![আয় নেই, তারপরও পৌনে ৩ কোটি টাকার মালিক এমপিপত্নী](uploads/2023/12/09/1702093611.Ranjit_kumar_roy.jpg)
আয় না থাকলেও পৌনে তিন কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর) আসনের সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়ের স্ত্রী নিয়তী রানীর বিরুদ্ধে। তার আগেও আয় ছিল না, বর্তমানেও আয় নেই। তবুও তিনি প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকার সম্পদের মালিক। দেড় দশক আগে ২০০৮ সালে নিয়তীর সম্পদ ছিল ৮৫ হাজার টাকা। নৌকা থেকে বঞ্চিত স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা এমপি রণজিতের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ সময়ের মধ্যে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন এমপি রণজিতও। ২০০৮ সালে নির্বাচন অফিসে দাখিল করা হলফনামায় তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ ছিল ৪ লাখ ১০ হাজার টাকার। আর ২০২৩ সালে সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৬০ হাজার ৮৬৮ টাকা। এর মধ্যে রণজিত রায় মাত্র এক লাখ টাকায় স্ত্রীর নামে কিনেছেন ১২ বিঘা জমি। সে হিসাবে প্রতি বিঘা জমির মূল্য দাঁড়ায় সাড়ে আট হাজার টাকা। অবিশ্বাস্য হলেও হলফনামাতে এ দাম উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা স্বতন্ত্র প্রার্থী এমপি রণজিতের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৮ সালে রণজিত কুমার রায় উল্লেখ করেছিলেন, স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে তার স্ত্রী নিয়তী রানীর সম্পদের মূল্য ৮৫ হাজার টাকা। দেড় দশক পরে এবারের হলফনামায় তিনিই উল্লেখ করেছেন ২ কোটি ৭৩ লাখ ৭৫ হাজার ২৯৮ টাকা। স্ত্রীর বর্তমানে রয়েছে ৫৫ লাখ টাকার একটি প্রাইভেটকার। স্ত্রীর বর্তমানে কোনো আয় নেই। আগেও ছিল না। ২০০৮ সালে রণজিতের বার্ষিক আয় ছিল ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। আর বর্তমানে তার আয় ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৮৩ টাকা।
এইচএসসি পাস রণজিতের আয়ের উৎস পারিতোষিক (উপহার), ব্যবসা, কৃষি ও ভাড়া আদায়। তিনি যশোর-৪ (বাঘারপাড়া-অভয়নগর ও সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন) টানা তিনবারের সংসদ সদস্য। এবার তিনি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন।
২০০৮ সালে নির্বাচনে রণজিত রায় প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। টানা তিনবার সংসদ সদস্য থাকায় তার ভাগ্যবদল হয়েছে। তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ লাফিয়ে বেড়েছে। সঙ্গে তার স্ত্রী নিয়তী রানীও গড়েছেন অঢেল সম্পদ।
২০২৩ সালের হলফনামা বিশ্লেষণে আরও দেখা যায়, এমপি রণজিত কুমার রায় ২০০৮ সালে ৪ বিঘা কৃষি জমি পৈতৃক সূত্রে পেলেও বর্তমানে ১২ বিঘা জমির মালিক তার স্ত্রী। ২০০৮ সালে কোনো জমি বা বাড়ি না থাকলেও বর্তমানে ৩টি বাড়ি রয়েছে। যার মূল্য হলফনামার তথ্য অনুযায়ী ১ কোটি ৪৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা। ২০০৮ সালে রণজিত কুমার রায়ের কাছে এক লাখ টাকা নগদ থাকলেও বতমানে ১ কোটি ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেখিয়েছেন। আগে তার স্ত্রীর কাছে ৭০ হাজার টাকা নগদ ছিল। বর্তমানে তা ৫১ লাখ ১৬ হাজার ৮৪০ টাকা রয়েছে। পূর্বে ব্যাংকিং সঞ্চয় ডিপিএস হিসেবে কোনো টাকা না থাকলেও বর্তমানে ২৭ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯২ টাকা আছে। তার কোনো দেনা নেই। সে হিসাবে প্রতি বিঘা জমির মূল্য দাঁড়ায় সাড়ে ৮ হাজার টাকা। স্ত্রী ও নিজের সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ করলেও হলফনামায় তার সন্তানদের তথ্য উল্লেখ করেননি।
এ বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলার বন্দবিলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সবদুল হোসেন খান বলেন, হলফনামাতে রণজিত যা উল্লেখ করেছেন সব মিথ্যা। আমার ইউনিয়নে যত জমি কিনেছেন তার দামই কোটি টাকা। এ ছাড়া তিন মেয়াদে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়াতে কয়েক কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন।
রাজনৈতিক নেতারা জানান, সাংসদ রণজিত রায়ের পছন্দের বাইরে গত ১৫ বছরে বাঘারপাড়া ও অভয়নগর উপজেলার কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তিনি ও তার স্ত্রী নিয়তী রানী পর্যায়ক্রমে দুই উপজেলার অন্তত ৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরোটা সময়জুড়ে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় একাধিকবার শিরোনাম হয়েছেন দুজনই। নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, রণজিত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নিয়োগ বাণিজ্যে পুনর্বাসিত করেছেন জামায়াত-বিএনপিদের। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাজাকারদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে নিজ দলের নেতা-কর্মীকে নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যা নিয়ে উপজেলা নেতা-কর্মীর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। ফলে দুই উপজেলা ও তৃণমূল নেতা-কর্মীর সঙ্গে বিরোধ প্রকাশ্যে। এসব কারণে সমালোচিত রণজিতকে মনোনয়ন দেয়নি বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।
বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী বলেন, উপজেলার নিয়োগে চাকরি দিয়েছেন বিএনপি ও জামায়াতের লোকজনদের। তিনি আমজাদ রাজাকারের পরিবারকে সমর্থন দিয়েছেন। নানা কাজে সমালোচিত হওয়ার কারণে দল তাকে মনোনয়ন দেয়নি। তিনি তো জামায়াত-বিএনপিদের পৃষ্ঠপোষক। তাদের ভোট নেওয়ার জন্য তিনি দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। দলের কোনো নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে নেই।
সার্বিক বিষয়ে এমপি রণজিত কুমার রায় বলেন, আমার আয় বহির্ভূত কোনো সম্পদ নেই। আয়কর ফাইল অনুযায়ী হলফনামায় তথ্য দিয়েছি। আর আমি কোনো অবৈধভাবে সম্পদ গড়েনি। নিয়োগ বাণিজ্য ও নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ সঠিক নয়।