ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে ফেনীর তিনটি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট চেয়ে প্রার্থীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা নিজেকে বিজয়ী করতে ভোটারদের দিচ্ছেন নানান প্রতিশ্রুতি। শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় নির্বাচনি মাঠে ভোটের আমেজ নেই। তবে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে নির্বাচন অফিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ফেনী সদর, দাগনভূঞা ও সোনাগাজী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে। তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আটজন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ছয়জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাদের মধ্যে শক্তিশালী কেউ না থাকায় নির্বাচনে মাঠে শুধু দোয়াত-কলমের প্রার্থীরা ফুরফুরে মেজাজে আছেন। তারা বিভিন্ন ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ইউনিটের বর্ধিত সভা, মহিলা সমাবেশ ও পথসভা করে নির্বাচনকে সরগরম রাখার চেষ্টা করছেন। এ জন্য অনেকে বলছে নামমাত্র ভোট। মাঠপর্যায়ে নেতা-কর্মীদের মাঝে ভোটের আমেজ নেই।
তবু শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণায় প্রার্থীরা হাটবাজার থেকে শুরু করে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। প্রার্থীদের ব্যানার-ফেস্টুন ছেয়ে গেছে শহর ও গ্রাম। চলছে মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা। তবে নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের তেমন আগ্রহ নেই। সরকারদলীয় প্রার্থী ছাড়া অন্য প্রার্থীদের কোথাও গণসংযোগ বা নির্বাচনি প্রচার করতে দেখা যায়নি। শুধু শহরকেন্দ্রিক সামান্য কিছু পোস্টার ছাড়া আর কিছু নেই তাদের।
ফেনী সদর উপজেলার ভোটার আবুল কাশেম বলেন, ‘ভোট হলেও কি, না হলেও কি। এখানে সবাই জানে কে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন। নির্বাচন তো নামমাত্র। ভোট করে এত টাকা-পয়সা খরচ না করলেও হয়।’
দাগনভূঞা পৌরসভার ভোটার নুরুল আলম বলেন, ‘পুরো উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতনের আধিপত্য। এখানে নির্বাচন করে অন্য কোনো প্রার্থী জয়ী হবে এটি কল্পনা ছাড়া আর কিছু না। তার সঙ্গে যে প্রার্থী রয়েছে তিনি ডামি প্রার্থী। এটি লোক দেখানো নির্বাচন ছাড়া আর কিছু না।’
ফেনী সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী শুসেন চন্দ্র শীল বলেন, ‘আমরা ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আনার জন্য গণসংযোগ, পথসভা ও মহিলা সমাবেশ করছি। আমি মনে করি ভোট একটি গণতন্ত্রের উৎসব। এই উৎসব আমরা সবাইকে নিয়ে করতে চাই। আমি গণসংযোগ ও পথসভায় ভোটারদের ব্যাপক সাড়া দেখছি। আমার বিশ্বাস আগামী ২৯ মে ফেনী সদর উপজেলায় একটি ভোটবিপ্লব ঘটবে। সেই ভোটবিপ্লবে আমার প্রতীক দোয়াত কলমে সর্বোচ্চ ভোট পড়বে।
ফেনী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সোনাগাজী উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান দোয়াত-কলম প্রতীকের প্রার্থী জহির উদ্দিন মাহমুদ লিটন জানান, বিগত পাঁচ বছর এই উপজেলার মানুষের সুখে দুঃখে বিপদে-আপদে সব সময় মানুষের পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি। উপজেলা পরিষদের বরাদ্দের বাইরেও এই উপজেলায় সরকারের অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। আমার প্রতি মানুষের আস্থা, বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। সেই আস্থা এবং বিশ্বাস থেকে মানুষ আগামী ২৯ মে নির্বাচনে আমার প্রতীক দোয়াত-কলমে সর্বোচ্চ ভোট দেবে।
জেলা যুবলীগের সভাপতি ও বর্তমান দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দোয়াত-কলম প্রতীকে প্রার্থী দিদারুল কবির রতন জানান, বিগত ১৫ বছর এই উপজেলার মানুষের সেবা করছি। এই উপজেলার অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন যেমন রাস্তাঘাট ব্রিজ-কালভার্ট করছি। উপজেলার প্রতিটি মানুষের বাড়ির দরজায় আমার শ্রম-ঘাম রয়েছে। এ জন্য উপজেলার মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে আগামীতেও পাশে থাকার সুযোগ দেবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম জানান নির্বাচনের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী অন্য প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। এতে বোঝা যাচ্ছে নির্বাচনি মাঠ ভালো রয়েছে।
জানা গেছে, ফেনী সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দোয়াত-কলম প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শুসেন চন্দ্র শীল, মোটরসাইকেল প্রতীকে মনজুর আলম, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অন্যদিকে দাগনভূঞা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দোয়াত-কলম প্রতীকে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগ সভাপতি দিদারুল কবির রতন, চিংড়ি মাছ প্রতীকে বিজন ভৌমিক, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এ ছাড়া সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দোয়াত-কলম প্রতীকে বর্তমান চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন মাহমুদ লিপ্টন, ঘোড়া প্রতীকে পৌর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর আলম মিস্টার, লাঙ্গল প্রতীকে উপজেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মজিবুল হক, আনারস প্রতীকে মজলিশপুর ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা মহিউদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে দুজন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে।