![তোফায়েল ছাড়া সব ভিআইপির আয়-সম্পদ বেড়েছে](uploads/2023/12/09/1702109517.Barishal_MP.jpg)
বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ২১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ভিআইপি ও আলোচিত সব প্রার্থীর আয় ও সম্পদ বেড়েছে কয়েক গুণ। তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদের আয় ও সম্পদ দুটিই কমেছে। আর সবচেয়ে বেশি অর্থ-সম্পদ বেড়েছে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ্ ও সদর আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের। গত পাঁচ বছরে তার আয় ও সম্পদ বেড়েছে ২৩ গুণেরও বেশি। মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
হলফনামা অনুযায়ী আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ঝালকাঠি-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমির হোসেন আমুর আয় ও সম্পদ দুটিই বেড়েছে। হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আমির হোসেন আমু বছরে আয় করেন ৮৪ লাখ ২৯৫ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ১ কোটি টাকা ও ৭৫ লাখ টাকা মূল্যমানের দুটি মোটরগাড়ি আছে তার। ২০ একর এবং ৬০ বিঘা কৃষিজমি, ৬ কোটি ৪৪ লাখ টাকা দামের তিনটি এবং আরও দুটি আবাসিক ভবন রয়েছে।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও ভোলা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তোফায়েল আহমেদের আয়-সম্পদ দুটিই কমেছে। এ বছরে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী তিনি বছরে আয় করেন ২৫ লাখ ৫৫ হাজার ৫৮ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে ২ কোটি ৫৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯২৫ টাকা নগদ রয়েছে। ২৮ হাজার ৯৪৭ দশমিক শূন্য ১ ইউএস ডলার, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ২ কোটি ১৪ হাজার ৯ টাকা, স্থানীয় আমানতে বিনিয়োগ আছে ৩৬ লাখ ৬০ হাজার, অন্যান্য খাতে রয়েছে ৫ লাখ টাকা এবং ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র। ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের ২৪ দশমিক ৪৬২ একর কৃষিজমি, চারটি ফ্ল্যাট ও ৬ লাখ টাকার ব্যবসায় শেয়ার। দায়দেনার মধ্যে ফ্ল্যাটের বিপরীতে অগ্রিম বাবদ ৪৩ লাখ ৬০ টাকা পাওনা রয়েছে তার।
বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর আয় ও সম্পদ বেড়েছে প্রায় ১১ গুণ। বছরে তিনি আয় করেন ৪ কোটি ১৭ লাখ ৫১ হাজার ৬৫১ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ অর্থ রয়েছে ১ কোটি ৪৭ লাখ ১৯ হাজার ৫০৯ টাকা, ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ২৫ কোটি ৯৪ লাখ ৯৬ হাজার ৮৯ টাকা, শেয়ার রয়েছে ৫১ লাখ ৮০ হাজার টাকা, সঞ্চয়পত্র ৩ কোটি ৮১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১ কোটি ৭৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা দামের দুটি জিপগাড়ি, ৫০ ভরি স্বর্ণ, আসবাবপত্র ২ লাখ টাকা, কৃষিজমি ১৭ একর, অকৃষি জমি ৪১ একর, ঢাকার কলাবাগানে একটি দালান, যার মূল্য ৮৯ লাখ ১১ হাজার ৫৭৫ টাকা। তার জামানতবিহীন ঋণ রয়েছে ৫ কোটি ৬০ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর আয় বেড়েছে প্রায় তিন গুণ। তিনি বছরের আয় করেন ১ কোটি ৫২ লাখ ৮০ হাজার ৭০০ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ১ কোটি ১ লাখ ৯৪ হাজার ২১ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৭ লাখ ৪৩ হাজার ২৫০ টাকা। অন্যান্য খাতে তার রয়েছে ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। রয়েছে ৪ হাজার ৮১৭ দশমিক ৪৯ মার্কিন ডলার, ৫ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের আসবাবপত্র, ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের স্বর্ণ এবং ৯১ লাখ ৯৪ হাজার ১৯১ টাকা দামের ল্যান্ড ক্রুজার মোটরগাড়ি। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ১ দশমিক ৫২৫ একর কৃষিজমি, ৩ দশমিক ৪৩৫ এলাকার অকৃষি জমি, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একটি দালান রয়েছে তার। ২ কোটি ৭৯ লাখ ৯৩ হাজার ২৪৩ টাকার দেনা আছে তার।
পটুয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য আ স ম ফিরোজেরও আয় এবং সম্পদ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। তিনি বাড়ি ও দোকানঘর ভাড়া দিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ ৯৬ হাজার ৫৮০ টাকা, ব্যাংক আমানত ও শেয়ার দিয়ে ১৪ লাখ ৯৮ হাজার ৭০৪ টাকা এবং সংসদ সদস্য হিসেবে বছরে ২০ লাখ ১০ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৩ কোটি ২৫ লাখ ২৩ হাজার ৮৬৪ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২ কোটি, ব্যবসায় শেয়ার ১ কোটি ৯২ লাখ ৬১ হাজার ৯০০ টাকা, ১ কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৪১ টাকা মূল্যমানের দুটি গাড়ি, ২০ হাজার টাকার স্বর্ণ, ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা দামের আবসবাবপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে দুই একর কৃষিজমি, ৩১ শতাংশ অকৃষি জমি, ১ কোটি ২০ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫ টাকা মূল্যে দুটি দালান এবং ৩০ হাজার টাকা মূল্যমানের একটি পিস্তল।
পিরোজপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমও বছরে আয় করেন ৫৭ লাখ ১৩ হাজার ৩৮০ টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ রয়েছে ৮২ লাখ ৫২ হাজার ৫০ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ৩ লাখ ৮ হাজার ৯১৬ ও ৭৯ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ টাকা। ৯৫ হাজার টাকা মূল্যমানের আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিকস পণ্য। ব্যবসায়র মূলধন ১৬ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে ৫ কোটি ১৭ লাখ ৩২ হাজার ৬ টাকা দামের অকৃষি জমি রয়েছে তার।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও বরিশাল-৩ আসনের প্রার্থী রাশেদ খান মেননের বার্ষিক আয় ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৩৪৫ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকার পরিমাণ ১ কোটি ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৯৭১ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১৪ লাখ ৬০০ টাকা। কোম্পানি শেয়ার ৩০ হাজার টাকা, স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ২০ লাখ, ৪৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যমানের জিপগাড়ি, ১ লাখ টাকা মূল্যমানের আসবাপত্র। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকার কৃষিজমি। রয়েছে বন্ধুর কাছ থেকে ২ কোটি টাকা ঋণ।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুকের আয় বেড়েছে কয়েক গুণ। আয়ের উৎস হিসেবে তিনি উল্লেখ করেছেন চাকরির অবসর ভাতা ও সংসদ সদস্য হিসেবে ভাতা থেকে ৫৩ লাখ ৩০ হাজার ৭৫৬ টাকা আয় করেন। এ ছাড়া ফ্ল্যাট বিক্রি থেকে আয় করেছেন ১ কোটি ১৪ লাখ ২৯ হাজার ৯০২ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ রয়েছে ৫৮ লাখ ১১ হাজার ৬০৩ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা আছে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা। কোম্পানি শেয়ার ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ২৬ লাখ ৮৯ লাখ ৪৫০ টাকা মূল্যমানের মোটরগাড়ি, ২০ তোলা স্বর্ণ, ২ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যমানের আসবাবপত্র ইলেকট্রনিকস সমাগ্রী রয়েছে তার। স্থাবর সম্পদের মধ্যে জাহিদ ফারুক শামীমের রয়েছে দালান ও ভিটাবাড়ি দুটি, অকৃষি জমির মধ্যে বরিশালের আলেকান্দা, কক্সবাজার ও বারিধারায় ১ কোটি ১ লাখ ১৯ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যমানের দালান রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিপর্যায়ের কোনো দায়দেনা নেই তার।
বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ শম্ভু বছরে আয় করেন ৫৫ লাখ ৩০ হাজার ১৩১ টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ ৩ কোটি ৩০ লাখ ৮০ হাজার ৩৯২ টাকা, সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ৬৭ লাখ ৪৭ হাজার ৯৪৭ টাকা, দুটি মোটরগাড়ি বাবদ ১ কোটি ৫ লাখ ২৯ হাজার ৩৮৬ টাকা। ২০ ভরি স্বর্ণ, ৬০ হাজার টাকা দামের ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও আসবাবপত্র, ২ লাখ টাকা মূল্যের টু-টু বোর রাইফেল ও একটি পিস্তল রয়েছে। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ৭৯ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মূল্যের কৃষিজমি, ৯ লাখ ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের অকৃষি জমি, জমি কেনা বাবদ অগ্রিম জমা ৪ লাখ টাকা।