বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন ‘একদলীয় পাতানো নির্বাচনে তাদের (আওয়ামী লীগ) মন্ত্রী-এমপি-ডামি-উচ্ছিষ্টভোগী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হলফনামা পড়লে মনে হয় যেন রূপকথার আলাদিনের চেরাগের কাহিনী পড়ছি।’
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়ালি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী।
তিনি বলেন, ‘নিশিরাতের ভোট ডাকাত সরকারের ৫ বছর থেকে ১৫ বছরের মধ্যে মন্ত্রী-এমপি এবং তাদের নেতারা অর্থসম্পদের পাহাড় গড়েছেন। অনেকে প্রায় কপর্দকহীন থেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ নয়, বটগাছ হয়েছেন। তাদের স্ত্রী-সন্তান-শাশুড়িরাও টাকার কুমিরে পরিণত হয়েছেন। সাধারণ ব্যবসায়ীদের লোকসান হলেও আওয়ামী ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকদের কোনো লোকসান নেই।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘হলফনামা ধরে প্রতিদিন সংবাদপত্রে প্রার্থীদের সম্পদের যে বিবরণ প্রকাশিত হচ্ছে, তা দেখে জনগণের চক্ষু চড়কগাছের অবস্থা। একেকজনের সম্পদ ২০০ গুণ, ৩০০ গুণ, ৪০০ গুণ ৫০০ গুণ; কেউ আবার পাঁচ বছরে ৭০০ গুণ সম্পদের মালিক হয়েছেন। অবস্থা এমন হয়েছে যে টাকার পাহাড়ে ঘুমান মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা। যে মন্ত্রী-এমপি নিজেকে কৃচ্ছ্রসাধনের বরপুত্র বলে জাহির করতেন কিংবা যিনি জনসম্মুখে সততার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের নাটক করতেন, তাদের শঠতার বীভৎস বিগ্রহ জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়েছে।’
রিজভী বলেন ‘১০ বছর আগে যে মন্ত্রীর হলফনামায় বার্ষিক আয় হাজারের ঘরে ছিল, তিনিও এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। সবাই জানে, হলফনামায় সম্পদের সামান্যই প্রকাশ পেয়েছে। অবৈধ অর্থ, বিদেশে পাচার করা অর্থ, সেকেন্ড হোম, বিদেশে গচ্ছিত সম্পদের হিসাব নেই।’
অনেকের হলফনামায় ‘মিথ্যা’ তথ্য দেওয়ার অভিযোগ করে রুহুল কবির বলেন, ‘অর্থবিত্ত, সম্পদের ছিটেফোঁটার হিসাব দিলেও কোনো কোনো মন্ত্রী-এমপি (সংসদ সদস্য) হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে দেশকে শায়েস্তা খাঁর আমলে ফিরিয়ে নিয়েছেন। যেমন সিলেট-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী হলফনামায় ১০০ ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন মাত্র এক লাখ টাকা। হিসাবে তার কাছে গচ্ছিত প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম পড়েছে এক হাজার টাকা। কুমিল্লা-৭ আসনের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য প্রাণ গোপাল দত্ত ২২ ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছেন ২১ হাজার টাকা। অথচ বাজারে স্বর্ণের ভরি এখন লাখ টাকার ওপরে। অথচ মন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের এত সম্পদ, টাকার পাহাড় কীভাবে গড়ে উঠেছে, আয়ের উৎস কী-এসব নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই।’
বিএনপি ও তার দোসররা দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটানোর ষড়যন্ত্র করছে বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘বিএনপি নাকি আগামী মার্চে দেশে দুর্ভিক্ষ ঘটাবে। কী হাস্যকর রঙ্গব্যঙ্গ!’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ হচ্ছে চোরের ফ্যাক্টরি। তাদের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, সবাই পায় সোনার খনি, আর আমি পেয়েছি চোরের খনি। গত দেড় দশকে বিনা ভোটের রাজত্বে মন্ত্রী-এমপি, বড় নেতা, ছোট নেতা, পাতিনেতা, খুদে নেতা-সবাই দুর্নীতি, লুটপাট, নৈরাজ্যের স্বর্গ গড়েছেন।’
ট্রেন দুঘর্টনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি বিএনপির
গাজীপুরের ভাওয়ালে রেললাইন কেটে ফেলা এবং বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এর নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি। এই ঘটনায় জড়িত দুষ্কৃতিকারীরা ‘মানবতার শত্রু’ বলেও অভিহিত করেছে দলটি।
বুধবার দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়।
বিবৃতিতে রিজভী বলেন, দু-একটি গণমাধ্যম ট্রেনের এই দুর্ঘটনার দায় গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনরত দলগুলোর ওপর চাপানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে যা গভীর চক্রান্তমূলক। এতেই প্রমাণিত হয় এবং জনগণ বিশ্বাস করে যে, সুপরিকল্পিতভাবেই এ ধরনের নাশকতা ঘটানো হয়েছে।
সবুজ/সালমান/