বনগাঁ সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে রাজ্য সিআইডি। এমপি আনারকে হত্যা এবং তার দেহ লোপাটের কাজ সেরেই তিনি কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বিহার হয়ে নেপাল পালিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে সীমান্ত এলাকা থেকে সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে নেপাল পুলিশ। 

এরপর তাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে নেপাল। নেপাল পুলিশের সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ চাইলেও তাকে ভারতের হাতেই প্রত্যর্পণ করা হয়। সিয়ামকে স্থলপথেই কলকাতায় পাঠানো হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকেই যৌথভাবে তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির বিশেষ তদন্তকারী দল। জুন মাসের শুরুতে সিয়ামকে ধরতে নেপাল গিয়েছিলেন দুই দেশের তদন্তকারীরাই। কিন্তু চলতি সপ্তাহের শুরুতেই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, যেহেতু কলকাতায় এমপি আনার খুন হয়েছেন তাই ঘটনার তদন্তভার ভারতেরই। 

এদিকে অভিযুক্ত সিয়ামকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল কলকাতা পুলিশও। সেই মতোই সিয়ামকে ভারতের কাছেই হস্তান্তর করে নেপাল পুলিশ। তবে নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে এখনো একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা ও কলকাতা।

 এই খুনের মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, বাংলাদেশি নাগরিক সিয়ামকে পাকড়াও করতেও ভারত-নেপাল সীমান্তের নানা এলাকায় সিআইডির বিশেষ তদন্তকারী দল খোঁজখবরও চালিয়েছিল।

সিআইডি সদর দপ্তর ভবানী ভবন সূত্রের খবর, এই খুনের মামলার মূল অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামান শাহীনের খোঁজ চলছে। ঢাকা এবং কলকাতার গোয়েন্দা কর্তাদের মতে, শাহীন নেপাল হয়ে আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন। তিনি আমেরিকারই বাসিন্দা। তাই তাকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আমেরিকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু হয়েছে। 

সেই শাহীনের অন্যতম সহযোগী সিয়াম এবং কসাই জিহাদকে কয়েক মাস ধরে কলকাতার রাজারহাট-নিউটাউনের চিনার পার্কের ফ্ল্যাটেই রাখা হয়েছিল। ফ্ল্যাটটি ২০১৮ সালে ভাড়া নিয়েছিলেন শাহীন। আনার খুনের পরিকল্পনা কার্যকর করার বিভিন্ন ধাপে সিয়ামের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।

সংসদ সদস্য খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশে আগেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতরা খুনের কথা স্বীকার করলেও আনারের দেহাংশ, তার পোশাক বা খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র কিছুই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো ছাড়া আদালতে তাদের দোষীসাব্যস্ত করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি একের পর এক ভুল তথ্য দিয়ে তদন্তকারীদের ভুলপথে চালিত করেছেন ধৃতরা।

ডুবুরি-জেলের পর খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ভারতীয় নৌসেনার আধিকারিকদেরও। তা হলে কোথায় গেল আনারের দেহাংশ? খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রই বা কোথায়? যে ট্রলি ব্যাগে করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটাই বা কোথায় ফেলা হয়েছে? এখনো একাধিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।

সংসদ সদস্য আনারের কারবার নিয়ে প্রশ্ন 

এমপি আনারের কলকাতার কারবার নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছেন সিআইডি সিটের তদন্তকারীরা।
তাদের বক্তব্য: ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার এবং স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন আনার। 

এমনকি একটি সিন্ডিকেটের মাথাও ছিলেন তিনি। এখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে আসার প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারেও তিনি যুক্ত ছিলেন বলে খবর। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, চিকিৎসার নাম করে কলকাতায় টাকা ঢুকিয়ে পরে তা স্বর্ণ ব্যবসায় লাগানো হতো।

আওয়ামী লীগ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি: ডিবি

ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, এমপি আনার হত্যার ঘটনায় আটক ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। তবে এখনো তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। 
গতকাল মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

হারুন বলেন, কামালকে জিজ্ঞাসাবাদে যদি এমপি আনার হত্যায় তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।

আনারের শরীরের উদ্ধার করা মাংসের ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য এমপির পরিবারের সদস্যরা খুব দ্রুত ভারতে যাবেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া ভারতের তদন্ত কর্মকর্তারাও তার পরিবারের সদস্যদের নাম ও মোবাইল নম্বর নিয়েছে। শিগগির তারা ডাকবে। যদি তারা ডাকে তবে ধরে নিতে হবে ডিএনএ টেস্টের জন্য ডেকেছে।’

বাংলাদেশের সিআইডির ল্যাবে পরীক্ষা করা যায় কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সেখানে গেলে কম সময়ের ভেতরে হয়ে যাবে।’

মূল হোতা আক্তারুজ্জামান শাহীনকে ফেরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শাহীন নেপাল থেকে দুবাই হয়ে আমেরিকা চলে গেছেন। ভারতে যখন ছিলাম সেখানকার পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে, বৈঠক হয়েছে। যেহেতু ভারতে হত্যা হয়েছে সেহেতু শাহীন তাদের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। আমরাও কাজ করছি তারাও কাজ করছে। তারা হয়তো ইন্টারপোলের কাছে এসব বিষয় জানিয়েছে। এটুকু বলতে পারি আনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা যেখানে, যেভাবে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।’

হারুন বলেন, ‘সিয়ামকে ভারত নিয়ে গেছে। আনারকে হত্যা করে পৈশাচিক কায়দায় গুম করার বিষয়টি জানে সিয়াম ও জিহাদ। এ দুজনই এখন তাদের কাছে রয়েছে। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করলে ভালো ফল পাবে। প্রয়োজনে আমরাও সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’

বাংলাদেশে গ্রেপ্তার আসামিদের ভারত নিয়ে যেতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কথা বলতে হবে। আমরা আগেও যখন ভারত গিয়েছিলাম তখন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলাম।’ 

অবৈধ সম্পদে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে এগিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা স্ত্রী, দুদকে মামলা

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৯ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:২১ পিএম
অবৈধ সম্পদে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে এগিয়ে এনবিআর কর্মকর্তা স্ত্রী, দুদকে মামলা

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কবির আহমেদের স্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সহকারী পরিচালক বদরুন নাহার। তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে প্রকৌশলী স্বামীর চেয়ে অবৈধ সম্পদে এগিয়ে আছেন তার স্ত্রী এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা বদরুন নাহার।

দুজনের বিরুদ্ধে অন্তত ৮ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কবির আহমেদের ১ কোটি টাকার সম্পদ আর স্ত্রী বদরুন নাহারের ৭ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। 

এসব অবৈধ সম্পদের বিবরণ তুলে ধরে দুজনের বিরুদ্ধেই সোমবার (১ জুলাই) পৃথক দুটি মামলা করেছেন দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জিন্নাতুল ইসলাম। 

একটি মামলায় ১ কোটি ৮ লাখ ১০ হাজার ৭২৮ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ এনে কবির আহমেদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। অপর মামলায় তার স্ত্রী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (গবেষণা ও পরিসংখ্যান উইং) সাবেক সহকারী পরিচালক বদরুন নাহারের বিরুদ্ধে ৭ কোটি ৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৯৯ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ আনা হয়েছে। 

দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে আছাদুজ্জামানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৪ এএম
দুর্নীতির অনুসন্ধান নিয়ে আছাদুজ্জামানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে আজ
আছাদুজ্জামান মিয়া

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে আজ মঙ্গলবার (২ জুলাই)।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নিয়মিত বৈঠক নির্ধারিত আছে। 

এ বৈঠকে আলোচ্যসূচির অন্যান্য বিষয় ছাড়াও আছাদুজ্জামানের দুর্নীতির অনুসন্ধান প্রশ্নে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হবে।

দুদকের একটি সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও দুদকে আসা অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ইতোমধ্যে কমিশনে মতামত দাখিল করেছে দুদকের যাচাই-বাছাই কমিটি। এতে অনুসন্ধান করার অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে। কমিশনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে, অনুসন্ধান শুরু হবে। এর আগে গত সপ্তাহে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন বলেছিলেন, ‘আছাদুজ্জামান বিষয়ে আসা অবৈধ সম্পদের অভিযোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। অনুসন্ধান করা হবে কি না, সেটা কমিশনের পরবর্তী বৈঠকের পর জানা যাবে।’ 

এ বিষয়ে দুদক কমিশনার আছিয়া খাতুন কানাডায় থাকায় এবং সফরের মেয়াদ বাড়ায় গত মঙ্গলবার কমিশনের নির্ধারিত বৈঠক হয়নি। তিনি ইতোমধ্যে দেশে ফিরেছেন। ফলে আজকের নির্ধারিত বৈঠকে তিনি উপস্থিত থাকবেন। 

অস্বাভাবিক অর্থ-সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে কিছুদিন ধরেই ব্যাপক আলোচনায় আছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। এখন বিপুল সম্পদ অর্জন নিয়ে আলোচনায় এলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। আছাদুজ্জামান মিয়ার অবৈধ সম্পদ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত হয় ঈদুল আজহার আগের দিন গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রীর নামে ঢাকায় একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাট, ছেলের নামে একটি বাড়ি এবং মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে তার স্ত্রী ও সন্তানদের নামে ৬৭ শতক জমি রয়েছে। এই তিন জেলায় তার পরিবারের সদস্যদের নামে রয়েছে আরও ১৬৬ শতক জমি। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এল ব্লকের লেন-১-এ ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বরে ১০ কাঠা জমির ওপর সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আছাদুজ্জামান মিয়ার স্ত্রী আফরোজা জামানের মালিকানায় ছয়তলা একটি বাড়ি রয়েছে। রাজধানীর ইস্কাটনেও আফরোজার নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। আরও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ধানমন্ডিতে। এর বাইরে সিদ্ধেশ্বরীতে আছাদুজ্জামানের মেয়ের নামে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। গাজীপুরের কালীগঞ্জের চাঁদখোলা মৌজায় ২০১৭ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে সর্বমোট ১০৬ শতক জমি কেনা হয় আছাদুজ্জামানের স্ত্রী আফরোজা জামানের নামে।

এ ছাড়া ২০১৮ সালে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কৈয়ামসাইল-কায়েতপাড়া মৌজায় আফরোজার নামে ২৮ শতক জমি কেনা হয়। একই বছর একই মৌজায় আরও ৩২ শতক জমি কেনা হয় তার নামে। পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি রয়েছে আছাদুজ্জামান মিয়ার নামে। এ ছাড়া আছাদুজ্জামানের পরিবারের সদস্যদের নামে রাজধানীর আফতাবনগরে ২১ কাঠা জমি রয়েছে। নিকুঞ্জ ১-এ আছাদুজ্জামানের ছোট ছেলের নামেও একটি বাড়ি রয়েছে।

এই প্রতিবেদন নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা শুরু হওয়ায় দুদকের পদক্ষেপের ওপর এখন নির্ভর করছে অনেককিছু। 

পুনর্গঠন হতে পারে মন্ত্রিসভা

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:১৫ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১২:১২ পিএম
পুনর্গঠন হতে পারে মন্ত্রিসভা

চলতি মাসেই মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী ১১ জুলাই বর্তমান মন্ত্রিসভার ছয় মাস পূর্ণ হচ্ছে। আওয়ামী লীগের টানা চতুর্থ মেয়াদের সরকারের এই মন্ত্রিসভার ছয় মাস পূর্ণ হওয়ার আগে অথবা পরে পুনর্গঠনের এই সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো খবরের কাগজকে জানিয়েছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ছয় মাসের ‘পারফরম্যান্স’ মূল্যায়ন প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই সময়ে মন্ত্রিসভার সদস্যরা কে কেমন করলেন, তার রিপোর্ট এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।

তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং সুশাসনকে জোর দিয়ে এবার মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করবেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা ধারণা করছেন। আর এ ক্ষেত্রে সততা ও দক্ষতাই হবে পদোন্নতি কিংবা মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির মূল ভিত্তি।

মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপ করে এবং প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো থেকে জানা গেছে, দুর্নীতির বিষয়ে সাম্প্রতিক কালে গণমাধ্যমে যে চিত্র উঠে এসেছে, তাতে সরকার সম্পর্কে জনমনে একধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে অনেকের ধারণা। তাই সরকারের ভেতরে-বাইরে ইতিবাচক ভাবমূর্তি বাড়ানোর একধরনের তাগিদ তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা বলছেন, ব্যক্তির দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার চেয়ে সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষা অনেক বেশি জরুরি। ফলে জনগণের কাছে নেতিবাচক ভাবমূর্তি রয়েছে, এমন কাউকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রক্ষার দায়িত্ব নেবেন না।

সূত্র জানিয়েছে, গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা মিটিয়ে ফেলতে এই মুহূর্তে সুশাসনকে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কারণ দেশগুলো (যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা) বিদ্যমান নির্বাচনিব্যবস্থার সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে দুর্নীতি নিয়ে বরাবরই অভিযোগ করে আসছে। তাই ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারসহ সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য সরকার শুরু করেছে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান। যে অভিযানে ধরাশায়ী হয়েছেন সাবেক আইজিপিসহ একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা এবং সাবেক সেনাপ্রধানের স্বজনরা। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি পুনর্ব্যক্ত করে দৃঢ় অবস্থানের প্রসঙ্গটি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেছেন, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর রপ্তানি বাজারে যে চ্যালেঞ্জ আসবে, সেগুলো মোকাবিলার জন্য মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এ সময় তিনি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব থেকে সৃষ্ট চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা এবং করোনা মহামারি-উত্তর অর্থনীতি পুনর্গঠনে সততার সঙ্গে কাজ করতে বলেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিসভার এক সদস্য। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ জনবল তৈরি এবং তাদের বিদেশে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে বলেছেন। এ সময় তিনি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

গণভবনের সূত্রগুলো দাবি করছে, একে তো অর্থনৈতিক সংকট, তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ তাদের মিত্রদের রয়েছে অসহযোগিতা, সব মিলিয়ে সরকার বেশ কঠিন সময় পার করছে। তাই এই সংকট থেকে উত্তরণের পথ হতে পারে মন্ত্রিসভায় দক্ষ ও সৎ ব্যক্তিদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা। সে কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনে এ দুটি বিষয়কে প্রাধান্য দেবেন। বিষয়গুলো নিয়ে তিনি ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন। তবে মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ কে বা কারা আসতে পারেন, সে বিষয়টি কাউকেই বলেননি। সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে, মন্ত্রিসভা পুনর্গঠনের বিষয়ে আভাস মিলেছে। 

এ বছর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা গঠন হয় ১১ জানুয়ারি। এরপর প্রথম দফায় মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হয় ১ মার্চ। ওই দিন সাত প্রতিমন্ত্রী শপথ নেন। ফলে মন্ত্রিসভার আকার বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪ জন (প্রধানমন্ত্রীসহ)। সব ঠিক থাকলে এ মাসেই দ্বিতীয় দফায় সম্প্রসারণের পাশাপাশি মন্ত্রিসভায় রদবদলও হতে পারে। 

জানা গেছে, দ্বিতীয় দফায় মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে ১৪ দলের শরিকদের ভাগ্য খুলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা ঠাঁই পেতে পারেন মন্ত্রিসভায়। যেসব মন্ত্রণালয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী নেই, নতুন মন্ত্রীদের এসব জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। এর বাইরে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছয় মাসের পারফরম্যান্স বিবেচনায় নিয়ে দপ্তর পরিবর্তন করা হতে পারে একাধিক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর। ছয় মাসের ‘এক্সপেরিমেন্ট’ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মন্ত্রিসভাকে ঢেলে সাজাবেন- এ ব্যাপারে দ্বিমত নেই তার ঘনিষ্ঠজনদের। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রী দেশের ভেতর এবং বাইরের সংকট মোকাবিলায় যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

ডেপুটি স্পিকারপুত্র আসিফের দেশত্যাগ!

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:০৯ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:১৪ এএম
ডেপুটি স্পিকারপুত্র আসিফের দেশত্যাগ!
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

প্রায় ২০০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকির মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার মো. শামসুল হক টুকুর ছেলে এস এম আসিফ শামস সপরিবারে গত রবিবার (৩০ জুন) বিদেশে চলে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে একটি পারিবারিক সূত্র জানায়, শামস আরও কয়েক দিন আগেই স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছেড়েছেন।

১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭১ টাকা রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে ২০২২ সালের মে মাসে ওই পরোয়ানা জারি করা হয়। দুই বছরের বেশি সময় পর এই পরোয়ানা কার্যকরের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে খবরে আসিফ দেশত্যাগ করেন। তিনি পাবনা জেলার বেড়া পৌরসভার মেয়র।

ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল (ভিওআইপি) ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভিশন টেল কোম্পানির চেয়ারম্যান আসিফ শামসের নামে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে দুদকে একটি অভিযোগ জমা পড়ে। এতে উল্লেখ করা হয়, ভিওআইপির লাইসেন্স ফি বাবদ তিনি বিটিআরসিকে ১৫ কোটি টাকা অগ্রিম এবং প্রতিবছরে ৭ কোটি টাকা হিসেবে তিন বছরে ২১ কোটি টাকা অর্থাৎ মোট ৩৬ কোটি টাকা দিয়েছেন। তবে ২০১৪ সালে সার্বিকভাবে ভিশন টেল-এর কাছে আরও পাওনা থেকে যায় ১৪৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। আট বছর পরে ২০২২ সালে তা হয় ১৯১ কোটি ৬৩ লাখ ৪৭ হাজার ৭১ টাকা।

সোমবার (১ জুলাই) থেকে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর। এ সপ্তাহেই পুলিশ এই পরোয়ানা কার্যকর করবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। আগাম এই তথ্য জানতে পেরে আসিফ দেশ ছাড়েন।

দুই বছরেও পরোয়ানা কার্যকর না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বেড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাশিদুল ইসলাম সোমবার বিকেলে খবরের কাগজকে বলেন, ‘এটি অনেক আগের পরোয়ানা। উনি তো বেড়া পৌরসভার মেয়র। আমি জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর থেকে এখানে আছি। তবে এই পরোয়ানা কার্যকর করার বিষয়ে সম্প্রতি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্যে পরোয়ানা কার্যকর হবে।’ 

ঠিক কবে নাগাদ পরোয়ানা কার্যকর হবে জানতে চাইলে রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছি না।’

এই পরোয়ানা তামিল করার জন্য ২০২২ সালের ২৩ মে পাবনা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারিস্তা করিম নথিতে স্বাক্ষর করেন। এতে ‘প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অফিসার ইনচার্জ বেড়া থানাকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো’ লিখে তিনি স্বাক্ষর করেন।

ফারিস্তা করিম এখন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘পাবনা ডিসি অফিসের জেনারেল সার্টিফিকেট কোর্ট এই পরোয়ানা জারি করে। জেনারেল সার্টিফিকেট অফিসার হিসেবে আমি এতে স্বাক্ষর করি। রাজস্ব পরিশোধের জন্য এসব ক্ষেত্রে চিঠি দেওয়া হয়। বারবার চিঠি দেওয়ার পরও সাড়া না পেলে সাধারণত পরোয়ানা জারি করা হয়। ওনার ক্ষেত্রে ঠিক কী হয়েছিল, আমার তা মনে নেই।’

এতদিনেও পরোয়ানা তামিল না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে গতকাল বিকেলে তিনি বলেন, ‘এটা তো বেশ আগের পরোয়ানা। কেন তামিল হয়নি তা তো ওনারা (পুলিশ প্রশাসন) বলবেন। আমি সম্প্রতি বদলি হয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়াতে আছি।’

এদিকে ভিশন টেল লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম আসিফ শামসের রাজস্ব ফাঁকি ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল বিষয়ে জানতে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কমিশনার মুশফিক মান্নান চৌধুরীর সঙ্গে পর পর দুই দিন (রবি, সোমবার) যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসিতে সম্প্রতি আলাপ-আলোচনা হয়েছে।’ তবে দ্বিতীয় দিন তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ের ফাইলটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

পরোয়ানাপত্রে শামসের পরিচয় উল্লেখ করা হয়, ‘এস এম আসিফ শামস, চেয়ারম্যান, ভিশন টেল লিমিটেড’। এতে তার ঢাকার ঠিকানা এবং স্থায়ী ঠিকানা উভয়ই উল্লেখ করা হয়। এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য গতকাল এস এম আসিফ শামসের মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। তবে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

আনার হত্যাকাণ্ড: চিঠি এলে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ভারতে যাবে পরিবার

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৭ এএম
আনার হত্যাকাণ্ড: চিঠি এলে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ভারতে যাবে পরিবার
এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার

ভারত গিয়ে খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তার পরিবারের সদস্যদের কলকাতায় যাওয়ার কথা রয়েছে। তবে তার পারিবারিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে কলকাতার সিআইডির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা আনারের পরিবারকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য একটি চিঠি পাঠাবে। এরপর তারা কলকাতায় যাবেন। 

এদিকে কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে জানানো হয়েছে যে তারা (কলকাতা পুলিশ) আনার হত্যার তদন্তের বিষয়টি শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। কিছু তথ্যের ঘাটতি রয়েছে। তারা তা মাঠপর্যায়ে সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। কিছুদিন পর বাংলাদেশের গোয়েন্দা টিম যদি কলকাতায় আসে। তখন কলকাতা পুলিশ বাংলাদেশের গোয়েন্দা টিমকে বিস্তারিত তথ্য দিতে পারবে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

এ ব্যাপারে আনারের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আব্দুর রউফ সোমবার (১ জুলাই) সন্ধ্যায় খবরের কাগজকে জানান, ‘পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য তারা আমাদের একটি চিঠি ইস্যু করবে। চিঠিটি ম্যানুয়ালি না ই-মেইলে দেওয়া হবে, তা জানানো হয়নি। চিঠি পাওয়ার পর আমরা কলকতায় যাব।’

গত ১৩ মে কলকাতার একটি ফ্ল্যাটে খুন হন ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার। ২২ মে আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন বাদী হয়ে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন। অন্যদিকে কলকাতায় একটি হত্যা মামলা হয়েছে। এ দুটি মামলায় ঢাকা, কলকাতাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

গত ২৬ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মোস্তাফিজ ও ফয়সাল নামের দুজনকে। এর মধ্যে ফয়সাল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানিয়েছেন, আনারকে হত্যার পর যে ট্রলি ব্যাগে তার দেহের টুকরা ভরা হয়েছিল, সেই ট্রলি ব্যাগটি তিনি কলকাতার ‘অবনী রিভারসাইড মল’-এর পাশে একটি দোকান থেকে কিনেছিলেন। এ জন্য এ খুনের মাস্টারমাইন্ড আকতারুজ্জামান শাহীন তাকে ভারতীয় সাড়ে ৩ হাজার রুপি দিয়েছিলেন। আনারকে হত্যার পর শাহীন তার ট্রলিতে দেহের টুকরোগুলো ভরার উদ্যোগ নিলেও পরে তা করেননি। কারণ ওই ট্রলিতে তার একাধিক পাসপোর্ট ও গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল। পরে শাহীন ফয়সালকে দিয়ে ওই ট্রলি ব্যাগ আনিয়ে নিয়েছিলেন। এরপর সেই ট্রলিতে করে আনারের দেহের খণ্ডাংশ ভরে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেওয়া হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, আনার হত্যার সঙ্গে জড়িত ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করীম মিন্টুকে এ মামলার অন্য আসামিদের তথ্যের ভিত্তিতে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। পরে ডিবি পুলিশ তাকে আদালতে হাজির করলে আদালত আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তিন দিন রিমান্ড শেষ হলে ডিবি পুলিশ তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়। মিন্টুকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়ার ব্যাপারে শুরু থেকে চাপ ছিল। ক্ষমতাসীন দলের একাধিক এমপি তার জন্য তদবির করেছিলেন। মিন্টুর ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গ্রিন সিগন্যাল পেলে তার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। 

সূত্র জানায়, এ মামলার অন্যতম আসামি গ্যাস বাবুর তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধারের জন্য অভিযান চালিয়েছে ডিবি। কিন্তু ওই তিনটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা যায়নি। গ্যাস বাবু ডিবির কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন, মোবাইলের যে ডিভাইস রয়েছে, সেই ডিভাইস তিনি আগেই নষ্ট করে ফেলেছেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের ধারণা, গ্যাস বাবুর মোবাইলে তথ্য পাওয়ার আর কোনো আশা নেই। আনার হত্যার মিশন বাস্তবায়নের জন্য গ্যাস বাবু শাহীনকে কলকাতায় এ খুনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বলেছিলেন। যাতে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী টের না পায়।