![আমদানি হলেও দাম কমছে না পেঁয়াজের](uploads/2024/06/12/Onion-1718162742.jpg)
সরকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছে। মূল্যস্ফীতি সীমা ছাড়িয়ে গেলে তার লাগাম টানতে পেঁয়াজসহ ৩০টি নিত্যপণ্যের উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তারপরও পেঁয়াজ, আদা, রসুন, মরিচের দাম একটুও কমেনি। এমনকি ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হলেও কমছে না দাম বরং ভারতের পেঁয়াজের দামই বেশি, ৯০ টাকা কেজি।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, মিল বা আড়তে কোনো জিনিসের দাম না কমলে খুচরায় কমবে না। বাজেটে যে পরিমাণ কর কমানো হয়েছে তা খুবই নগণ্য। ভোক্তা পর্যায়ে এর কোনো প্রভাবই পড়বে না। সরকার শুধু আইওয়াশ করেছে জনগণের। গতকাল বিভিন্ন বাজারে সংশ্লিষ্ট বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
গত বৃহস্পতিবার ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য সরকার বাজেট ঘোষণা করে। তাতে রাজস্ব আদায় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। এই রাজস্ব আদায় করার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি করে শুল্ক আরোপ ও কর ধরা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে কর ছাড় ও কমানো হয়েছে। সরকার চলতি অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নির্ধারণ করলেও প্রায় দেড় বছর থেকে মূল্যস্ফীতি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দেশে ব্যাপকভাবে হইচই পড়ে গেছে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার ৩০টি নিত্যপণ্যে উৎসে কর ২ শতাংশ থেকে ১ শতাংশ করেছে। অর্থাৎ পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কোনো ব্যবসায়ীকে আগে ১০০ টাকায় ২ টাকা কর দিতে হতো। প্রস্তাবিত বাজেটে ১ শতাংশ করায় তাকে ১ টাকা দিতে হবে। এটা খুবই কম। এর কোনো প্রভাব বাজারে পড়বে না বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন।
মোহাম্মদপুরের টাউনহল বাজারে নিউ ভ্যারাইটি স্টোরের লিটন খবরের কাগজকে উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ধরেন আমি ১৪০ টাকা কেজি ডাল বিক্রি করছি। এতে উৎসে কর ১ টাকা করা মানে ১ টাকা ৪০ পয়সা কমছে। কিন্তু বাজারে কি খুচরা টাকা ও পয়সা আছে? ব্যাংক থেকেও তো দেয় না। ভিক্ষুকও নেয় না খুচরা পয়সা। তা হলে বাজারে কীভাবে ব্যবসায়ীরা খুচরা পাবেন এবং বিক্রেতারা কীভাবে এক কেজি ডালে ১৩৮ টাকা ৬০ পয়সা দোকানদারকে দেবেন? এটা তামাসা করা হয়েছে। মানুষের আইওয়াশ করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু ডাল নয়, চিনি, লবণ, আলু, পেঁয়াজ যাই বলি না কেন, কোথাও এটা সম্ভব না। শুধু মিডিয়ায় দেখানো হয়েছে যে নিত্যপণ্যের দাম কমবে। কিন্তু বাস্তবে তার প্রভাব পড়বে না। শুধু এই ব্যবসায়ীই নয়, অন্যান্য বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীদেরও একই অভিযোগ। এভাবে পণ্যের উচ্চমূল্যের লাগাম টানা যাবে না।’
এই খুচরা ব্যবসায়ী প্রত্যেকটি মুদি আইটেমের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘এই যে সব মাল দেখছেন, কোনো কিছুর দাম একটুও কমেনি। ভবিষতেও কমবে না। কারণ লোক দেখানো মূল্য হ্রাস কাজে আসবে না। এ সময় মোল্লা, প্রাণ কোম্পানির এসআরওদের কাছে তিনি জানতে চান কোনো জিনিসের দাম কমেছে? তারা বলেন, না এ পর্যন্ত কোনো মেসেজ নেই। ভবিষতে আসলে জানানো হবে।’
একই মার্কেটের বিসমিল্লাহ স্টোরের বিক্রয়কর্মী জসিম বলেন, ‘আগের মতোই সব জিনিসের দাম। পেপার টিভিতে দেখলেও আমরা কম দামে কিনতে পারি না। তা হলে কীভাবে কম দামে বিক্রি করব? যেভাবে কম দেখানো হয়েছে, সেই দর আমরাও পাব কি না সন্দেহ। কারণ খুচরা পর্যায়ে অনেক কিছু আসে না। এখনো পেঁয়াজ ৮৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ভারতের পেঁয়াজ ৯০ টাকা কেজি। এটা সাইজে বড়। এ জন্য দাম বেশি, যা উল্টো চিত্র।’
মসলা বিক্রেতা শফিকুল খবরের কাগজকে বলেন, ‘গোড়াতেই বেশি দাম। ৭০-৭৫ টাকা কেজি কেনা। লেবার খরচ আছে। বস্তায় কিছু পচে যায়। তাই ৮৫ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে। আমদানি করাটা ৯০ টাকা। কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে আসায় মসলার মধ্যে আদা, রসুনের দামও কমছে না। আগের মতোই রসুন ২৩০-২৪০ টাকা কেজি। ভারতের কেরালার আদার কেজি ২৯০-৩০০ টাকা। মায়ানমারের আদা ২৮০ টাকা ও চায়না আদা ২২০-২৪০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।’
রাজধানীতে পেঁয়াজের মোকাম শ্যামবাজার। সেখানে যোগাযোগ করা হলে বাজার কমিটির সভাপতি মো. সাইদ বলেন, সরকার আমদানির সুযোগ দিলেও ব্যাংকে ডলার পাওয়া যায় না। এ জন্য এলসি করা যাচ্ছে না। সরকার শুধু টিসিবির জন্য পেঁয়াজ আমদানি করছে। বেসরকারিভাবে সে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। এ জন্য দামও কমছে না। গতকাল রবিবার এই বাজারে ফরিদপুরের পেঁয়াজ ছিল ৬৯-৭০ টাকা। পাবনার পেঁয়াজ ৭২-৭৪ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে। এই ব্যবসায়ী আরও বলেন, সরকার বিভিন্ন পণ্যে যেভাবে কর কমিয়েছে, তার প্রভাব পড়বে না। কারণ খুচরা টাকা-পয়সা পাওয়া যায় না।
সরকার প্যাকেট চিনির দাম ১৪৫ টাকা কেজি বেঁধে দিলেও তার চেয়ে কম দামে ১৩৫ টাকা কেজি খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে বলে বিক্রেতারা জানান। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক মো. হাসেম আলী বলেন, ‘চোরাইপথে ভারতের চিনিতে সারা দেশে ভরে গেছে। চিনির দাম একেবারে কমে গেছে। অনেক মিল বন্ধ হওয়ার পথে। সরকার সুযোগ দিলে অর্থাৎ চোরাচালান বন্ধ করলে চিনির ব্যবসা হবে, মিল চলবে।’