![হুইপ আতিকের ২৫ বছরের সাম্রাজ্যের অবসান](uploads/2024/01/12/1705037225.Sherpur-1--Atik_A.Lige.jpg)
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-১ (সদর) আসনে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানুর কাছে ৪৩ হাজার ১০৩ ভোটে পরাজিত হয়েছেন পাঁচবারের সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, জাতীয় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক। এ আসনে টানা ২৫ বছর সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি। এবারের নির্বাচনে তিনি প্রথম পরাজয়ের স্বাদ নিলেন।
দুইবারের হুইপ আতিকের এমন পরাজয়ের নেপথ্যে বেশকিছু বিষয় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে বলে জানিয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীরা। তাদের মতে, শেরপুরের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন না হওয়া, অহংকার, দলের সিনিয়র নেতা-কর্মীদের মূল্যায়ন না করা, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নবাণিজ্য, দলের অভ্যন্তরীণ বিভক্তিসহ পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় কাজ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৬ সালে দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে আতিকবিরোধী একটি শক্তিশালী পক্ষ গড়ে ওঠে। এর প্রতিফলন ঘটে ২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জেলা পরিষদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী চন্দন কুমার পাল ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হুমায়ুন কবীর রুমানের কাছে পরাজিত হন।
এরপর ২০১৮ সালের একাদশ ও ২০২৪ সালের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেরপুর-১ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়ে মাঠে নামেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানু। কিন্তু দুই নির্বাচনেই ছানু দলীয় মনোনয়ন পাননি। ফলে দীর্ঘ আট বছর ধরে শেরপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে কেন্দ্র করে আতিউর রহমানের সঙ্গে ছানুর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে আসে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আতিক ও ছানুর পক্ষ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
এদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী ছানুর পক্ষ নিয়ে নির্বাচনি প্রচারে মাঠে নামেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল, জেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ ভট্টাচার্য, সদরের বিভিন্ন ইউনিয়নের বর্তমান ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যানসহ দলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংসদ সদস্য আতিকের পক্ষে প্রচারে মাঠে নামেন দলের অপেক্ষাকৃত কয়েকজন তরুণ নেতা-কর্মী। তার পক্ষে প্রচারে ছিল না চোখে পড়ার মতো ‘স্থানীয় হেভিওয়েট’ কোনো নেতা-কর্মী।
জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল বলেন, ‘শেরপুর জেলার মানুষের প্রাণের দাবি ছিল রেললাইন, মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আতিউর রহমান বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও দীর্ঘদিনেও এসব কাজ করতে পারেননি। শুধু তা-ই নয়, আতিউর রহমান সদর উপজেলাকে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চল দুটো চোখে দেখেন। পশ্চিমাঞ্চলকে উন্নয়নবঞ্চিত রেখেছেন।’
জেলা যুবলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, আতিউর রহমান পাঁচবার সংসদ সদস্য থাকার পরও পাশের জেলা জামালপুরের তুলনায় তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। আর যেটুকু করেছেন সবটুকুই ছিল পূর্বাঞ্চলে। পশ্চিমাঞ্চলে উন্নয়নের কোনো ছোঁয়া লাগেনি। তাই এবারের নির্বাচনে সাধারণ ভোটার ও দলীয় বেশিরভাগ নেতা-কর্মী তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানুকে জয়ী করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল খালেক বলেন, নির্বাচনের আগে আতিউর রহমানের নারীঘটিত কর্মকাণ্ডের ঘটনায় আমরা লজ্জায় পড়েছিলাম। তার কারণে শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন হয়েছে।
নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানু বলেন, শেরপুরে রেললাইন, মেডিকেল কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাব। আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেরপুরবাসীর জন্য এসব উপহার দেবেন। এ ছাড়া আমি স্মার্ট শেরপুর বিনির্মাণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।
উল্লেখ্য, ১৪টি ইউনিয়ন, ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত শেরপুর-১ আসন। এ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ২৩ হাজার ৬৬৪ জন। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৪৩টি কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৩৬ জন ভোটার। যা শতকরা ৫৫.৬৫ ভাগ। এ আসনে আওয়ামী লীগ, স্বতন্ত্র, জাতীয় পার্টি, বিএনএম, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, বিএসপি, তৃণমূল বিএনপির মোট সাতজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।