![দিনাজপুরে সৌদির খেজুর চাষে সাফল্য](uploads/2024/07/01/deat-1719817024.jpg)
দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী উপজেলায় খেজুর চাষে সফল হয়েছেন জাকির হোসেন নামে এক যুবক। এই সৌদিপ্রবাসী যুবক দেশে ফিরে নিজের ভাগ্যের পরিবর্তনে সক্ষম হয়েছেন।
গত শনিবার (২৯ জুন) বিকেলে সরেজমিনে ফুলবাড়ী পৌর এলাকার সজনপুকুর গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেনের খেজুরের বাগানে গেলে কথা হয় জাকির হোসেনের সঙ্গে।
তিনি জানান, জীবিকার তাগিদে সৌদি ও কুয়েতে পাড়ি দিয়ে প্রায় ২০ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে থাকাকালীন মরুভূমির ফল চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান ও কারিগরি প্রশিক্ষণ নেন তিনি। দেশে ফেরার সময় ১২ কেজি পাকা খেজুর নিয়ে আসেন। সেই খেজুরগুলো থেকে নিজেই চারা তৈরি করেন।
তিনি আরও জানান, প্রথম পর্যায়ে ৩০ শতক জমিতে আজওয়া, মরিয়ম, খলিজি, মেডজুল, বারহি ও আম্বার জাতের খেজুর বাগান গড়ে তোলেন। এখন খেজুর গাছগুলোর বয়স ৪ থেকে ৫ বছর। গত ২০২২ সালে তার বাগানে প্রথম তিনটি গাছে ফল এসেছিল। চারাগুলো এখন পরিপূর্ণ গাছে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেকটি গাছেই থরে থরে ঝুলে রয়েছে খেজুর। বাগানের খেজুর এখন দিনাজপুরসহ সারা দেশে ছড়িয়েছে। গাছগুলো দেখতে প্রতিদিনই অনেক মানুষ ভিড় করছেন।
উদ্যোক্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘জীবিকার তাগিদে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দিয়েছিলাম। সেখানে চাষ হওয়া খেজুর দেখে নিজ দেশের মাটিতে খেজুর চাষের স্বপ্ন জাগে। সেই স্বপ্নকে ধারণ করে পাকা খেজুর এনে পরীক্ষামূলক চারা তৈরি এবং ইউটিউবের সহায়তায় ৩০ শতক জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ২৯টি খেজুরগাছের চারা রোপণ করি। বর্তমানে দুই একর জমিতে গড়ে তুলেছি খেজুরের বাগান। অনেকে চারা গাছ কিনতে অগ্রিম অর্থ দিয়ে রেখেছেন। গাছে ফল এলেই প্রতিবছর ভিড় জমছে দর্শনার্থীর।’
তিনি বলেন, ‘প্রথম পর্যায়ে তিনটি গাছে প্রচুর পরিমাণে খেজুর আসে। তারপর সে ফলগুলো স্থানীয়দের খাওয়ানোসহ কিছু চারা তৈরি করি। চলতি বছর ১৯টি গাছে ফল এসেছে। প্রতিটি গাছের ৮ থেকে ৯টি কাঁদিতে (গোছায়) খেজুর ধরেছে। ৫০ থেকে ৫৫টি খেজুরের ওজন এক কেজি হয়। খেজুরের বীজ থেকে চারাগাছ হতে প্রায় দেড় থেকে দুই বছর সময় লাগে। এ খেজুরের বাগান করতে প্রয়োজন উঁচু জমি।’
এ উদ্যোক্তা আরও বলেন, ‘চারাগাছ রোপণের কয়েক বছরেই ফল আসতে শুরু করে। বর্তমানে প্রতিটি চারা বিক্রি করছি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। শুধু উত্তরবঙ্গই নয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন চারাগাছ সংগ্রহ করছেন। একটি খেজুর গাছ ৭০ থেকে ৮০ বছর ধরে ফল দেয়। বর্তমানে বাগানে উৎপাদিত খেজুর ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। ইতোমধ্যে দেড় হাজার চারা প্রায় ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বাড়ির কাছেই এখন সৌদির খেজুরের বাগান। ছোট্ট এ গাছগুলোতে এত খেজুর হতে পারে সেটি না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। স্থানীয়রা সবাই জাকির হোসেনের বাগানের উৎপাদিত খেজুর খেয়েছেন। এগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু। মরুভূমির খেজুর ফুলবাড়ীতে চাষ হচ্ছে এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রচারের পর থেকে এ বাগান দেখতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ভিড় করছেন।’
দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া বলেন, ‘দিনাজপুর জেলা চাল ও লিচুর জন্য দেশব্যাপী খ্যাতি রয়েছে। জাকির হোসেন মধ্যপ্রাচ্য থেকে খেজুর এনে সেটি চারা করে গাছ রোপণের মাধ্যমে খেজুর উৎপাদন করে সাফল্য দেখিয়েছেন। মরুর খেজুর ফুলবাড়ীতে উৎপাদিত হচ্ছে, এটি একটি গর্বের বিষয়। কৃষি বিভাগ থেকে সম্প্রতি আমি ওই খেজুর বাগান পরিদর্শন করেছি। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মরুভূমির এ খেজুর দেশের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বলেন, ‘প্রবাসী জাকির হোসেন মরুভূমির খেজুর ফুলবাড়ীর মাটিতে ফলিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন। তার উৎপাদিত খেজুর ও খেজুর চারা বাজারজাতকরণে কৃষি বিভাগ থেকে তাকে সার্বিক সহযোগিতা দেওয়া হবে।’ সূত্র: বাসস