কয়দিন ধরেই চলচ্চিত্রপাড়ায় আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু চিত্রনায়িকা ইয়ামিন হক ববি। আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল হ্যান্ডেলেও। ববির বিরুদ্ধে চুরি, প্রতারণা, হত্যাচেষ্টা মামলা এবং ববির পাল্টা মামলা ও পরিচালক রাশিদ পলাশকে পেটানোর ঘটনার এখন যেন টক অব দ্য টাউন।
ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভিন্ন অভিযোগ করলেন ববি। গতকাল রাজধানী মগবাজারের একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলনে ববি বলেন, ‘সৎভাবে জীবনযাবন অব্যাহত রেখে আর্থিক সচ্ছলতার আশায় আমি গুলশান-২-এর ১১৩ নম্বর রোডের ওয়াইএন সেন্টারের একটি রেস্তোরাঁ কিনি। এর অপারেশন পার্টনার মির্জা বাশার। আগের রেস্তোরাঁয় মালিক আমানের সঙ্গে আমার রেস্তোরাঁয় আসবাবপত্র নিয়ে মোট ৫৫ লাখ টাকার চুক্তি হয়। একই সময়ে রেস্তোরাঁ ভবনের মালিকের স্ত্রী শাহিনা ইয়াসমিন ও ছেলে জাওয়াদ আল মামুনের সঙ্গেও আলোচনা করি। তখন শাহিনা ও জাওয়াদ রেস্তোরাঁ নেওয়ার ব্যাপারে আমাকে উৎসাহিত করেন এবং চলমান রেস্তোরাঁ হস্তান্তর করলে তারা পরবর্তী সময়ে আমাদের নামে নতুন চুক্তিপত্র করে দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর আমরা আমানকে ১৫ লাখ টাকা দিই এবং আমাদের চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী দুটি চেকও দেওয়া হয়।’
ববি আরও বলেন, ‘০গত এপ্রিল মাসে আমান আমাদের কাছে রেস্তোরাঁ হস্তান্তর করেন। আমরা এপ্রিল থেকে রেস্তোরাঁয় ভাড়া প্রতি মাসে আড়াই লাখ ও বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খরচ পরিশোধ করছি। ভবনের মালিক আমাদের নামে ভাড়া জমা নিয়ে রসিদও দেন। রেস্তোরাঁয় ওঠার পর আমরা ডেকোরেশনের কাজ শুরু করি, যাতে প্রায় ১ মাস লেগে যায়। এতে খরচ হয় প্রায় ৫০ লাখ টাকা। শুরুতে আমরা পরীক্ষামূলকভাবে সেটি চালু করি। ট্রেড লাইসেন্স করার জন্য শাহিনা ইয়াসমিন ও জাওয়াদ আল মামুনকে চুক্তিপত্র, ফায়ার সেফটি ও বাণিজ্যিক অনুমতির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেওয়ার অনুরোধ করি।’
ববি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা যখন ট্রেড লাইসেন্স করতে এসব কাগজপত্র চেয়েছি, তখন থেকে রেস্তোরাঁর আগের মালিক আমান, শাহিনা, জাওয়াদ, ভবনের দায়িত্বে থাকা জয়, সাকিবসহ অন্য দায়িত্বপ্রাপ্তরা আমাদের হয়রানি শুরু করেন। প্রথমে আমান পরিশোধ করা ১৫ লাখ টাকার কথা অস্বীকার করেন। যদিও ওই টাকা তিনি নগদ নিয়েই চাবি হস্তান্তর করেছিলেন। অন্যদিকে শাহিনা ও জাওয়াদের নির্দেশে ভবনের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী জয়, সাকিব, হারুন ও তাদের সহযোগীরা বারবার আমার রেস্তোরাঁয় বিদ্যুৎ বন্ধ করে হয়রানি শুরু করেন। এর মধ্যে গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ওয়ান গ্রুপ থেকে বারবার সন্ত্রাসীরা রেস্তোরাঁয় এসে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। গুলশানের মতো জায়গায় এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দেখে আমি ভীত হয়ে পড়ি। পরে আমরা জানতে পারি, শাহিনা ইয়াসমিন বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের স্ত্রী এবং এই ভবনের মালিক গিয়াস উদ্দিন আল মামুন নিজেই। এমন পরিস্থিতিতে বিপদের আশঙ্কা দেখে ট্রেড লাইসেন্সের বিষয়ে করণীয় কী সে পরামর্শ করতে আমরা সিটি করপোরেশনে যাই এবং জানতে পারি, ওই বিল্ডিংয়ের কোনোরকম বাণিজ্যিক কার্যক্রমের অনুমতি নেই। এ জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় আগুন লাগার পর এই বিল্ডিংটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। পরে শাহিনা ইয়াসমিন তিন মাসের মধ্যে বাণিজ্যিক কার্যক্রম সরিয়ে ফেলার লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিল্ডিং খোলেন।’
সংবাদ সম্মেলনে ববি আরও বলেন, ‘এই ঘটনার পর আমরা বুঝতে পারি, আমান, শাহিনা ও জাওয়াদ মিলে আমাদের সঙ্গে এক ভয়াবহ প্রতারণা করেছেন। অবৈধ রেস্তোরাঁ বাঁচাতে না পারার ভয়ে বিক্রি করে টাকা তুলে নেওয়ার ফাঁদ পাতেন তারা। অনুমতি না থাকলেও মাত্র তিন মাসের লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের প্রায় ৮০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করিয়েছেন এবং ভাড়াও নিচ্ছেন। তাদের ধারণা ছিল, আমরা বৈধ কাগজপত্র চাইব না। সিলগালা ভবনটিতে এখনো আগের মতো সব বাণিজ্যিক কার্যক্রম চলছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে তারা আমাদের হুমকি দিচ্ছে। সর্বশেষ গত ২২ জুন রাত ১১টায় আমরা রেস্তোরাঁ বন্ধ করে বেরিয়ে যাই। পরদিন সকালে কর্মচারীরা রেস্তোরাঁয় গেলে নিরাপত্তাকর্মীসহ অন্যরা তাদের ঢুকতে বাধা দেন। খবর পেয়ে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মির্জা বাশার সেখানে গেলে ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী তার ওপর হামলা করে। বাশারকে একা পেয়ে চরম মারধর ও তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। বিষয়টি আমি তৎক্ষণাৎ থানায় জানাই। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে আমরা রেস্তোরাঁয় ঢুকতে গিয়ে দেখতে পাই, সেখানে নতুন তালা লাগানো হয়েছে।’
ববি আরও বলেন, ‘আমরা গুলশান থানায় মামলা করতে গেলে থানা থেকে মির্জা বাশারকে আগে চিকিৎসা করিয়ে তারপর মামলার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেই মোতাবেক পরে আমরা মামলা করতে গিয়ে জানতে পারি যে, আগেই তারা মামলার অভিযোগ জমা দিয়েছে, যেখানে আমাকে আসামি করা হয়েছে। অথচ ঘটনাস্থলে আমি ছিলাম না।’ ববি বলেন, ‘আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে।’
নির্মাতা রাশিদ পলাশকে পেটানোর কথা জানতে চাইলে প্রথমে কয়েকবার বিষয়টি এড়িয়ে যান এই নায়িকা। পরবর্তী সময় প্রশ্নের মুখে রাশিদ পলাশকে পেটানোর কথা স্বীকার করেন ববি।
জাহ্নবী