![আড়িয়ল বিলের শাপলায় কর্মহীনদের ভাগ্য বদল](uploads/2024/07/01/lily-1719818027.jpg)
মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে বর্ষার মৌসুমে আড়িয়ল বিলের শাপলায় খুলছে কর্মহীনদের ভাগ্যের চাকা। এখন বিস্তীর্ণ বিলজুড়ে শুধুই পানি। শুষ্ক মৌসুমে আড়িয়ল বিল ধানসহ বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদ হলেও বর্ষার মৌসুমে বিলপাড়ায় নিম্ন আয়ের অধিকাংশ মানুষই বেকার থাকেন। আর এই সময়কে কাজে লাগিয়ে আড়িয়ল বিলে শাপলা, শামুক কুড়ানোর পাশাপাশি মাছ শিকার করে সংসারে অর্থের জোগান দিয়ে থাকেন তারা।
জানা গেছে, বিলে শাপলা কুড়িয়ে একেকজন হাজার হাজার টাকা আয় করছেন। প্রতিদিন সূর্য ওঠার আগেই ছোট ডিঙি নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন শাপলা কুড়াতে। দিনে কয়েক ঘণ্টা শাপলা কুড়িয়ে নৌকা ভর্তি করে বাড়ি ফেরেন তারা।
আড়িয়ল বিল এলাকার শ্রীনগর অংশের গাদিঘাট, আলমপুর, মদনখালী, শ্রীধরপুর এলাকার বিভিন্ন সড়কের পাশে স্থানীয়ভাবে এসব শাপলা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০ ট্রাক শাপলা যাচ্ছে রাজধানীর বিভিন্ন সবজির পাইকারি বাজারে।
স্থানীয়রা বলছেন, জীবন ও জীবিকার তাগিদে বিকল্প উপার্জন হিসেবে বর্ষার মৌসুমে শত শত বেকার যুবক-বৃদ্ধ আড়িয়ল বিলের শাপলা বিক্রির আয়ে সংসার চালাচ্ছেন। প্রকৃতির সৃষ্টি এসব শাপলাকে তারা আল্লাহর নিয়ামত হিসেবে দেখছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, গাদিঘাট সড়কের পাশে নৌকা থেকে আনন্দ-উল্লাস করে শাপলা নামানো হচ্ছে। পরে শাপলার আঁটি গুনে-গুনে তোলা হচ্ছে পিকআপ ভ্যানে। এ সময় স্থানীয় আমিনুল, আল-আামিন ও জনি জানান, ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত শাপলা আনতে আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। বর্ষায় কোনো কৃষিকাজ না থাকায় বিনা পুঁজিতে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো শাপলা
কুড়িয়ে বিক্রি করেন পাইকারের কাছে। এতে দৈনিক ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় করেন তারা।
এ ছাড়া আড়িয়ল বিলের শাপলা বিক্রির আয়ে অন্তত দুই শতাধিক মানুষ সংসার চালান বলে জানা যায়।
আলমপুর এলাকার মো. আয়নাল হক জানান, স্থানীয়দের থেকে শাপলা সংগ্রহ করে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি হাটবাজারে নেন তিনি। এখন আড়িয়ল বিলে শাপলার পরিমাণ কিছুটা কম। পানি বাড়লেই শাপলার পরিমাণও অনেকাংশ বাড়বে।
রফিকুল ইসলাম জানান, গাদিঘাট থেকে প্রতিদিন চার পিকআপ শাপলা ঢাকায় পাঠাচ্ছেন তিনি। প্রতি আঁটি শাপলার পাইকারি দর ধরা হচ্ছে ১৬ টাকা।
আড়িয়ল বিলের সৌন্দর্য ধরে রাখার দাবি
এদিকে হাঁসাড়া-বাড়ইখালী সড়কের দক্ষিণ দিকে আলমপুর, শ্রীধরপুর এলাকার আড়িয়ল বিলের বিভিন্ন কৃষি জমিতে হাউজিং ব্যবসায়ীরা সাইনবোর্ড সাঁটানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। তারা মনে করছেন, সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট ভূমি ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে বাড়ইখালী সড়কের পাশে বেশকিছু কৃষিজমি ভরাট করেছেন। এখনই এসব ভূমি সিন্ডিকেট ও মাটি খাদকদের দমানো না গেলে সৌন্দর্যে ভরপুর ও হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের বিখ্যাত আড়িয়ল বিলটি হারাবে তার ঐতিহ্য। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে বর্ষার মৌসুমে আড়িয়ল বিলের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভ্রমণ পিপাসুরা আসতে শুরু করেছেন। তারা নৌকা, ট্রলার ও ময়ূরপঙ্খী নাও করে বিস্তীর্ণ আড়িয়ল বিলের প্রকৃতির সৌন্দর্য ঘুরে দেখছেন।