![বড় বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে](uploads/2024/07/01/posak-1719816637.jpg)
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ইতালিতে রপ্তানি কমেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির পতন ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন উদ্যোক্তারা।
এর মধ্যে আবার অন্য বড় বাজারগুলোতেও রপ্তানি কমে যাওয়া, নতুন করে ভাবাচ্ছে উদ্যোক্তাদের। মূলত যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় ক্রয়াদেশ কমছে বলে মনে করছেন রপ্তানিকারকরা। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান এই খাতের রপ্তানি বাড়াতে গ্যাস-বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে তারা।
চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে সার্বিকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ), যুক্তরাজ্য ও নতুন বাজারে দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে। তবে বেশ কয়েকটি বড় বাজারে রপ্তানি কমেছে।
ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় বাজার জার্মানি ও ইতালি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জার্মানির বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে ধস নেমেছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশটিতে আগের অর্থবছরের তুলনায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে ১০ দশমিক ১২ শতাংশ। এই সময়ে জার্মানির বাজারে ৫৪২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে ইতালির বাজারে পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১৯৩ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানির নেতিবাচক ধারা থেকে এখনো বের হতে পারেনি বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমই) তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৪৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে বাংলাদেশ। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে ৭৭৩ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করা হয়। এ ছাড়া এই সময়ের মধ্যে কানাডার বাজারেও রপ্তানি কমেছে। এই সময়ে দেশটিতে ১৩৮ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে রপ্তানি হয় ১৩৯ কোটি ডলারের পোশাক পণ্য। সে হিসাবে রপ্তানি কম হয়েছে দশমিক ৩১ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক মো. রেজাউল আলম (মিরু) খবরের কাগজকে বলেন, ‘রপ্তানি কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা। এই মন্দার কারণে প্রায় সব দেশেরই রপ্তানি কমছে। কারণ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। সে কারণে আমাদের পোশাক রপ্তানি কমেছে। তবে এটা সত্য যে, গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের কারণে লিড টাইম বেড়ে গেছে। সে কারণে আমাদের কিছু ক্রেতা অন্য দেশে চলে গেছে।’
রেজাউল আলম আরও বলেন, ‘আমাদের প্রতিযোগিতা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে। পাকিস্তান আমাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় এগিয়ে গেছে। এ ছাড়া বৈশ্বিকভাবেও প্রচলিত ও অপ্রচলিত বাজারে পোশাকের চাহিদা কমে গেছে।’
ইপিবির তথ্য অনুযায়ী, শুধু যুক্তরাষ্ট্র, জার্মান ও ইতালিতেই নয়, বরং নতুন বাজার ভারতেও বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে। চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ভারতে কমেছে পোশাক রপ্তানি কমেছে ২৩ দশমিক ১১ শতাংশ।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এর পেছনে প্রথমত আমাদের অভ্যন্তরীণ কারণ রয়েছে। সেটা হলো গ্যাস ও বিদ্যুতের চরম সংকট। এই সংকটের কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে; ক্রেতাদের কাছে যথাসময়ে পোশাক পাঠানো যাচ্ছে না। এ কারণে তারা বাংলাদেশের কোম্পানির পরিবর্তে অন্য কোনো দেশ থেকে পোশাক কিনছে।’
তিনি বলেন, কাস্টমসের হয়রানির ফলেও শিপমেন্ট বিলম্বিত হচ্ছে। এটাও রপ্তানি কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ।
মোহাম্মদ হাতেম আরও বলেন, ‘রপ্তানি কমে যাওয়ার আরও কারণ হলো ব্যাংকগুলোও চরম অসহযোগিতা করছে। সময়মতো ব্যাক টু ব্যাক এলসি করছে না। এ ছাড়া ক্রেতাদেশগুলোদের কাছ থেকে আমরা পণ্যের যথাযথ দাম পাচ্ছি না। কারণ, শ্রমিকদের বেতনের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক সব পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু ক্রেতারা পোশাকের দাম বাড়াচ্ছে না। ফলে তারা যে দাম দিচ্ছে অনেত ক্ষেত্রে আমাদের সে দামে ক্রয়াদেশ নিতে পারছি না। মূলত এসব কারণেই আমাদের রপ্তানি কমছে।’
ইপিবির তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত নতুন বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ বেড়েছে। এই সময়ে রপ্তানি আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ১৮ বিলিয়ন ডলারে। প্রধান নতুন বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় রপ্তানি যথাক্রমে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ এবং ১৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেড়েছে।
ইপিবির সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১১ মাসে ইউরোপীয় ইউনিয়নে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ২১ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। এই সময়ে স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড ও ডেনমার্কে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি বেড়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মে পর্যন্ত মোট পণ্য রপ্তানির ৮৫ শতাংশ আয় তৈরি পোশাক খাত থেকে এসেছে। এ সময় ৪ হাজার ৩৮৫ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়েছে। এই ১১ মাসে নিট পণ্য (সোয়েটার, টি-শার্ট) রপ্তানি হয়েছে ২ হাজার ৪৭০ কোটি ডলারের। এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে ওভেন পোশাক (শার্ট, প্যান্ট) রপ্তানি হয়েছে ১ হাজার ৯১৪ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের থেকে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ কম। ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত মে মাসে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৩৫ কোটি ডলারের, যা আগের বছরের থেকে ১৭ দশমিক ১৯ শতাংশ কম।
ইইউর পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাট প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানের তথ্য বলছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের তুলনায় এ বছরের একই সময়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক আমদানি প্রায় ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ কমিয়েছে ইইউ।
ইউরোস্ট্যাটের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ইইউর দেশগুলো পোশাক আমদানি করে ৬৪৩ কোটি ২ লাখ ৫৫ হাজার ৬৫০ ইউএস ডলার। ২০২৩ সালের একই সময়ে দেশগুলো পোশাক আমদানি করে ৭১৩ কোটি ৪১ লাখ ডলারের। সে হিসেবে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ থেকে ইইউর তৈরি পোশাক আমদানি কমেছে ৭০ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ কম।