ঢাকা ১২ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

বাংলাদেশের ভাগ্য নিজেদের হাতে

প্রকাশ: ১৬ জুন ২০২৪, ০৬:০০ পিএম
আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪, ০৬:০১ পিএম
বাংলাদেশের ভাগ্য নিজেদের হাতে
সংগৃহীত

বিশ্বকাপ যাত্রার আগে সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত করা। অর্থাৎ সুপার এইটে খেলা। এখন পর্যন্ত গ্রুপ পর্বে তিনটি ম্যাচ খেলে দুটিতে জিতেছে টাইগাররা। আগামীকাল সোমবার ভোরে নিজেদের শেষ ম্যাচে নেপালের মুখোমুখি হবে তারা। এই ম্যাচটায় সুপার এইটে খেলার ভাগ্য নিজেদের হাতে রেখেই নামবে শান্ত-সাকিবরা।

বাংলাদেশ সময় গতকাল শনিবার ভোরে ‘ডি’ গ্রুপের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেপাল। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচটিতে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে মাত্র ১ রানে হেরেছে নেপাল। এই জয়ে প্রোটিয়ারা চার ম্যাচের চারটিতেই জিতে গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে।

আইডেন মার্করামের নেতৃত্বাধীন দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য এক ম্যাচ হাতে থাকতেই সুপার এইট নিশ্চিত করেছিল। গ্রুপের বাকি চার দলের মধ্যে শ্রীলঙ্কার বিদায় নিশ্চিত হয়েছিল আগেই। তবে দ্বিতীয় দল হিসেবে বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে সুপার এইটের পথে ছিল নেপালও। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে হারায় নেপালের সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে। এখন বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডস আছে এই লড়াইয়ে।

নেট রানরেটে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ আছে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে। নিজেদের শেষ ম্যাচে তাদের শুধু হার এড়ালেই চলবে। অর্থাৎ মাত্র ১ পয়েন্ট হলেই চলবে। অন্যদিকে নেদারল্যান্ডসকে শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের শেষ ম্যাচে জিতলেই চলবে না। বাংলাদেশ ম্যাচের ফলও পক্ষে আসতে হবে। মানে বাংলাদেশকে হারতে হবে, সঙ্গে ডাচদের জিততে হবে বড় ব্যবধানে। তাই সুপার এইটের সমীকরণ তাদের জন্য বড্ড কঠিনই।

তিন ম্যাচে দুই জয় ও এক হারে ৪ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। এক জয় ও দুই হারে তিনে থাকা নেদারল্যান্ডসের পয়েন্ট ২। নিজেদের শেষ লঙ্কানদের হারাতে পারলে ডাচদের পয়েন্ট দাঁড়াবে ৪। যদি ম্যাচটা বড় ব্যবধানে জিততে পারে দলটি, তা হলে নেট রানরেটও বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচের ফলটা পক্ষে এলেই তখন সুপার এইটে চলে যাবে তারা।

দুটি ম্যাচই অবশ্য শুরু হবে কাছাকাছি সময়ে। কিংসটাউনে বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৫টায়। আর নেদারল্যান্ডস-শ্রীলঙ্কা ম্যাচ ‍শুরু হবে সকাল সাড়ে ৬টায়। অর্থাৎ নিজেদের খেলার ফাঁকে ফাঁকে বাংলাদেশ ম্যাচের স্কোর কার্ডেও নজর থাকবে ডাচদের।

বাংলাদেশের এত ঝামেলা নেই। নেপালের বিপক্ষে তাদের জিতলেই হবে। ম্যাচটি যদি বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়, তা হলে বাংলাদেশ পাবে এক পয়েন্ট। অর্থাৎ টাইগারদের পয়েন্ট হবে ৫। তখন নেদারল্যান্ডস জিতলেও বাংলাদেশকে ছুঁতে পারবে না। আর বাংলাদেশ যদি জিতে যায় তা হলে তো কথাই নেই। ৬ পয়েন্ট হবে তাদের। টেবিলের দুইয়ে থেকে তখন পরের পর্বে খেলবে বাংলাদেশ।

আইসিসির টুর্নামেন্টগুলোতে এখন গ্রুপসেরার বিষয়টি নেই। কারণ পরের ধাপে গেলে কোন দল গ্রুপের ১ ও ২ নম্বরের মর্যাদা পাবে, তা আগে থেকেই নির্ধারণ থাকে। বাংলাদেশ সুপার এইটে খেললে আইসিসির সিডিং অনুযায়ী ‘ডি-২’ হয়ে খেলবে। সে ক্ষেত্রে শেষ আটে তাদের প্রতিপক্ষ হবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান।

সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন শান্ত

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০৯:০৯ পিএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ০৯:০৯ পিএম
সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাইলেন শান্ত
ছবি : সংগৃহীত

ক্রিকেট বিশ্বের যেখানেই খেলা হোক না কেন, বাংলাদেশের সমর্থকরা ভীড় জমাবেই। ব্যতিক্রম ছিল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত বিশ্বকাপে। গ্রুপ পর্ব থেকে সুপার এইট হয়ে বিশ্বকাপ এখন সেমিফাইনালের অপেক্ষায়। যার আগেই বাদ পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। আসরজুড়ে বোলাররা দুর্দান্ত পারফর্ম করলেও ব্যাটাররা ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে অস্ট্রেলিয়া ভারতের কাছে হেরে যাওয়ায় সমীকরণ মিলিয়ে আফগানদের বিপক্ষে জয় নিশ্চিত করতে পারলেই সেমিফাইনালে পা দিতে পারতো বাংলাদেশ। যদিও, সেই সমীকরণ মেলাতে ব্যর্থ হয় নাজমুল হোসেন শান্তর দল।

ভুলেভরা বিশ্বকাপের সমাপ্তি হয়েছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরে। তাই ম্যাচ শেষে দেশের ক্রিকেটের সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত।

ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘পুরো টুর্নামেন্ট নিয়ে আমি বলব, আমরা সবাইকে হতাশ করেছি। আমাদের খেলা যাঁরা অনুসরণ করেন, যাঁরা আমাদের সব সময় সমর্থন করেন, তাঁদের আমরা হতাশ করেছি। পুরো দলের পক্ষ থেকে আমি তাঁদের কাছে ক্ষমা চাইছি।’

এমন বাজেভাবে বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার দায়টা যে দলের ব্যাটারদের সেটিও সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন শান্ত, ‘ব্যাটিং ইউনিট হিসেবে আমরা দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু দিতে পারিনি। এটার জন্য আমরা দুঃখিত এবং আমরা এখান থেকে ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব। ইতিবাচক দিক, বোলাররা অনেক ভালো বোলিং করেছে। বিশেষ করে রিশাদ এত বড় একটা টুর্নামেন্টে এসে প্রায় সবগুলো ম্যাচে ভালো করেছে। তাই বেশ কিছু ইতিবাচক দিকও ছিল।’

ক্রিকেটার পাইলটের মা আর নেই

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ০৪:৩০ পিএম
ক্রিকেটার পাইলটের মা আর নেই
মা নার্গিস আরা বেগমের সঙ্গে খালেদ মাসুদ পাইলট

জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলটের মা নার্গিস আরা বেগম (৭২) মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। 

মঙ্গলবার (২৫ জুন) বেলা পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নার্গিস আরা বেগম দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের সমস্যা, কিডনিসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। মায়ের মৃত্যুর খবরটি বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট নিজেই নিশ্চিত করেছেন। 

মঙ্গলবার দুপুরে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের ভেরিফায়েড পেজ থেকে মায়ের মৃত্যুর খবর নিজের ফলোয়ার, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের জানান তিনি। 

এতে খালেদ মাসুদ পাইলট বলেছেন, তার মা নার্গিস আরা বেগম আর নেই। তার মায়ের জানাজার নামাজ মঙ্গলবার বাদ এশা মহানগরের টিকাপাড়া গোরস্থানসংলগ্ন মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মায়ের জন্য খালেদ মাসুদ পাইলট সবার কাছে দোয়া চান। 

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০৬:২৪ পিএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১০:৪১ পিএম
স্বপ্নের ফেরিওয়ালা
ছবি : সংগৃহীত

কেউ বলে এলিয়েন, কেউবা ভিনগ্রহের ফুটবলার। বিশ্ব ফুটবলের রাজপুত্তর লিওনেল মেসিকে নিয়ে বিশেষণের শেষ নেই। ক্লাব থেকে শুরু করে জাতীয় দল আর্জেন্টিনা, সবখানেই মেসির আলোকময় উপস্থিতি। কাড়ি কাড়ি গোল আরও রেকর্ডে মোড়ানো বর্ণিল ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সব শিরোপা জেতা লিওনেল মেসিকে তাই অনেকে বলেন, GOAT, গ্রেটেস্ট অব অল টাইম। আর্জেন্টিনার ক্ষুদে এই ফুটবল জাদুকরের জন্মদিন ছিল গতকাল। ৩৭ এ পা রাখা লিওনেল মেসিকে নিয়ে খবরের কাগজের দুই পর্বের বিশেষ আয়োজন। আজ থাকছে শেষ পর্ব।

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা প্রথম পর্ব

২০০০ সাল। বার্সেলোনা বিমানবন্দর। অনেকটা অধৈর্য হয়ে অপেক্ষা করছিলেন আর্জেন্টাইন হোরাসিও গাগিওলি। অপেক্ষা ১৩ বছর বয়সী মেসির জন্য। নিওয়েলসে থাকাকালীন ফুটবল নিয়ে মেসির কারিকুরির ভিডিও তিনিই দেখিয়েছিলেন বার্সার কর্তাব্যক্তিদের। তখন রোসারিও পাড়া-মহল্লা ছাড়া মেসিকে কেউ চিনত না। রোসারিও থেকে একটি প্লেন নামল বার্সায়। নামলেন হোর্হে মেসি, সঙ্গে পুঁচকে লিও। মেসিকে দেখে রীতিমতো চোয়াল ঝুলে পড়েছিল গাগিওলির। এমন পাটকাঠির মতো সরু পা দিয়ে কীভাবে ফুটবল খেলবে মেসি, বুঝে উঠতে পারছিলেন না তিনি। গ্রোথ হরমনের সমস্যার কথা জানতেন গাগিওলি, আর তাই সবকিছু সময়ের হাতে ছেড়ে দেন।  

পরদিন ট্রায়ালে মেসির অবিশ্বাস্য কিছু ফুটবল কসরত দেখে সব সন্দেহ দূর হয়েছিল বার্সেলোনা ও গাগিওলির। শুরু হলো মেসির ন্যু ক্যাম্প অধ্যায়। ২০০৩ থেকে বার্সা একাডেমিতে নিয়মিত মুখ মেসি। অনূর্ধ্ব-১৬তে প্রথম মৌসুমে ৩১ ম্যাচে করেন ৩৮ গোল, যা ছিল ওই সময়ের জন্য রীতিমতো অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এরপর সরাসরি বার্সার অনূর্ধ্ব ১৮ দলে। সময় যত গড়াচ্ছিল মেসি-মুগ্ধতাও বাড়ছিল। মেসি নামের অবিশ্বাস্য এক ট্যালেন্ট যে রয়েছে লা মাসিয়ায় তা জানতেন তখনকার বার্সার মূল দলের কোচ ফ্রাঙ্ক রাইকার্ড। ২০০৩ সালের নভেম্বরে মাসে হোসে মরিনহোর পোর্তোর বিরুদ্ধে একটি প্রীতি ম্যাচে মেসিকে মাঠে নামালেন রাইকার্ড, মাত্র ১৫ মিনিটের জন্য। আর সেই ১৫ মিনিটই যথেষ্ট ছিল মেসির নিজেকে প্রমাণের। এরপর মেসিকে আর বার্সার একাডেমিতে খেলতে হয়নি। বার্সার  ‘সি’ দলে খেলার খেলেন ‘বি’ দলে। সেই বছর ১০ মাসের মৌসুমে বার্সার আলাদা আলাদা পাঁচটি দলে খেলেছিলেন মেসি। ২০০৪ সালের অক্টোবরে ১৭ বছর ৩ মাস ২২ দিন বয়সে কাতালানদের হয়ে অভিষেক হলো মেসির। ম্যাচ ছিল এস্পানিওলের বিরুদ্ধে। 

বার্সেলোনায় মেসি সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন ব্রাজিলের রোনালদিনহোকে। ছবি : সংগৃহীত

মেসি বড় হতে থাকেন। তখন বার্সায় তার সতীর্থ ব্রাজিলের রোনালদিনহো ও পর্তুগালের ডেকো। ২০০৭ সালে দলের ওপর কর্তৃত্ব হারান রাইকার্ড। দায়িত্বে আসেন পেপ গার্দিওলা। শুরু হলো মেসি-পেপ অধ্যায়। পেপের ছোঁয়ায় মেসি হয়ে ওঠেন আরও তীক্ষ্ণ, প্রতিপক্ষের ডি বক্সে ক্রমেই দুর্বোধ্য। ফলস নাইন জাদুতে পেপের মূল অস্ত্র তখন লিওনেল মেসি। তার প্রমাণ ২০০৯ সালে বার্সার রেকর্ড ছয়টি শিরোপা। গোল মেশিন মেসি জিতেন প্রথম ব্যালন ডি’অর সঙ্গে ফিফা বর্ষসেরার খেতাব। এই ধারা থাকল টানা চার বছর। তখন মেসি সেরা গোলদাতা, সেরা ড্রিবলার, সেরা অ্যাসিস্টম্যান। 

কিন্তু এত সাফল্যের পরও হৃদয়ে লুকানো ব্যথা ছিল মেসির। আর্জেন্টিনার জার্সিতে ২০১০ বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায়, ২০১৪ সালে মারাকানায় ফাইনাল ট্র্যাজেডি। এরপর টানা দুই কোপার ফাইনালে হার। সমালোচনা ওঠে তাই ডুকরে, ‘মেসি বার্সার হয়ে খেলে আর্জেন্টিনার হয়ে না।’ রাগে, দুঃখে, অভিমানে জাতীয় দল থেকে অবসরই নিয়ে ফেলেন। কিন্তু আবার ফিরলেন, কখন? যখন ২০১৮ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে কোণঠাসা আর্জেন্টিনা। ডু অর ডাই ম্যাচে ইকুয়েডরের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক করে মেসি দলকে এনে দিলেন বিশ্বকাপের টিকিট। কিন্তু হায়, রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিতে হলো নক আউট পর্ব থেকেই। 

বেড়েই চলল মেসির দুঃখ। বুয়েনসআয়ার্সে পোড়ানো হলো মেসির কুশপুতুল। বার্সার হয়ে কাঁড়ি কাঁড়ি শিরোপা জেতানো মেসি তখন যেন আর্জেন্টিনার হয়ে অর্থহীন এক ফুটবলার। সেই আক্ষেপ তিনি ঘোচালেন ২০২১ সালে কোপা আমেরিকা ফুটবলে। ফাইনালে ব্রাজিলকে হারিয়ে ২৮ বছর পর কোনো শিরোপা জিতে আর্জেন্টিনা। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা লিওনেল মেসি ফাইনাল খেলেছিলেন রক্তাক্ত পায়ে। 

এর পরের ঘটনা মেসিকে বদলে দিল পুরোপুরি। একটা সময় বার্সা ও মেসি ছিল সমার্থক শব্দ। আজীবন বার্সাতেই থেকে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া মেসির সঙ্গে ঘটল বিয়োগান্তক ঘটনা। ব্যুরোফ্যাক্স, বার্তামেউ, বার্সা গেট; চোখের জলে ন্যু ক্যাম্প ছাড়তে হলো মেসিকে। মেসি অল্প বেতনে থেকে যেতে রাজি হলেও লা লিগার আর্থিক এবং পরিকাঠামোগত বাধার কারণে তা সম্ভব হয়নি। মেসির নতুন ঠিকানা তখন ফ্রান্সের পিএসজি। এই পোড় খাওয়া অধ্যায় মেসিকে প্রস্তুত করছিল পরের দুই বছরের জন্য। 

বার্সার সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্কের ইতি। প্যারিসে মন টেকেনি মেসির। সাবেক বার্সা সতীর্থ নেইমারের সঙ্গে রসায়নটা ভালো হলেও একপর্যায়ে কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে দূরত্বটা বাড়তে থাকে। এমন বিরূপ পরিবেশে মেসি নিজেকে তৈরি করেছেন দৃঢ় মানসিকতায়। মাঠের খেলায় আগের মতো ক্ষিপ্রতা না থাকলেও পরিণত হয়েছিলেন মগজে, মননে। ত্রিশ পেরোনোর পর মেসি খেলার মাঠে সবচেয়ে বেশি হেঁটেছেন। সেটাও প্রতিপক্ষের রক্ষণে হুট করে সাঁড়াশি আক্রমণের জন্য। এসবই মেসিকে বেশি সাহায্য করেছে কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে। যেখানে মেসি শুধু একজন খেলোয়াড় নন, আবির্ভূত হয়েছিলেন দক্ষ নেতা হিসেবে।

২০২১ সালে বার্সেলোনা ছাড়ার ঘোষণায় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন মেসি। ছবি : সংগৃহীত

কাতার বিশ্বকাপ-২০২২। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বৈশ্বিক এই টুর্নামেন্টে যায় আর্জেন্টিনা, রীতিমতো হট ফেবারিট হিসেবে। শুরুতেই গলদ, সৌদির আরবের কাছে হার। হায় হায় রব ওঠে তুমুল। দুয়োধ্বনিতে ক্লান্ত আলবিসেলেস্তারা। কিন্তু সেখান থেকেই প্রবল দাপটে ঘুরে দাঁড়াল আর্জেন্টিনা। বলা ভালো মেসির আর্জেন্টিনা। গোল করে, সতীর্থদের করিয়ে, রেকর্ডের ফুলঝুরি ছুটিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেখানে লড়াইটা শুধু আর্জেন্টিনা-ফ্রান্স হলো না, হলো পিএসজির দুই সতীর্থ মেসি ও এমবাপ্পেরও। রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে ম্যাচ টাইব্রেকারে। সেখানেই শেষ হাসি হাসেন মেসিরা। গোল্ডেন বলের সঙ্গে জিতেন পরম আরাধ্যের সোনালি ট্রফি। 

এই মেসি অনেক কাঁদিয়েছেন, আবার আবেগে ভাসিয়েছেনও। মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন বছরের পর বছর। নিওয়েলস থেকে বার্সা, পিএসজি থেকে ইন্টার মায়ামি; মেসি যেখানেই গেছেন রোমাঞ্চ খেলেছে ফুটবলে। মেসিই একমাত্র ফুটবলার যার মুভমেন্টে বদলেছে ভক্তদের গতিপথও। কখনো বার্সা, কখনো পিএসজি, কখনো বা মায়ামি। আর সবই তো খুদে ওই ফুটবল জাদুকরের জন্য। 

ন্যু ক্যাম্প থেকে সান্তিয়াগো বার্নাব্যু, অথবা স্তেদ দ্য ফ্রান্স থেকে ওয়েম্বলির সবুজ গালিচায় মেসি যা রচনা করেছেন, সবই তো রূপকথা। হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া রঙিন চিত্রনাট্য। ১২টি লিগ ও চারটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতে ক্লাব ফুটবলে অনেক আগেই শিখরে ওঠা মেসি এখন বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়কও। নামের পাশে আছে রেকর্ড আটটি ব্যালন ডি’অর। পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ফুটবলার হতে আর কী চাই! 

মেসি সুখী তা স্বীকার করেছেন নিজেও। “আমি সুখী, কারণ সব বাদ দিয়ে আমি ফুটবল খেলতেই চেয়েছি। আমি যেহেতু খেলতে ভালোবাসি, এটা আমার কাছে ‘কাজ’ মনে হয় না। এখনো সেই একই রকম আনন্দ নিয়ে খেলি, যেভাবে সেই ছোট্টবেলায় খেলতাম।” 

২০১৪ বিশ্বকাপে পরাজিত হওয়া ভেন্যু মারাকানাতেই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিলকে হারিয়ে ২০২১ কোপা আমেরিকার শিরোপা জেতেন মেসি। ছবি : সংগৃহীত

মেসিকে নিয়ে তার বার্সা সতীর্থ জাভি বলেছেন, ‘এটা পরিষ্কার যে মেসি সবার ওপরে অন্য লেভেলের। যে এটা দেখে না, সে অন্ধ।’ মেসি-রোনালদোর তুলনার প্রসঙ্গে বার্সেলোনার আরদা তুরান বলেছিলেন, ‘মেসি, নাকি রোনালদো, কে সেরা খেলোয়াড়? দুনিয়াতে রোনালদো সেরা। মেসি অন্য গ্রহের।’ ইংল্যান্ডের সাবেক তারকা ফুটবলার মাইকেল ওয়েন একটু বেশিই ছিলেন মেসিতে মন্ত্রমুগ্ধ, ‘আমি বিশ্বাস করি না, মেসির মতো এ রকম করে অন্য কেউ ফুটবল খেলতে পারবে।’ কিছুদিন আগে অন্যলোকে পাড়ি জমানো জার্মানির কিংবদন্তি ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ার বলেছিলেন, ‘মেসি হলো একটি প্রতিভা। সে সবকিছু। আমি যখন তাকে দেখি তখন আমার ম্যারাডোনার কথা মনে হয়।’

জীবন নামের বহতা নদীতে চিরস্থায়ী দুঃখ বলে কিছু নেই। কোনো এক রাঙা ভোরে সব হতাশা, গ্লানি, অপ্রাপ্তি, কলঙ্ক উবে যায় প্রখর স্বর্ণালি সাফল্যে। ওই তো সূর্য, ওটাই সাফল্য। জীবন বারবার ফিরে আসার স্ক্রিপ্ট তৈরি করার সুযোগ দেয়, সাহসের সঙ্গে যে গ্রহণ করতে পারে তিনিই দিগ্বিজয়ী, তিনিই কিংবদন্তি; তিনিই লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।

বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে আফগানিস্তান

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১১:১০ এএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১১:১০ এএম
বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনালে আফগানিস্তান
ছবি- সংগ্রহীত

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে পা রাখতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশের সামনে। তবে জয়ের পাশাপাশি ছিল সমীকরণের হিসাব-নিকাশ। সে লক্ষ্যে শুরু থেকে দারুণ বোলিং করে বাংলাদেশ। আফগানদের ইনিংস থামে ১১৫ রানে। সেমিফাইনাল খেলতে বাংলাদেশকে এই লক্ষ্য তাড়া করতে হতো ১২.১ ওভারের মধ্যে। তবে নির্ধারিত ওভারের মধ্যে সেই লক্ষ্য তাড়া করতে না পারায় সুপার এইট থেকে নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের বিদায়। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটাও নিজেদের করে নিতে পারেনি নাজমুল হোসেন শান্তর দল। আফগানদের কাছে ম্যাচ হারে ৮ রানের ব্যবধানে। বাংলাদেশকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে উঠল আফগানরা।

আফগানদের ছুড়ে দেওয়া ১১৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে স্কোরবোর্ডে ২৩ রান যোগ করতে তিন উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিমের পাশাপাশি প্যাভিলিয়নে ফেরেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান। টুর্নামেন্টজুড়ে টপ অর্ডারের এই ব্যর্থতা সুপার এইটের শেষ ম্যাচে এসেও কাটেনি। এমন ব্যর্থতার মাঝে খানিকটা আশার আলো হয়ে ছিলেন ওপেনার লিটন দাস। পুরো ম্যাচে একপ্রান্ত সামলে রাখেন এই ডানহাতি ব্যাটার। তিনি অপরাজিত ছিলেন ৪৯ বলে ৫৪ রান করে।

২৩ রানে তিন উইকেট হারানো বাংলাদেশকে চতুর্থ উইকেটে পথ দেখানোর চেষ্টা করেন লিটন ও সৌম্য সরকার। দুজন মিলে চতুর্থ উইকেটে যোগ করেন ২২ বলে ২৫ রান। ইনিংসের ৭ম ওভারের তৃতীয় বলে দ্রুতগতির ফ্লাইটেড ডেলিভারি উইকেটে আঘাত করলে আউট হন সৌম্য। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে তার ব্যাটে আসে ১০ বলে ১০ রান।

সৌম্যর বিদায়ের পর তাওহিদ হৃদয় উইকেটে আভাস দেন ঝড় তোলার। তবে ভাগ্য তার পক্ষে ছিল না। ৮ম ওভারের তৃতীয় বলে জীবন পেলেও বড় করতে পারেননি ইনিংস। রশিদ খানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হওয়ার আগে তার ব্যাটে আসে ৯ বলে ১৪ রান। পরে অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৯ বলে ৬ ও রিশাদ হোসেন আউট হন গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়ে। দুজনই ছিলেন রশিদ খানের শিকার। নিজের কোটার পুরোটা বোলিং করে ২৩ রান খরচায় ৪ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফেরান এই লেগি।

আফগানদের হয়ে নাভিন উল হক ২৬ রানে নেন ৪ উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নেন ফজল হক ফারুকি ও গুলবাদিন নাঈব।

এর আগে সেন্ট ভিনসেন্টের আর্নোস ভ্যাল স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশি বোলারদের নিখুঁত লাইন ও লেন্থের বোলিংয়ে শুরু থেকেই রান   করতে ভুগতে হচ্ছিল আফগান ব্যাটারদের। বিশেষত বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ব্যাটিং করা দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহীম জাদরান এদিনও ৫৯ রানের জুটি গড়লেও এই রাত করতে তারা খেলেছে ৬৪ বল। ইব্রাহীম লেগস্পিনার রিশাদ হোসেনের বলে ২৯ বলে মাত্র ১৮ রান করে তানজিম হাসান সাকিবকে ক্যাচ দেন তিনি।

অন্য ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজও আউট হন রিশাদের বলে। দলের তৃতীয় উইকেট হিসেবে তিনি আউট হলেও করেন স্বভাব বিরুদ্ধ ব্যাটিংয়ে ৫৫ বলে ৪৩ রান। একই ওভারেই গুলবেদীন নাইবকে ফেরান এই বোলার। তিনি করেন ৪ রান। মাঝখানে মোস্তাফিজের বলে ১২ বলে ১০ রান করে আজমতউল্লাহ ওমরজাই। 

ব্যর্থ হয়েছেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবীও। তাসকিনের আহমেদের বলে ১ রান করে আউট হন তিনি। তার বিদায়ে ১৭.৪ বলে ৯৩ রানে ৫ উইকেটে হারায় আফগানিস্তান। মাঠে নেমে দ্বিতীয় বলেই তাসকিনকে ছয় হাঁকান আফগানদের অধিনায়ক রশিদ খান। কিন্তু পরের ওভারে মোস্তাদিজ দেন মাত্র ১ রান।

শেষ ওভার করতে আসা তানজিমকে দুই ছয় হাঁকিয়ে ১০ বলে ১৯ রান করে দলের বোর্ডে ৫ উইকেট হারিয়ে ১১৫ রান যোগ করে মাঠ ছাড়েন। ততক্ষণে মাঠে বৃষ্টি শুরু হলে আম্পায়ারও মাঠকর্মীদের মাঠ ঢেকে দেওয়ার জন্য ডাক দেন।

লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ৩টি, তাসকিন ও মোস্তাফিজ নেন ১টি করে উইকেট।

পয়েন্ট হারিয়ে শুরু ব্রাজিলের কোপা মিশন

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১০:২৪ এএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১০:২৯ এএম
পয়েন্ট হারিয়ে শুরু ব্রাজিলের কোপা মিশন
ছবি- সংগ্রহীত

কোপা আমেরিকায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে কোস্টারিকার বিপক্ষে মাঠে নামে ব্রাজিল। তুলনামূলক দূর্বল প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোল শূন্য ড্র করেছে ভিনিসিউয়াস-রদ্রিগোরা। আজ মঙ্গলবার (২৫ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় লস অ্যাঞ্জেলেসের সোফাই স্টেডিয়ামে বিস্ময় বালক এন্ড্রিককে ছাড়াই মাঠে নামে ব্রাজিল। কোচ দরিভাল জুনিয়র দলকে মাঠে নামান ৪-২-৩-১ ফরমেশনে।

কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচে পুরোটা সময় বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল ব্রাজিল। ম্যাচের ৭৩ শতাংশ সময় নিজেদের পায়ে বল রাখে তারা। বিপরীতে কোস্টারিয়ার পায়ে বল ছিল ২৭ শতাংশ সময়। বল দখলের লড়াইয়ে এগিয়ে থাকা ব্রাজিল আক্রমণ সাজায় ১৯ বার। এরমধ্যে মাত্র দুইটি শট ছিল লক্ষ্যে। বিপরীতে 

ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে ব্রাজিল। তাতে সপ্তম মিনিটে ভালো সুযোগ পেয়েছিলেন রাফিনহা। কিন্তু দানিলোর ক্রসে ছয় গজ বক্স থেকে নেওয়া তার শট রুখে দেন কোস্টারিকা গোলরক্ষক। এরপর বেশ কয়েকবার আক্রমণ সাজায় ব্রাজিল। তবে কোস্টারিকার জালে বল জড়াতে পারেনি ব্রাজিল। শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল করতে না পারায় গোল শূন্য ড্র করে মাঠ ছাড়তে হয় ব্রাজিলকে।

এই ম্যাচ ড্রয়ের ফলে ‘ডি’ গ্রুপের পয়েন্ট তালিকায় ১ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে অবস্থান করেছে ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচেই জয় তুলে ৩ পয়েন্টে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করেছে কলম্বিয়া।