![আ.লীগের মনোযোগ ভোট জমাতেই](uploads/2023/12/23/1703316543.Awami-league.jpg)
ভোটারদের নির্বাচনমুখী করা এবং উৎসবমুখর আবহ সৃষ্টির দিকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তারা মনে করছে, নির্বাচনে বড়সংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা গেলে বিএনপি, জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর আন্দোলন ব্যর্থ হয়ে যাবে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা খবরের কাগজকে এমনটা জানিয়েছেন।
দলের কেন্দ্রীয় ওই নেতারা জানান, বিএনপি, জামায়াত ও সমমনাদের আন্দোলনের কৌশল ও হুমকিতে বিচলিত নন তারা। তারা মনে করেন, বিগত ১৫ বছরে বিরোধীরা তাদের আন্দোলন কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পারেনি, এবারও পারবে না। আন্দোলন যদি সহিসংতার দিকে যায়, তাহলে সে পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরালো ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজে সহযোগিতা করবেন।
আগামী ১ জানুয়ারি থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো নির্বাচন বর্জনে জোরালো আন্দোলন শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইতোমধ্যে তারা ভোটারদের নিরুৎসাহিত করতে লিফলেট বিতরণ শুরু করেছে। শিগগিরই তারা কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
সরকার ও আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, ভোটের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখতে ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে জোরালো চেষ্টা চলছে। আগামী ২৯ ডিসেম্বর থেকে ভোটের মাঠে মোতায়েন হবে সেনাবাহিনী। মূলত নির্বাচন ভণ্ডুলের উদ্দেশ্যে সহিংসতার চেষ্টা দমনে সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমরা এখন সুষ্ঠু, অবাধ ভোট আয়োজনে মনোযোগ দিচ্ছি। ভোট নিয়ে মানুষের মধ্যে বড় ধরনের উৎসাহ দেখা যাচ্ছে। ফলে বিএনপি ভোটারদের নির্বাচনবিমুখ করতে পারবে না। ভোটার উপস্থিতি ৫০ ভাগের ওপরে হবে বলে ধারণা করছি।’
বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলন প্রসঙ্গে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘বিএনপি, জামায়াত নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করে সফল হতে পারবে না। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা এখন অনেক বেশি। সংখ্যার দিক থেকেও এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভালো অবস্থায় আছে। পাশাপাশি আমাদের কর্মীরাও মাঠে আছেন। ফলে বিএনপি আন্দোলন করে সফল হতে পারবে না।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় একাধিক নেতা জানান, নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করা এবং ৫০ শতাংশের বেশি ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে দলের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে নির্দেশনা অনুসারে নির্বাচনি কর্মকাণ্ডে পুরোপুরি মনোনিবেশ করেছেন দলের নেতা-কর্মীরা। প্রতিটি নির্বাচনি আসনেই মাঠে আছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ফলে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলায় আলাদা করে মাঠে নামার প্রয়োজন নেই।
আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, ‘আমরা মাঠেই আছি। বিএনপি আছে আত্মগোপনে। ফলে আমাদের নতুন করে প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামার কিছু নেই। বিএনপি তাদের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামুক। তাদের কর্মকাণ্ডের গতিবিধি দেখে আমরা আমাদের করণীয় ঠিক করব।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ একাধিক নেতা জানান, বিএনপি ও সমমনা দলগুলো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা বাধা দেবেন না। তবে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাওয়া ঠেকানোর চেষ্টা করলে সেগুলোর বিরোধিতা করবেন ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরা। তবে বিরোধীদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে আওয়ামী লীগ। জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে এমন যেকোনো কর্মকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমেই সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন, বর্তমানে সারা দেশে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আছে। আগামী দুই সপ্তাহ এ শান্তিপূর্ণ অবস্থা ধরে রাখতে পারলে ভোটের দিন ভোটার উপস্থিতি ভালো হবে। ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়লে দেশে-বিদেশে এ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য দেখানো সম্ভব হবে। তখন বিএনপি, জামায়াতসহ বিরোধীদের আন্দোলন গতি হারাবে।
দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ নগরীগুলোতে নাশকতা ও সহিংতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে প্রতিবাদে নামতে উদ্বুব্ধ করছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে অতীতে নাশকতার শিকার ভুক্তভোগীরা একাধিক সংগঠনের ব্যানারে মাঠে নামতে শুরু করেছেন। ‘আমরাই বাংলাদেশ’ নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রতীকী পদযাত্রা কর্মসূচি পালন হবে। এতে অংশ নেবেন নাশকতার শিকার আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্যরা এবং ৩০টি সংগঠন।
সহিংসতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং বিশিষ্ট নাগরিকদেরও সরব থাকতে উৎসাহ দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। তারা এসব কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিএনপিসহ বিরোধীদের চাপে রাখতে চায়।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম খবরের কাগজকে বলেন, ‘বিএনপি শুরু থেকেই নির্বাচনকে বানচালের ষড়যন্ত্র করছে। তবে তাদের আন্দোলনে জনগণের সায় নেই। অতীতের মতোই তারা আবারও ব্যর্থ হবে। তারা নাশকতার চেষ্টা করলে তা রোধে যা যা দরকার সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে।’