দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, ব্যাংক লোপাট ও অর্থ পাচারের প্রতিবাদে সচিবালয় অভিমুখে গণতন্ত্র মঞ্চের বিক্ষোভ মিছিল পুলিশের লাঠিচার্জে পণ্ড হয়ে গেছে। লাঠিচার্জে গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম নেতা গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকিসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমাবেশ শেষে দুপুরে সচিবালয় অভিমুখে যাওয়ার পথে বিক্ষোভ মিছিলটি গুলিস্থানের জিরো পয়েন্টে এলে পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দিলে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ব্যারিকেড ভেঙে নেতাকর্মীরা সামনে এগোতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় মঞ্চের নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে পুলিশ হুইসেল বাজানো এবং লাঠি দিয়ে কর্মীদের সরিয়ে দিতে চাইলে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে জুতা ছুঁড়তে দেখা গেছে। তখন পুলিশ নেতাকর্মীদের ওপর এলোপাতাড়ি লাঠিচার্জ শুরু করেন। নেতাকর্মীরাও পুলিশের উপর চড়াও হন। এতে মঞ্চের জোনায়েদ সাকিসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। মঞ্চের আহত নেতাকর্মীদের সেখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাইলে আবারও লাঠিচার্জ করেন পুলিশ সদস্যরা। এই ঘটনায় পুলিশ ও মঞ্চের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
মঞ্চের দাবি, পুলিশের লাঠিচার্জে তাদের ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। গণসংহতির জোনায়েদ সাকি, সাইফুল হকসহ ছাড়াও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন, জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য শেখ নাসির উদ্দিন, সদস্য ছাত্র ফেডারেশনের আরিফুল ইসলামসহ গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। এসময় ঘটনাস্থল থেকে চারজনকে আটক করেছে বলেও দাবি করেন।
ডিএমপির রমনা জোনের এডিসি শাহ্ আলম মোহাম্মদ আক্তারুল ইসলাম বলেন, ওনারা অনুমতি ছাড়াই এখানে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে এসেছেন। তারপর আমরা তাদেরকে বারবার বলেছি যে তাদের এখানে অনুমতি নেই। ওনারা আমাদেরকে কথা দিয়েছিলেন যে ওনারা সচিবালয়ের সামনে এসে শান্তিপূর্ণ মিছিল করে চলে যাবেন। কিন্তু ব্যারিকেড অতিক্রম করে সচিবলায়ে ঢোকার চেষ্টা করেছেন।
তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে একজনকে আটক করা হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ স্ংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই চলছে।
পুলিশের হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। এই ঘটনায় অন্তত ৫০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমাকে, জোনায়েদ সাকিসহ অনেক মেরেছে পুলিশ।
এর আগে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জোনায়েদ সাকি বলেন, একটা মহল এই সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে মরিয়া হয়ে আছে। সরকার মেগা প্রকল্প করে মেগা লুটপাটের জন্য। এই লুটের টাকা সবাই ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে।
জনগণকে মাঠে নামার আহ্বান জানিয়ে সাকি বলেন, মাঠে না নামলে এই সরকারকে হঠানো যাবে না। বিদেশিদের উপর ভরসা করবেন না তারা শুধু সুবিধা নেয়। জনগণের আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই সরকারকে বিদায় করে আমাদের জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, সরকার যতই হাবভাব দেখাক না কেন রোজায় দাম কমাতে পারবে না। বাংলাদেশ এখন যেভাবে চলে এর থেকে খারাপভাবে একটা দেশ চলতে পারে না।
এদিকে গণতন্ত্র মঞ্চের মিছিলে লাঠিচার্জ ও হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ১২ দলীয় জোট এবং বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। বিবৃতিতে ১২ দলীয় জোটের নেতৃদ্বয় বলেন, সরকার একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল-২ কায়েম করার জন্য বিরোধী দলের কর্মসূচিতে প্রতিনিয়ত বাধা প্রদান ও হামলা করাচ্ছে। এই ডামি সরকার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে জনগণের আন্দোলন দেখলেই পুলিশ দিয়ে হামলা চালাচ্ছে।
শফিক/এমএ/