ঢাকা ১২ আষাঢ় ১৪৩১, বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪

ঢাকার রেজিস্ট্রি অফিসে ৩৮ দুর্নীতিবাজ

প্রকাশ: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:১৪ পিএম
আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১:১৪ পিএম
ঢাকার রেজিস্ট্রি অফিসে ৩৮ দুর্নীতিবাজ
ছবি : সংগৃহীত

ঢাকার তেজগাঁওয়ে অবস্থিত রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে ৩৮জন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে শনাক্ত করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের অর্থ-সম্পদের হিসাব, চাকরির মেয়াদ ও বদলিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাবলি জেলা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে চেয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। এ ছাড়া অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ওই কর্মকর্তাদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করে কমিশনে দাখিল করা হয়েছে। কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

জানা গেছে, তেজগাঁও রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস, রেকর্ডরুম ছাড়াও অন্তত ১১টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে। এসব অফিস ঘিরে তৈরি হয়েছে বিশাল দালাল চক্র। রয়েছে অসাধু কর্মকতা-কর্মচারীদের একাধিক শক্তিশালী চক্র। দালাল এবং অফিসের অসাধু কর্মকতা-কর্মচারীদের যোগসাজশে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি ও নাজেহাল হতে হয় সেবাপ্রার্থীদের। প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় কর্তৃপক্ষ কোনো সুরাহা করতে পারেনি। তবে, সেবাপ্রার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে মাঝে মধ্যে দুদকের কর্মকর্তারা অভিযান চালান। এতে দালালচক্র কয়েকদিন নীরব থাকলেও আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। 

এমন প্রেক্ষাপটে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে গত ১২ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁওয়ে রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে অভিযান চালায় দুদক। ঘুষের বিনিময়ে জমি বা ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন, ভূমি হস্তান্তরে দলিল নিবন্ধনে ঘুষ বা অতিরিক্ত টাকা আদায়, জমির শ্রেণি পরিবর্তনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের সূত্র ধরে দুদকের সহকারী পরিচালক জাফর সাদিক শিবলীর নেতৃত্বে এনফোর্সমেন্ট টিমের সদস্যরা ছদ্মবেশে রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। টিমের সদস্যরা সারা দিন সেখানে অবস্থান করে সেবাগ্রহীতাদের বক্তব্য গ্রহণ করেন। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত মোহরার, এক্সট্রা মোহরার ও ওমেদারদের মধ্যে ৩৮ জনের তালিকা করেন। তালিকায় রয়েছেন- রেকর্ড রুমের নকলনবিশ গৌতম দাস, আব্দুল ওয়াজিত, মহিউদ্দিন, মোহাম্মদপুর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের নকলনবিশ বাবু হাওলাদার, আবদুস সোবহান, আব্দুল মালেক, ইসমাইল হোসেন, ঢাকা সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের ওমেদার লোকমান হোসেন, খিলগাঁও সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের শাহিন মিয়া, পল্লবীর জসিম উদ্দিন, উত্তরার সফি উদ্দিন, ধানমন্ডির আশিক, রানা আহমেদ, সাদ্দাম হোসেন ও জাকির হোসেন। প্রাথমিকভাবে তালিকাটি জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে দিয়েছে দুদকের টিম। 

ওই দিন তাৎক্ষণিকভাবে জেলা রেজিস্ট্রার অফিস থেকে ওই সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর চাকরির ব্যক্তিগত ফাইল থেকে তাদের যোগদান, পদোন্নতি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রের ফটোকপি সংগ্রহ করেন টিমের সদস্যরা। পাশাপাশি তালিকাভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে থাকা অর্থ-সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদন আকারে দুদকে পাঠাতে জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনের সঙ্গে রেকর্ডরুম সম্প্রসারণসংক্রান্ত কাগজপত্র এবং রেকর্ড কিপারদের সর্বশেষ বদলির তথ্য দুদকে জমা দিতে বলা হয়েছে। 

এ ব্যাপারে কথা বলতে জেলা রেজিস্ট্রার অহিদুল ইসলামের সঙ্গে কয়েকবার বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি। 

তবে দুদক কর্মকর্তারা জানান, এনফোর্সমেন্ট টিম অভিযানকালে প্রাপ্ত অনিয়মের বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রারের সঙ্গে কথা বলেন এবং অনিয়মে জড়িতদের বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে কমিশনকে অবহিত করার অনুরোধ জানান। 

অপরদিকে অভিযানে পাওয়া তথ্য ও রেকর্ডপত্র সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই করে কিছু সুপারিশসহ কমিশন বরাবর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন করেছে এনফোর্সমেন্ট টিম। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা দুদকের সহকারী পরিচালক জাফর সাদিক শিবলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘ঢাকার রেজিস্ট্রেশন কমপ্লেক্সে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ৩৮ জনের সম্পদের বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট তথ্য উপাত্তসমূহ জেলা রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে চাওয়া হয়েছে। অভিযানে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত কমিশন বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে। এখন কমিশন সিদ্ধান্ত দিলে পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে। 

চিনি লুট ধামাচাপার প্রথম কাহিনি গোলাপগঞ্জে!

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০২:১৭ পিএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ০২:৩৬ পিএম
চিনি লুট ধামাচাপার প্রথম কাহিনি গোলাপগঞ্জে!
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ছাত্রলীগের চিনি লুটের ঘটনা এখন বহুল আলোচিত এক বিষয়। লুটের চিনি ভাগাভাগি করতে ছাত্রলীগ নেতাদের ফোনালাপ ও জড়িতদের নাম প্রকাশ হওয়ায় কেন্দ্র থেকে কমিটি বিলুপ্তির পর ছাত্রলীগ নেতাদের ধরপাকড়ের মধ্যে একের পর এক চোরাই চিনি লুটের ‘ধামাচাপা’ দেওয়া ঘটনা বের হচ্ছে। এ নিয়ে থানায় মামলা পর্যন্ত হলেও ধামাচাপা দিতে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উঠছে। 

সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায় ছাত্রলীগের চিনি লুটের ঘটনাটির আগে আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে সিলেট সদর, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটে। এর মধ্যে প্রথম ঘটনা ঘটে গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। বিয়ানীবাজারের পর জকিগঞ্জের চিনি লুটের ঘটনা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে প্রকাশ পেয়েছে। স্থানীয় এক ইউপি চেয়ারম্যান ভিডিও বার্তায় বলেছেন, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান আহমদ চিনি লুটের সঙ্গে জড়িত। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী দ্বারা এসব ঘটনা সংঘটিত হওয়ায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মামলা হলেও সংবাদমাধ্যমে আসেনি। ধামাচাপা দিতেই এমনটি করা হয়। 

বিয়ানীবাজার ও জকিগঞ্জের ঘটনা প্রকাশের পর খবরের কাগজের হাতে এসেছে গোলাপগঞ্জে গত বছর ছাত্রলীগের চিনি লুটের একটি ধামাচাপার ঘটনার তথ্য-প্রমাণ। অভিযোগ উঠেছে, চিনি লুটের এ ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগ নেতাদের বাদ দিয়ে মামলা হয়েছে। আর পুলিশকে চাপ দিয়ে তড়িঘড়ি করে মামলার অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। এরই মধ্যে পুলিশ বলছে, বাদীকে চাপ দিয়ে ঘটনার আপস-নিষ্পত্তিও করা হয়েছে। এতে করে মামলাটির বিচারপ্রক্রিয়া এখন বাধার মুখে পড়েছে। 

খবরের কাগজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, সিলেট জেলার সীমান্ত উপজেলাগুলোতে চোরাই চিনি লুটের প্রথম ঘটনাটি ঘটে গোলাপগঞ্জে। এই উপজেলা সিলেট জেলা সদরের পাশে অবস্থিত। সেখানে কোনো সীমান্ত এলাকা নেই। তবে সীমান্ত উপজেলা বিয়ানীবাজার-জকিগঞ্জ-কানাইঘাটের সড়ক যোগাযোগের একটাই পথ গোলাপগঞ্জ। এরই সুবাদে চোরাই চিনির ‘লাইন’ বাণিজ্য ছিল গোলাপগঞ্জে। এ সুযোগে চোরাই চিনির পথ থেকে অন্তত ১১টি লুটের ঘটনা ঘটে। 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, এক মাসে ১৭টি ঘটনায় ৩ কোটি টাকার চিনি লুট হয়েছে। এর মধ্যে একটি ঘটনা কেবল থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়িয়েছে। ওই মামলার পর অবশ্য গোলাপগঞ্জ এলাকা এড়িয়ে চলায় চিনি লুটে ভাটা পড়ে। 

ঘটনাটি গত বছর ২১ নভেম্বরের। সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ব্যবসায়ী মিজানউদ্দিন উপজেলার সুরইঘাট বিওপি প্রাঙ্গণ থেকে নিলামে ৭৪ বস্তা চিনি কিনে সিলেট নগরীর কালীঘাট নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথের মধ্যে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ফুলবাড়ী পূর্বপাড়ার সিলেট টু জকিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে রয়েল কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থেকে তার সব চিনি ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী পরিচয় দেওয়া একদল লোক। এ ঘটনায় চিনির মালিক ব্যবসায়ী মিজানউদ্দিন গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা করেন।

ব্যবসায়ী মিজানউদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ‘সুরইঘাট বিওপি প্রাঙ্গণ থেকে নিলামে ৭৪ বস্তা চিনি কিনে বিক্রির জন্য সিলেট কালীঘাট নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাদের চিনিবাহী দুটি পিকআপ যখন গোলাপগঞ্জ উপজেলায় আসে, তখন গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ফুলবাড়ী পূর্বপাড়াস্থ সিলেট টু জকিগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে আমার চিনির গাড়িগুলো গোলাপগঞ্জ উপজেলার ছাত্রলীগের কর্মীরা ছিনতাই করে। মুখোশ পরিহিত অবস্থায় হাতে ধারালো দা নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে তারা আমার ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার চিনি ছিনতাই করে। ছিনতাইয়ের সময় তাদের মুখোশ পরা থাকলেও তারা পরস্পরের নাম ধরে ডাকাডাকি করছিল। তাই তাদের নাম জানতে পারি এবং পরে আমি গোলাপগঞ্জ থানায় তিনজনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে গোলাপগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করি। এরপর ৩০ বস্তা চিনি উদ্ধার করে আমাকে দেয় গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। শুনেছি যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা এখন জামিনে আছে। এই ঘটনার আর বিস্তারিত জানি না। এখন পর্যন্ত ছিনতাই হওয়া বাকি চিনি আমি ফেরত পাইনি।’

মামলার এজাহারে বলা হয়, আসামি গোলাপগঞ্জ উপজেলার ফুলবাড়ী দক্ষিণপাড়ার শাকিল আহমদ (২৭), হোসাইন আহমদ (২৬), পারভেজ আহমদ নিয়াজ (২৭)সহ অজ্ঞাতনামা। চিনি লুটের আগে নামোল্লেখ করা আসামিরা সহযোগীদের নিয়ে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা দিয়ে তাদের গাড়ির গতিরোধ করে। তারা সবাই মুখোশ পরা ছিল। হাতে ধারালো দা নিয়ে হত্যার ভয় দেখিয়ে পিকআপ থেকে চিনির মালিকসহ কয়েকজনকে নামতে বাধ্য করে এবং বলপ্রয়োগ করে তাদের সিএনজি অটোরিকশাতে তোলে। তখন তারা চিৎকার করে হুমকি-ধমকি দিয়ে চিনিভর্তি দুটি পিকআপ চালিয়ে ফুলবাড়ী দক্ষিণপাড়ার রোডে ধরে নিয়ে চলে যায়। 

এ সময় চিনির মালিক মিজান ব্যবহৃত সিএনজি অটোরিকশাটির পেছনে ‘শাহিন অ্যান্ড তামিম পরিবহন’ লেখা দেখতে পান। চিনি ছিনতাইকারীদের পরস্পরের নাম ধরে ডাকাডাকিতে তাদের নাম জানতে পারেন। ঘটনাস্থলের আশেপাশের স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাদের পরিচয় শনাক্ত করেন। 

পরে চিনির মালিক গাড়ির (মেট্রো-নম্বর-১১-১৯৩৫) মালিককে ফোনে ঘটনার বিষয়ে জানালে, গাড়িতে সংযুক্ত জিপিএস ট্রেকারের সহায়তায় তারা ফুলবাড়ী দক্ষিণপাড়া গ্রামের একপ্রান্ত থেকে ছিনতাইকারীদের ফেলে যাওয়া পিকআপ দুটি উদ্ধার করেন। তবে এর আগেই ছিনতাইকারীরা গাড়িতে থাকা ৭৪ বস্তা চিনি (প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি করে ৩ হাজার ৭০০ কেজি) ভারতীয় চিনি ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এই চিনির মূল্য ধরা হয় মূল্য ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এরপর গোলাপগঞ্জ থানায় সংবাদ দিলে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযান চালায়। পারভেজ আহমদ নিয়াজ নামে মামলার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে চিনি লুটে ব্যবহৃত সিএনজিচালিত অটোরিকশা জব্দ করা হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, এক আসামি গ্রেপ্তার ও লুটে ব্যবহৃত যান জব্দ করার পর গোলাপগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি তাজুল ইসলাম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আকবর আলী ফখর তদবির শুরু করেন। তারা ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার সর্বশেষ চেষ্টায় পুলিশকে আর কোনো আসামি গ্রেপ্তার না করার জন্য চাপ দেন। চাপের মুখে পুলিশ তড়িঘড়ি করে তদন্ত করে দ্রুত আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করে রাজনৈতিক চাপ থেকে রক্ষা পায়। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গোলাপগঞ্জ থানার ওসি (পরিদর্শক, তদন্ত) সুমন চন্দ্র সরকার খবরের কাগজকে বলেন, ‘এ মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। সে সময়ে ওই চিনি ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বেশ আলোচিত হয়েছিল। তাই আমাদের জন্য চিনি উদ্ধার ও আসামি আটক করা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু তখন আমরা অভিযান চালিয়ে সফলভাবে চিনি উদ্ধার ও আসামি আটক করি। এ ঘটনায় সারা রাত অভিযান করে ৩৯ বস্তা চিনিসহ এ দুজনকে আটক করা হয়। এটা নিয়ে ওই দিন বিকেল থেকে বিভিন্ন ঘটনা হয়। ওই অভিযানটা আমিই পরিচালনা করি। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হলো আমরা পরে জানতে পারি, মামলার বাদী আসামিদের সঙ্গে আপস করে নেন। কিন্তু আমরা এসব আমলে নেইনি। এই ধরনের ঘটনায় আপস করা মানে ছিনতাইকে প্রমোট করা। আমরা ঠিকই আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এই মামলা বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।’

বেনজীর দুর্নীতি: অনুসন্ধানের প্রতিবেদন চূড়ান্ত

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১১:৫৩ এএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ০২:২৮ পিএম
বেনজীর দুর্নীতি: অনুসন্ধানের প্রতিবেদন চূড়ান্ত
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের জন্য আইনে নির্ধারিত ৪৫ কার্যদিবস শেষ হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার (২৭ জুন)। ইতোমধ্যে অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে এই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা ও পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে। 

প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। কমিশন অনুমতি দিলে এই নোটিশ জারি করা হবে। সেক্ষেত্রে অনুসন্ধানের মেয়াদ আরও ১৫ কর্মদিবস বাড়ানো হবে। তবে, প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে কমিশন চাইলে মামলার অনুমোদনও দিতে পারে। গতকাল সোমবার দুদকের একাধিক কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

দুদক সূত্র জানিয়েছে, বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের অগ্রগতি প্রতিবেদন দুই ভাগে করা হয়েছে। একটি হলো বেনজীরের অর্থসম্পদ এবং অপরটি তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের অর্থসম্পদ-সংশ্লিষ্ট। একটি প্রতিবেদনে বেনজীরের বিরুদ্ধে সবরকম তথ্য প্রমাণ যুক্ত করা হয়েছে। অপরটিতে তার স্ত্রী জিশান মির্জা, দুই মেয়ে- ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ যুক্ত করা হয়েছে। 

দুটি প্রতিবেদনেই তাদের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ পাচারের বিবরণ তুলে ধরা হয়েছে। অনুসন্ধানে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলা করা যেতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে মামলার আগে তাদের সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারির অনুমতি চাওয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে আইন অনুসারে অনুসন্ধানের মেয়াদ আরও ১৫ কর্মদিবস বাড়াতে হবে। আবার কমিশন চাইলে নোটিশ জারি ছাড়াই মামলার অনুমোদন দিতে পারে। তাতে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটবে না। 

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টে দুদকের প্যানেল আইনজীবী খুরশীদ আলম খান খবরের কাগজকে বলেছেন, ‘বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির যে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে, তাতে এখন দুদক চাইলে মামলা করতে পারে। এ জন্য সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা ও কমিশন নেবে। উচ্চ আদালতের রায় অনুসারে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারির বাধ্যবাধকতা এখন আর নেই। কমিশন চাইলে নোটিশ জারি ছাড়াই অনুসন্ধান প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মামলা করতে পারবে।’

ঢাকা জজ কোর্টে দুদকের আরেক প্যানেল আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর খবরের কাগজকে বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ দেশে না কি বিদেশে আছেন, সেটি মুখ্য বিষয় নয়। দুদক চাইলে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি করতে পারবে। বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানরা যেসব ঠিকানা ব্যবহার করেছেন সেই সব ঠিকানায় নোটিশ জারি করা যাবে। তারা অনুপস্থিত থাকলে বাসস্থানের গেটে তা লটকিয়ে দেওয়া হবে। তবে, দুদক যদি মনে করে যে অনুসন্ধান প্রতিবেদনে উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণ রয়েছে, সেক্ষেত্রে নোটিশ জারি ছাড়াই মামলা করতে পারবে। 

হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী এ ধরনের নোটিশ করা এখন আর বাধ্যতামূলক নয়। দুদকের আইন অনুযায়ী- সম্পদের হিসাব না দেওয়া, তথ্য গোপন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়ার শাস্তি নির্ধারিত আছে তিন বছর কারাদণ্ড। জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের শাস্তি ১০ বছর কারাদণ্ড ও সমুদয় সম্পদ বাজেয়াপ্ত। এ ছাড়া, মানি লন্ডারিংয়ের শাস্তি ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১২ বছর কারাদণ্ড এবং পাচার করা অর্থসম্পদের দ্বিগুণ জরিমানার বিধান রয়েছে।’ 

বেনজীরের স্ত্রী-সন্তানও দুদকে হাজির হননি: দুদকের তলবে সাড়া দেননি বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জিশান মির্জা, দুই মেয়ে- ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাশিন রাইসা বিনতে বেনজীর। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে গতকাল সোমবার তাদের হাজিরা নির্ধারিত ছিল। তবে তারা হাজির হননি। এর আগে গত রবিবার দুদকে বেনজীর আহমেদের হাজিরা নির্ধারিত থাকলেও তিনি হাজির হননি। 

এ বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেনজীর আহমেদের স্ত্রী ও সন্তানরা দুদকে ব্যক্তিগত শুনানিতে হাজির হননি। গত বৃহস্পতিবার বেনজীর আহমেদসহ তার স্ত্রী ও সন্তানদের লিখিত বক্তব্য দুদক কার্যালয়ে জমা হয়েছে। দুদক আইন ২০০৪ ও বিধিমালা ২০০৭ অনুসারে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ 

বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে গত ২১ এপ্রিল অনুসন্ধান শুরু হয়। আইন অনুযায়ী, অনুসন্ধানের জন্য নির্ধারিত ৪৫ কর্ম দিবসের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২৭ জুন বৃহস্পতিবার। তবে সম্পদের হিসাব চেয়ে নোটিশ জারি করা হলে অনুসন্ধানের মেয়াদ বাড়বে ১৫ কর্ম দিবস। ফলে, অতিরিক্ত সময়সহ অনুসন্ধানকাজ শেষ করতে ২১ জুলাই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই নোটিশ জারি করা হলে জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে মামলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদক কর্মকর্তারা। 

বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের নামে এখন পর্যন্ত ঢাকায় ১২টি ফ্ল্যাট, দেশের বিভিন্ন জেলায় ৬৯৭ বিঘা জমি, একাধিক মৎস্য ও গরুর খামার, রিসোর্ট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, বিও অ্যাকাউন্টসহ ৩৭টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সিটিজেন টেলিভিশনসহ ৫টি পূর্ণ মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ৮টি ব্যবসায়িক শেয়ার পাওয়া গেছে। আদালতের নির্দেশে এসব অর্থ-সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ করা হয়েছে। 

অবৈধ সম্পদের অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলাকালে বেনজীর আহমেদ গত ৪ মে সপরিবারে দেশ ছাড়েন। তিনি ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ছিলেন। এর আগে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের এপ্রিল পর্যন্ত র‍্যাবের মহাপরিচালক ছিলেন। তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হিসেবেও দীর্ঘ সময় দায়িত্ব পালন করেন। 

৮ জুলাই চীন যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী প্রত্যাশা ও ভারসাম্যের সফর

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১১:২০ এএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১১:২০ এএম
প্রত্যাশা ও ভারসাম্যের সফর
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংসদ ভবনে তার অফিস কক্ষে চীনের কমিউনিটি পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ জুলাই তিন দিনের সফরে চীনের রাজধানী বেইজিং যাচ্ছেন। মাত্র কয়েক দিন আগে তিনি ভারত সফর করে এসেছেন। ভারতের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে চীনের প্রসঙ্গও উঠেছিল। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ঢাকার সঙ্গে বেইজিংয়ের সম্পর্ক নিয়ে ‘নিশ্চিন্ত’ হতে চায় নয়াদিল্লি। এ অবস্থায় সফরকালে নয়াদিল্লি-বেইজিংয়ের মধ্যে ভারসাম্য আনার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা রয়েছে ঢাকার কর্মকর্তাদের মধ্যে। 

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা বলছেন, চীন ও ভারত উভয় দেশই বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুটি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দুই ধরনের। বাংলাদেশের তিন দিক ঘিরে রয়েছে ভারত। অন্যদিকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও ভূ-রাজনীতির মতো বিষয়গুলো নিয়ে চীনের সঙ্গে একধরনের সম্পর্ক বজায় রেখে চলছে ঢাকা। 

এ প্রসঙ্গে চীনে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘চীন-ভারত উভয় দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। বাংলাদেশ ভারত ও চীনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রেখেই চলছে। উভয় পক্ষের সংবেদনশীলতা ও স্পর্শকাতরতা বিবেচনায় নিয়ে ঢাকাকে এগোতে হবে।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, ভারত তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি না করায় বাংলাদেশ বর্ষা মৌসুমের পানি ধরে রেখে সেচকাজের মেগা প্রকল্প করার পরিকল্পনা করেছে। ১ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের এই ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’য় চীনের অর্থায়ন করার কথা ছিল। গত ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত বিষয়গুলো এমনই ছিল। 

কিন্তু ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর পরই ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রা ঢাকা সফরের সময় তিস্তা প্রকল্পে ভারতের অর্থায়নের আগ্রহের কথা জানান। সে সময় ভারতের বিখ্যাত দৈনিক পত্রিকা দ্য হিন্দু তিস্তা প্রকল্প নিয়ে দিল্লি-বেইজিংয়ের এই ‘টানাটানি’ নিয়ে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূলত তার পর থেকেই দিল্লি-বেইজিংয়ের সঙ্গে সম্পর্কে ঢাকার ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা নিয়ে আলোচনা বেশি হচ্ছে কূটনৈতিক মহলে। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দিল্লি সফরেও ভারসাম্য রক্ষার বিষয়টি আলোচিত হয়। 

এ ছাড়া বাংলাদেশ ঘিরে ভূ-রাজনীতি নিয়েও ভারত ও চীনের মধ্যে রয়েছে তীব্র প্রতিযোগিতা। ভারত চায় ইন্দো-প্যাসিফিকে বাংলাদেশ তার সঙ্গে থাকুক। চীনের প্রত্যাশাও বাংলাদেশ তার সঙ্গে থাকবে। ফলে এশিয়ার ন্যাটো বলে পরিচিত জোট কোয়াডে ভারত চাইলেও ‘চীনের কারণে’ বাংলাদেশ যোগ দেয়নি। কোয়াড অর্থ চতুর্ভুজ এবং ভারত, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র এই জোটের সদস্য। 

এ প্রসঙ্গে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘কোয়াড পুরোপুরি চীনবিরোধী একটা জোট। আমাদের দুই দেশের সঙ্গেই সম্পর্ক রাখা দরকার। ভারত আমাদের তিন দিকে বেষ্টন করে আছে। আবার চীন ভূ-রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। মায়ানমারে বাংলাদেশের বিরাট স্বার্থ রয়েছে এবং চীনই একমাত্র দেশ, যাদের মায়ানমার সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তবে এসব নিয়ে ভালো অ্যাসেসমেন্ট করতে পারব প্রধানমন্ত্রী চীন সফর শেষ করে আসার পর।’

এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ঝুঁকিও দেখছেন বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের সভাপতি ও সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির। একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে গত রবিবার তিনি বলেছেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি মাথায় রেখে বাংলাদেশ যে সঙ্গে আছে সেটা নয়াদিল্লি দেখাতে চাইছে বলে আমার মনে হয়। যেহেতু দেশ দুটির রেষারেষি বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে, তাই ঢাকার জন্য বিষয়টি ঝুঁকিপূর্ণও বটে।’ 

সোমবার ঢাকা সফররত চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লি জিয়ান চাওয়ের সঙ্গে বৈঠকের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘আজ শুধু উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হয়নি।’

সফরকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বেইজিং
চার দিনের সফরে ঢাকায় অবস্থান করছেন চীনের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী লি জিয়ান চাও। তিনি চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে তিনি বৈঠক করেন। 

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের চীনা এই মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের জন্য অধীর আগ্রহে আমরা অপেক্ষা করছি। সফরটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে বলে আমরা আশাবাদী। প্রায় দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের জন্য আমরা খুবই উন্মুখ। সুতরাং আমাদের অনেক প্রত্যাশা আছে এবং আমি নিশ্চিত যে আমাদের দুই সরকার আগামীতে আমাদের দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার জন্য একটি সাধারণ পরিকল্পনা তৈরি করবে।’

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে চীনা এই মন্ত্রী জানান, ‘দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, সম্পর্কের ইতিহাস এবং বন্ধুত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে গভীর ও ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ১৯৭৫ সাল থেকে ৫০ বছর ধরে সম্পর্ক অটুট আছে।’

চীন বাংলাদেশ অবকাঠামো, কৃষি, বিনিয়োগ, উৎপাদন ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কাজ করতে পারে মন্তব্য করে লি জিয়ান চাও বলেন, ‘চীন প্রতিবেশী এবং আধুনিকীকরণের অভিযাত্রার অংশীদার হিসেবে একটি ব্র্যান্ড। আমরা এসব কাজ করব বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) কাঠামোর মধ্যে থেকে।’

সম্প্রতি শেখ হাসিনার আসন্ন সফর সম্পর্কে এক সেমিনারে এক প্রশ্নের উত্তরে ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সফর একটি ঐতিহাসিক ঘটনা হবে। এটি হবে একটি গেম চেঞ্জার। এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।’

শীর্ষ বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে যা থাকছে
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেইজিং সফরকালে দুই দেশের মধ্যে সাতটি সমঝোতা ও চারটি দলিল সই হতে পারে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (জিডিআই), বাণিজ্য সহযোগিতা, বিনিয়োগ সুরক্ষা ডিজিটাল অর্থনীতি, সমুদ্র অর্থনীতি এবং মৈত্রী সেতু নির্মাণ ও সংস্কার। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, চীনা রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকে আলোচনা হতে পারে তিস্তা প্রকল্পে অর্থায়ন ও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়েও। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা ঢাকার অন্যতম মূল এজেন্ডা। মায়ানমারের ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে বিপাকে পড়া বাংলাদেশকে সবচেয়ে ভালো সহযোগিতা দিতে পারে চীন। কারণ মায়ানমারের সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি- উভয়ের সঙ্গে দেশটির ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ ছাড়া বিআরআই-জিডিআই নিয়েও আলোচনা হবে। 

শীর্ষ বৈঠকে আলোচনার অন্যতম বিষয় হিসেবে রয়েছে চীনের ৭০০ কোটি ডলারের ঋণ। এর মধ্যে ২০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ ঋণ স্থানীয় মুদ্রায় (টাকা-ইউয়ান) দিতে চায় দেশটি। শীর্ষ বৈঠকে বিষয়টির ফয়সালা হতে পারে।

ডিমের বাজারে অস্থিরতা আর কতদিন!

প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ১০:৫৭ এএম
আপডেট: ২৫ জুন ২০২৪, ১১:০৫ এএম
ডিমের বাজারে অস্থিরতা আর কতদিন!
ছবি : খবরের কাগজ

গত ঈদে রাজধানীর বড় বড় বাজারে ডিমের ডজন ১৪০-১৫০ টাকায় নামলেও আগারগাঁওয়ের তালতলা বাজারে সোমবার (২২ জুন) মুকিম ব্রাদার্স ডজন ১৫৫ টাকায় বিক্রি করেছে। অন্য ছোট ছোট বাজারের বিক্রেতারাও এভাবে ভোক্তাদের কাছ থেকে বেশি দাম আদায় করছেন। তারা ডিমের বাজার অস্থির করে দিচ্ছেন। কতদিন অস্থিরতা চলবে? এর জন্য দায়ী কে? সরকার খুচরা পর্যায়ে ১২ টাকা পিস বা ১৪৪ টাকা ডজন দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু তার ধারেকাছে নেই খুচরা বিক্রেতারা। ইচ্ছামতো দাম আদায় করছেন তারা। 

খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বলছে, খামার থেকে প্রতি পিস ডিম বিক্রি করা হচ্ছে ১০ টাকা ২৫ পয়সা। তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতিই দাম বাড়িয়ে-কমিয়ে অস্থির করছে বাজার, যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। ভোক্তাদের বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। 

রমজানে ডিমের চাহিদা কমে যাওয়ায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কম দামে কিনে বিভিন্ন হিমাগারে মজুত করেছিল। ভোক্তা অধিদপ্তর আলুর বিভিন্ন হিমাগারে অভিযানে গেলেই লাখ লাখ ডিম ধরা পড়ে। এর পর থেকে আর কমছে না ডিমের দাম। যে যেভাবে পারছে, বেশি দাম আদায় করছে।

সোমবার মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটের কামাল স্টোরের খুচরা বিক্রেতা কামাল বলেন, ‘রমজানে কম দাম থাকলেও ঈদের পর থেকে বাড়তে থাকে দাম। আমরা তেজগাঁও আড়তে বেশি দামে কিনেছি। এ জন্য বেশি দামেই ১৫০ টাকা ডজন বিক্রি করতে হচ্ছে। এই বড় বাজারে ১৫০ টাকা ডিম বিক্রি হলেও একটু দূরে শেখেরটেক ১০ নম্বর মসজিদ মার্কেটে ১৫৫ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করা হচ্ছে বলে আলমগীর নামে এক ভোক্তা অভিযোগ করেন। বাসাবো বাজারের সিরাজ স্টোরের সিরাজও বলেন, ১৬০ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করা হচ্ছে। এভাবে যে যার মতো দাম আদায় করছেন ভোক্তাদের কাছ থেকে। 

তেজগাঁও ডিম আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আমানউল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল ১০০ ডিম ১ হাজার ১১০ থেকে ১ হাজার ১২০ টাকা বিক্রি করা হয়, অর্থাৎ ১১ টাকা ১০ পয়সা (১৩৩ টাকা ডজন) থেকে ১১ টাকা ২০ পয়সা পিস (১৩৪ টাকা ডজন) বিক্রি হয়।’ দাম বাড়তির ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সরবরাহ কম। ঈদের পর হোটেল ও রেস্টুরেন্ট খুলে যাওয়ায় চাহিদা বাড়ছে। এ জন্য খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ছে।’

খামারিদের অভিযোগ: তিন-চার দিন ডিমের দাম বাড়িয়ে-কমিয়ে তেজগাঁও ডিম আড়ত সমিতির লোকেরাই অস্থির করে তুলছেন ডিমের বাজার। এমন অভিযোগের ব্যাপারে এই আড়তদার বলেন, ‘এটা ভিত্তিহীন। আমরা প্রতিদিন মাত্র ১৫-২০ লাখ পিস ডিম বিক্রি করি। তাহলে আমরা কীভাবে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত? আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনে থাকি। খামারিরা তাদের (মিডিয়া) কাছে ডিম বিক্রি করে। তাহলে আমাদের হাত কোথায়?’ সমিতির অন্য সদস্যরাও বলছেন একই কথা। তারা বলেন, মিডিয়ার কাছে ডিম কেনা হয়। তারা যে দাম ধরেন, সেই দামেই কেনা হয়। 

অন্যদিকে খামারিদের সংগঠন বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) বলছে, রাজধানীর তেজগাঁও ডিম ব্যবসায়ী সমিতি ও কিছু করপোরেট প্রতিষ্ঠান মেসেজ দিয়ে ডিমের দাম নির্ধারণ করে। রমজানে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় চাহিদা কমে যায়। এতে হঠাৎ করে তারা দামও কমায়। এরপর সিন্ডিকেট করে তারা দাম আরও কমিয়ে তা কিনে রাতের অন্ধকারে বিভিন্ন হিমাগারে সংরক্ষণ করে।

বিপিএর সভাপতি সুমন হাওলাদার এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘ডিমের বাজারে শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে। যে যা-ই বলুক, তেজগাঁও ডিম আড়ত সমিতিই অস্থির করছে বাজার। তারা কম দামে তিন-চার দিন ডিম কেনার মেসেজ দেয় খামারি ও মিডিয়ার কাছে। এভাবে কেনার পর প্রায় দিন আড়তে রেখে দেয়। তারপর দাম বাড়ার মেসেজ দিয়ে কম দামে কেনা ডিম বেশি দামে বিক্রি করে। এভাবে তারা অস্থির করছে বাজার। তেজগাঁও আড়তে প্রতিদিন ১৫-২০ লাখ ডিম বিক্রি হলেও তারা সারা দেশে চার কোটি ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রতিদিন তারা সারা দেশের বিক্রেতা ও খামারিদের বাজারদর এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দিচ্ছে।’

সরকার ১৪৪ টাকা ডজন বিক্রি করার ঘোষণা দিলেও তার ধারেকাছে নেই কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে সুমন হাওলাদার বলেন, ‘প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে কম দাম নির্ধারণ করে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এর ভিত্তিতে ১৪৪ টাকা ডজন বিক্রি করার ঘোষণা দেয়। কিন্তু খামার পর্যায়েই ১০ টাকা ২৯ পয়সা উৎপাদন খরচ হচ্ছে। লোকসান দিয়ে ১০ টাকা ২৫ পয়সা বিক্রি করতে হচ্ছে। মধ্যস্বত্বভোগী বা মিডিয়া ১০ পয়সা লাভ করবে। আড়তদাররা ৪০ পয়সা লাভ করে ১০ টাকা ৬৫ পয়সা বিক্রি করার কথা। এরপর ভ্যানগাড়ির ডিম ব্যবসায়ীরা ৩৫ পয়সা লাভ করার পর খুচরা বিক্রেতারা ৬৫ পয়সা লাভ করবেন। এতে ক্ষুদ্র খামারিরা হারিয়ে যাচ্ছেন। তাদের ঠেকাতে হলে খামার পর্যায়ে ১১ টাকা পিস ধরে সব হাত মিলে ১২ টাকা ৫০ পয়সা পিস খুচরা পর্যায়ে যৌক্তিক দাম ধরতে হবে। তাতে টিকবেন খামারিরা।’

তাহলে তো বাজারে আরও দাম বেড়ে যাবে। এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘খামারিদের মেরে করপোরেটরা মার্কেট দখল করে নিচ্ছে। কারণ করপোরেটদের উৎপাদন খরচ কম, ৮ টাকা ৪৫ পয়সা। এ জন্য তারা কম দামেই বিক্রি করছে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, ‘যখন যেখানে দরকার মনে করছে ভোক্তা অধিদপ্তর ছুটে যাচ্ছে। ঈদের আগে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিদপ্তর বিভিন্ন হিমাগারে অভিযান চালিয়ে লাখ লাখ ডিম জব্দ করেছে। গত বছর কারসাজি করার জন্য কাজী ফার্মসসহ অনেক কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। তা আমলে নিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তারা সেটা পালন করলে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।’

এ ব্যাপারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (উন্নয়ন) ড. এ বি এম খালেদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আগে ১০ টাকা ৫০ পয়সা দাম নির্ধারণ করে মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলাম। সেটা এখন কার্যকর নেই। বর্তমানে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কাজ করছে। আমরাও সঙ্গে আছি। খুব তাড়াতাড়ি নতুন তালিকা প্রকাশ করা হবে।’ তবে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর জানিয়েছে, পাইকারি পর্যায়ে ১০ টাকা ৫০ থেকে ১১ টাকা পিস বা ১২৬ থেকে ১৩২ টাকা ডজন বিক্রি করার কথা।

সম্পদ বৈধ: বেনজীরের সাফাই

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪, ০২:৪০ পিএম
সম্পদ বৈধ: বেনজীরের সাফাই

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) শেষ দিনেও হাজির হননি পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ। তবে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকে বক্তব্য পাঠিয়েছেন। এতে তার নিজের এবং স্ত্রী-সন্তানদের অর্জিত অর্থ-সম্পদ বৈধ বলে দাবি করেছেন। তার স্ত্রী-সন্তানদের আয় দেখানো হয়েছে ব্যবসা থেকে। নিজের আয় দেখানো হয়েছে বেতন-ভাতা, ঋণ, বিয়েবার্ষিকী, জন্মদিনে পাওয়া উপহার। লিখিত বক্তব্যে প্রতিটি সম্পদের উৎস তাদের আয়কর নথির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তুলে ধরা হয়েছে। 

এদিকে সর্বশেষ তলবেও বেনজীর আহমেদ হাজির না হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন। 

তিনি রবিবার (২৩ জুন) সাংবাদিকদের বলেন, ‘বেনজীর আহমেদ গত বৃহস্পতিবার দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত বক্তব্য পাঠিয়েছেন। এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য কি না, তা অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা বিবেচনা করবেন।’

দুদক সূত্র জানিয়েছে, ইমতিয়াজ ফারুক অ্যাসোসিয়েটের ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক ও অ্যাডভোকেট সাইদুল ইসলাম অন্তরের স্বাক্ষর করা বেশ কিছু কাগজ বৃহস্পতিবার দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে বেনজীরের বক্তব্যও ছিল। বক্তব্যে মূলত তার নিজের এবং স্ত্রী-সন্তানদের অর্জিত অর্থ-সম্পদ বৈধ বলে দাবি করা হয়েছে। তার স্ত্রী-সন্তানদের আয় দেখানো হয়েছে ব্যবসা থেকে। নিজের আয় দেখানো হয়েছে বেতন-ভাতা, ঋণ, বিয়েবার্ষিকী, জন্মদিনে পাওয়া উপহার। লিখিত বক্তব্যে প্রতিটি সম্পদের উৎস তাদের আয়কর নথির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তুলে ধরা হয়েছে। বক্তব্যের পাশাপাশি বেনজীরের অর্থ-সম্পদ সম্পর্কিত বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে ল ফার্ম ‘ইমতিয়াজ ফারুক অ্যাসোসিয়েট’-এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট পত্রপত্রিকায় পাঠানো প্রতিবাদলিপি ও লিগ্যাল নোটিশগুলো দুদকে জমা দেওয়া হয়েছে। ওই সব লিগ্যাল নোটিশ ও প্রতিবাদলিপিই মূলত দুদকের অনুসন্ধানে বেনজীর আহমেদের বক্তব্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ব্যারিস্টার ইমতিয়াজ ফারুক খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রায় দুই মাস আগে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তার পক্ষে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। এরপর আর কিছু জানি না। তার সঙ্গে (বেনজীর) যোগাযোগও নেই। সেই লিগ্যাল নোটিশগুলোই অন্য কেউ দুদকে জমা দিয়ে থাকতে পারে।’  

সোমবার (২৪ জুন) বেনজীরের স্ত্রী ও দুই মেয়ের হাজিরা নির্ধারিত আছে। এ বিষয়ে দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন সাংবাদিকদের বলেছেন, তারা হাজির না হলে অনুসন্ধান কর্মকর্তারা পরবর্তী আইনি প্রক্রিয়া গ্রহণ করবেন। 

সহসা ফিরছেন না বেনজীর
গত ৩১ মার্চ গণমাধ্যমে বেনজীরের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি ফেসবুক লাইভে এসে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে তা অতিরঞ্জিত বলে আখ্যায়িত করেন। তবে তিনি কোনো নির্দিষ্ট গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেননি। এরপরই তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যান। 

গুজব ওঠে তিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। পরে জানা গেছে, গত ৪ মে রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে একটি ফ্লাইটে করে সিঙ্গাপুরে চলে যান। সিঙ্গাপুরে তিনি এবং তার পরিবারের চিকিৎসা শেষে দুবাই চলে গেছেন। বর্তমানে দুবাইয়ে তিনি অবস্থান করছেন। দুদক তার সম্পদের হিসাবের জন্য ডাকলেও তিনি গতকাল হাজির হননি। বেনজীরের ঘনিষ্ঠ ঢাকা মহানগর পুলিশের এক ডিসি জানান, তিনি সহসাই দেশে ফিরবেন না।