![শুনে চোখে পানি এসে যায় ফিরোজার](uploads/2024/03/16/1710571620.Firoza-Khatun.jpg)
রাস্তা দিয়ে কোনো এক জায়গায় যাচ্ছিলেন। এমন সময় ফোনের আওয়াজ। ফিরোজা খাতুন ধরলেন। ওপর প্রান্ত থেকে যে কথাগুলো ভেসে এল, তা সাবেক এই দ্রুততম মানবীকে দিয়ে গেল জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় প্রাপ্তির আনন্দ। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে জানানো হয় তিনি এ বছর স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। ক্রীড়াঙ্গন থেকে তিনি দ্বিতীয় নারী অ্যাথলেট হিসেবে এই পুরস্কার পেতে যাচ্ছেন। তার আগে প্রথম নারী অ্যাথলেট হিসেবে এই পুরস্কার পেয়েছিলেন সুলতানা কামাল।
জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ২০২৪ সালে ১০ জন স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মনোনীতদের নাম জানায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ফিরোজাকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে গতকালই ফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। ফিরোজা জানান যা শুনে চোখে পানি এসে গিয়েছিল তার। তিনি বলেন, ‘আজকে (গতকাল) এক জায়গায় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম, এমন সময় ফোন এসেছে। মন্ত্রিপরিষদ থেকে একজন সচিব আপা ফোন করে বললেন, আপনাকে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। আমি অভিনন্দন জানানোর জন্য ফোন করেছি। আমার চোখে পানি এসে গেছে তখন। মোট কথা আমি অভিভূত।’
২০১২ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার পেয়েছেন ফিরোজা। এবার পাচ্ছেন দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা। ফিরোজা বলেন, ‘আমি বুঝতে পারিনি যে এত তাড়াতাড়ি পুরস্কারটা পেয়ে যাব। এবারই প্রথম আমি আবেদন করেছিলাম পুরস্কারটার জন্য। সেটাও মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নেলী আপা জোর করে আমাকে আবেদন করিয়েছিলেন। আপার কথা রাখার জন্যই আমি এটা করেছি।’ সুলতানা কামালের পর দ্বিতীয় নারী হিসেবে এই পুরস্কার পাওয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা অনেক মজার এবং ভালো লাগার একটি ব্যাপার।’
৫৫ বছর বয়সী ফিরোজা ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দাপটের সঙ্গে অ্যাথেলেটিক্স ট্র্যাক মাতিয়েছেন। ১০ বার দেশের দ্রুততম মানবী হয়েছিলেন তিনি। ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ছাড়াও ২০০ মিটার ও হাইজাম্পেও ছিল তার সমান দাপট। খেলা ছাড়ার পর অনেক দিন ধরেই ময়মনসিংহে বসবাস তার। সংগঠক হিসেবে স্থানীয় ক্রীড়াঙ্গনে জড়িয়ে রেখেছেন নিজেকে। বর্তমানে ময়মনসিংহ বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ময়মনসিংহ রোলার স্কেটিং একাডেমির সঙ্গেও যুক্ত আছেন। তবে এমন অর্জনের দিনেও একটা আক্ষেপ ঝরল ফিরোজার কণ্ঠে, ‘আমি খেলা ছেড়েছি প্রায় ২৫-৩০ বছর হয়ে যাচ্ছে। আমাদের অ্যাথলেটিক্স তখনকার থেকে এখন যে খুব বেশি উন্নতি করেছে তা না। একটু এদিক-সেদিক হয়েছে এই যা। আহামরি কোনো উন্নতি হয়নি।’ বর্তমান অ্যাথলেটদের আছে আরও ভালো কিছু প্রত্যাশা তার, ‘এখন যদিও সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে। কিন্তু আমাদের সময় না পাওয়ার মাঝখান থেকে নিজেদের বের করে নিয়ে এসেছিলাম। এখন তো ছেলে-মেয়েরা অনেক পাচ্ছে। সেই তুলনায় আরও উন্নতি করা উচিত বলে মনে করি।’