জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে দলীয় মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন হাজারের বেশি দলীয় নেত্রী। বিশেষ করে মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগসহ সাবেক ছাত্রলীগের নেত্রীরা দলীয় মনোনয়ন পেতে দলের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। একই সঙ্গে আওয়ামীপন্থি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নারী নেত্রী, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকা শিল্পীরাও ক্ষমতাসীন দলের নারী আসনে এমপি হওয়ার দৌড়ে আছেন।
তবে দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড মনোনয়ন দেবে। মূল্যায়নের জায়গা থেকে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের সঙ্গে থেকেছেন অথবা দুর্দিনে দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন এমন প্রয়াত নেতার পরিবারের সদস্যরা মনোনয়ন পেতে পারেন। আগামী ১৪ মার্চ সংরক্ষিত নারী আসনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে ক্ষমতাসীন দল সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু করে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বিক্রি করা হবে। এ সময়ের মধ্যে জমাও দেওয়া যাবে। বিক্রির প্রথম দিনই ৮১০টি মনোনয়নপত্র বিক্রি করেছে দলটি। এ থেকে আয় হয়েছে ৪ কোটি ৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা বিভাগ থেকে ২৭৫টি, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ১৪৯টি, ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে ৬২টি, সিলেট বিভাগ থেকে ২৬টি, বরিশাল বিভাগ থেকে ৫৬টি, খুলনা বিভাগ থেকে ৭৭টি, রংপুর বিভাগ থেকে ৭৫টি এবং রাজশাহী বিভাগ থেকে ৯০টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টি। নির্বাচিত দলীয় স্বতন্ত্র এমপিরা তাদের পক্ষ থেকে সংরক্ষিত আসনে সদস্য নির্বাচনের ক্ষমতা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে দিয়েছেন। ফলে আওয়ামী লীগ তাদের দলের এবং স্বতন্ত্রদের মিলে ৪৮ জন নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে। বাকি দুটি আসনে নারী সংসদ সদস্য দিতে পারবে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি (জাপা)।
এবার মনোনয়ন না পাওয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের শরিক দলের নারী নেত্রীদেরও মূল্যায়ন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সে ক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।
দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মহিলা এমপি হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দলের মনোনয়ন পাওয়ার পরও শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া তিন নেত্রী। এরা হলেন লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের ফরিদুন্নাহার লাইলী, গাইবান্ধা-১ আসনের আফরুজা বারী এবং গাইবান্ধা-২ আসনের মাহবুব আরা গিনি। গতকাল মনোনয়নপত্র কিনেছেন দলটির শিক্ষা ও মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা।
আলোচনায় আছেন মানিকগঞ্জ-২ আসনের সাবেক এমপি মমতাজ বেগম, গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক এমপি মেহের আফরোজ চুমকি। বর্তমান সংরক্ষিত মহিলা এমপিদের মধ্য থেকে এবারও মনোনয়নের দৌড়ে ঢাকায় এগিয়ে রয়েছেন মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা, ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, নাহিদ ইজহার খান, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, চট্টগ্রামের ওয়াসিকা আয়শা খান, খুলনার অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্না সরকার, নরসিংদীর তামান্না নুসরাত বুবলী, কুমিল্লার অ্যারোমা দত্ত, গোপালগঞ্জের নার্গিস রহমান ও খাগড়াছড়ির বাসন্তী চাকমা।
এ ছাড়া আলোচনায় আছেন সাবেক এমপি তারানা হালিম, যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি নাজমা আক্তার ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি সাবিনা আক্তার তুহিন। শহিদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শহিদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ ও শহিদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক শমী কায়সার আলোচনায় রয়েছেন। এ ছাড়া নাটোর-৪ আসনের সাবেক এমপি আবদুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, ছাত্রলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মারুফা আক্তার পপি আলোচনায় আছেন।
নাটক ও সিনেমার অভিনেত্রীদের মধ্যে ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র কিনে আলোচনায় আছেন রোকেয়া প্রাচী, প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন। নিপুণ আক্তার, অপু বিশ্বাস ও অভিনেত্রী সোহানা সাবা।
গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র বিতরণ পরিদর্শন শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় নির্বাচনের পর থেকেই পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে কাজ শুরু করে দেন। জেলা সফরে গিয়েও যোগ্য কাউকে দেখলে তার নাম লিখে রাখেন। সময়মতো সেটা কাজে লাগান।’
মনোনয়নের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক খবরের কাগজকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। দলের দুঃসময়ে ক্ষতিগ্রস্ত ও প্রয়াত নেতাদের পরিবারের সদস্যরাও থাকেন। এবারও এ বিষয়গুলো বিবেচনায় নেত্রী মনোনয়ন দেবেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, “আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলীয় মনোনয়ন বোর্ড বিচার-বিশ্লেষণ করে মনোনয়ন দেয়। সাংগঠনিক টিম হিসেবে নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদের কাছে কারও বিষয়ে জানতে চাইলে আমরা মাঠ পর্যায়ে তার ‘পারফরম্যান্স’ সম্পর্কে জানাই। দলের ত্যাগী ও দুঃসময়ের নেত্রীদের মূল্যায়ন করা হয়।”