![এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু, ১৩ কিলোমিটার গলার কাঁটা](uploads/2024/06/12/Tangail-2-1718212331.jpg)
চার লেনের কাজ চলমান ও চালকদের এলোমেলো গাড়ি চালানোর কারণে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৩ কিলোমিটারজুড়ে গাড়ির চাপ সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর থেকে টাঙ্গাইল সদরের রাবনা বাইপাস থেকে কালিহাতীর আনালিয়াবাড়ী পর্যন্ত গাড়ির তীব্র চাপ দেখা যায়। এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ওসি মীর মো. সাজেদুর রহমান জানান, এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলছে। সেই সঙ্গে চালকদের বেপরোয়া গতিতে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া আসন্ন ঈদুল আজহার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে মহাসড়কে পরিবহন বেশি চলাচল করছে। প্রায় বছরই ঈদে সাধারণ মানুষের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় এই ১৩ কিলোমিটার রাস্তা।
জানা যায়, গতকাল ভোর থেকে শুরু হওয়া এই যানজট কমে আসে সকাল ৯টার দিকে। এ সময় এলেঙ্গা থেকে সেতুর পূর্ব পর্যন্ত সড়কের গাড়িগুলো ধীরগতিতে চলতে শুরু করে। দুপুর ১২টা নাগাদ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে আসে বলে জানায় হাইওয়ে পুলিশ। তবে ভোর থেকে তীব্র যানজটের ফলে বিপাকে পড়েন যাত্রী ও চালকরা।
ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখী মানুষকে যাতে ভোগান্তি না পোহাতে হয় সে জন্য নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ। ঈদে গাড়ির চাপ বেশি থাকলে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ওয়ান ওয়েতে যানবাহন চলাচল করবে। শুধু উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহনের জন্য সড়কের এ অংশটি বরাদ্দ থাকবে। ঢাকাগামী যানবাহন বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়ে গোল চত্বর দিয়ে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা প্রবেশ করবে। এতে যানজট অনেকটা কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে যানবাহনগুলো চার লেন সড়কের সুবিধায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে পারে। কিন্তু এলেঙ্গার পর থেকে সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেন। চার লেনের যানবাহন দুই লেন সড়কে প্রবেশের সময়ই যানজটের সৃষ্টি হয়। এবার এলেঙ্গা থেকে সেতুর টোল প্লাজার কাছে গোল চত্বর পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার একমুখী (ওয়ান ওয়ে) করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে এই সড়ক দিয়ে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যানবাহন চলবে। আর উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকাগামী যানবাহন সেতু পার হওয়ার পর বিকল্প সড়ক হিসেবে গোল চত্বর থেকে উত্তর দিকে ভূঞাপুর হয়ে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসবে। দুর্ভোগ লাঘবের জন্য যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রলপাম্প, হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে যাতে শৌচাগার ব্যবহার করতে পারেন সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের পাশে পাম্প, রেস্তোরাঁ নেই। তাই ওই অংশে ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হবে। মহাসড়কে প্রায় ৭০০ পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
তবে যানজটের মূল কারণ হচ্ছে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দুর্ঘটনা। পুলিশ সুপার জানান, যদি সেতুর ওপর কোনো দুর্ঘটনা না হয়, তাহলে যানজট হবে না। এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় কথা হয় রংপুরগামী মাসুদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদ এলে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে যখন রওনা হই, তখন হাতে সময় নিয়ে বের হতে হয়। কারণ এমনিতে সময়ে সময় লাগে ৪-৫ ঘণ্টা, কিন্তু ঈদের সময় লাগে ১২ ঘণ্টার ওপরে। এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যেতেই সময় লাগে ২ ঘণ্টার ওপরে। রাস্তার কাজ চলছে, যার ফলে চালকরা এলোমেলো গাড়ি চালান। তারা যদি এলোমেলো গাড়ি না চালান তাহলে তো যানজট লাগবে না।’
বিলকিস বেগম নামে এক গার্মেন্টস কর্মী বলেন, ‘বছরের অন্য সময় মির্জাপুর থেকে বগুড়া যাই ৩ ঘণ্টা সময়ে। আর ঈদের সময় লাগে ৭-৮ ঘণ্টা। সেতুর ওপরে রাতে টোল আদায় বন্ধ করে দেয়, দুর্ঘটনা ঘটে, আবার চালকরা এলোমেলো গাড়ি চালান- সব মিলিয়ে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত কোনো জায়গায় ওয়াশরুম না থাকায় নারীদের সমস্যায় পড়তে হয়।’
ফরিদ হোসেন নামে একজন বলেন, ‘আমাদের ঢাকা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত আসতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত যেতে সমস্যা হয়ে যায়। এই রাস্তায় অনেক চালক গাড়ি ওভারটেকিং করার সময় রং সাইড দিয়ে প্রবেশ করেন, যার ফলে যানজট লেগে যায়। পুলিশ যদি যত্রতত্রভাবে গাড়ি পার্কিং করতে না দেয়, রাস্তায় তাহলে যানজট হবে না।’
টাঙ্গাইল-টু বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের চার লেনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মোনায়েম গ্রুপ লিমিটেডের কো-অর্ডিনেটর মিজান সারওয়ার বলেন, ‘আমাদের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। এখন প্রায় ৫০ ভাগ কাজ হয়েছে। ঈদের আগে আমরা ৮ কিলোমিটার রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছি, যাতে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক হয়।’
এদিকে বঙ্গবন্ধু সেতুর সাইড অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির পাভেল খবরের কাগজকে বলেন, ‘সাধারণ সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি গাড়ি চলাচল করে ঈদে। ব্রিজের ওপর যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে, সে জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আর যদি ঘটেও যায়, তাৎক্ষণিক সেগুলো অপসারণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে দেখা যায়, রাতে একসঙ্গে ৬-৭ জায়গায় দুর্ঘটনা ঘটে। তখন আমাদের পর্যাপ্ত সাপোর্ট সিস্টেম না থাকায় দ্রুত অপসারণের সুযোগ হয় না। কাজ শুরু করলেও ততক্ষণে যানজট লেগে যায়।’
এই মহাসড়কের চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনায়েম লিমিটেড। প্রায় ৬০১ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের ১৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার সড়কে ১টি ফ্লাইওভার, ৮টি ব্রিজ, ১০টি কালভার্ট, ২টি আন্ডারপাস ও ১টি সার্ভিস লেন নির্মাণ করা হবে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কাজটি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও সময় বাড়িয়ে আগামী বছরের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে যানজট ও সড়ক দুর্ঘটনা থেকে রেহাই পাবে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২৩ জেলার মানুষ।