![চাকরি ছেড়ে কৃষিতে মনোনিবেশ ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীর](uploads/2024/07/01/magura-dragon-1719818543.jpg)
‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে বাড়ি চলে আসার পর আর চাকরিতে ফেরা হয়নি। পরিবারের অন্য সদস্যদের পরামর্শে নিজের জমানো অর্থ ও স্ত্রীর লোন করা টাকা দিয়ে এই কৃষি প্রজেক্ট গড়ে তুলি। বর্তমান কয়েকজন পার্টনারের সহযোগিতা নিয়ে ২৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছি। ভবিষ্যতে প্রকল্প আরও বড় করার ইচ্ছা রয়েছে। চাকরি করলে আমি একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকতাম। আর এখন আমাদের এই প্রকল্পে অনেকেরই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে।’ কথাগুলো বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে চাকরি ছেড়ে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করা মো. মহী উস সগীর।
জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরিতে যোগ দেন সগীর। দীর্ঘদিন চাকরির পর করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফিরে আসেন নিজ জেলা মাগুরায়। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হওয়ার পর আর কোনো চাকরিতে যোগ দেননি। নিজের সঞ্চিত অর্থ ও শিক্ষিকা স্ত্রীর নেওয়া লোনের টাকা দিয়ে শুরু করেন কৃষিকাজ। গড়ে তোলেন ‘মধুমতী অ্যাগ্রো’ নামে কৃষি ফার্ম। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি দিকে মাত্র চার বিঘা জমি দিয়ে শুরু করা তারই ফার্মে বর্তমানে যোগ হয়েছে ২৬ বিঘা জমি। লিজ নেওয়া এসব জমিতে চাষ করা হচ্ছে পেয়ারা, ড্রাগন, লেবু, লিচু, হলুদ, মরিচ, আখ, ক্যাপসিকাম। পাশাপাশি রয়েছে একটি ছাগলের খামার। অর্থনৈতিক সমস্যা থাকার কারণে ইতোমধ্যে তার এই ফার্মে নেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজন পার্টনার। মহী উস সগীরের ফার্মটি ইতোমধ্যে স্থানীয়দের নজর কেড়েছে।
মহম্মদপুর উপজেলার বাবুখালী ইউনিয়নের ডুমুরশিয়া গ্রামে গড়ে ওঠা মধুমতী অ্যাগ্রো ফার্মে প্রতিদিন গড়ে ১৬-১৭ জন শ্রমিক নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজেকে কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে স্থানীয় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারায় খুশি এই কৃষি উদ্যোক্তা। মধুমতী অ্যাগ্রো ফার্মে বর্তমানে ২৬ বিঘা জমির মধ্যে ১০ বিঘা জমিতে রয়েছে ড্রাগন ফল ও ৭ বিঘা জমিতে রয়েছে পেয়ারা। বর্তমানে বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে ড্রাগন ও পেয়ারা। সম্পূর্ণ জমি ঘিরে লাগানো হয়েছে দেশি লেবুর গাছ।
মহী উস সগীর জানান, এ বছর ড্রাগন ফল প্রায় ৫০ লাখ টাকা বিক্রির আশা করছেন তিনি। পাশাপাশি ১২ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রির লক্ষ্য রয়েছে। অবশ্য ইতোমধ্যে প্রায় ৭ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রি করেছেন তিনি। এই কৃষি উদ্যোক্তা যাতে কৃষিতে সফল হতে পারেন, সে বিষয়ে উপজেলা ও জেলা কৃষি অফিস সর্বাত্মক সহযোগিতা করছে তাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে চাকরি ছেড়ে কৃষিকে কেন পেশা হিসেবে বেছে নিলেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে সগীর বলেন, ‘উদ্দেশ্য আধুনিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে কৃষিকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। বর্তমান কয়েকজন পার্টনারের সহযোগিতা নিয়ে ২৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ শুরু করেছি। ভবিষ্যতে প্রকল্প আরও বড় করার ইচ্ছা রয়েছে। চাকরি করলে আমি একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকতাম। আর এখন আমাদের এই প্রকল্পে অনেকেরই কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হচ্ছে। আমাদের ইচ্ছা রয়েছে ভবিষ্যতে অর্গানিক ফার্মিংয়ের মাধ্যমে এখান থেকে সবজি ও ফল বিদেশে রপ্তানি করা।’
মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রণব কুমার রায় বলেন, ‘মো. মহী উস সগীর মধুমতী অ্যাগ্রো ফার্ম গড়ে তোলার পর জেলা ও উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তার ফার্মে এসে সঠিকভাবে ফসল উৎপাদন ও বাজারজাতের জন্য সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তার এই ফার্মটি ইতোমধ্যে ছোট ছোট উদ্যোক্তা দেখে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. ইয়াছিন আলী বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। আর বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষির ওপর নির্ভরশীল। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। বর্তমান সরকারের উদ্দেশ্য কৃষি হবে আধুনিক, কৃষি হবে যান্ত্রিক এবং কৃষি হবে বাণিজ্যিক। শুধু পেটে-ভাতে খাওয়ার জন্য কৃষি নয়, কৃষিকে লাভজনক করতে হবে। এর জন্য আমাদের দরকার শিক্ষিত কৃষি উদ্যোক্তা। মো. মহী উস সগীরের মতো মাগুরায় যেসব শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা কৃষিকে আধুনিক এবং বাণিজ্যিকভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আসছেন, তাদের আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। তাদের মতো শিক্ষিত যুবকরা যদি এই কৃষিতে এগিয়ে আসেন, তাহলে সরকারের যে উদ্দেশ্য কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণ করা সেটি সফল হবে।’