![টেকনাফ স্থলবন্দর স্থবির, ২৪ দিন ধরে বন্ধ আমদানি-রপ্তানি](uploads/2024/06/29/Teknaf-port-1719639500.jpg)
মায়ানমারের মংডু শহরে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাত তীব্র রূপ নিয়েছে। প্রতিবেশী দেশটির সংঘাতের কারণে চলতি বছরের জুন মাসে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে ২৪ দিন ধরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, আমদানি-রপ্তানি বন্ধ হওয়ায় টেকনাফ স্থলবন্দরের জেটিঘাটে শূন্যতা বিরাজ করছে।
ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান আর্মির তুমুল সংঘর্ষ চলছে। এই সংঘাতের কারণে স্থলবন্দরে আগের তুলনায় পণ্যসামগ্রী নিয়ে ট্রলার কমছে। দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন আমদানিকারকরা। ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, মায়ানমারের আকিয়াব বন্দর থেকে আদা, রসুন, পেঁয়াজ, আচার, সুপারি, নারিকেল, মাছ, কাঠ, বরই, তেঁতুল, হলুদ, ছোলা, স্যান্ডেল, সানাকা মাটি, শুঁটকি, গাছের ছাল, ইলেকট্রিক পণ্য ইত্যাদি আমদানি করা হয়। অন্যদিকে টেকনাফ স্থলবন্দর হয়ে মায়ানমারে পানির ট্যাংক, অ্যালুমিনিয়াম পণ্য, তৈরি পোশাক, আলু, টিউবওয়েল ইত্যাদি রপ্তানি করা হয়।
আমদানিকারক ওমর ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, ‘মায়ানমারে চলমান সংঘাতের আগে স্থলবন্দরে প্রতিদিন আমার ১০ থেকে ১২টি পণ্যবাহী ট্রলার আসত এবং প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০০ থেকে ১৫০টি পণ্যবাহী ট্রলার স্থলবন্দরের জেটিঘাটে নোঙর করত। বর্তমানে প্রতি মাসে দুই-তিনটি ট্রলার বন্দরে নোঙর করে। তবে আশা করি, মায়ানমারের চলমান যুদ্ধ শেষ হলে আবারও আগের মতো ট্রলার আসতে শুরু করবে।’
টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমিক আলী আজগর খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমার আওতাধীন ৩৫০ জন শ্রমিক বন্দরে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। যেদিন বন্দরে বেশি পণ্যবাহী ট্রলার নোঙর করবে, সেদিন ৭০০-৮০০ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। চলমান সংঘাতের কারণে বন্দরে পণ্যবাহী ট্রলার না আসায় লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে।’
আলী আজগর বলেন, ‘বন্দরে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন ৩-৪টি পণ্যবাহী ট্রলার থেকে মালামাল আনলোড হতো। এখন মাসে ২-৩টি কাঠসহ পণ্যবাহী ট্রলার নোঙর করে। এভাবে চলতে থাকলে পরিবার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।’
টেকনাফ শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা বি এম আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ‘২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৪০ কোটি টাকা। তবে মায়ানমারে চলমান সংঘাতের কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩২৪ কোটি টাকা। সে হিসাবে এই অর্থবছরে ১৪০ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়েছে। পাশাপাশি গত অর্থবছরে পণ্যসামগ্রী এসেছে ১ লাখ ৪২ হাজার মেট্রিক টন এবং চলিত অর্থবছরে পণ্যসামগ্রী এসেছে মাত্র ৫৭ হাজার টন।’
টেকনাফ স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এহতেশামুল হক বাহাদুর বলেন, ‘মায়ানমারে যেখান থেকে মালামাল ট্রলারে লোড করা হয়, সেখানে যুদ্ধ চলছে। ট্রলার আসার সময় মায়ানমার থেকে গুলি করা হয়। সে কারণে মালামাল আসা প্রায় বন্ধ রয়েছে। জীবন রক্ষার জন্য অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে রেখেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার মালামাল আসা শুরু হবে।’
এহতেশামুল হক বলেন, ‘আমার কেনা শুঁটকি, রুই, কাতলা মাছ, সুপারি মায়ানমারে আটকে রয়েছে। সংঘাতের কারণে আনতে পারছি না।’
টেকনাফ স্থলবন্দরের মহাব্যবস্থাপক মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত বছর আড়াই হাজারের বেশি ট্রলার স্থলবন্দরে এসেছে। চলতি বছরের এই পর্যন্ত ৬৮০টি ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে জেটিঘাটে ভিড়েছে। বর্তমানে রপ্তানি নেই বললে চলে।
মো. জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সর্বশেষ গত ৪ জুন একটি পণ্যবাহী ট্রলার বন্দরের জেটিঘাটে নোঙর করে।