![বিএনপি ১ জানুয়ারি থেকে আন্দোলন তীব্র করতে চায়](uploads/2023/12/22/1703220583.BNP.jpg)
ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত জনগণকে নিরুৎসাহিত করবে বিএনপিসহ তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলো। এরপর আগামী ১ জানুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে গতি বাড়িয়ে আন্দোলন তীব্র করতে চায় তারা।
আন্দোলন সমন্বয় করার জন্য সারা দেশের জেলায় জেলায় বিএনপি ও জামায়াতের পৃথক কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
জোটে না থাকলেও বিএনপির সঙ্গে মিল রেখে আপাতত কর্মসূচি পালন করছে জামায়াত। এদিকে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছে গণতন্ত্র মঞ্চ, এলডিপি, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটসহ মোট ৩৬টি দল। অন্যদিকে স্বতন্ত্র অবস্থানে থেকে আন্দোলন করছে এবি পার্টি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকলেও তারা এখনো বিএনপির সঙ্গে যোগ দেয়নি। তবে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নির্বাচনের বাইরে থাকা দলগুলোকে বিএনপি ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছে।
সর্বশেষ গত বুধবার রাতে ঢাকা বিভাগ বিএনপির এক ভার্চুয়াল সভায় ভোট বর্জনের আন্দোলনের বিষয়ে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ওই বৈঠকে আলোচনা হয় যে, ভোট বর্জনের আন্দোলনের শতকরা ৬০ ভাগ সুবিধা আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই করে দিয়েছেন। কারণ তাদের মধ্যকার চলমান দ্বন্দ্ব, সংঘাত নির্বাচনের আগে সহিংসতায় রূপ নেবে বলে নেতারা মত প্রকাশ করেন। তারা বলেন, এ কারণে ভয়ে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এমনিতেই যাবেন না। আর বাদবাকিদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিরুৎসাহিত করার কাজ বিএনপির করতে হবে বলে উপস্থিত সিনিয়র নেতারা নির্দেশনা দেন।
তারা বলেন, মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কার্যক্রমের মাধ্যমে আপাতত ভোটারদের নিরুৎসাহিত করার কাজ চালানো হবে। এরপর ১ জানুয়ারি থেকে ভোট বর্জনের পক্ষে মিছিল-মিটিং করা শুরু হবে। সারা দেশে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সমন্বয় করে মিছিল-মিটিং করবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও ঢাকা বিভাগের নির্বাহী কমিটির সদস্য, ২০১৮ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া এমপি প্রার্থী ও আগ্রহী প্রার্থীসহ শতাধিক নেতা ওই বৈঠকে অংশ নেন। আন্দোলনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে এর আগে অন্য সব কটি বিভাগীয় বৈঠকেও ভোট বর্জনের বিষয়ে আলোচনা হয়।
সভায় যোগদানকারী ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় চৌধুরী খবরের কাগজকে জানান, ভোট বর্জনের আন্দোলন এখন শেষ পর্যায়ে চলছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে এই আন্দোলন লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
বিএনপি ও তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের ভোট বর্জনের মুখে আগামী ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মাঠের বিরোধী দল হিসেবে বিএনপি ও তাদের সঙ্গে থাকা দলগুলোর আপাতত লক্ষ্য হচ্ছে আসন্ন নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা; যাতে দেশে-বিদেশে ওই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা না পায়। এ জন্য যতটা সম্ভব কম ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় তারা।
অন্যদিকে নির্বাচনকে ন্যূনতম গ্রহণযোগ্য করতে যতটা সম্ভব বেশিসংখ্যক ভোটারের ভোটকেন্দ্রে উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চাইছে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলসহ ভোটে অংশ নেওয়া দলগুলো। অনেকের মতে, এই কৌশলের অংশ হিসেবেই নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দলের হাইকমান্ড থেকে উৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে আসন্ন নির্বাচনে মোট ৩৮২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ক্ষমতাসীন দল ও তাদের মিত্ররা মনে করছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরাই মানুষকে ভোটকেন্দ্রে নিয়ে আসবেন। অন্যদিকে সরকারের এই কৌশলকে ব্যর্থ করতেই বিএনপি এখন পাল্টা কৌশল নিয়ে মাঠে নামছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. আবদুল মঈন খান খবরের কাগজকে বলেন, “কখন বা কোন দিন আন্দোলন তীব্র হবে, সেটি দিনক্ষণ ঠিক করে বলা সম্ভব নয়। তবে বিএনপি ও সমমনারা যেহেতু নির্বাচন বর্জন করেছে, ফলে জনগণকে আমরা এই সাজানো ‘ডামি’ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছি। এটা আমাদের ঘোষিত শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের পাঁচটি প্রক্রিয়ার মূল একটি অঙ্গ।”
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ড. মঈন খান আরও বলেন, ‘এই প্রহসনের নির্বাচনের পরে কী হবে, সেটি এখনই বলার মতো কোনো অবস্থা সরকার সৃষ্টি করতে পেরেছে বলে আমি মনে করছি না। তবে এটা নিশ্চিত যে, ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে জনগণের এই চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ খবরের কাগজকে জানান, বিএনপি শান্তিপূর্ণ উপায়ে জনগণকে ভোটদানে নিরুৎসাহিত করছে। এখানে ভোট ঠেকানোর কোনো প্রশ্ন নেই। কারণ বিএনপি তো সর্বহারা পার্টি নয় যে, রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করবে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয় হয়ে গেছে। কারণ কতটা দেউলিয়া হলে পরে আজ ভোটারদের কেন্দ্রে আনার জন্য তাদের টানাটানি করতে হচ্ছে!
আন্দোলনের গতি পর্যায়ক্রমে বাড়বে বলে জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম। গতকাল বৃহস্পতিবার খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘আমরা ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করে একতরফা নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র থেকে দূরে রাখার পদক্ষেপ নেব।’ তার মতে, ‘জনগণ ভোটের পক্ষে নয়। কিন্তু এখন পুলিশ ও আওয়ামী লীগ ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে একসঙ্গে চেষ্টা চালাবে। কিন্তু আমরা জনগণকে বোঝাব যে এই পাতানো ও একতরফা নির্বাচনে গিয়ে কোনো লাভ নেই।’