![কিংসই রাজা](uploads/2023/12/19/1702959773.Bashundhara Kings.jpg)
একদিকে উৎসব, অন্যদিকে বিষাদের ছায়া। কোনো ফুটবল ম্যাচের ফাইনাল শেষে ডাগ আউটে এমন দৃশ্য চিরায়ত। তবে গোপালগঞ্জের শেখ ফজলুল হক মনি স্টেডিয়ামে গতকাল সোমবার ব্যতিক্রম দৃশ্যেরই দেখা মিলল।
দশজন নিয়েও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের শিরোপা জিতেছে বসুন্ধরা কিংস। শিরোপা বঞ্চিত হলেও মোহামেডান শিবিরে ছিল না খুব একটা হা-হুতাশ। দলটির প্রধান কোচ আলফাজ আহমেদ যেমন বললেন, ‘বেটার টিম হিসেবে বসুন্ধরা জিতেছে। তবে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব খুবই ভালো ফুটবল খেলেছে।’ গোলকিপার কোচ সাঈদ হাসান কাননের মনেও সন্তুষ্টি, ‘ওদের দল আসলে অনেক বেটার টিম। দশজন নিয়েও ওরা খুব ভালো খেলেছে। ইন্ডিভিজ্যুয়ালি অনেক ভালো ওরা। ওদের সঙ্গে ২-১ এ হার অনেক ভালো রেজাল্ট বলে আমি মনে করি।’
বাস্তবতা বিচারে আলফাজ-কাননদের কথার সঙ্গে একমত না হওয়ার উপায়ও নেই আসলে। মোহামেডানের তো আর সেই দিন নেই। ঐতিহ্যের ধারক-বাহকরা অনেকদিন ধরেই ঢাকার ফুটবলে আর সেরাটি নেই। গত মৌসুমের শেষে ফেডারেশন কাপ ফুটবলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে সমর্থকদের মনে দীর্ঘ খরার পর এক পশলা বৃষ্টির অনুভূতি দিতে পেরেছিল, এই যা। ৯ বছর পর সে যতই শিরোপা ঘরে তুলুক দলটা, তবু নতুন মৌসুমে দলটার স্বাধীনতা কাপের ফাইনালে উঠে আসাটা একরকম চমকই। কিংসের বিপক্ষেও তাই তাদের ফেভারিট দাবি করার উপায় ছিল না। স্বাধীনতা কাপ ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের এটি টানা দ্বিতীয় ও সবমিলিয়ে তৃতীয় শিরোপা। যা মোহামেডানের সঙ্গে যৌথভাবে সর্বোচ্চ।
তবে এটাও ঠিক, মোহামেডানের মতো কোনো দল ফাইনালে উঠে গেল তাদের হিসেবের বাইরে রাখার উপায় থাকে না। গতকালের ফাইনালে দলটা এ কথাটারই সত্যতার প্রমাণ দিয়েছে আরেকবার। কিংসকে রীতিমতো কাঁপিয়েই দিয়েছিল দলটা। তবে অস্কার ব্রুজনের শিষ্যরাও সেই চাপ সামলে নিজেদের মানের প্রমাণ দিয়েছে। দলটির আক্রমণভাগের তিন প্রধান সেনানী রবসন রবিনিয়ো, মিগেল দামাসেনো ও দোরিয়েলতন গোমেজ ছিলেন উজ্জ্বল। তাদের পারফরম্যান্সই আসলে দিন শেষে ব্যবধান গড়ে দিয়েছে ম্যাচের। অন্যদিকে একেবারেই বিবর্ণ ছিলেন মোহামেডানের মালির ফরোয়ার্ড সোলেমান দিয়াবাতে। এ ধরনের বড় ম্যাচে যিনিই সাদাকালোদের বড় ভরসার জায়গা। এছাড়া মোজাফ্ফরভও নিজের ঝলক দেখাতে পারেননি। কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে যার নৈপুণ্যেই মূলত ফাইনালের টিকিট পেয়েছিল মোহামেডান।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে এগিয়ে ছিল কিংস। ১৪তম মিনিটে বক্সের অনেক বাইরে থেকে দূরপাল্টার বুলেট গতির এক শট নিয়েছিলেন রবসন। মোহামেডান গোলরক্ষক সুজন হোসেন অবশ্য সেটা রুখে দেন। ২১তম মিনিটে ইমানুয়েল সানডের ব্যাক পাস থেকে বক্সের বাইরে থেকে মোজাফফরভ বেশ জোরের সঙ্গে শট নেন। তবে দূরের পোস্টে রাখতে পারেননি, শট লক্ষ্যভ্রষ্ট। প্রথমার্ধের খেলা শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই বড় ধাক্কা খায় কিংস। আক্রমণভাগের খেলোয়াড় রফিকুলকে সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়। বলের নিয়ন্ত্রণে নিতে গিয়ে মোহামেডানের ওমর ফারুক বাবুর বুক অবধি বুট তুলে চার্জ করে লাল কার্ড দেখেন তিনি।
কিংসের ওই ধাক্কার মাঝেই এগিয়ে যায় মোহামেডান। ম্যাচের বয়স তখন ৫১ মিনিট। মোজাফফরভের কর্নার কিক থেকে হেডে গোলটা করেন ইমানুয়েল সানডে। পুরো ম্যাচে যিনি একাধিকবার নজর কেড়েছেন।
তবে কিংস ম্যাচে ফিরতে সময় নেয়নি। এক মিনিটের মধ্যে রাকিব বক্সের ভেতর বা পায়ের শটে দারুণ এক গোল করে ম্যাচে সমতা এনে দেন। গোলটায় কৃতিত্ব পাবেন রবসন ও মিগেল। এই দুই ব্রাজিলিয়ানের দারুণ বোঝাপড়া থেকে মোহামেডানের রক্ষণ কাঁপিয়ে দেয় কিংস। তবে রবসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ফিরতি বলটা নিজের তৎপরতার কারণেই পেয়ে যান রাকিব। সেই কৃতিত্ব তাই তাকে দিতেই হবে। দশজনের দলে পরিণত হওয়ার পর গোল হজম করাটা কিংসের জন্য ছিল বড় ধাক্কা। সেখান থেকে এই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েই ফেলতে পারত দলটি। কিন্তু রাকিবের গোলটাই সেটা হতে দেয়নি।
৮৬তম মিনিটে দোরিয়েলতন গোমেজ গোল আদায় করলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে যায় কিংস। বক্সের ভেতর মিগেলের বাড়ানো বল থেকে গোলটা করেন তিনি। অর্থাৎ কিংসের দুই গোল তিন ব্রাজিলিয়ান- রবসন, মিগেল ও দোরিয়েলতনের সরাসরি অবদান।
ফাইনালের সেরা হয়েছেন দোরিয়েলতন। শেখ জামালের হিগোর লেইতো ও আবাহনীর জোনাথন ফার্নান্দেজের সঙ্গে সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়েছেন। টুর্নামেন্টসেরা হয়েছেন রাকিব হোসেন। ম্যাচ শেষে যিনি বলেন, ‘প্রথম থেকেই ম্যাচ জয়ের বিষয়ে আশাবাদী ছিলাম। একজন কমে গেলেও মনে হয়নি যে আমরা দশজন।’
হারের কারণ হিসেবে মোহামেডান কোচ আলফাজের ব্যাখ্যা, ‘খেলোয়াড়রা এক গোল দেওয়ার পরই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। অর্গানাইজ হতে পারেনি। যার কারণে গোলটা হয়েছে। খেলাটা অতিরিক্ত সময়ে গেলে অন্য পরিকল্পনা নিতাম। কিন্তু এমন সময়ে গোল হয়েছে, নতুন পরিকল্পনা আর কাজে লাগানো যায়নি।’