তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিয়ে তারেক রহমান বিএনপিকে একটি আন্ডারগ্রাউন্ড দলে রূপান্তরিক করেছে। একই সাথে এই দলটি সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আর সেটার সামাজিক ও রাজনৈতিক যন্ত্রণা ভোগ করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা।
মন্ত্রী মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরিষদ আয়োজিত ‘বিএনপি-জামায়াতের মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অগ্নিসন্ত্রাসের প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে মানববন্ধন’ শীর্ষক সমাবেশে এসব কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত তাদের জনসমর্থন হারিয়ে এখন পলাতক দল। তারা গুপ্ত স্থান থেকে আন্দোলনের ডাক দেয় আর গাড়ি-ঘোড়াতে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে। প্রকৃত অর্থেই বিএনপি-জামায়াত এখন আন্ডারগ্রাউন্ড সংগঠনে রূপান্তরিত হয়েছে। পুলিশ কিম্বা আওয়ামী লীগ বিএনপির কার্যালয়ে তালা লাগায়নি, সরকার তালা লাগায় নাই, তারা নিজেরাই তালা লাগিয়েছে। তাদের অফিসে তালা খোলার জন্য যারা একটা মানুষ খুঁজে পায় না, তারা আবার সরকার পতন ঘটাবে!’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘অনেক বিএনপি নেতার সাথে বিমানবন্দরে, ট্রেন স্টেশনে, বিয়ে-শাদীতে আমাদের দেখা হয়, তখন তাদেরকে জিজ্ঞাস করি, ভাই আপনারা কি করছেন? তারা বলে, সব উনার ইচ্ছা, লন্ডনে যে আছেন উনার ইচ্ছা। অর্থাৎ বিএনপিকে ধ্বংস করার জন্য এক তারেক রহমানই যথেষ্ট আর কারও দরকার নাই। পৃথিবীর কোথাও গত দুই-তিন দশকে রাজনীতির দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য গুপ্ত স্থান থেকে চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়নি, যেটি বিএনপি আজকে করছে। এই বিএনপির জন্য আবার কেউ কেউ মায়াকান্না করে।’
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী শ্লোগান দেয় ‘আল্লাহ’র আইন চাই, সৎ লোকের শাসন চাই।’ আর আজকে ফিলিস্তিনে হাজার হাজার নারী-শিশুসহ মুসলমানদের যে হত্যা করা হচ্ছে তার কোনো প্রতিবাদ তারা করে নাই। বিএনপিও করে নাই। বিএনপি-জামায়াত আজ শুধু ইসলামের শত্রু নয়, মানবতার শত্রুতে রূপান্তরিত হয়েছে। কারণ ফিলিস্তিনে শুধু মুসলমানরাই নয়, বহু খ্রিস্টানও ইসরাইলি বাহিনীর হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে, ৭টি গির্জা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। আর এটির বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী আর বিএনপি কোনো কথা বলে না। যারা নির্যাতন-হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করছে, বিএনপি-জামায়াত তাদের পক্ষ অবলম্বন করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও নরম সুরে বলেছে এইভাবে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু বিএনপি এই কথা বলতেও ব্যর্থ হয়েছে। এরা আবার রাজনীতি করে।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি পীর সাহেবদের সম্মান করি, আমার বাপ-দাদাও সম্মান করতেন, আমিও করি, কারণ এই দেশে ইসলাম কায়েম হয়েছে পীর-আউলিয়াদের মাধ্যমে। দুয়েকজন পীর সাহেব সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলে, কিন্তু ফিলিস্তিনে যে আজকে মানুষ হত্যা হচ্ছে সেটির বিরুদ্ধে মিছিল পর্যন্ত করতে পারে নাই। তারা একটি ঘুষির প্রতিবাদে সারাদেশে মিছিল করে, আর ঐদিকে যে হাজার হাজার মানুষকে, নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে সেটির জন্য একটা মিছিল বের করতে পারে না। আমি প্রার্থনা করি এই পীর সাহেবদের যেন আল্লাহ হেদায়েত করেন।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত ভেবেছিলো নির্বাচন আমরা করতে পারবো কি পারবো না। এখন বুঝতে পেরেছে যে, উৎসবমুখর পরিবেশে জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণে নির্বাচন হয়ে যাচ্ছে। যারা বাতাস দিচ্ছিল তারা বাতাসটা সরিয়ে নিচ্ছে। যারা তলে তলে তাল দিচ্ছিল তারাও বুঝতে পেরেছে এই অপদার্থ বিএনপিকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। আমরা যদি আবার সরকার গঠন করতে পারি এই আগুন সন্ত্রাসীদের সমূলে উৎপাটন করা হবে। সন্ত্রাসীদের সাথে, আন্ডারগ্রাউন্ড দলের সাথে আলোচনা হতে পারে না, আলোচনা হয় যারা নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতি করে তাদের সাথে। আমি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের রাজপথে থাকতে এবং কোনো আগুন সন্ত্রাসীকে বা সন্ত্রাসের পরিকল্পনাকারীকে দেখলে পুলিশে সোপর্দ করতে আহ্বান জানাবো।’
সবুজবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাসের সভাপতিত্বে ও স্বাধীনতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন টয়েলের সঞ্চালনায় সমাবেশে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য এড. বলরাম পোদ্দার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিরাজ হোসেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদের সভাপতি গনি মিয়া বাবুল, আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ করিম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি মানিক লাল ঘোষ, স্বাধীনতা পরিষদের সভাপতি জিন্নাত আলী খান, সহ-সভাপতি ফায়েকুজ্জামান ফরিদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
এমএ/