![ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কে টানাপোড়েন](uploads/2024/03/08/1709866794.India-maldip.jpg)
মালদ্বীপের নির্বাচনে মোহাম্মদ মুইজ্জু জয়লাভ করার পর থেকে দেশটিতে ভারতবিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। চলতি সপ্তাহে নয়া দিল্লির কাছেও স্পষ্ট হয়ে গেছে বিষয়টি।
গত মঙ্গলবার মুইজ্জু জনসাধারণের উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে বলেন, ‘দেশে ১০ মে থেকে কোনো ভারতীয় সেনা থাকবে না। সামরিক পোশাকেও না, বেসামরিক পোশাকেও না। কোনো কাপড়েই ভারতীয় সামরিক বাহিনী এ দেশে থাকতে পারবে না।’
এর কয়েকদিন আগেও দুই প্রতিবেশী দেশ বিতণ্ডতায় জড়িয়ে ছিল। সে সময় মুইজ্জু হালকাভাবে ভারতকে এ অঞ্চলের ছোট দেশগুলোর ‘হয়রানিকারী’ হিসেবে অভিহিত করেন। এর পাল্টা জবাব দেয় ভারতও। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর বলেন, বড় হয়রানিকারীরা সাড়ে চার শ কোটি ডলারের সহায়তা দেয় না।
মূলত মালদ্বীপ যে ভারতের কাছ থেকে বড় অঙ্কের সহায়তা নেয় সেদিকে ইঙ্গিত করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এদিকে ভারতের কাছ থেকে দূরে সরলেও চীনের কাছে যাচ্ছে মালদ্বীপ। চলতি সপ্তাহে মুইজ্জুর সরকার চীনের কাছ থেকে বিনামূল্যে সামরিক সহায়তার চুক্তিতে যাওয়ার বিষয়ে জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে মালদ্বীপকে ১২টি অ্যাম্বুলেন্সও দিয়েছে। চীনের সঙ্গে অতীতে সম্পর্ক থাকলেও এবারই প্রথম দুই দেশ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গড়ে তুলল।
মালদ্বীপ সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক আজিম জাহির বলেন, ‘এটি খুব অবাক করার মতো যে মুইজ্জু এত দ্রুত চীনের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। কারণ এটি যে দিল্লিকে নারাজ করবে, তা স্পষ্ট ছিল। এটি একদম নতুন একটি পথ অবলম্বন করা যা গোটা অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি করবে।’
মাত্র ৫ লাখ জনসংখ্যার ছোট দেশ মালদ্বীপ পর্যটনের জন্য বেশি পরিচিত। কিন্তু এর ভৌগোলিক অবস্থান ভারত মহাসাগরে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এটি নিয়ে চীন ও ভারতের কাড়াকাড়ি নতুন কিছু নয়।
মালদ্বীপের আগের প্রেসিডেন্ট মোহাসেদ সলিহর সরকার দিল্লির সঙ্গে বেশি সম্পর্ক রেখে চলত। ফলে গত ৫ বছর মালদ্বীপ চলেছে ভারতের ছত্রছায়ায়। প্রচুর অর্থ সহায়তা পেয়েছে দেশটি। গড়ে তুলেছে হাসপাতাল, স্কুল ও বিমানবন্দরের মতো নানা ধরনের অবকাঠামো।
মুইজ্জু ও তার সরকার আগে থেকেই চীনঘেঁষা বলে পরিচিত। ক্ষমতা নেওয়ার পরপরই মুইজ্জু প্রথম প্রেসিডেনশিয়াল সফরে চীনে গেছেন। সেখানে দুই দেশ প্রায় ১৫টি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
সেনা ইসু বাদেও লাক্ষাদ্বীপ নিয়েও দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। জানুয়ারিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি লাক্ষাদ্বীপে যান পর্যটনের প্রচারণা চালান। ভারতের ওই দ্বীপপুঞ্জ মালদ্বীপ থেকে মাত্র ৮০ মাইল উত্তরে অবস্থিত। মালদ্বীপের অনেকেই বিষয়টিকে দেখেছেন তাদের কাছ থেকে পর্যটক সরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে। দেশটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল।
সে সময় মালদ্বীপের অনেক মন্ত্রী মোদিকে ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘ভাড়’ আখ্যা দেন। অন্যদিকে ভারতীয়রা পর্যটকদের মালদ্বীপ বয়কটের আহ্বান জানায়। এ ছাড়া গত মাসের শেষে মালদ্বীপের সরকার বিতর্কিত এক চীনা গবেষণা জাহাজকে নিজেদের ভূখণ্ডের কাছে ভিড়তে দেয়। বিষয়টি নিয়ে ভারতের আপত্তি সত্ত্বেও তারা তা শোনেনি।
অধ্যাপক জহিরের মতে, চীন মালদ্বীপের সুযোগ নিতে পারে এমন শঙ্কা রয়েছে। তবে ভারত যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে, তাতে দেশটি আরও বেশি করে বেইজিংয়ের দিকে চলে যাচ্ছে। তবে বড় অঙ্কের বাজেট সহায়তার মতো বিষয়গুলোর কারণে ভারতের সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্ক কখনই ছিন্ন করতে পারবে না মালদ্বীপ। সূত্র: গার্ডিয়ান