![নিখোঁজ এমপি আজিমকে নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে](uploads/2024/05/21/Anwarul-Azim-1716263497.jpg)
বাংলাদেশের ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমকে নিয়ে দানা বাঁধছে রহস্য। চিকিৎসার জন্য ভারতে এসে কলকাতার উপকণ্ঠ থেকে নিখোঁজ হয়ে যান তিনি। ছয় দিন পরও তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কলকাতার বাংলাদেশ উপদূতাবাসের প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেন খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, সরকারিভাবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। আশা করা যায়, শিগগিরই নিখোঁজ সংসদ সদস্যের খোঁজ মিলবে।
এদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আনোয়ারুল আজিমের বন্ধু গোপাল বিশ্বাস ও তার পরিবারের সদস্যদের বয়ানে বিস্তর অসংগতি রয়েছে। তাকে আরও জেরা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, এই গোপাল বিশ্বাসের ব্যারাকপুরের বাড়িতেই নিয়মিত উঠতেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম। এবারও সেখানেই উঠেছিলেন। আজিম পাঁচ দিন সেখানে রইলেন অথচ তিনি কোথায় চিকিৎসা করাতে কলকাতায় এসেছিলেন, সে ব্যাপারে কিছুই বলতে পারছেন না গোপাল।
তদন্তকারীদের বক্তব্য, ‘এমনটা হতেই পারে না। সংসদ সদস্য প্রায়ই কলকাতায় চিকিৎসার জন্য আসতেন বলে জানালেও কোথায় চিকিৎসা করাতেন বা কোন চিকিৎসককে দেখাতেন, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ অন্ধকারে এই গোপাল।’
তদন্তকারী অফিসাররা আরও জানিয়েছেন, এই গোপাল বিশ্বাস বর্তমানে ব্যারাকপুরে থাকলেও তার বাড়ি ছিল বাংলাদেশের কালীগঞ্জ এলাকায়। এই এলাকাটি ঝিনাইদহে আনোয়ারুল আজিমের নির্বাচনি কেন্দ্রেরই অন্তর্গত। ফলে নিখোঁজ সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার আগে থেকেই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকা সম্ভব বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।
তদন্তে আরও উঠে এসেছে, ২০০১ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে ঝিনাইদহে হুন্ডির মাধ্যমে মূলত জমি বিক্রির টাকা ভারতে পাঠানোর কারবারের কথা সামনে এসেছিল। সেই ধরনের কোনো ঘটনার সঙ্গে গোপালের সংযোগ ছিল কি না, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি এই গোপালের সঙ্গে সংসদ সদস্য আনোয়ারুলের কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল কি না, তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে কোনো খোঁজখবর না পাওয়া সত্ত্বেও ঢাকায় সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যরা গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) অভিযোগ জানাতে পাঁচ দিন সময় কেন নিলেন, তারও কোনো অর্থ খুঁজে পাচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের তদন্তকারীরা।
বাংলাদেশ উপদূতাবাসের এক কর্মকর্তা জানান, গত ১২ মে ওই সংসদ সদস্য দর্শনা সীমান্ত দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকেন। ওই দিনই তিনি ব্যারাকপুরে গোপাল বিশ্বাস নামে এই বন্ধুর বাড়িতে ওঠেন। ১৪ মে তিনি বন্ধুর বাড়ি থেকে ‘দরকার আছে’ বলে কোথাও যান। জানিয়ে যান সেদিনই ফিরতে চেষ্টা করবেন, না হলে পরের দিন ফিরবেন। শনিবার পর্যন্ত আজিম না ফেরায় গোপাল বিশ্বাস ব্যারাকপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন।
পুলিশকে গোপাল জানিয়েছেন, সেই থেকে তিনি সংসদ সদস্যের দুটি ফোনই বন্ধ পাচ্ছেন। মালপত্র তার বাড়িতে রেখে কার্যত খালি হাতেই তিনি বেরিয়ে গিয়েছেন।
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস এদিন সন্ধ্যায় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের দপ্তরে গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বাবার নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন।
গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, সংসদ সদস্যের দুটি ফোন কখনো বন্ধ, কখনো খোলা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।
খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহ-৪ আসন থেকে ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪-এ জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কালীগঞ্জ উপজেলার সভাপতি আনোয়ারুল আজিম। এলাকায় যথেষ্ট প্রভাবশালী ও জনপ্রিয় নেতা তিনি।