প্রায় সাত বছর আগে রোহিঙ্গাদের ওপর চড়াও হয়েছিল মায়ানমারের সামরিক বাহিনী। তাদের নির্বিচার হামলা, হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়ে ঘর ছেড়েছিল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ মানুষ। পালিয়ে তাদের আশ্রয় নিতে হয়েছে অন্য দেশে। এখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সুবিধা না করতে পেরে রোহিঙ্গাদের কাছে গিয়েই হাজির হয়েছে জান্তা বাহিনী।
রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জানতে পেরেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। সাম্প্রতিক সপ্তাহে অন্তত ১০০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে জান্তা বাহিনীতে।
বিবিসির খবর বলছে, মায়ানমারের আইডিপি ক্যাম্পে অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। ফেব্রুয়ারির মাঝ নাগাদ সে ক্যাম্প থেকেই সেনা অন্তর্ভুক্তি শুরু করে জান্তা। অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের নিরাপত্তা ও সুরক্ষাজনিত ভয়ভীতিও দেখানো হচ্ছে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো হত্যাযজ্ঞের কারণে আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার সম্মুখীন হয়েছে মায়ানমার। কিন্তু তারপরও বিদ্রোহীদের সঙ্গে টিকে থাকার চেষ্টায় রোহিঙ্গাদের কাছে গিয়ে দাঁড়ানোর বিষয়টির মধ্য দিয়ে জান্তা বাহিনীর মরিয়া মনোভাব ফুটে উঠছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
বিরোধীদের সঙ্গে লড়াইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জান্তা বাহিনীর। প্রচুর সেনাও হারিয়েছে তারা। সে শূন্যস্থান এখন পূরণ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে জান্তা বাহিনীকে।
জান্তা বাহিনী দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করেছে : থাই প্রধানমন্ত্রী
এদিকে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন বলেছেন, মায়ানমারের সঙ্গে আলোচনা শুরুর এখনই ভালো সময়। কারণ সেখানে জান্তা বাহিনী দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করেছে।
বিদ্রোহীদের কাছে দেশের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে পরাজিত হচ্ছে জান্তা বাহিনী। গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনার দখলও হারিয়েছে তারা। ২০২১ সালে মায়ানমারে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার পর থেকেই বিদ্রোহীদের সঙ্গে লড়ে আসছে বাহিনীটি।
স্রেথা এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘বর্তমান শাসকশ্রেণি শক্তি হারাতে শুরু করেছে। তবে এই হারানোর সময়টিতেও তারা শক্তিশালী, তাদের কাছে অস্ত্র আছে। হয়তো সময় হয়েছে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ও সমঝোতায় আসার।’
আবার ঘাঁটি হারাল জান্তা
থাই-মায়ানমার সীমান্তের শহর মিয়াওয়াদিতে জান্তার গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি দখলে নিয়েছে ক্যারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)। সেখানে প্রায় ৫০০ জান্তা সেনা আত্মসমর্পণ করেছে।
এক বিবৃতিতে গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, তাদের ব্রিগেড ৬-এর সশস্ত্র শাখা জান্তার কৌশলগত ঘাঁটি দখলে নিয়েছে। ঘাঁটিটির অবস্থান মিয়াওয়াদির পশ্চিমে। সবমিলিয়ে ৬৭ কর্মকর্তাসহ ৪৭৭ জন জান্তা সেনা আত্মসমর্পণ করে, যা কেএনইউ এর অঞ্চলে হওয়া সর্বোচ্চ। এছাড়া ১০০টিরও বেশি ভারী অস্ত্র ও সামরিক বাহন দখলে নিয়েছে তারা। সূত্র: বিবিসি, আল-জাজিরা, মায়ানমার নাও