চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ১নং গেট ও রেলক্রসিং এলাকায় শুক্রবার (১৫ মার্চ) বিকেলে সড়ক অবরোধ করেছেন স্থানীয়রা। অবরোধকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পথ আটকে মারধর করা হয়েছে। এতে অন্তত ৪ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে গতকাল সড়ক অবরোধ করা হয় বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত মঙ্গলবার ঘটে যাওয়া চবি ছাত্রলীগ ও স্থানীয়দের মধ্যকার ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি দাবি করে সড়ক অবরোধ করেন স্থানীয়রা। তারা জানান, গত মঙ্গলবার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের মোটরবাইকের দুর্ঘটনা নিয়ে সংঘর্ষ বাধে। এতে স্থানীয় দুজন এবং চার শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় হাটহাজারী থানায় মামলা করতে গেলে মামলা নেয়নি পুলিশ। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি করলেও তার রিপোর্ট এখনো দেয়নি। জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই তারা এর প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করেন।
এদিকে গতকাল এই অবরোধ চলার সময়ে স্থানীয়দের হামলায় এক ছাত্রীসহ ৪ শিক্ষার্থী আহত হন। তারা হলেন, অঞ্জন সাহা তন্ময়, শুভ, শাহাদাত, মাইশা ও ওমর।
শিক্ষার্থীদের মারধরের খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে ক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় বিকেল ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সিএফসি উপগ্রুপের নেতা-কর্মীরা জড়িতদের বিচার দাবিতে মূল ফটক আটকে দেন। এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায় নেতা-কর্মীদের। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে না পারায় প্রক্টরিয়াল বডিকে উদ্দেশ করে দুয়োধ্বনি দিতে দেখা যায়। দেড় ঘণ্টা পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ও মামলা করার আশ্বাস দিলে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা গেট খুলে দেন।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও সিএফসি উপগ্রুপের নেতা মির্জা খবির সাদাফ বলেন, ‘আমাদের ভাইবোনদের ওপরে যারা আক্রমণ করেছে তাদের যথাযথ বিচার ও শাস্তির দাবি জানাই। স্থানীয়দের প্রতি আমার ক্ষোভ নেই। তবে যারা হামলার সঙ্গে যুক্ত তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রশাসন হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মামলা করবে এবং গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা করবে বলে জানিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হামলাকারীরা প্রত্যেকবারই শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে পার পেয়ে যায়। তাই তারা আরও আক্রমণপ্রবণ হয়ে ওঠে। এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আমরা গেট অবরোধ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যদি তাদের আশ্বাস পূরণ করতে না পারে তাহলে আমরা পরবর্তী কর্মসূচির দিকে আগাব।’
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নূরুল আজিম সিকদার বলেন, ‘যারা এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বাদী হয়ে মামলা করবে। পাশাপশি জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় সমাজতত্ত্ব বিভাগের এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে অপরদিক থেকে আসা স্থানীয় এক ব্যক্তির বাইকের ধাক্কা লাগে। এ সময় হাতাহাতি থেকে মারধরের ঘটনা ঘটে। এতে স্থানীয় দুজন ও চার শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় গত বুধবার চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।