ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন এখনই ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ভারতে আসছেন না। পশ্চিমবঙ্গ সিআইডি সূত্রের খবর, নতুন যে ১২ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠিত হয়েছে, তারা ডরিনকে ডেকে পাঠালেই তিনি কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
সিট আপাতত অপেক্ষা করছে ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাওয়ার জন্য।
এদিকে বাগজোলা খাল থেকে আনোয়ারুল আজীমের দেহের হাড় এবং মাথার খুলি উদ্ধার করতে এবার ভারতীয় নৌসেনা এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর সাহায্য নেবে সিআইডি।
এমপি আনার খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার কসাই জিহাদ হাওলাদার জানিয়েছিলেন, আজীমের দেহের হাড় এবং মাথার অংশ টুকরো টুকরো করে ভাঙড়ের পোলেরহাট থানা এলাকার কৃষ্ণমাটি এলাকার বাগজোলা খালে ফেলা হয়েছে। সেখানে এত দিন ধরে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালিয়েও কিছু মেলেনি। খালের জল মাটিভর্তি। তাই উন্নতর প্রযুক্তি ব্যবহার করলে ওই হাড় বা মাথার খুলির অংশ উদ্ধার হতে পারে বলে মনে করছেন সিআইডির কর্তারা।
সিআইডির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উন্নতর প্রযুক্তি রয়েছে নৌসেনা এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর কাছে। তাই তাদের ডুবুরি দিয়ে তল্লাশি চালালে আনারের দেহের অংশ উদ্ধার করা যেতে পারে। এটা ধরে নিয়েই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সদর দপ্তর ভবানী ভবনের তরফে। তবে ফলপ্রসূ হবে কি না, তা পরবর্তী সময়ে বোঝা যাবে।
ইতোমধ্যে নিউ টাউনের সঞ্জীবা গার্ডেন আবাসনের ট্যাঙ্ক থেকে যেসব মাংসখণ্ড উদ্ধার হয়েছে, সেগুলো এমপি আনারের কি না, তা জানতে ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। মাংসখণ্ড উদ্ধার হলেও আনারের দেহের হাড়় কিংবা মাথার অংশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে আসবে। তার পরের পর্যায়ে আনারের মেয়ে কিংবা তার কোনো আত্মীয়ের সঙ্গে ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচিংয়ের জন্য পাঠানো হবে ল্যাবরেটরিতে। প্রায় একই সঙ্গে হাড় এবং মাথার খুলি উদ্ধার করা গেলে তদন্তের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে বলে তদন্তকারীদের দাবি।
আনারের আরেক ঘাতক সিয়াম নেপালে আটক হয়েছেন কি না, সেই ব্যাপারে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে নারাজ সিআইডির কর্মকর্তারা। তাকে হাতে পেতে সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা।
খুনের তদন্তে ধৃত কসাই জিহাদকে ক্রমাগত জেরা করছে সিআইডি। সূত্রের খবর, তিনি নানা কথা বলে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে চাইছেন। পুরো বিষয়টি সিয়াম সব জানেন বলেও দাবি করছেন তিনি। সিয়াম ঘটনার পর থেকে ফেরার।
জিহাদ দাবি করেছেন, আমানুল্লাহর নির্দেশেই সিয়াম ঘটনার মাস দেড়েক আগে তাকে মুম্বাই থেকে রাজারহাটে নিয়ে এসেছিলেন। সেখানে ‘মূল চক্রী’ আক্তারুজ্জামানের একটি ভাড়া করা ফ্ল্যাটে রাখা হয়েছিল তাকে। বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হওয়া আমানুল্লাহ এবং শিলাস্তি রহমানের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জিহাদকে জেরা করা হচ্ছে বলে সূত্রের দাবি।
ঢাকার ডিবি সূত্রে সিআইডি জানতে পেরেছে, গত ১৯ জানুয়ারি এমপি আনার কলকাতায় এসেছিলেন। কদিন পরে ফিরে যান। ১৮ মার্চ ফের ভারতে আসেন। এক দিন থেকেই বাংলাদেশে ফিরে যান তিনি।
কলকাতা পুলিশের একাংশের মতে, সিয়াম বাংলাদেশি নাগরিক। বাংলাদেশ পুলিশ তাকে নিজেদের হেফাজতে পেতে চাইছে। নিয়ম অনুযায়ী, সিয়াম নেপালে গ্রেপ্তার হলে তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।
এদিকে আক্তারুজ্জামান শাহীন সম্পর্কে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, অন্ধকার জগতের কিছু বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে আনারের বিরোধ চলছিল। সেই কারণেই এই খুন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে আনার খুনের তদন্তে কলকাতায় ইএম বাইপাস-সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে তদন্ত চালিয়েছে সিআইডি। সূত্রের খবর, আনার ওই হাসপাতালেই চিকিৎসার জন্য যেতেন। সে-সংক্রান্ত খোঁজ নিতেই শুক্রবার তদন্তকারীরা সেখানে গিয়েছিলেন। তবে তারা জানতে পেরেছেন, মে মাসে কলকাতায় আসার পর থেকে আনার হাসপাতালে যাননি। তবে তার আগে এ বছর আরও দুবার তিনি কলকাতায় এসেছিলেন। সে সময় ওই হাসপাতালে আনার গিয়েছিলেন কি না, সে ব্যাপারে খোঁজখবর করছে সিআইডি।
ঢাকার ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, নেপালে আটক হয়েছে ওই খুনের মামলায় অভিযুক্ত সিয়াম হোসেন। আমরা নেপালে রয়েছি বিভিন্নভাবে তদন্ত করছি। যদিও সিয়ামকে দেশে ফেরাতে অনেক সময় লাগবে।