![পুঁজিবাজারের টাকা ফিরছে ব্যাংকে](uploads/2024/03/10/1710060441.bank.jpg)
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) গত ১৮ কার্যদিবসে সূচক কমেছে ৩৩৪ দশমিক পয়েন্ট। গত মাসের ১১ তারিখে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স অবস্থান করছিল ৬ হাজার ৪৪৭ দশমিক শূন্য ৭ পয়েন্টে। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) এর অবস্থান ছিল ৬ হাজার ১১২ দশমিক ৭৬ পয়েন্টে।
বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং ব্যাংক সুদের হার বৃদ্ধির কারণে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের চেয়ে অন্যত্র টাকা জমা রাখাকে নিরাপদ মনে করছেন বিনিয়োগকারীরা।
তারল্যসংকটে থাকা ব্যাংকগুলো উচ্চসুদে আমানত সংগ্রহ করছে, যার প্রভাব পড়েছে দেশের পুঁজিবাজারে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে ব্যাংকে আমানতের সুদহার ১৩ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। যেখানে সঞ্চয়পত্রে গড়ে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে।
জানা গেছে, কোনো কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্র ও বন্ডের চেয়েও বেশি সুদ দিচ্ছে। এসব ব্যাংক তারল্যসংকটে রয়েছে। চাহিদা মেটাতে বেশি সুদ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক আবু আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহে বেশি পরিমাণ সুদ দিচ্ছে। পাশাপাশি বন্ডে বিনিয়োগ করেও এখন ভালো মুনাফা পাচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে পুঁজিবাজারের ব্যক্তিশ্রেণির বড় বিনিয়োগকারীরা ওখানে বিনিয়োগ করছেন। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে।
মিডওয়ে সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান বলেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে পুঁজিবাজারে। তিনি আরও বলেন, পুজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাজার নিয়ন্ত্রণে আরও সচেতন হলে হয়তো বাজার এতটা খারাপ হতো না।
পুঁজিবাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, আগের সপ্তাহের ধারাবাহিকতায় গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের সপ্তাহের তুলনায় ২ দশমিক ২৭ শতাংশ কমে ৬ হাজার ১১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ৬ হাজার ২৫৫ পয়েন্টে।
নির্বাচিত কোম্পানির সূচক ডিএস-৩০ সপ্তাহের ব্যবধানে ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ কমে ২ হাজার ৯৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ২ হাজার ১২৭ পয়েন্টে। শরিয়াহ সূচক ডিএসইএস ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমে ১ হাজার ৩৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, আগের সপ্তাহ শেষে যা ছিল ১ হাজার ৩৬০ পয়েন্টে। ডিএসইতে গত সপ্তাহে লেনদেন হওয়া মোট ৪১১টি কোম্পানি, মিউচুয়াল ফান্ড ও করপোরেট বন্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৫৯টির, কমেছে ৩২০টির আর অপরিবর্তিত ছিল ২২টির। এ ছাড়া লেনদেন হয়নি ১০টির।
গত সপ্তাহে সূচকের পতনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, রেনাটা, ওরিয়ন ফার্মা, স্কয়ার ফার্মা ও ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ার।
ডিএসইতে গত সপ্তাহের পাঁচ কার্যদিবসে ৪ হাজার ৫৩০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহে লেনদেন ছিল ৩ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক্সচেঞ্জটিতে সাপ্তাহিক লেনদেন বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত সপ্তাহে ডিএসইতে দৈনিক গড়ে ৮১০ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। যেখানে আগের সপ্তাহের চার কার্যদিবসে দৈনিক গড় লেনদেন ছিল ৮৭৭ কোটি টাকা। গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে এ মূলধন ছিল ৭ লাখ ৬০ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
খাতভিত্তিক লেনদেন চিত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ডিএসইর মোট লেনদেনের ১৭ দশমিক ১ শতাংশ দখলে নিয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে ওষুধ ও রসায়ন খাত। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ দশমিক ১ শতাংশ দখলে নিয়েছে বস্ত্র খাত। ১২ দশমিক ৭ শতাংশ লেনদেনের ভিত্তিতে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রকৌশল খাত। মোট লেনদেনের ১০ দশমিক ৭ শতাংশের ভিত্তিতে চতুর্থ অবস্থানে ছিল খাদ্য খাত। আর সাধারণ বিমা খাতের দখলে ছিল লেনদেনের ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
আলোচ্য সপ্তাহে ডিএসইতে ইতিবাচক রিটার্ন হয়েছে পাট ও চামড়া খাতের। এ দুই খাতে যথাক্রমে দশমিক ৫ ও দশমিক ২ শতাংশ রিটার্ন এসেছে। অন্যদিকে নেতিবাচক রিটার্নে শীর্ষে ছিল খাদ্য, জীবন বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। এ তিন খাতে নেতিবাচক রিটার্ন এসেছে যথাক্রমে ৭ দশমিক ৭, ৫ দশমিক ৩ ও ৫ দশমিক ১ শতাংশ।