![সিয়াম কলকাতায় ১৪ দিনের রিমান্ডে](uploads/2024/06/09/Anar-1717916206.jpg)
ঝিনাইদহের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা সিয়াম হোসেনকে পুলিশি রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে তাকে বারাসতের আদালতে পেশ করা হলে ১৪ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়।
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মন্দাক্রান্তা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, সিআইডি সিটের তরফে তদন্তের জন্য ১৪ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছিল। বিচারক তা মঞ্জুর করেছেন।
আদালতে সিআইডি জানায়, গোটা ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া এমপি আনারের দেহ কোথায় ফেলা হয়েছে, খুনে ব্যবহার করা অস্ত্রশস্ত্র কোথায় লোপাট করা হয়েছে সেসব জানার চেষ্টা করা হবে সিয়ামের কাছে। সে কারণেই সিয়ামকে ১৪ দিনের জন্য হেফাজতে রাখা প্রয়োজন। সিয়ামের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৪, ২০১, ৩০২ এবং ৩৪ ধারায় মামলা করা হয়েছে।
সিয়ামকে পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণপ্রান্ত বনগাঁ সীমান্ত থেকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে রাজ্য সিআইডি। এমপি আনারকে হত্যা এবং তার দেহ লোপাটের কাজ সেরেই তিনি কলকাতার ধর্মতলা থেকে বাস ধরে বিহার হয়ে নেপাল পালিয়েছিলেন। সূত্রের খবর, গত সপ্তাহে সীমান্ত এলাকা থেকে সিয়ামকে গ্রেপ্তার করে নেপাল পুলিশ।
এরপর তাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে নেপাল। নেপাল পুলিশের সূত্রকে উদ্ধৃত করে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ চাইলেও তাকে ভারতের হাতেই প্রত্যর্পণ করা হয়। সিয়ামকে স্থলপথেই কলকাতায় পাঠানো হয়েছে।
এই হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকেই যৌথভাবে তদন্ত করছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ সিআইডির বিশেষ তদন্তকারী দল। জুন মাসের শুরুতে সিয়ামকে ধরতে নেপাল গিয়েছিলেন দুই দেশের তদন্তকারীরাই। কিন্তু চলতি সপ্তাহের শুরুতেই বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছিলেন, যেহেতু কলকাতায় এমপি আনার খুন হয়েছেন তাই ঘটনার তদন্তভার ভারতেরই।
এদিকে অভিযুক্ত সিয়ামকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চেয়েছিল কলকাতা পুলিশও। সেই মতোই সিয়ামকে ভারতের কাছেই হস্তান্তর করে নেপাল পুলিশ। তবে নারকীয় এই হত্যাকাণ্ডের জট খুলতে এখনো একসঙ্গে কাজ করবে ঢাকা ও কলকাতা।
এই খুনের মামলার অন্যতম অভিযুক্ত, বাংলাদেশি নাগরিক সিয়ামকে পাকড়াও করতেও ভারত-নেপাল সীমান্তের নানা এলাকায় সিআইডির বিশেষ তদন্তকারী দল খোঁজখবরও চালিয়েছিল।
সিআইডি সদর দপ্তর ভবানী ভবন সূত্রের খবর, এই খুনের মামলার মূল অভিযুক্ত আক্তারুজ্জামান শাহীনের খোঁজ চলছে। ঢাকা এবং কলকাতার গোয়েন্দা কর্তাদের মতে, শাহীন নেপাল হয়ে আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন। তিনি আমেরিকারই বাসিন্দা। তাই তাকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আমেরিকার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগও শুরু হয়েছে।
সেই শাহীনের অন্যতম সহযোগী সিয়াম এবং কসাই জিহাদকে কয়েক মাস ধরে কলকাতার রাজারহাট-নিউটাউনের চিনার পার্কের ফ্ল্যাটেই রাখা হয়েছিল। ফ্ল্যাটটি ২০১৮ সালে ভাড়া নিয়েছিলেন শাহীন। আনার খুনের পরিকল্পনা কার্যকর করার বিভিন্ন ধাপে সিয়ামের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
সংসদ সদস্য খুনে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশে আগেই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ধৃতরা খুনের কথা স্বীকার করলেও আনারের দেহাংশ, তার পোশাক বা খুনে ব্যবহৃত অস্ত্র কিছুই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এগুলো ছাড়া আদালতে তাদের দোষীসাব্যস্ত করা সম্ভব নয়। পাশাপাশি একের পর এক ভুল তথ্য দিয়ে তদন্তকারীদের ভুলপথে চালিত করেছেন ধৃতরা।
ডুবুরি-জেলের পর খালি হাতে ফিরতে হয়েছে ভারতীয় নৌসেনার আধিকারিকদেরও। তা হলে কোথায় গেল আনারের দেহাংশ? খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রই বা কোথায়? যে ট্রলি ব্যাগে করে দেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেটাই বা কোথায় ফেলা হয়েছে? এখনো একাধিক প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন গোয়েন্দারা।
সংসদ সদস্য আনারের কারবার নিয়ে প্রশ্ন
এমপি আনারের কলকাতার কারবার নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছেন সিআইডি সিটের তদন্তকারীরা।
তাদের বক্তব্য: ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাচার এবং স্বর্ণ পাচারের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন আনার।
এমনকি একটি সিন্ডিকেটের মাথাও ছিলেন তিনি। এখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিকিৎসা করাতে আসার প্রক্রিয়াকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারেও তিনি যুক্ত ছিলেন বলে খবর। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, চিকিৎসার নাম করে কলকাতায় টাকা ঢুকিয়ে পরে তা স্বর্ণ ব্যবসায় লাগানো হতো।
আওয়ামী লীগ নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে, আনুষ্ঠানিক গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি: ডিবি
ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, এমপি আনার হত্যার ঘটনায় আটক ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী কামাল আহমেদকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে। তবে এখনো তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি।
গতকাল মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
হারুন বলেন, কামালকে জিজ্ঞাসাবাদে যদি এমপি আনার হত্যায় তার কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তবে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
আনারের শরীরের উদ্ধার করা মাংসের ডিএনএ পরীক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য এমপির পরিবারের সদস্যরা খুব দ্রুত ভারতে যাবেন। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া ভারতের তদন্ত কর্মকর্তারাও তার পরিবারের সদস্যদের নাম ও মোবাইল নম্বর নিয়েছে। শিগগির তারা ডাকবে। যদি তারা ডাকে তবে ধরে নিতে হবে ডিএনএ টেস্টের জন্য ডেকেছে।’
বাংলাদেশের সিআইডির ল্যাবে পরীক্ষা করা যায় কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি সেখানে গেলে কম সময়ের ভেতরে হয়ে যাবে।’
মূল হোতা আক্তারুজ্জামান শাহীনকে ফেরানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শাহীন নেপাল থেকে দুবাই হয়ে আমেরিকা চলে গেছেন। ভারতে যখন ছিলাম সেখানকার পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছে, বৈঠক হয়েছে। যেহেতু ভারতে হত্যা হয়েছে সেহেতু শাহীন তাদের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। আমরাও কাজ করছি তারাও কাজ করছে। তারা হয়তো ইন্টারপোলের কাছে এসব বিষয় জানিয়েছে। এটুকু বলতে পারি আনার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা যেখানে, যেভাবে জড়িত তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।’
হারুন বলেন, ‘সিয়ামকে ভারত নিয়ে গেছে। আনারকে হত্যা করে পৈশাচিক কায়দায় গুম করার বিষয়টি জানে সিয়াম ও জিহাদ। এ দুজনই এখন তাদের কাছে রয়েছে। তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করলে ভালো ফল পাবে। প্রয়োজনে আমরাও সিয়ামকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’
বাংলাদেশে গ্রেপ্তার আসামিদের ভারত নিয়ে যেতে পারবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কথা বলতে হবে। আমরা আগেও যখন ভারত গিয়েছিলাম তখন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলাম।’