ঢাকা ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪

বড় বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে

প্রকাশ: ০১ জুলাই ২০২৪, ১২:৫০ পিএম
আপডেট: ০১ জুলাই ২০২৪, ০১:২২ পিএম
বড় বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইতালিতে রপ্তানি কমেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পতন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

এর মধ্যে আবার অন্য বড় বাজারগুলোতেও রপ্তানি কমে যাওয়া, নতুন করে ভাবাচ্ছে উদ্যোক্তাদের। মূলত যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় ক্রয়াদেশ কমছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান এই খাতের রপ্তানি বাড়াতে গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে তারা।

চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে সার্বিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ), যুক্তরাজ্য ও নতুন বাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। তবে বেশ কয়েকটি বড় বাজারে রপ্তানি কমেছে। 

ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি ও ইতালি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানির বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে। 

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটিতে আগের অর্থবছরের তুলনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। এই সময়ে জার্মানির বাজারে ৫৪২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে ইতালির বাজারে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৯৩ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ কম।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির নেতিবাচক ধারা থেকে এখনো বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমই) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৪৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৭৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে কানাডার বাজারেও রপ্তানি কমেছে। এই সময়ে দেশটিতে ১৩৮ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয় ১৩৯ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য। সে হিসাবে রপ্তানি কম হয়েছে দশমিক ৩১ শতাংশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মো. রেজাউল আলম (মিরু) খবরের কাগজকে বলেন, ‘রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা। এই মন্দার কারণে প্রায় সব দেশেরই রপ্তানি কমছে। কারণ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সে কারণে আমাদের পোশাক রপ্তানি কমেছে। তবে এটা সত্য যে, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে লিড টাইম বেড়ে গেছে। সে কারণে আমাদের কিছু ক্রেতা অন্য দেশে চলে গেছে।’

রেজাউল আলম আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগিতা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। পাকিস্তান আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে। এ ছাড়া বৈশ্বিকভাবেও প্রচলিত ও অপ্রচলিত বাজারে পোশাকের চাহিদা কমে গেছে।’ 

ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান ও ইতালিতেই নয়, বরং নতুন বাজার ভারতেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ভারতে কমেছে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এর পেছনে প্রথমত আমাদের অভ্যন্তরীণ কারণ রয়েছে। সেটা হলো গ্যাস ও বিদ্যুতের চরম সংকট। এই সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; ক্রেতাদের কাছে যথাসময়ে পোশাক পাঠানো যাচ্ছে না। এ কারণে তারা বাংলাদেশের কোম্পানির পরিবর্তে অন্য কোনো দেশ থেকে পোশাক কিনছে।’

তিনি বলেন, কাস্টমসের হয়রানির ফলেও শিপমেন্ট বিলম্বিত হচ্ছে। এটাও রপ্তানি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ।

মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘রপ্তানি কমে যাওয়ার আরও কারণ হলো ব্যাংকগুলোও চরম অসহযোগিতা করছে। সময়মতো ব্যাক টু ব্যাক এলসি করছে না। এ ছাড়া ক্রেতাদেশগুলোদের কাছ থেকে আমরা পণ্যের যথাযথ দাম পাচ্ছি না। কারণ, শ্রমিকদের বেতনের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা পোশাকের দাম বাড়াচ্ছে না। ফলে তারা যে দাম দিচ্ছে অনেত ক্ষেত্রে আমাদের সে দামে ক্রয়াদেশ নিতে পারছি না। মূলত এসব কারণেই আমাদের রপ্তানি কমছে।’

ইপিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত নতুন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে। প্রধান নতুন বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি যথাক্রমে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে। 

ইপিবির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২১ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। এই সময়ে স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও ডেনমার্কে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত মোট পণ্য রপ্তানির ৮৫ শতাংশ আয় তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। এ সময় ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। এই ১১ মাসে নিট পণ্য (সোয়েটার, টি-শার্ট) রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক (শার্ট, প্যান্ট) রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৯১৪ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের থেকে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কম। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত মে মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৩৫ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের থেকে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ কম।

ইইউর পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাট প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমিয়েছে ইইউ।

ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ইইউর দেশগুলো পোশাক আমদানি করে ৬৪৩ কোটি ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫০ ইউএস ডলার। ২০২৩ সালের একই সময়ে দেশগুলো পোশাক আমদানি করে ৭১৩ কোটি ৪১ লাখ ডলারের। সে হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ থেকে ইইউর তৈরি পোশাক আমদানি কমেছে ৭০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম।

ইপিজেডের বাইরে কারখানা স্থাপন না করার সিদ্ধান্ত পোশাকশিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৮ এএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:২৮ এএম
পোশাকশিল্প বিপর্যয়ের মুখে পড়ার আশঙ্কা
ছবি : খবরের কাগজ

কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, অর্থনৈতিক অঞ্চল বা শিল্প এলাকার বাইরে নতুন করে কারখানা স্থাপন করা যাবে না। যদি কেউ এই নির্দেশ না মেনে পোশাকসহ অন্যান্য কারখানা স্থাপন করা হয় তাহলে উক্ত শিল্পে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে না। এমনকি ঋণও মিলবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা। পোশাক মালিকরা বলেছেন, আমাদের দেশের শিল্পাঞ্চলগুলো এখনো তৈরি না। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। বরং এই সিদ্ধান্তের ফলে শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান দুটোই পিছিয়ে যাবে। এ ছাড়া নতুন করে ছোট ছোট উদ্যোক্তাও তৈরি হবে না। কারণ, হুট করেই শিল্পাঞ্চলে জায়গা নিয়ে কারখানা প্রতিষ্ঠা করা তাদের জন্য সম্ভব হবে না। এ ছাড়া যারা ইতোমধ্যেই নতুন শিল্পকারখানার বেশির ভাগ কাজ শেষ করেছেন, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে তাদের বিনিয়োগের ফল কী হবে? এসব কারণে এই সিদ্ধান্তকে অপরিণামদর্শী আখ্যা দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সেই সঙ্গে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে, কারখানাগুলোকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সুযোগ দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইপিজেডের বাইরে নতুন শিল্প স্থাপন করা হলে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো এখন থেকে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হবে। পরিবেশের উন্নয়ন এবং ভূমি ও জ্বালানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার কেবল নির্দিষ্ট এলাকায় শিল্প স্থাপন করতে চায় বলেও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) পরিচালক শোভন ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘অবশ্যই বিচ্ছিন্নভাবে শিল্পকারখানাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকুক সেটা আমরাও চাই না। এ ব্যাপারে আমরা সরকারের সঙ্গে নীতিগতভাবে একমত। আমরাও চাই এগুলো সংশোধন হোক। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদের তো একটা সময় দিতে হবে। আমাদের মিরসরাই অর্থনৈতিক প্রস্তুত না। আমাদের যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কথা বলা হচ্ছে, সেগুলোর কাজ তেমন এগোয়নি। 

আমরা মনে করি, মিরসরাই প্রস্তুত হতে এখনো পাঁচ বছর সময় লাগবে। পোশাক খাতের সক্ষমতা বাড়াতে এখন অনেক লোক ইতোমধ্যে জমি কিনে যে ভবন তুলে ফেলেছে, তাহলে তারা এখন কোথায় যাবে? আবার ঋণ পেতে যেই বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ছাড়পত্র- সেটা পেতে গেলে হয়রানি আরও বাড়বে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের এই আদেশকে আমরা প্রত্যাহার করে নিতে বলেছি। শোভন ইসলাম আরও বলেন, এই সিদ্ধান্ত শুধু পোশাকশিল্পই নয় বরং আমাদের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে। 

রপ্তানি খাতে তৈরি পোশাকের অবদান প্রায় ৮৫ শতাংশ। বর্তমানে রপ্তানি আয়ে পোশাক খাতের অবদান প্রায় ৪৭ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরেই এটিকে ৫০ বিলিয়নে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন এই পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে পোশাক খাতের রপ্তানি আয়কে প্রায় দ্বিগুণ করে ১০০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে পোশাক খাতে রয়েছে বিপুল কর্মসংস্থান। বড়, মাঝারি ও ছোট- সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পোশাক কারখানায় কাজ করেন প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক। আবার নারীদের আত্মনির্ভরশীলতায় একটা বড় অবদান রাখছে খাতটি। কারণ এই খাতের মোট শ্রমিকের প্রায় ৬২ শতাংশই নারী।

বর্তমানে ভূরাজনৈতিক সংকট এবং এর প্রভাবে বৈশ্বিক বাণিজ্যে সৃষ্ট অস্থিরতায় পোশাকশিল্প এক সন্ধিক্ষণ পার করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে নতুন এই নির্দেশনা পোশাক খাতের সংকটকে আরও তীব্র করার পাশাপাশি শিল্পের প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে বলেও মনে করছেন পোশাক কারখানার মালিকরা। সেই সঙ্গে উদ্যোক্তারা নতুন কারখানা গড়ে তুলতে নিরুৎসাহিত হবেন বলেও মনে করছেন তারা।

এ বিষয়ে বিজিএমইএর পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন বলেন, ‘আমরা শিল্পাঞ্চলে যেতে চাই। কিন্তু শিল্পাঞ্চলকে প্রস্তুত না করে, সেখানে যাওয়ার জন্য কড়াকাড়ি আরোপ কার্যত পোশাকশিল্পকে গলা চেপে ধরা ছাড়া আর কিছুই না। এটা করা হলে শিল্পায়ন ব্যাহত হবে। 

টিএডি গ্রুপের এই ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, ‘সরকার চাচ্ছে শিল্পটাকে একটা কেন্দ্রীয়করণ করতে। আমরা সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। কিন্তু দেশের ১০০টা শিল্পাঞ্চলের মধ্যে ১৫টার মতো প্রস্তুত। ধরুন আমি যদি বলি কালকে আমি যাব, তাহলে সরকার কিন্তু আমাকে সব সুযোগ-সুবিধা দিতে পারবে না। তাহলে কি আমরা শিল্পায়ন করব না। এ রকম হঠকারী সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের শিল্পায়নের কণ্ঠরোধ করা ছাড়া আর কিছুই না।’

বিজিএমইএর পরিচালক মো. রেজাউল আলম (মিরু) বলেন, আমরা সরকারকে জানিয়েছি, এটা করলে আমাদের দেশে বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ, আমাদের দেশ এখনো ওই জায়গায় যেতে পারেনি। এই ছোট ছোট শিল্প থেকেই বড় প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়। ছোট কারখানাগুলো একটু একটু করে বিনিয়োগ বাড়ায়। একপর্যায়ে তারা চাইলেই ইপিজেড বা শিল্পাঞ্চলে কারখানা করতে পারে। যদি সরকারের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয় তাহলে আমাদের দেশে ছোট উদ্যোক্তা তৈরি হবে না।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফেকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম খবরের কাগজকে বলেন, ‘ডিসিপ্লিন ওয়েতে’ কারখানা করার জন্য এই দুটি সিদ্ধান্ত আমি মনে করি সঠিক। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, আমার অর্থনৈতিক অঞ্চল কী প্রস্তুত আছে। আমার শিল্পকারখানা শুরু করার জন্য যে ধরনের অবকাঠামো দরকার, সেগুলো দেওয়ার জন্য তারা কি প্রস্তুত? আমাকে যদি ওখানে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনে বাধ্য করা হয়, আমি তো সেটা করতে পারব না। এ কারণে, এই সিদ্ধান্ত তখনই কার্যকর হওয়া উচিত যখন, সেখানে যাওয়ার জন্য সবকিছু প্রস্তুত হবে। তখনই কেবল এই ধরনের সিদ্ধান্ত সঠিক হতে পারে। 

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সিদ্ধান্তটি নিঃসন্দেহে ভালো, সেটা আমরা বলতেই পারি। কিন্তু এই সিদ্ধান্তটা নেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। বরং এই সিদ্ধান্তের ফলে শিল্পায়নটা পিছিয়ে যাবে এবং কর্মসংস্থানও ব্যাহত হবে।

ডিমের ডজন ১৫০ টাকার বেশি নয় : ভোক্তার ডিজি

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ০৪:৩৮ পিএম
ডিমের ডজন ১৫০ টাকার বেশি নয় : ভোক্তার ডিজি
ছবি : খবরের কাগজ

খুচরা বাজারে ডিমের ডজন ১৪০-১৫০ টাকার বেশি বিক্রি করা যাবে না বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

মঙ্গলবার (২ জুলাই) রাজধানীর কাওরান বাজারে টিসিবি ভবনে ভোক্তা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ভোক্তার ডিজি আরও বলেন, ‘ফার্মে প্রতিটি ডিমের সর্বোচ্চ উৎপাদন খরচ ১০.২৯ টাকা থেকে ১০.৮৮ টাকা। সিন্ডিকেট করে এসএমএস দিয়ে ডিমের বাজার অস্থির করা যাবে না। যারা এ ধরনের কাজ করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ সময় বিভিন্ন ফার্মের মালিক, করপোরেট প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জাহাঙ্গীর আলম/সালমান/

হবিগঞ্জে সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা পর্যন্ত

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ০২:৩৭ পিএম
আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৬ এএম
হবিগঞ্জে সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা পর্যন্ত
ছবি : খবরের কাগজ

হবিগঞ্জে টানা বৃষ্টি ও বন্যার কারণে বেড়েই চলেছে সবজির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম প্রতি কেজিতে ২০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। 

মঙ্গলবার (২ জুলাই) সরেজমিনে দেখা যায়, টমেটোর দাম কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। কচুরমুখী ও ঝিঙে কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা, আলুর দামও বেড়েছে ১৫ টাকা।

তা ছাড়া, কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২২০ টাকায় এবং শশা ১১০ টাকা কেজি।

সবজির দাম বাড়ায় বেকায়দায় পড়েছেন ক্রেতারা। বিশেষ করে নিম্নআয়ের মানুষজন বেশি বেকায়দায় পড়েছেন। তারা বলছেন, টানা বৃষ্টিতে একদিকে আয়-রোজগার কমে গেছে, অন্যদিকে নিত্যপণ্যের এমন ঊর্ধ্বমুখীর কারণে চাহিদামতো কিনতে পারছেন না।

হবিগঞ্জের চৌধুরী বাজারে সবজি কিনতে আসা বানিয়াচং উপজেলার পুকড়া গ্রামের আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘যেভাবে দাম বাড়ছে আমাদের মতো গরিব মানুষের বেঁচে থাকা কঠিন। দুইদিন আগেও যে সবজি ৫০ টাকায় নিয়েছি, সেটি আজ নিতে হচ্ছে ৭০ টাকায়। বাজারে একটা সবজিও ৬০-৭০ টাকার নিচে পাওয়া যায় না।’

হবিগঞ্জ পৌর এলাকার পাইকারি চাষি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, অন্যদিনের তুলনায় সবজির সরবরাহ খুবই কম।

লাখাইয়ের বামৈ বাজারের সবজি বিক্রেতা চাষি বাজারে এসেছেন সবজি কিনতে। তিনি বলেন, ‘গত পরশুদিন ২০ হাজার টাকার সবজি কিনেছেন। আজ একই পরিমাণ সবজি কিনতে হচ্ছে ২৫ হাজার টাকায়। আমরা বেশি দামে বাজার থেকে কিনে নিচ্ছি, বিক্রিও করতে হবে বেশি দামে।’

চাষি বাজারে ব্যবসায়ী মোতাহের মিয়া বলেন, ‘হবিগঞ্জের বাজারে যে সবজি ওঠে, তার বেশিরভাগই স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। কিন্তু টানা বৃষ্টি, পাহাড়ি ঢল আর বন্যায় হবিগঞ্জের সব সবজিখেত নষ্ট হয়ে গেছে। এখন হবিগঞ্জের বাজারে সবজি আসছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে। বাজারে সবজি সরবরাহ কম। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গ থেকে সবজি আনতে পরিবহন খরচ বেড়েছে। তাই দাম বাড়তির দিকে।’

সবজির দাম আরও বাড়বে বলে জানান তিনিসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী।

কাজল সরকার/জোবাইদা/অমিয়/

যুক্তরাজ্যে জ্বালানির দাম কমেছে

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৫৮ এএম
যুক্তরাজ্যে জ্বালানির দাম কমেছে

যুক্তরাজ্যে জ্বালানির দাম কমেছে। দেশটিতে গৃহস্থালির গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে, তবে অক্টোবরে আবার খরচ বাড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। খবর বিবিসির।

ব্রিটিশ সম্প্রচার মাধ্যমটির খবরে বলা হয়, নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফজেমের নতুন নির্ধারিত এই দাম, ইংল্যান্ড, ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডের জন্য গতকাল সোমবার থেকে কার্যকর হয়েছে। এই পদক্ষেপের অর্থ হলো, এর মধ্য দিয়ে একটি সাধারণ পরিবারের জ্বালানি বিল বছরে ১২২ পাউন্ড কমবে। সেই সঙ্গে সাধারণ পরিমাণে গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহার করে- এমন একটি পরিবারের জন্য বছরে ১ হাজার ৫৬৮ ডলার বিল সাশ্রয় করতে সক্ষম হবে, যা দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নেমে আসবে।

তবে পূর্বাভাসকারীরা প্রত্যাশা করছেন যে, শীতের মৌসুমে জ্বালানির দাম আবার বাড়বে। এই সময়ে জ্বালানির দাম সর্বশেষ হ্রাস হওয়ার হারের চেয়েও বেশি হবে।

শীর্ষস্থানীয় পরামর্শদাতা কর্নওয়াল ইনসাইট ভবিষ্যদ্বাণী করে বলেছেন, একটি সাধারণ পরিবারের বার্ষিক জ্বালানির বিল আগামী অক্টোবর মাসে বেড়ে ১ হাজার ৭২৩ পাউন্ডে দাঁড়াবে, যা এখনকার বিলের থেকেও ১৫৫ পাউন্ড বা ১০ শতাংশ বেশি।

দাতব্য সংস্থা ন্যাশনাল এনার্জি অ্যাকশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডাম স্কোরার বলেছেন, গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ বিলের হ্রাস শীতকালে বেশি পরিমাণে বৃদ্ধির দ্বারা মিলিয়ে যাবে। তখন, গরমে লোকরা বেশি পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় বিল বাড়বে।

অ্যাডাম স্কোরার আরও বলেন, জ্বালানির খরচ একটি সাধ্যাতীত বিলাসিতা হিসেবে রয়ে গেছে, যেটির ব্যয় বহন করা অনেক দরিদ্র পরিবারের পক্ষে সম্ভব নয়।

যদিও দাম প্রতি তিন মাস পরপর পরিবর্তিত হয়। তবে এই পরিসংখ্যানটি অফজেমের দ্বারা একটি সাধারণ পরিমাণ গ্যাস ও বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী পরিবারের বার্ষিক বিলের পরিপ্রেক্ষিতে করা হয়েছে।

কারণ, অঢেল সম্পত্তির মালিকরা অধিক পরিমাণে জ্বালানি ব্যবহারের কারণে সামগ্রিকভাবে তারা বেশি বিল দেবে এবং এর বিপরীতে ছোট সম্পত্তির মালিকরা জ্বালানি বাবদ কম বিল পরিশোধ করবে। 

যুক্তরাজ্যের গ্যাস ও বিদ্যুতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফজেম নির্ধারিত এই মূল্যসীমা, প্রতি ইউনিট গ্যাস ও বিদ্যুতের জন্য সর্বোচ্চ দামকে নিয়ন্ত্রণ করবে, তবে এটি গ্রাহকের সম্পূর্ণ ব্যবহারের ওপর যে বিল আসবে সেটি কমাবে না।

খবরে বলা হয়, এই পদক্ষেপটি ২৮ মিলিয়ন গৃহস্থের গ্যাস ও বিদ্যুৎ বিলকে প্রভাবিত করে। তবে উত্তর আয়ারল্যান্ডের গ্রাহকদের প্রভাবিত করে না। কারণ সেখানে এই খাতটি ভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। তবে সেখানেও জ্বালানির দাম কমছে।

খবরে বলা হয়, সর্বশেষ এই জ্বালানির দাম কমানোর হারটি, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর, সরকার যখন বিল বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ করতে পদক্ষেপ নেয়, তখন জ্বালানির বিল যতটা শীর্ষে পৗঁছায়, সে তুলনায় এটি যথেষ্ট কম। এই পদক্ষেপটি মূল্যবৃদ্ধির সাধারণ হার, যা মুদ্রাস্ফীতি নামে পরিচিত, সেই হার কমানোর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে।

তবে, সাধারণ পরিবারের বিদ্যুৎ বিল গত তিন বছর আগের তুলনায় এখনো প্রায় ৪০০ পাউন্ড বেশি রয়ে গেছে, যা যুক্তরাজ্যের নির্বাচনি প্রচারণায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। সর্বোপরি পরিবারগুলো উচ্চ মূল্যের চাপের কারণে, সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি (৩ বিলিয়ন) পাউন্ডে সম্মিলিত ঋণ করেছে।

বিবিসি বলছে, যারা প্রিপেইড মিটার ব্যবহার করেন তারা সাধারণত শীতকালে, যখন দিনের আলো কম থাকে এবং তাপমাত্রাও কম থাকে, তখন তাদের মিটার রিচার্জ করেন। এ ছাড়া এই গ্রাহকগুলো প্রায়ই আর্থিক চাপের মধ্যে থাকে। তাই, গ্রীষ্মকালে জ্বালানির এই দাম কমানোর প্রভাব তাদের ক্ষেত্রে ততটা দ্রুত অনুভূত হবে না।

বেশির ভাগ পরিবার সরাসরি ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে বিল পরিশোধ করে এবং তাদের পেমেন্ট সারা বছর ধরে সমানভাবে ভাগ করা হয়। এ কারণে সর্বশেষ দাম পরিবর্তন সম্পর্কে সরবরাহকারীদের উচিত, তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন মিটার রিডিং নেওয়া একটি ভালো ধারণা, যাতে গ্রাহকদের সঠিক হারে চার্জ করা হয়।

এদিকে অফজেম মূল্যসীমা নির্ধারণের পদ্ধতি পর্যালোচনা করছে, যার মধ্যে রয়েছে স্থায়ী চার্জের বিষয়ে পাওয়া প্রতিক্রিয়াগুলো বিশ্লেষণ করা।

সিরাজগঞ্জে বোরা ধান সংগ্রহ নিয়ে সংশয়

প্রকাশ: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৪, ১১:৪৯ এএম
সিরাজগঞ্জে বোরা ধান সংগ্রহ নিয়ে সংশয়
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একটি খাদ্যগুদামে ট্রাকে চাল লোড-আনলোড করা হচ্ছে। ছবি: খবরের কাগজ

আমনের পর এবার সিরাজগঞ্জের খাদ্যগুদামগুলোতে বোরো ধান সংগ্রহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ২৬ জুন পর্যন্ত জেলায় ১ হাজার ৭২০ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। যদিও জেলার ৯টি উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৯১৬ টন। গত দুই বছরের মতো এবারও লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে ৭ মে থেকে শুরু হয়ে ৩১ আগস্টের মধ্যে এই মৌসুমের ধান সংগ্রহ কার্যক্রম শেষ করার কথা রয়েছে। এদিকে ধান বিক্রির জন্য বিভিন্ন নিয়মকানুন ও হয়রানির কারণে সরকারিভাবে ধান বিক্রিতে আগ্রহ নেই বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। এ ছাড়া ধান সংগ্রহ কার্যক্রমে প্রকৃত কৃষকদের অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের প্রচার-প্রচারণারও অভাব রয়েছে। এসব কারণে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয় না। তবে খাদ্য বিভাগ বলছে, ধান সংগ্রহের অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা করবেন তারা।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী চলতি বছরের গত ৭ মে থেকে বোরো ধান ও চাল সংগ্রহের অভিযান শুরু হয়। এতে প্রতি কেজি ধানের মূল্য ৩২ টাকা এবং প্রতি কেজি বোরো চালের দাম ৪৫ টাকা করে নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সেই আলোকে সারা দেশের মতো সিরাজগঞ্জের ৯টি উপজেলার খাদ্যগুদামগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধান ও চাল সংগ্রহ শুরু করেন। কিন্তু গত দুই মাসে কৃষকদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ধান সংগ্রহ করতে পারেনি সিরাজগঞ্জের খাদ্যগুদামগুলো। এখন পর্যন্ত ৯টি খাদ্যগুদামে মাত্র ১ হাজার ৭২০ টন ধান সংগ্রহ করতে পেরেছে, যা লক্ষ্যমাত্রার যতসামান্য। 

সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এ জেলায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ৮ হাজার ৯১৬ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় খাদ্য বিভাগ। এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৮৯৮ টন নির্ধারণ করে দিলেও এখন পর্যন্ত সংগ্রহ করতে পেরেছে মাত্র ১১৯ টন, উল্লাপাড়া উপজেলার ধানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৯১৮ টন, এখন পর্যন্ত তাদের ধান সংগ্রহের পরিমাণ মাত্র ৩৯৬ টন। তাড়াশ উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪১১ টন, এখন পর্যন্ত গুদামের ধান সংগ্রহের পরিমাণ মাত্র ৭২ টন, রায়গঞ্জ উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ২৫২ টন হলেও এখন পর্যন্ত অর্জিত হয়েছে ১৮৭ টন, শাহজাদপুর উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৪৩০ টন, তার মধ্যে এখন পর্যন্ত সংগ্রহের পরিমাণ মাত্র্ ৬০ টন, কাজীপুর উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮১৯ টন, এর মধ্যে ধান সংগ্রহের পরিমাণ মাত্র ২১ টন, কামারখন্দ উপজেলার লক্ষ্যমাত্রা ৪৪১ টন, তার বিপরীতে সংগ্রহের পরিমাণ ৩৪৫ টন। অন্যদিকে বেলকুচি উপজেলায় ৫১৯ ও চৌহালী উপজেলায় ৩৪৫ টন ধান সংগ্রহ করেতে পেরেছে গুদামগুলো।

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই মৌসুমে সিরাজগঞ্জে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে প্রায় ১৭৫ হেক্টর বেশি। এতে প্রায় ৬ লাখ ১৪ হাজার ৫৩ টন ধান উৎপাদিত হয়েছে।

অন্যদিকে এ অর্থবছরে জেলার চালকল মালিকদের কাছ থেকে ২৪ হাজার ২৮২ টন চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এতে চাল দিতে ৪১৯ জন চালকল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। গত দুই মাসে ১২ হাজার ৪৯০ টন চালও সংগ্রহ করতে পেরেছে উপজেলার গুদামগুলো।

সরেজমিনে জেলার সদর, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া ও তাড়াশ উপজেলার খাদ্যগুদামগুলো ঘুরে দেখা গেছে, গুদামগুলোতে কোনো বোরো ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে না। শ্রমিকদের শুধু ট্রাকের চাল লোড-আনলোড করতে দেখা যায়। 

তবে স্থানীয় বাজার ঘুরে জানা গেছে, কৃষকরা প্রতি মণ ধান বিক্রি করছেন ১ হাজার ১২০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা দরে। এদিকে বাজারের চেয়ে সরকার-নির্ধারিত মূল্যে ধানের দাম বেশি হলেও কিছু ভোগান্তির কারণে সরকারি গুদামগুলোতে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা। 

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার মাগুরা বিনোদ ইউনিয়নের কৃষক ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এ বছর সাত বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু সরকার-নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাজারে মূল্য তুলনামূলক কম হলেও কিছু ভোগান্তির কারণে গুদামে ধান দেওয়ার ইচ্ছা নেই। তাই ধান হাট-বাজারে বিক্রি করছি।’

উল্লাপাড়া উপজেলার কৃষক রহমান আলী বলেন, ‘গুদামে ধান দিলে পরিবহন খরচ আছে। তা ছাড়া টাকা পেতে হয় ব্যাংকের মাধ্যমে, অনেক দেরিও হয়। আর এসব সমস্যা বা ঝামেলার কারণে বাজারে ধান বিক্রি করে থাকি।’

আর চালকল মালিকরা জানান, এ বছর সব খরচ বেড়ে গেছে, কিন্তু চালের দাম বাড়েনি। তাই লোকসান গুনলেও মিলের লাইসেন্স রক্ষার্থে বাধ্য হয়ে খাদ্যগুদামগুলোতে চাল দিতে হচ্ছে তাদের।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলার খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (এলএসডি) আশরাফুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ বছর উপজেলার দুটি খাদ্যগুদামে ১ হাজার ৪৩০ মেট্রিন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিলেও এখনোও কোনো ধান সংগ্রহ করতে পারিনি। কৃষকরা গুদামে ধান দিতে চান না, তাদের কাছে থেকে জোর করে ধান নেওয়ার অধিকারও আমাদের নেই। তা ছাড়া তারা বাজারে ধানের ভালো দাম পাচ্ছেন, এ জন্য গুদামে ধান দিতে আগ্রহী নয়।’

এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ সদর খাদ্যগুদামের সংরক্ষণ ও চলাচল কর্মকর্তা মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ‘গত দুই মাসে লক্ষ্যমাত্রা ৮৯৮ মেট্রিক টনের মধ্যে মাত্র ১১৯ টন বোরো ধান সংগ্রহ হয়েছে। ধান সংগ্রহ নিয়ে সংশয় থাকলেও চাল সংগ্রহ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। সরকারের উদ্দেশ্য, কৃষক যেন ধানের ন্যায্যমূল্য পান। সে হিসাবে কৃষক বাজারে বিক্রি করলে তার ন্যায্য দাম পাচ্ছেন।’

সিরাজগঞ্জ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা রিয়াজুর রহমান রাজু বলেন, ‘বাজারে ধানের দাম মোটামুটি ভালো রয়েছে। এ জন্য গুদামগুলোতে ধান সংগ্রহ কম হচ্ছে। এ ছাড়া জেলার চারটি উপজেলায় কৃষকের অ্যাপস ও বাকি পাঁচ উপজেলায় লটারির মাধ্যমে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে। তবে বিগত বছরের চেয়ে এবার ধানের মূল্য বেশি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে মনে করছি।’