আলিম পাস করে হয়েছিলেন মসজিদের খতিব, তা ছেড়ে শুরু করেন থাই গ্লাসের ব্যবসা। তবে কোনো পেশাতেই স্থির হতে পারছিলেন না। কৃষি অধিদপ্তর থেকে কৃষিকাজে উন্নত প্রশিক্ষণ নেন। সেই দক্ষতা কাজে লাগিয়ে নরসিংদীর বেলাবতে সল্লাবাদ ইউনিয়নের নিলক্ষীয়া গ্রামে চেরিগাছ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কোরআনে হাফেজ সালাহ উদ্দিন মোল্লা।
চেরি ফলের বীজ প্রক্রিয়াজাত করার মাধ্যমে কফি তৈরি করা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, বেলাব উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের বাস্তবায়নে গ্রামের সমতল ভূমিতে পরীক্ষামূলকভাবে চেরিগাছের চাষ করা হয়েছে। কৃষি উদ্যোক্তা সালাহ উদ্দিন মোল্লার বাড়ির পাশে প্রায় ৩৩ শতক জমিতে রোপণ করা গাছের থোকায় থোকায় ঝুলছে চেরি ফল। বাগানটিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৩৫টি অ্যারাবিয়ান জাতের চেরিগাছ রয়েছে। চেরি ফল রোদে শুকিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে কফি তৈরি করেন সালাহ উদ্দিন মোল্লা। সম্পূর্ণ অর্গানিক এই কফির গুণগত মান ঠিক থাকায় নতুন কৃষি উদ্যোক্তারা কফি বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছেন। এ ছাড়া চেরি বাগান করতে অনেকেই সালাহ উদ্দিন মোল্লার কাছে পরামর্শ নিতে আসছেন।
সাগর চন্দ্র দাস নামে এক যুবক বলেন, ‘আমাদের উপজেলার এত সুন্দর চেরি বাগান হয়েছে তা আগে জানতাম না। সালাহ উদ্দিন ভাই নিজেই চেরি বাগান ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন। প্রতিটি গাছে ভালো ফলন হয়েছে। আমার বাড়ির পাশে তিন বিঘা জমি আছে। আমিও চেরি বাগান করব।’
নিলক্ষীয়া গ্রামের বাসিন্দা বাইজিদ মিয়া বলেন, ‘আমরা শুনেছি বিদেশে পাহাড়ি এলাকায় চেরিগাছের চাষ হয়। কিন্তু আমাদের গ্রামে সবজি চাষাবাদ করার জমিতে চেরি চাষ হবে এটা আগে জানতাম না। এটি একটি সফলতা।’
চেরি বাগানের মালিক হাফেজ সালাহ উদ্দিন মোল্লা খবরের কাগজ বলেন, ‘কৃষক পরিবারে আমার জন্ম। বাবাও বিভিন্ন বিদেশি ফসল চাষ করতেন। আমরা ছোট থাকতে দেখতাম এলাকার কৃষকরা আমার বাবার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে এসেছেন। তিনি সবাইকে উৎসাহ দিতেন, সবাই যেন কৃষিকাজ করেন। আমিও আমার বাবার পথে চলছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোরআনে হাফেজ হয়েছি ও আলিম পাস করে পাঁচ বছর মসজিদে খতিব ছিলাম। পরে তা ছেড়ে ব্যবসা শুরু করি, কিন্তু আমরা প্রকৃতপক্ষে কৃষকের সন্তান। ইউটিউবে আধুনিক কৃষিকাজের বিভিন্ন ভিডিও দেখতাম। একসময় কফি চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হই। পরবর্তী সময়ে বেলাব উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহযোগিতায় চেরি চাষ শুরু করি। এখন আমার বাগানে সারা বছর চেরি ফল ধরছে। নতুনরা যদি সঠিক পরামর্শ অনুযায়ী কফি চাষ করেন, তবে আমাদের জেলায় চেরি চাষের অপার সম্ভবনা রয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বে অ্যারাবিয়ান জাতের কফির চাহিদা রয়েছে।’
বাগান থেকে ফল সংগ্রহ করে বাড়িতেই প্রক্রিয়াজাত করেন কফি চাষি সালাহ উদ্দিন মোল্লা। তার এই কর্মযজ্ঞ দেখতে দূরদূরান্ত থেকে আসছেন কৃষিপ্রেমীরা।
বেলাব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিম উর রউফ খান খবরের কাগজকে বলেন, ‘নিয়মিত চেরি বাগান পরিদর্শন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি তরুণদের চেরি চাষে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ বছর প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে ৩৩ শতক জমিতে চেরি ফল চাষ করা হয়েছে। সালাহ উদ্দিন মোল্লার জমির মাটি উর্বর থাকায় চেরি চাষে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। কৃষকরা যদি প্রশিক্ষণ নিয়ে সমতল ভূমিতে বাণিজ্যিক চেরি চাষ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন, তাহলে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা করে পাশে থাকব।’