৭ জানুয়ারি নির্বাচনকে ‘স্পেশাল সার্জিক্যাল ইলেকশন অপারেশন’ বলে মন্তব্য করেছেন গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা। তারা বলেছেন, বিশেষ চিকিৎসার মতো নির্বাচন দেখানোর জন্য গোটা নির্বাচন ব্যবস্থা আয়োজন করা হয়েছে। গোটা রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে, সব নাগরিক অধিকার হরণ করে, সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার বেষ্টনী মানুষদের জিম্মি করে সরকার একটি নির্বাচনের আদল দেখাতে চায়। কিন্তু এই সরকার টিকবে না। যেকোনো সময় গদি উল্টে যেতে পারে।
সোমবার (১ জানুয়ারি) বেলা সাড়ে এগারোটায় পুরানা পল্টন মোড়ে ‘একতরফা ভোট বয়কট করুন’ গণসংযোগপূর্ব সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। পরে মিছিল সহযোগে পল্টন মোড়-দৈনিক বাংলা হয়ে ফকিরাপুল ও বিজয়নগর এলাকায় গণসংযোগ করে মঞ্চের নেতাকর্মীরা।
সমাবেশে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ঢাকায় নিযুক্ত কূটনীতিকরা দেশের সরকারের কাছে একটি নোট পাঠিয়েছেন, সেই নোটে তারা এই নির্বাচনকে নির্বাচন হিসেবে আখ্যায়িত করতে পারেননি। নোটে বলেছেন, স্পেশাল ইলেকশন অপারেশন। বিশেষ নির্বাচনি তরৎপরতা। আমি এটাকে বলব- স্পেশাল সার্জিক্যাল ইলেকশন অপারেশন। এর মানে বিশেষ চিকিৎসার মতো গোটা নির্বাচনকে নির্বাচন দেখানোর জন্য এসব আয়োজন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই নির্বাচনকে ইতোমধ্যে মানুষ প্রত্যাখান করেছে, বর্জন করেছে। এই সরকার ও নির্বাচনি ব্যবস্থার প্রতি মানুষ গণঅনাস্থা জানিয়েছেন। ৭ জানুয়ারি গণভবন থেকে পাঠানো তালিকার প্রার্থীদের বিজয়ী ঘোষণা করা হবে। তাই এই নির্বাচনের সাথে দেশের ৮০-৯০ভাগ মানুষের কোনো সম্পর্ক নেই। ২০১৪ ও ১৮ সালের মধ্যে তামাশার নির্বাচন হতে দেবে না।
সাইফুল হক বলেন, আজকে মানুষের শেষ ভরসাস্থল বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে আওয়ামী লীগ। নিম্ন আদালতকে দলীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের সাজা দিয়ে জেলে পাঠাচ্ছে। এর দ্বিতীয় কোনো নজির নেই আগে কখনো দেখা যায়নি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন অভিযুক্ত করে প্রায়ই বলে, বিএনপি নাকি বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এখন আমরা বলতে চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন করে কাকে দেখাতে চান? কারা আপনাদের মুরব্বি? পরিষ্কারভাবে আমরা বলছি, বিরোধীরা কখনো বিদেশিদের দিকে তাকিয়ে নেই।
তিনি বলেন, সরকার নিজেদের গদি রক্ষার জন্য চক্রান্ত করে একতরফা নির্বাচনের আয়োজন করেছে। এই তামাশার নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে তারা হুমকির মুখে ফেলছে। আজকে আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বলেছে, বাংলাদেশ তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চায়। আমেরিকা বলেছে, নির্বাচনে বাধাগ্রস্থ হলে ভিসানীতি আসবে, বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আসবে। বিদেশিরা যদি বিধিনিষেধ দেয়, তাহলে ক্ষয়ক্ষতি হবে দেশের জনগণের। ভোট ও ভাতের অধিকার চাই, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই আমরা।
সাকি আরও বলেন আজকে জাতীয় নির্বাচনকে স্থানীয় উপজেলা-ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন বানিয়েছে সরকার। নিজেদের দুই একজন প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলছেন, এটা নির্বাচন। এসব ধান্দাবাজি ধোঁকাবাজি সারা দুনিয়ার মানুষ বোঝে। সরকারের পায়ে তলায় মাটি নেই। যে কোনো সময় গদি উল্টে যেতে পারে। এই সরকার টিকবে না, সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। তাই ৭ জানুয়ারি মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে গণজোয়ারের মধ্য দিয়ে ভোট বর্জন করবে ইনশাল্লাহ।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন আরও বক্তব্য রাখেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহবায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, নাগরিক ঐক্যের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমম্বয়ক ইমরান ইমন, জেএসডির সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারী।
সফিক/এমএ/