![ঈদযাত্রা শুরু হচ্ছে কাল](uploads/2024/04/03/1712129856.train-travel.jpg)
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) বিকেল থেকে রাজধানীর বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেলওয়ে স্টেশনে ঘরমুখী মানুষের ঢল নামবে। আগামী ১১ এপ্রিল পবিত্র ঈদুল ফিতরের দিন ধরে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বাস ও লঞ্চ টার্মিনাল এবং রেল কর্তৃপক্ষ। এদিকে বিআরটিএ জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় দুই চাকার যান চলাচলে কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না। পাশাপাশি মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুতে রাখা হচ্ছে আলাদা লেন। অন্যদিকে সড়কপথ, রেলপথ ও নৌপথে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
রাজধানীর বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ঘুরে জানা যায়, প্রথম সারির কোম্পানির বাসগুলোর টিকিট বিক্রি প্রায় শেষ। টিকিট বিক্রির অনলাইন প্রতিষ্ঠান সহজ ডটকমের সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি বাসে গড়ে ১০-১২ সিটের টিকিট অনলাইনে বিক্রি করা হচ্ছে। বাসপ্রতি দুই-একটি সিট বাকি আছে। তবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় সারির অনেক বাসে টিকিট এখনো অবিক্রীত রয়ে গেছে।
রাজধানীর গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে যারা অগ্রিম টিকিট কিনতে এসেছিলেন, তাদের কয়েকজন বেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। এদের মধ্যে একজনের নাম মাসুদ আলম। তিনি বলেন, ‘আমি গাইবান্ধা যাব। সাধারণত ননএসি বাসের টিকিটের দাম ৬০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকার মধ্যে হয়। কিন্তু আমার কাছে চাইছে, সাড়ে ৮০০ টাকা।’ এমন অভিযোগ রয়েছে, উত্তরবঙ্গগামী বাসের টিকিটের ক্ষেত্রেও। তবে পরিবহন ব্যবস্থাপকরা এই অভিযোগ মানতে নারাজ।
গাবতলী আন্তজেলা বাস টার্মিনালে বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন বুথের ফিল্ড সুপারভাইজার বাবুল হোসেন বলেন, ‘কোনো বাসমালিক যেন অতিরিক্ত ভাড়া না নেন, সে দিকে আমরা লক্ষ্য রাখছি। তবে পরিবহনগুলো কিছু টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছে। এটি আমিও দেখেছি। এ নিয়ে যাত্রীরা কিন্তু খুব বেশি অভিযোগও করছেন না।’
ঈদযাত্রা উপলক্ষে গতকাল থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। চলবে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ঢাকায় বিআরটিসির ৬০০টি বাস নিয়মিত চলাচল করে। এ বাসগুলোর মধ্যে ৫৫০টি বাস ঈদ সার্ভিসে যুক্ত হবে। অর্থাৎ ঈদযাত্রা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকা থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে এই ৫৫০টি বাস পরিচালনা করবে সংস্থাটি।
তার মধ্যে বিআরটিসির মতিঝিল ডিপোতে রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট রুটের টিকিট মিলবে।
কল্যাণপুর ডিপোতে আরিচা, পাটুরিয়া, ভাঙ্গা, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল এবং গাবতলী ডিপোতে রংপুর, বরিশাল, খুলনা, গোপালগঞ্জ ও পাটুরিয়া রুটের টিকিট মিলবে। এ ছাড়া জোয়ার সাহারা ডিপোতে রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নওগাঁ, বরিশাল ও বগুড়া এবং মিরপুর ডিপোতে রংপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, মাওয়া, পাটুরিয়া, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গোপালগঞ্জ, ভাটিয়াপাড়া ও ময়মনসিংহ রুটের টিকিট মিলবে। তাছাড়া মোহাম্মদপুর ডিপোতে রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, নওগাঁ, বগুড়া, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, পাটুরিয়া, বরিশাল ও গোপালগঞ্জ রুটের এবং যাত্রাবাড়ী ডিপো থেকে রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, ভাঙ্গা, ফরিদপুর ও বরিশাল রুটের টিকিট মিলবে।
এদিকে বিআরটিএ জানিয়েছে, ঈদযাত্রায় দুই চাকার যান চলাচলে কোনো বিধিনিষেধ থাকছে না। নিজস্ব মোটরসাইকেলে আন্তজেলা রুটে চলাচল করা যাবে। এমনকি পদ্মা সেতুও পারি দেওয়া যাবে। তবে কোনো রাইড শেয়ারিং গাড়িতে চলাচল করা যাবে না। করলেই ব্যবস্থা নেবে বিআরটিএ।
বিআরটিএ আরও সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত ২০ লাখ ৯৩ হাজার যানবাহনের মধ্যে বাইকের সংখ্যা ১১ লাখ ১৪ হাজার ৮০১টি। বাইক চলাচলের জন্য পদ্মা সেতুতে আলাদা লেন তৈরি করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেলের টোল আদায়ে থাকবে পৃথক ব্যবস্থা।
নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতের নির্দেশনা আইজিপির
অন্যদিকে সড়ক পথ, রেলপথ ও নৌপথে যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি নৌ দুর্ঘটনা ও ডাকাতি রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নৌ পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, মহাসড়কে নসিমন, করিমন, ভটভটি ইত্যাদি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। যাত্রীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ফিটনেসবিহীন কোনো গাড়ি চলাচল করতে পারবে না।
ঈদে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন
এদিকে ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে ৮ জোড়া বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। বিশেষ ট্রেনগুলোর মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রুটের চাঁদপুর ঈদ স্পেশাল (৪টি ট্রেন)। চট্টগ্রাম-ময়মনসিংহ রুটে ময়মনসিংহ ঈদ স্পেশাল (২টি ট্রেন)। ঢাকা- দেওয়ানগঞ্জ রুটে দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল (২টি ট্রেন)। এ ট্রেনগুলো ৫ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত চলাচল করবে। এছাড়াও ট্রেনগুলো ঈদের পরের দিন থেকে ৫ দিন পর্যন্ত চলাচল করবে।
তাছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের কক্সবাজার ঈদ স্পেশালের ২টি ট্রেন চলবে। ট্রেন দুটি ঈদের আগে ৮ ও ৯ এপ্রিল চলাচল করবে। এরপর ঈদের পরের দিন থেকে ৩ দিন চলাচল করবে। এছাড়া ভৈরব বাজার-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (২টি ট্রেন); ময়মনসিংহ- কিশোরগঞ্জ রুটের শোলাকিয়া ঈদ স্পেশাল (২ টি ট্রেন) শুধুমাত্র ঈদের দিন চলাচল করবে। জয়দেবপুর-পার্বতীপুর রুটে ঈদ স্পেশাল (২টি ট্রেন) ঈদের আগে ৭ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত চলাচল করবে। এরপর ট্রেন দুইটি ঈদের পরের দ্বিতীয় দিন থেকে তিন দিন চলাচল করবে। এদিকে ৩ এপ্রিল থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত সব আন্তঃনগর ট্রেনের সাপ্তাহিক ছুটির দিন প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ঢাকার ১৫ শতাংশ ঈদযাত্রী বাড়ি যাবে লঞ্চে
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে এ বছর ঢাকা থেকে ২২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নৌপথে বাড়ি যাবে। যা ঢাকার মোট ঈদযাত্রীর ১৫ শতাংশ। দুই বছর আগে এই সংখ্যা ছিল আনুমানিক ৩৭ লাখ। গণমাধ্যমকর্মীদের সংগঠন শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশন রিপোর্টার্স ফোরামের (এসসিআরএফ) ঈদ-পূর্ব খাতভিত্তিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
৪ এপ্রিল থেকে ঈদ স্পেশাল লঞ্চ সার্ভিস চলাচল করবে। ৪ থেকে ১০ এপ্রিল (ঈদের আগের দিন) পর্যন্ত সাত দিনে সাড়ে ২২ লাখ মানুষ নৌপথে ঢাকা ছাড়বে। তার সিংহভাগই বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের যাত্রী। বাকি যাত্রীরা যাবে চাঁদপুর, মাদারীপুর শরীয়তপুর, মুন্সিগঞ্জ ও নোয়াখালীর হাতিয়ায়। যাত্রীরা ঢাকা নদীবন্দরের সদরঘাট টার্মিনাল হয়ে লঞ্চে যাবে।
নৌযান স্বল্পতার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, কাগজে-কলমে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের নৌপথ ৪১টি। তবে নাব্যসংকট ও যাত্রীস্বল্পতার কারণে অন্তত ১০টি নৌপথ ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। বাকি ৩১টি নৌপথে ঈদ উপলক্ষে আসা-যাওয়া মিলিয়ে ছোটবড় ১৭৫টি লঞ্চ চলাচল করবে।
এসসিআরএফের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রতিদিন ৮৪টি (১৭৫ এর অর্ধেক) লঞ্চে ৩ লক্ষাধিক যাত্রী বহন করা হলে একটি লঞ্চে গড়ে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ যাত্রী উঠবে। কিন্তু কোনো লঞ্চেরই দুই হাজারের বেশি ধারণক্ষমতা নেই। অনেক লঞ্চের যাত্রী ধারণক্ষমতা এক হাজারেরও নিচে। এ ছাড়া ঈদের আগের তিনদিন ঘরমুখী জনস্রোত দেড়গুণ বেড়ে যাবে।