হত্যা, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, আগ্নেয়াস্ত্র-বিস্ফোরক, মাদকদ্রব্য, স্বর্ণ চোরাচালানসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ২১টি মামলা ছিল কলকাতায় খুন হওয়া বাংলাদেশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের বিরুদ্ধে। মামলাগুলো ২০০০ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে দায়ের করা হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার এবং খালাস ও খারিজের মাধ্যমে ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যেই মামলামুক্ত হন তিনি।
চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের তিনটি থানায় এসব মামলা করা হয়েছিল। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় দুটি, ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরে দুটি এবং বাকিগুলো কালীগঞ্জ থানায় করা হয়েছিল। ২১ মামলার মধ্যে তিনটি হত্যা, মাদক ও স্বর্ণ চোরাচালান তিনটি, একটি ডাকাতি, দুটি চাঁদাবাজির অভিযোগ এবং বাকিগুলো আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা। নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামা এবং বিভিন্ন আদালত সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
আনারের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে প্রথম মামলা হয় ২০০০ সালের ১৩ মে কালীগঞ্জ থানায়। এরপর একই থানায় ২০০১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ছিনতাই ও মারপিটের অভিযোগের একটি মামলা হয়। একই থানায় একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর দায়ের হয় দুটি মামলা। একটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এবং অন্যটি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও হত্যাচেষ্টায় গুরুতর জখম করার অভিযোগ আনা হয়।
মারপিট ও গুরুতর জখমের অভিযোগে আরেকটি মামলা হয় ১৬ অক্টোবর। একই বছরের ২ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর থানায় দুটি মামলা করা হয়। এর একটি মাদক ব্যবসা এবং আরেকটিতে স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগ আনা হয়। ২০০২ সালের ৫ মার্চ কালীগঞ্জ থানায় দুটি মামলা হয়। এ দুটিতেই বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অভিযোগ আনা হয়। একই থানায় একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। একই থানায় ২০০৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা করা হয়। একই থানায় ২০০৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়।
ওই বছর একই থানায় বিস্ফোরক আইনে আরও দুটি মামলা করা হয়। ২০০৫ সালের ২৯ অক্টোবর একই থানায় আরও দুটি মামলা করা হয়। এর একটিতে বিস্ফোরক দ্রব্য আইন এবং আরেকটিতে ডাকাতি ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। কালীগঞ্জ থানায় ২০০৬ সালের ১ নভেম্বর আরও দুটি মামলা হয়। একটিতে বিস্ফোরক আইনে এবং অপরটিতে গুরুতর জখম ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। স্বর্ণ চোরাচালানের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানায় একটি মামলা করা হয়। হত্যার অভিযোগ এনে একই থানায় একই বছরের ১ মে আরেকটি মামলা করা হয়। সর্বশেষ মামলাটি হয় ২০০৮ সালের ২৩ জুলাই কালীগঞ্জ থানায়। অবৈধভাবে অন্যের সম্পদ দখল, মারপিট ও হুমকির অভিযোগ আনা হয়।
মামলাগুলোর মধ্যে আদালতের বিচারে সাতটি খারিজ হয়। রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহারসহ ১৪টি মামলায় তিনি খালাস পান।
একসময় বিএনপির অনুসারী হিসেবে পরিচিত থাকলেও ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগে যোগ দেন আনার। আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্যসংক্রান্ত অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০০৬ সালে ইন্টারপোলের ওয়ান্টেড তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় আনারের নাম। ২০০৯ সালে ইন্টারপোলের তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহার হয়। আনারের পৈতৃক বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মধুগঞ্জ বাজার এলাকায়। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
২০০৭ সালে ১৩ কেজি স্বর্ণ ধরে তৎকালীন বিডিআর। এই ঘটনায় স্বর্ণ চোরাচালান ধরিয়ে দেওয়ার সন্দেহে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা থানার সেই মামলায় আসামি ছিলেন আনার। পুলিশ তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রতিবেদনও দেয়। ২০১২ সালে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা প্রত্যাহারের তালিকায় এটিও ছিল।