ঢাকা ২১ আষাঢ় ১৪৩১, শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪

নাশকতার ভয়াবহতা বাড়ছে

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৫:৪২ পিএম
আপডেট: ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:২৯ এএম
নাশকতার ভয়াবহতা বাড়ছে
তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুন। ছবি : খবরের কাগজ

জাতীয় নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ঢাকাসহ সারা দেশে নাশকতার ভয়াবহতাও তত বাড়ছে। এসব নাশকতায় প্রাণ যাচ্ছে অনেকের। যার সর্বশেষ নজির, গতকাল মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ভোরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে ট্রেনে আগুনের ঘটনায় নারী-শিশুসহ চারজনের মৃত্যু। এ ছাড়া গতকালের হরতালে রাজধানীতে ও চট্টগ্রামে দুটি বাসে আগুন দেওয়া হয়েছে। গাইবান্ধায় পাঁচটি যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ম্যারাথন অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না নাশকতা। 

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো দেশব্যাপী হরতাল ও অবরোধের ডাক দেয়। এরপর থেকেই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যানবাহনে ঘটে অগ্নিসংযোগের ঘটনা। বিএনপি ও জামায়াতের অবরোধ ও হরতাল ঘোষণার পর ঢাকা থেকে কোনো দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করছে না। 

রেল পুলিশ সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবরের পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ছোট-বড় ৫২টি ঘটনা ঘটেছে। আর দিনে দিনে এ ঘটনাগুলোর ভয়াবহতা বেড়েছে। প্রথমদিকে হালকা ইটপাটকেল মারা, টায়ার জ্বালানোর মধ্যে থাকলেও পরে তা অগ্নিসংযোগে গড়ায়। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার গাজীপুরের বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া নীলফামারীর ডোমারে রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলে তারা। তার কয়েক দিন আগে গাজীপুরের রেলে আগুন দিয়ে বিক্ষোভ করে দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ গেলে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এর আগে গত ১৬ নভেম্বর টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনে আগুন দেয়। এতে ৩টি বগি পুড়ে যায়। এবার রাজধানীতে ট্রেনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটল। এতে মা ও তার শিশুপুত্রসহ চারজনের মৃত্যু হয়েছে। 

এ বিষয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (রেলওয়ে) মো. দিদার আহমেদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘ট্রেনের নিরাপত্তার জন্য আমরা কাজ করছি। নাশকতাকারীদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।’ ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ফেরদৌস আহামেদ বিশ্বাস জানান, ঘটনার তদন্ত অব্যাহত আছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল মঙ্গলবার ভোর ৪টা ৫৪ মিনিটে তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেনে আগুন লাগার সংকেত পেয়ে থামে। আগুন লাগার বিষয়টি ট্রেনের চালক বুঝতে পারেননি। ট্রেনটি তেজগাঁও স্টেশনে আসার পর স্টেশন মাস্টারের সিগন্যাল পেয়ে তিনি ট্রেনটি থামান। আগুনে মা ও তার শিশুপুত্রসহ চারজন পুড়ে মারা গেছেন। ট্রেনটির ছ, জ ও ঝ মোট তিন বগি পুড়ে যায়। ট্রেন থেকে নিহতদের মরদেহ উদ্ধারের পর তেজগাঁও স্টেশনে ১ ঘণ্টার মতো অবস্থান করে কমলাপুরে চলে যায়। ট্রেনটিতে মোট ১৪টি বগি ছিল। ট্রেনটি বর্তমানে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে রাখা হয়েছে। বগিগুলো আলাদা করা হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী তেজগাঁও রেলস্টেশনে চায়ের দোকানদার শামসুল ইসলাম জানান, ট্রেনটি তেজগাঁও আসার পর বগি থেকে কালো ধোঁয়া বের হচ্ছিল। এ সময় স্টেশনমাস্টার সংকেত দিলে সেটি থামে। এটি তেজগাঁওয়ে থামার কথা ছিল না। সবুজ নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আগুনের আতঙ্কে যাত্রীরা চিৎকার করতে থাকেন। অনেকেই লাফ দিয়ে নেমে আসেন। 

তেজগাঁও স্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার মো. পর্বত আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি ৪টা ৫০ মিনিটে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন ছেড়ে আসে। তেজগাঁও স্টেশনে পৌঁছায় ৪টা ৫৪ মিনিটে। যেসব ট্রেন তেজগাঁও স্টেশনে থামে না সেগুলোর জন্য আমরা সবুজ বাতি জ্বালিয়ে পার হওয়ার সংকেত দিই। কিন্তু বগিতে আগুন দেখে ট্রেন থামানোর সংকেত দেওয়া হয়।’

গতকাল তেজগাঁও স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করছেন। পাশাপাশি স্টেশনের আশপাশে থাকা বিভিন্ন সিসি ক্যামেরা ফুটেজ তারা সংগ্রহ করেছেন। আগুনের আতঙ্কে গতকাল স্টেশনে কম লোকজন দেখা গেছে। তবে কিছু উৎসুক মানুষ স্টেশনে গেলে তাদের সেখান থেকে পুলিশ সরিয়ে দেয়। রেল পুলিশের পাশাপাশি থানা পুলিশ, র‌্যাব, পিবিআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থা আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করছে। 

প্রত্যক্ষদর্শী আল মদিনা স্টোরের দোকানি জানান, এই স্টেশনে সব ট্রেন থামে না। মোহনগঞ্জের ট্রেনও থামার কথা ছিল না। সব যাত্রী দ্রুত নেমে পড়েন। যারা বের হতে পারেননি তারা আগুনে পুড়ে গেছেন। 

ভ্রাম্যমাণ এক বাদাম বিক্রেতা জানান, ভোরে ট্রেনটি যখন থামে, তখন সবাই চিৎকার করতে থাকেন। ফায়ার সার্ভিস দ্রুত স্টেশনে আসার কারণে আগুন অন্য বগিতে ছড়াতে পারেনি। 

তদন্তে দায়িত্ব পালনকারী পিবিআইর এসপি মিজানুর রহমান বলেন, ‘সিসি ক্যামেরা দেখে আমরা নাশকতাকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছি। বিমানবন্দরের একাধিক ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে কয়েকজনকে সন্দেহভাজন মনে হয়েছে।’
 
ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া) শাহজাহান শিকদার জানান, আগুনের খবর আসে ৫টা ৮ মিনিটে। ৫টা ১৫ মিনিটে তারা আগুন নেভানোর কাজ শুরু করেন। ১ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। 

এদিকে আহতদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যারা অবরোধ-হরতাল দিয়েছে, তারাই রেলে আগুন দিয়েছে। আমি মনে করি, যারা অবরোধ-হরতাল দিচ্ছে তারাই এই নাশকতার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও তারা এভাবে ট্রেনে নাশকতা করেছিল।’

তিনি বলেন, ‘গাজীপুরের লাইন যারা কেটে ফেলেছিল, সেখানেও একজনকে হত্যা করা হয়েছে। আজকেও যে ঘটনাটি, এটিকেও আমি সরাসরি হত্যা বলতে চাই। হরতাল ও অবরোধকারীদের একটি অংশ এ কাজ করেছে বলে আমি মনে করি। কেবল একটি অংশ নয়, এটি কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের অংশ। তার অংশ হিসেবেই তাদের যারা অনুসারী রয়েছে, তারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে মনে করে।’

বিএনপির অধিকাংশ নেতাই জেলে রয়েছেন। তারপরও কাদের নির্দেশে এ ধরনের নাশকতা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের জবাবে ডিএমপি কমিশনার বলেন, যারা হরতাল করছে, যারা জ্বালাও-পোড়াও করছে, নাশকতা করছে, বিদেশি নেতাদের নির্দেশে এই দেশে তাদের যে এজেন্ট রয়েছে, অনুসারীরা রয়েছে, তারাই যে এটা করছে তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।

তিনি বলেন, ‘যারা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন, তারা কোনো অবস্থাতেই পার পাবে না। তারা অতীতেও পার পায়নি। ট্রেনে, বাসে যেসব জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে, এর প্রত্যেকটি ঘটনায় আমরা প্রত্যেককে শনাক্ত করতে পেরেছি। তারা স্বীকারও করেছে, তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে, তাদের রাজনীতি টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে। আমাদের সতর্কতা ছিল। তার পরেও যেহেতু এই ঘটনা ঘটেছে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সিআইডি, ডিবি এবং রেলওয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে যেন পরবর্তী সময়ে আর এ ধরনের ঘটনা না ঘটতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আহত একজনের কাছে যেটুকু জানতে পেরেছি, ভেতরে থাকা লোকজনই আগুন দিয়েছে। সে নিজেও সেখানে ছিল। সে দেখেছে সিটের ভেতরে প্রথমে আগুন দিয়েছে। পরে সেই আগুন ধীরে ধীরে ছড়িয়ে গেছে। যেহেতু ভোর ছিল তাই অনেকেই ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল। আমরা দেখেছি একজন মা তার সন্তানকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলেন, হয়তো বাঁচার চেষ্টা করেছিলেন।’

ডিএমপি কমিশনার বলেন, মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ভোর ৫টার সময় ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে পৌঁছায়। সেখান থেকে কমলাপুরের উদ্দেশে যখন রওয়ানা করে বনানী-কাকলীর কাছাকাছি এলে ‘জ’ বগির ভেতরে যাত্রীরা প্রথমে আগুন দেখতে পান। অনেকেই লাফ দিয়ে বগি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তবে চারজনকে পুড়িয়ে সেখানে হত্যা করা হয়েছে। এর মধ্যে এক মা ও তার ছেলে ইয়াসিনকে শনাক্ত করা গেছে। বাকি দুজনকে এখনো শনাক্ত করা যায়নি। তাদের শনাক্তের চেষ্টা করছে সিআইডি। বীভৎসভাবে পুড়ে যাওয়ায় তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাদের ডিএনএ সংগ্রহ করা হচ্ছে যেন পরবর্তী সময়ে শনাক্ত করা যায়। এই ঘটনায় কমলাপুরের ঢাকা রেলওয়ে থানায় মামলা করা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা। 

রাজধানীতে বাসে আগুন

এদিকে গতকাল বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল চলাকালে রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় একটি যাত্রাবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলেও কাউকে আটক করতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস জানায়, দুপুর ১টার দিকে গুলিস্তানের জিপিওর সামনে মালঞ্চ পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মিডিয়া) শাহজাহান শিকদার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। 

চট্টগ্রামে বাসে আগুন

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার রাত আড়াইটার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বাদামতলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। চন্দনাইশ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার সাবের আহমদ জানান, আগুন লাগার ৫০ মিনিটের মধ্যে নেভানো হয়। বাসের সব আসন পুড়ে যায়। তবে কীভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।

গাইবান্ধায় ৫ যানবাহন ভাঙচুর

এদিকে দুপুরে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে একটি যাত্রীবাহী বাস, দুটি পণ্যবাহী ট্রাক ও দুটি ড্রাম ট্রাক ভাঙচুর করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া থেকে গাইবান্ধাগামী ফরহাদ স্পেশাল নামের যাত্রীবাহী একটি বাস থামায় পিকেটাররা। পরে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে তারা বাসে ভাঙচুর চালায়। তবে এতে কেউ আহত হননি। এরপর একই স্থানে রংপুরগামী দুটি পণ্যবাহী ট্রাক ও দুটি ড্রাম ট্রাকে ভাঙচুর চালানো হয়। এ সময় ট্রাকের চালকরা নেমে গিয়ে রক্ষা পান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। পুলিশকে লক্ষ্য করে পিকেটাররা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। 

বিষয়টি নিশ্চিত করেন পলাশবাড়ী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) লাইছুর রহমান। তিনি জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ কয়েকটি টিয়ারশেল ছোড়া হয়।

মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অনন্য অবদান রয়েছে: আইজিপি

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:১৪ এএম
আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:১৪ এএম
মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অনন্য অবদান রয়েছে: আইজিপি
ছবি: সংগৃহীত

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অনন্য অবদান রয়েছে। শুধু মুক্তিযুদ্ধেই নয়, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ নিয়ন্ত্রণেও পুলিশের রয়েছে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন।’

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে সাবেক আইজিপি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক আর্ট গ্যালারি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।

আইজিপি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৎপরতায় মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তারই একটি অনন্য প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর স্থাপন।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য বিভিন্ন স্মারক সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি। যে কেউ এ সংগ্রহশালায় স্বাধীনতা যুদ্ধের নির্ভরযোগ্য তথ্য দিতে পারবেন।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ইমেরিটাস অধ্যাপক হাশেম খান। তিনি বলেন, শুধু ‘থ্রি নট থ্রি’ রাইফেল দিয়ে বাঙালি পুলিশ সদস্যরা, আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তান বাহিনীকে রুখে দিয়েছিলেন। মর্টার, ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনী ভাবতে পারেনি ‘থ্রি নট থ্রি’ রাইফেল দিয়ে তাদের মোকাবিলা করা হবে।’

আসকের প্রতিবেদন ৬ মাসে মামলা-নির্যাতন ও হয়রানির শিকার ১৪৫ সাংবাদিক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৭ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৮ পিএম
৬ মাসে মামলা-নির্যাতন ও হয়রানির শিকার ১৪৫ সাংবাদিক
ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতির পরিসংখ্যানগত প্রতিবেদনে জানা যায়, বিভিন্নভাবে নির্যাতন, হয়রানি, হুমকি, মামলা ও পেশাগত কাজ করতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হয়েছেন ১৪৫ জন সাংবাদিক। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে গত ৬ মাসে অন্তত ২ জন নারীসহ ৮ জনের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংগঠন- আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৬ মাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, সীমান্তে হত্যা, সাংবাদিক নিপীড়নসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা প্রদানের মতো ঘটনার মধ্য দিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটে চলেছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) প্রকাশিত আসকের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্নার সই করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংখ্যাগত এই প্রতিবেদনটি ১০টি জাতীয় দৈনিক ও বিভিন্ন অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ ও আসকের নিজস্ব সূত্র থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।  

গত ৬ মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা, সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতাসহ বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ৪৪০টি। এতে নিহত হয়েছেন ৪১ জন এবং আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৭৩৬ জন। এ সময় কারা হেফাজতে মারা গেছেন ৪৬ জন। এর মধ্যে কয়েদি ২০ জন এবং হাজতি ২৬ জন। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে সর্বোচ্চ ১৩ জন হাজতি এবং ১০ জন কয়েদির মৃত্যু হয়।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৩ সালের জানুয়ারি-জুন মাসে সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন ১০ জন, আহত ১৪ জন। চলতি বছরের ৬ মাসে সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৩ বাংলাদেশি নাগরিক। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ১১ জন নাগরিক। অন্যদিকে মায়ানমার সীমান্তে মর্টার শেলের আঘাতে ১ জন বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশে আশ্রিত মায়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ১ জন নিহত হন। 

বছরের প্রথম ৬ মাসে ২৭টি ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ২০টি বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর, ৫টি বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও ২১টি প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ১টি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। 

এ সময়ে যৌন হয়রানি ও সহিংসতা, ধর্ষণ ও হত্যা, পারিবারিক নির্যাতন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতনসহ নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। গত ৬ মাসে যৌন হয়রানিকেন্দ্রিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৪৬ জন নারী-পুরুষ, যাদের মধ্যে হামলার শিকার হয়েছেন ১১৩ জন নারী ও ৩৩ জন পুরুষ। এর মধ্যে বখাটেরা লাঞ্ছিত করেছে ১০১ জন নারীকে, বখাটেদের উৎপাতকে কেন্দ্র করে সংঘাতে আহত হয়েছেন ৩৬ জন। যৌন হয়রানির কারণে ১ জন নারী আত্মহত্যা করেছেন। অন্যদিকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটেদের দ্বারা ৪ জন পুরুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। 

ধর্ষণের শিকার হয়েছেন মোট ২৫০ নারী। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৪ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ৩ জন। এ ছাড়া ৫৮ জন নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২৬৯ জন নারী। এর মধ্যে ৮৪ জন নারীকে তার স্বামী হত্যা করেছেন।  পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা হয়েছেন ৯৪ জন নারী। 

এ সময়ে যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ৩৩ জন নারী। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ১২ জনকে এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৪ জন নারী। এ সময়কালে মোট ১০ জন গৃহকর্মী বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৫ জনের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে।  

দেশের বিভিন্ন স্থানে গত ৬ মাসে হত্যার শিকার হয়েছে ২৩৯ শিশু এবং ৩ জন শিশুকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ৫০ শিশু, বিভিন্ন সময়ে মোট ৭৭ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ছাড়া গত ৬ মাসে গণপিটুনির ঘটনায় নিহত হন মোট ৩২ জন। এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধে আইনের শাসন ও জবাবদিহি প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যকীয় বলে মনে করে আসক। অন্যথায় বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা পেয়ে যাবে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনা বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

তিথি/এমএ/

৮ জেলায় বন্যার পরিস্থিতির অবনতি

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১১:৩০ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১১:৩০ পিএম
৮ জেলায় বন্যার পরিস্থিতির অবনতি
ছবি : খবরের কাগজ

টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানির কারণে সিলেট, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও ফেনীতে বন্যা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন এসব জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বানভাসি মানুষের সংখ্যা। পাশাপাশি আশ্রয়, খাবার ও বিশুদ্ধ পানি নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষ।

আমাদের সিলেট ব্যুরো ও প্রতিনিধিরা জানান-

সিলেট ব্যুরো: সিলেটে ধীরগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে নদ-নদীর পানি। তবে বিভিন্ন উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীবেষ্টিত উপজেলাগুলোর নতুন এলাকা বেশি প্লাবিত হচ্ছে। 

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি ছয় স্থানে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, সিলেটে গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১৮ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সময় ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। 

সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, ১ হাজার ১৬০টি গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬ লাখ ১৭ হাজার ৭৯৩ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত রয়েছে। জেলায় ৬৪৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে ৮ হাজার ৯৫১ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।

কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি 

কুড়িগ্রামে বেড়েই চলছে ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদ-নদীর পানি। এর ফলে বৃহসপতিবার উলিপুর, সদর, নাগেশ্বরী উপজেলার বেশ কিছু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। এতে নতুন করে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত পাঁচ হাজার পরিবারের মানুষ। এ নিয়ে জেলায় বন্যায় আক্রান্ত রয়েছে ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চরবালাডোবার মানুষ। বন্যাকবলিতদের অনেকে বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। তবে তাদের মাঝে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, আরও দুই থেকে তিন দিন ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এ কারণে বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে। 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, বানভাসিদের মধ্যে শুকনো খাবার ও চাল বিতরণ করা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। 

ফেনীতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত

ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে প্রবাহিত হলেও ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। দুই উপজেলার এখনো অন্তত দুই হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। এদিকে বসতবাড়ি থেকে পানি নামলেও তলিয়ে আছে ফসলি জমিসহ রাস্তাঘাট। অন্যদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে বন্যার ক্ষয়ক্ষতির দৃশ্য।

গতকাল বুধবার রাতে সিলোনিয়া নদীতে বাঁধ ভেঙে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে জানায় জেলা প্রশাসন। এর আগে গত সোমবার রাতে ফেনীর মুহুরী ও কহুয়া নদীর আটটি স্থান ভেঙে পরশুরাম ও ফুলগাজীর ২৮ গ্রাম প্লাবিত হয়।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কাশেম বলেন, বেড়িবাঁধের কয়েকটি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। পানি কমলে ভাঙনস্থলের মেরামতকাজ শুরু হবে।

গাইবান্ধার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত 

গাইবান্ধায় জেলার সব নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার নদী-তীরবর্তী কামারজানি, মোল্লারচর, গিদারি, ফুলছড়ি উপজেলার কঞ্চিপাড়া, এরেন্ডাবাড়ি, ফজলুপুর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া তারাপুর, হরিপুর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় গাইবান্ধা পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি তিস্তামুখঘাট পয়েন্ট, ঘাঘটের পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্ট, করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চকরহিমাপুর পয়েন্টে ও তিস্তার পানি সুন্দরগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন কাউনিয়া পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক জানিয়েছেন, নদ-নদীর পানি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়লেও আপাতত বড় বন্যার আশঙ্কা নেই। 

সিরাজগঞ্জে ৪০টি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ

সিরাজগঞ্জে যমুনা করতোয়া, হুরাসাগরসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এদিকে যমুনার পানি বৃদ্ধির ফলে কাজীপুর, জেলা সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজেলার ৪০টি ইউনিয়নে পানি প্রবেশ করেছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় চরাঞ্চলের ফসলি জমি প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ফলে স্থানীয়দের মাঝে বন্যা-আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ছাড়া পানির তীব্র স্রোতে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর ও কৈজুরী দুটি ইউনিয়নে নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ফলে নদীতীরের মানুষের নির্ঘুম রাত কাটছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান বলেন, আরও কয়েক দিন যমুনা নদীর পানি বাড়বে। এতে করে ছোট থেকে মাঝারি বন্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

টাঙ্গাইলে তলিয়ে গেছে চরাঞ্চলের নিচু এলাকা

টাঙ্গাইলের সব কয়টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তার মধ্যে ঝিনাই নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে পানিতে তলিয়ে গেছে নদী-তীরবর্তী চরাঞ্চলের নিচু এলাকা। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারণে কয়েকটি উপজেলায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। 

নেত্রকোনার শতাধিক গ্রাম জলমগ্ন

১০ দিন পর পুনরায় বন্যার ঝুঁকিতে নেত্রকোনার কলমাকান্দা, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা, সদর ও খালিয়াজুরী উপজেলার মানুষ। এর ফলে এসব উপজেলার শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ৩০ হাজার মানুষ। কোথাও কোথাও সড়ক তলিয়ে গিয়ে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ। 

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান জানান, প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বেড়ে গেছে। 

নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, শুকনো খাবার, ওষুধ বরাদ্দ করা হয়েছে। ৮৫টি মেডিকেল টিম দুর্গত এলাকায় কাজ করছে।

জামালপুরে পানিবন্দি ১০ হাজার 

জামালপুরে যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, জিঞ্জিরামসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর, মেলান্দহ ও মাদারগঞ্জ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

বন্যার পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের দুর্ভোগও বাড়তে শুরু করেছে। এদিকে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কাঠারবিল এলাকায় দেওয়ানগঞ্জ-সানন্দবাড়ি আঞ্চলিক সড়কের ৩০ মিটার অংশ বন্যার পানির স্রোতে ভেঙে গেছে। এ ছাড়া একই উপজেলার দেওয়ানগঞ্জ-খোলাবাড়ি সড়কে একটি সেতুর সংযোগ সড়ক ভেসে যাওয়ায় খোলাবাড়ি ও গাইবান্ধা জেলার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। 

এক মাসের মধ্যে মেট্রোরেলের ভাড়া বাড়ছে না

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১০:২৭ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১০:২৭ পিএম
এক মাসের মধ্যে মেট্রোরেলের ভাড়া বাড়ছে না
ছবি : সংগৃহীত

মেট্রোরেলে ভ্যাট বসানো নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সদস্যদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি আগামী এক মাসের মধ্যে জানাবে কীভাবে মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর ভ্যাট বসানো হবে। এতে করে আগামী এক মাসের মধ্যে ভাড়া বাড়ছে না মেট্রোরেলের। 

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বেলা আড়াইটায় সভা হয় এনবিআর ও ডিএমটিসিএলের মাঝে। জানা যায়, মূলত এই সভা ছিল মেট্রোরেলের ভাড়ার ওপর ভ্যাট আরোপ কীভাবে করা হবে- তা নিয়ে। 

এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা আজ এনবিআরের সঙ্গে যে বৈঠক করেছি, তাতে মেট্রোরেলের ভাড়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এনবিআর ও মেট্রোরেল সদস্যদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা এক মাসের মধ্যে জানাবে মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট কীভাবে ইনক্লুড করা যায়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সড়ক বিভাগ বা ডিএমটিসিএল কিন্তু কখনো বলিনি এনবিআরকে ভ্যাট দেব না। আমরা ভ্যাট দিতে চাই, তবে এ ভ্যাট ইনক্লুড করার পর যাত্রীসাধারণের ওপর যেন চাপ না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এসব বিষয় নিয়েই মূলত আলোচনা হয়েছে আজ।’ 

এর আগে সোমবার থেকেই মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর বর্তমানে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট যুক্ত হয়েছে। সেই অনুযায়ী সেদিন থেকেই মেট্রোরেলের টিকিটের মূল্যের সঙ্গে অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ অর্থ দেওয়ার কথা যাত্রীদের। তবে তেমন কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এর আগে গত ৪ এপ্রিল এনবিআর চিঠি দিয়ে ডিএমটিসিএলকে জানায়, জুলাই থেকে মেট্রোরেলের সেবা ও টিকিটে মূসক পরিশোধ করতে হবে। এরপর ডিএমটিসিএলসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সামাজিক সংগঠন মেট্রোরেলে ভ্যাট না বসানোর অনুরোধ করে। মেট্রোরেলের টিকিটের ওপর ভ্যাট মওকুফের সময়সীমা ছিল ৩০ জুন পর্যন্ত। ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর থেকে ওই সুবিধা দিচ্ছে এনবিআর। 

মূলত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত (এসি) ট্রেনের টিকিটের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ আছে। একইভাবে মেট্রোরেলের ভাড়া থেকেও ভ্যাট আদায় করতে কঠোর অবস্থানে আছে এনবিআর। যাত্রীদের বিদ্যমান ভাড়া থেকেই ভ্যাট পরিশোধ করতে বলেছে প্রতিষ্ঠানটি। ভ্যাট পরিশোধের পর বাকি টাকা পাবে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বর্তমান ভাড়ার সঙ্গে ভ্যাট যোগ করে এখনই ভাড়া বাড়াতে রাজি না ডিএমটিসিএল। এ ক্ষেত্রে তারা ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ আরও বাড়িয়ে যা ভাড়া আছে তাই রাখতে আগ্রহী। 

এদিকে মেট্রোরেলের টিকিটের বর্তমান ভাড়া থেকে ভ্যাট হিসেবে টাকা কেটে সেটা এনবিআরকে দিলে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের আয় কমে যাবে বলে এ সিদ্ধান্তে আপত্তি জানিয়েছেন ডিএমটিসিএলের একাধিক কর্মকর্তা। হিসাব অনুযায়ী, বর্তমান ভাড়ার সঙ্গে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট যোগ করা হলে যাত্রীদের ১০০ টাকার টিকিটের দাম বেড়ে হবে ১১৫ টাকা। অন্যদিকে ভ্যাটের টাকা যাত্রীর বর্তমান ভাড়া থেকে কেটে নেওয়ারও আইনি সুযোগ আছে। ১০০ টাকার টিকিট থেকে ১৫ টাকা এনবিআরকে দিতে হবে, সে ক্ষেত্রে ভাড়া না বাড়লেও মেট্রোরেলের আয় কমবে।

সপ্তাহে দুই দিন ঢাকায়, বাকি সময় সারা দেশ ঘুরবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪, ১০:২৫ পিএম
সপ্তাহে দুই দিন ঢাকায়, বাকি সময় সারা দেশ ঘুরবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন নিজের কাজের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে বলেছেন, ‘সপ্তাহে সোম ও মঙ্গলবার ঢাকা থাকব আর বাকি দিনগুলো সারা দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা পরিদর্শন করব। জেলা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে উন্নত করতে পারলে এবং সেখানে রোগীর যথাযথ চিকিৎসা হলে ঢাকা শহরে রোগীদের ভিড় হবে না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। শৈশব থেকেই যদি আমরা তাদের মানসিক বিকাশ ঘটাতে পারি, নিঃসন্দেহে তারা ভবিষ্যতে দেশের কাণ্ডারি হবে।’ 

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সাসাকাওয়া অডিটোরিয়ামে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ কর্মসূচি’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. বেগম রোকেয়া সুলতানা বলেন, ‘শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে আইসিডিডিআরবির কাজ প্রশংসনীয়। শিশুরা যে পরিবেশে বেড়ে উঠছে তা বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

আইসিডিডিআরবির মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য বিভাগের (এমসিএইচডি) ইমেরিটাস বিজ্ঞানী ড. জেনা দেরাখশানি হামাদানি বলেন, ‘সরকার আইসিডিডিআরবির সঙ্গে অংশীদারত্বে ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার অধীনে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে শৈশব বিকাশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। এর উদ্দেশ্য অভিভাবকদের জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়ানো এবং শিশুর সামগ্রিক বিকাশ সম্পর্কে প্রচার করা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় আশা করি, আমরা দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিকে কার্যক্রমটি কার্যকরভাবে সম্প্রসারণ করতে পারব এবং একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে সহায়তা করতে পারব।’

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশেষ করে বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচের প্রায় ২৫ কোটি শিশু দারিদ্র্য, পুষ্টিহীনতা এবং অপর্যাপ্ত অভিভাবকত্ব দক্ষতার কারণে তাদের সম্পূর্ণ বিকাশের সম্ভাবনা অর্জনে ব্যর্থ হয়। শিশুদের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি প্রাথমিক শৈশব উদ্দীপনা কর্মসূচি বাস্তবায়ন এবং সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, ডিজিএইচএসের বিভিন্ন লাইন ডিরেক্টর, সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এবং শিশু বিকাশ উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার প্রতিনিধিসহ অনেকে।